আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
240 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (4 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ।

১)আমার বাবা মারা যায় প্রায় ৫ বছর হয়েছে।বাবা মারা যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি বিক্রির কিছু টাকা আমরা ব্যংকে রাখি।(যেহেতু আমাদের বাসা/বাড়ি টাকা রাখার জন্য এতটা নিরাপদ নয়।অনেকটা বাধ্য হয়েই)তখন ও জানতাম যে এই টাকার যে লভ্যাংশ আসবে ওটা সুদ/হারাম।তবে কিছু করার ছিলো না আমার।আমি পরিবারের সবার ছোট।বাবা মারা যাওয়ার পর আমাকে হাল ধরতে হয়।বড় ভাই রহ. মারা গিয়েছে ১ বছর হয়েছে।বড় ভাই রহ. সাদাসিদে খুব ভালো মনের মানুষ ছিলেন আলহামদুলিল্লাহ।একদম সাদামাটা হওয়ায় মানুষের অনেক ধোকার সম্মুক্ষিন ও হতেন প্রায়ই।আল্লাহ তাকে জান্নাত বাসি করুন দোয়া করবেন।ভাইয়ের এই সাদামাটার কারন ভাই এর ওপর তেমন বিশ্বাস রাখতে পারে নি যায়গা জমি কেনা নিয়ে।আমার বয়স তখন ১৮ এর মত হবে।তবে আমি বাহিরের এত কিছু সম্পর্কে তেমন মাথা ঘামাতাম না।আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ তায়ালার দয়া,করুনা যে তিনি আমাকে ধিরে ধিরে এসকল বিষয়ে বুঝ দিয়েছেন।আল্লাহ তায়ালা তার পর থেকে সব ধরনের মানুষের সাথে (যারা ভালো) চলাফেরা করার তৌফিক দিয়েছেন আলহামদুলিল্লাহ। এর সাথে দ্বীনের বুঝ ও আসে আস্তে আস্তে।তখন আরেকটু অনুভব করতে থাকি যে এ টাকা আমার জন্য হালাল হচ্ছে না।তবে আমি নিরুপায়।আমি চাকরির পাশাপাশি চেষ্টা করেছি যায়গা জমি কেনার।যেন এই টাকাটা হালাল ভাবে এক যায়গায় থাকে।প্রতি বছরে বা মাসে যে টাকা সুদ আসতেছে আমি তার থেকে বাচতে পারছি না।আমার পরিবারের মধ্যে এখন আম্মু আর আমি বসবাস করছি এক সাথে।তাকে বুঝানোটা অনেক কষ্টসাধ্য যে, এই টাকা হারাম।সে মানতে নারাজ এটা।তার ভাষ্যনুযায়ি টাকা ব্যংকের কর্মকর্তারা ব্যবহার করছে বিনিময়ে আমাদের কিছু লাভ দিচ্ছে।কিন্তু আমি তো জানি,আমি এ কথা শুনে সহ্য না  করতে পেরে অনেক যুক্তি তর্ক দার করাই।এক সময়ে আমি খারাপ ব্যবহার ও করে ফেলি।কিন্তু আমি কি করে বোঝাই যে এটা আমার জন্য হারাম।আমি আল্লাহ ও তার রাসুল (সাঃ) এর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারবো না।এর পরে একবার বুঝাতে সক্ষম হলেও একটু পরেই ভেবে দেখলাম আমি যা ইনকাম করছি আলহামদুলিল্লাহ। চলতে একটু কষ্ট হয়।চেষ্টা করি হালাল ইনকামের।তবে ঘর ভাড়া+খাওয়া দাওয়া+আমার ভার্সিটি পড়াশোনা+আমি IOM এর ছাত্র 216 ব্যাচ এর।পাশাপাশি মসজিদে কুরআন শিখছি আলহামদুলিল্লাহ। এ নিয়ে আমার মাস শেষে মোটামোটি বেতনের টাকা দিয়ে চলে যায়।তবে অনেক সময় প্রয়োজনে ব্যংকের সেই সুদের টাকা আমাকে আনতে হয় বাধ্য হয়েই।তখন আর আমি নিজ থেকেই কিছু বলি নি।আমি জানি তা হারাম, তবে আমি বাচতে পারছি না।আমি খুব ছোট মানুষ।অনার্স ফাষ্ট ইয়ারে এবার।জবের পাশাপাশি পড়াশুনা করছি।আমার ফ্যামিলির সম্পুর্ন খরচ আমি চালাচ্ছি।আলহামদুলিল্লাহ
কিন্তু সুদের টাকার কারনে আমার খাবারে হারাম যাচ্ছে।আমি বাচতে পারছি না।খুব কষ্ট হয় যখন ভাবি, মরে গেলে আমি কি জবাব দিবো আল্লাহর কাছে!কি নিয়ে দারাবো আমার রাসূল (সাঃ)।তাকে ভালোবাসি তা কিভাবে বলবো এই হারাম খেয়ে? আমি অধম!শাইক আমাকে জানাবেন আমি কি করবো!এই সুদের টাকা খাওয়ার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে আমার নেই।আমি অল্পতেই তুষ্টি থাকতে চাই আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু ঢাকা শহরের বাসা ভাড়া+খাওয়া+পড়াশোনা সব মিলিয়ে ২০,০০০ টাকার মত প্রয়োজন।এর কাছা কাছি আমি ইনকাম করতে পারি আলহামদুলিল্লাহ। তবে মাঝে মাঝে ভার্সিটি বা অসুস্থতার কারনে টাকা প্রয়োজন হয় তখন বাধ্য হয়েই এই সুদের টাকা আনতে  হয়।

আমি ভেবে রেখেছি আল্লাহ তায়ালা আমাকে কখনো তৌফিক দিলে আমি যেই সুদের(হারামের) টাকা খাচ্ছি এই টাকা গুলো গুনে রাখতে পারছিনা যদিও।তবে এর থেকে অত্যাধিক টাকা বিনা সওয়াবের আশায় দান করে দেবো।ইন শা আল্লাহ
কিন্তু যদি আল্লাহ সেই তৌফিক না দেন, তাহলে তো আমি দান করতে পারবো না।এই হারাম সুদের টাকা খেয়েই যদি আমি আল্লাহর সামনে হাজির হই।আমি জান্নাতে কিভাবে যাবো!আল্লাহ ক্ষমা করুন আমাকে। বাবা নেই পরিবারের সব দায়িত্ত আমারই এখন।

আমার এই সুদের টাকা খাওয়াতে আল্লাহ কি আমাকে ক্ষমা করবেন শাইখ?!

আমি এক কুল কিনারায়!না পারছি এই টাকা দিয়ে যায়গা জমি কিনতে না পারছি এই টাকার সুদ থেকে বাচতে।আমার জন্য একটু দুয়া করবেন।আল্লাহ তায়ালা যেনো সব হারাম থেকে হেফাযত করেন আমাকে।আমিন।

২) অনলাইন সার্ভে সম্পর্কে আপনার দেয়া একটা ফতুয়া পরেছি আলহামদুলিল্লাহ সবটাই ক্লিয়ার আমার।সার্ভের টাকা হারাম।আমি ভেবেছিলাম আমার তো চলতে কষ্ট হয় আমি যদি এখান থেকে সামান্য কিছু টাকা আয় করি,যেনো একটু ভালোভাবে চলতে পারি তবে কি এটা আমার জন্য জায়েজ হতে পারে কি?

কিন্তু এখান থেকে টাকা আয় করলেও মনে শান্তি পাবো না।যদি আল্লাহ আটকে দেয় সেদিন!

৩(ব্যাংকের টাকা সুদ যেটার পরিনত ভয়াবহ,  সার্ভেটাও হারাম, এ পর্যায়ে আমার জন্য সুদের টাকাটা খাওয়া যায়েজ হবে না সুদ বন্ধ করে সার্ভের থেকে আয় করাটা জায়েজ হবে।যদিও দূটোই হারাম।সার্ভে না করলেও হবে।তবে ব্যংকের থেকে বাচবো কিভাবে?আমার প্রয়োজনে আমি সুদ খেতে বাধ্য হচ্ছি প্রায়!

শুকরিয়া উস্থাজ

অনেক সময় নিয়েছি তার জন্য ক্ষমা চাই।

জাযাকুমুল্লাহ খইর ওয়া আহসানুল জাযা।

1 Answer

0 votes
by (574,080 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


(০১)
হারাম সম্পদ ভক্ষন কারীর ইবাদত দোয়া কিছুই কবুল হয়না।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ  
আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ} [المؤمنون: ٥١] وَقَالَ: {يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ} [البقرة: ١٧٢] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟ "

 তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “আল্লাহ তা'আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। আর আল্লাহ তা'আলা তার প্রেরিত রসূলদের যে হুকুম দিয়েছেন মুমিনদেরকেও সে হুকুম দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “হে রসূলগণ! তোমরা পবিত্র ও হালাল জিনিস আহার কর এবং ভাল কাজ কর। আমি তোমাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে জ্ঞাত।" (সূরা আল মু'মিনূন ২৩ঃ ৫১)তিনি (আল্লাহ) আরো বলেছেন, “তোমরা যারা ঈমান এনেছো শোনা আমি তোমাদের যে সব পবিত্র জিনিস রিযক হিসেবে দিয়েছি তা খাও”— (সূরা আল বাকারাহ ২ঃ ১৭২)। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধুলি ধূসরিত রুক্ষ কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, “হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দু'আ তিনি কী করে কবুল করতে পারেন?”(সহীহ মুসলিম-১০১৫)

★হারাম টাকার বিধান হল, তা প্রাথমিকভাবে মূল মালিকের কাছে ফেরত দেয়া।নতুবা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরীবদের মাঝে সদকা করে দেয়া।

 من ملك بملك خبيث ولم يمكنه الرد الى المالك فسبيله التصدق على الفقراء
 (معارف السنن، كتاب الطهارة، باب ما جاء لا تقبل صلاة بغير طهور-1/34، الفتاوى الشامية، باب البيع الفاسد، مطلب فى من ورث مالا حراما-7/301، كتاب الحظر والإباحة، فصل فى البيع-9/554، بذل المجهود، كتاب الطهارة، باب فرض الوضوء- 1/37

যদি কারো নিকট কোনো হারাম মাল থাকে,তাহলে ঐ মালকে তার মালিকের নিকট ফিরিয়ে দেওয়া সম্ভব না হলে সেটি ফকিরদেরকে সদকাহ করে দিতে হবে।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যেহেতু আপনাকে মাঝে মাঝে প্রয়োজনে ব্যাংক থেকে লাভ নিতেই হচ্ছে,তাই আপনার জন্য করনীয় হবে,ব্যাংক থেকে পুরো টাকা উত্তোলন করা।
নতুবা এই সূদের পথ বন্ধ হবেনা। 
আপনি সেই টাকা উত্তোলন করে তার মূলধন কোনো ব্যাবসায়/কাহারো সাথে শরিকানা ব্যবসায় লাগান।
অথবা কোনো জমি ইত্যাদি ক্রয় করুন। 
উক্ত টাকা উত্তোলনের সময় যাহা সূদ আসবে,সেটি ছওয়াবের নিয়ত ছাড়া গরিব মিসকিনকে দান করে দিবেন।      

অথবা আপনি ব্যাংকে সেই টাকা রেখে প্রয়োজনে সেই ব্যাংক থেকে কিছু টাকা আনার সময় সূদ সহ আসল কিছু টাকা নিয়ে আসবেন।
সূদের টাকাটি দান করে দিবেন।
আর আসল টাকা দিয়ে আপনার প্রয়োজন পূরন করবেন।
(তবে এই ছুরতে আপনার আসল টাকার অংক দিন দিন কমে আসবে।)

যেভাবেই হোক সূদের টাকা গ্রহন বাদ দিতে হবে।
হালাল ভাবেই জীবন চলতে হবে।
,
আপনি এখন থেকেই সম্ভব হলে আগের হারাম খাওয়া টাকাগুলি প্রবল ধারনার ভিত্তিতে একটি অংক নির্ধারন করে আস্তে-ধীরে অল্প অল্প করে হলেও দান করা শুরু করবেন।
আর মহান আল্লাহর কাছে মাফ চাইবেন।
আপনার বৈধ ইনকামের টাকা থেকে বেঁচে গেলে সেই বেঁচে যাওয়া টাকা দিয়ে এ দান শুরু করতে পারেন।
যদি বেঁচে না যায়,তাহলে ভবিষ্যতে পূর্ণ টাকা দান করার নিয়ত করবেন।  

(০২)
জায়েজ হবেনা 
,
(০৩)
এক নং প্রশ্নের জবাব দ্রষ্টব্য। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...