আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
306 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (16 points)

বিস্তারিতঃ আসসালামু আলাইকুম, আজ থেকে প্রায় ২০ বছর পূর্বে আমার এক আত্মীয়ার প্রথম সন্তান (ছেলে) আড়াই মাস বয়সে ইন্তেকাল করে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত তিনি আসর ও মাগরীবের মধ্যবর্তী সময়ে কিছুই পানাহার করেন না বা সব ধরনের খাওয়া দাওয়া থেকে বিরত থাকেন। ওনাকে এর কারন জিজ্ঞেস করাতে তিনি বলেন, যেসকল ছেলে মেয়েরা নাবালক বা নিস্পাপ বা শিশু বা অল্প বয়সে ইন্তেকাল করেছে তাদেরকে জান্নাতে কাজ করানো হয়। সারাদিন কাজ করানোর পরে তাদেরকে আসরের পর জান্নাতে খাবার দেয়া হয়। যদি উক্ত সময়ে দুনিয়াতে তাঁর পিতামাতা খাওয়া দাওয়া করে, তাহলে জান্নাতে উক্ত সন্তানদের খাবার ছিনিয়ে নেয়া হয়। তাই তিনি উক্ত সময়ে খাওয়া দাওয়া করেন না, যাতে করে তাঁর ছেলের খাবার ছিনিয়ে নেয়া না হয়। অর্থাৎ তাদেরকে যেন খাবার দেয়া হয়।

এখন প্রশ্নগুলো হলোঃ

(১) কুরআন ও সুন্নাহ এর আলোকে এ বিশ্বাস কতটুকু সঠিক?

(২) উক্ত সময়ে খাওয়া দাওয়া করলে কি গোনাহ হবে?

(৩) উক্ত সময়ে খাওয়া দাওয়া না করলে কি কোন বিশেষ ফজিলত আছে?

(৪) এতোদিন (প্রায় ২০ বছর) এ কাজ করাতে কি তাঁর সওয়াব বা গোনাহ হয়েছে?

(৫) সওয়াবের নিয়ত ছাড়া যদি তিনি উল্লিখিত বিশ্বাস রেখে আমৃত্যু আসর ও মাগরীবের মধ্যবর্তী সময়ে খাবার বন্ধ রাখেন তাহলে কি বিদআত বা অন্য কোন ধরনের গোনাহ হবে?

(৬) কারো সন্তান এমন নাবালক বা মাসুম অবস্থায় ইন্তেকাল করলে কুরআন সুন্নাহ এর আলোকে করনীয় কী?

সর্বোপরি, এমতবস্থায় এখন তাঁর করনীয় কী? কুরআন ও সুন্নাহ এর আলোকে সঠিক বিষয়টা জানাতে অনুরোধ করা যাচ্ছে। মহান আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন, আমীন।  

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

ইবরাহিম (আ.) মৃত শিশুদের দেখাশোনা করবেন : সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ একটি হাদিসে রাসুল (সা.) মিরাজের ঘটনার বর্ণনায় বলেছেন, ‘আমরা চলতে চলতে একটা সজীব শ্যামল বাগানে এসে পৌঁছলাম। তাতে বসন্তের বিচিত্র ফুলের সমাহার আছে। বাগানের মধ্যে দীর্ঘকায় একজন পুরুষকে দেখলাম। তবে তাঁর মাথা আমি দেখছিলাম না। তাঁর চতুর্পাশে বিপুল সংখ্যক ছেলে-মেয়ে দেখলাম। এত বেশি ছেলে মেয়ে আমি কখনও দেখিনি। আমি ফেরেশতাদের বললাম, ওনি কে? আমাকে বলা হলো, ইনি ইবরাহিম (আ.)। আর তাঁর আশপাশের ছেলে-মেয়েরা ওইসব শিশু, যারা শৈশবের নিষ্পাপ অবস্থা মারা গিয়েছে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস নং : ৪২৯)

পূর্ণ হাদীস হলোঃ-

مُؤَمَّلُ بْنُ هِشَامٍ أَبُو هِشَامٍ حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ حَدَّثَنَا عَوْفٌ حَدَّثَنَا أَبُو رَجَاءٍ حَدَّثَنَا سَمُرَةُ بْنُ جُنْدُبٍ قَالَ كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مِمَّا يُكْثِرُ أَنْ يَقُولَ لِأَصْحَابِهِ هَلْ رَأَى أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنْ رُؤْيَا قَالَ فَيَقُصُّ عَلَيْهِ مَنْ شَاءَ اللهُ أَنْ يَقُصَّ وَإِنَّهُ قَالَ ذَاتَ غَدَاةٍ إِنَّهُ أَتَانِي اللَّيْلَةَ آتِيَانِ وَإِنَّهُمَا ابْتَعَثَانِي وَإِنَّهُمَا قَالاَ لِي انْطَلِقْ وَإِنِّي انْطَلَقْتُ مَعَهُمَا وَإِنَّا أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُضْطَجِعٍ وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِصَخْرَةٍ وَإِذَا هُوَ يَهْوِي بِالصَّخْرَةِ لِرَأْسِهِ فَيَثْلَغُ رَأْسَهُ فَيَتَهَدْهَدُ الْحَجَرُ هَا هُنَا فَيَتْبَعُ الْحَجَرَ فَيَأْخُذُهُ فَلاَ يَرْجِعُ إِلَيْهِ حَتَّى يَصِحَّ رَأْسُهُ كَمَا كَانَ ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ الْمَرَّةَ الْأُولَى قَالَ قُلْتُ لَهُمَا سُبْحَانَ اللهِ مَا هَذَانِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ قَالَ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُسْتَلْقٍ لِقَفَاهُ وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِكَلُّوبٍ مِنْ حَدِيدٍ وَإِذَا هُوَ يَأْتِي أَحَدَ شِقَّيْ وَجْهِهِ فَيُشَرْشِرُ شِدْقَهُ إِلَى قَفَاهُ وَمَنْخِرَهُ إِلَى قَفَاهُ وَعَيْنَهُ إِلَى قَفَاهُ قَالَ وَرُبَّمَا قَالَ أَبُو رَجَاءٍ فَيَشُقُّ قَالَ ثُمَّ يَتَحَوَّلُ إِلَى الْجَانِبِ الْآخَرِ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ بِالْجَانِبِ الأَوَّلِ فَمَا يَفْرُغُ مِنْ ذَلِكَ الْجَانِبِ حَتَّى يَصِحَّ ذَلِكَ الْجَانِبُ كَمَا كَانَ ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ فَيَفْعَلُ مِثْلَ مَا فَعَلَ الْمَرَّةَ الْأُولَى قَالَ قُلْتُ سُبْحَانَ اللهِ مَا هَذَانِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى مِثْلِ التَّنُّورِ قَالَ فَأَحْسِبُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فَإِذَا فِيهِ لَغَطٌ وَأَصْوَاتٌ قَالَ فَاطَّلَعْنَا فِيهِ فَإِذَا فِيهِ رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ وَإِذَا هُمْ يَأْتِيهِمْ لَهَبٌ مِنْ أَسْفَلَ مِنْهُمْ فَإِذَا أَتَاهُمْ ذَلِكَ اللهَبُ ضَوْضَوْا قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَؤُلاَءِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ قَالَ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى نَهَرٍ حَسِبْتُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ أَحْمَرَ مِثْلِ الدَّمِ وَإِذَا فِي النَّهَرِ رَجُلٌ سَابِحٌ يَسْبَحُ وَإِذَا عَلَى شَطِّ النَّهَرِ رَجُلٌ قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ حِجَارَةً كَثِيرَةً وَإِذَا ذَلِكَ السَّابِحُ يَسْبَحُ مَا يَسْبَحُ ثُمَّ يَأْتِي ذَلِكَ الَّذِي قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ الْحِجَارَةَ فَيَفْغَرُ لَهُ فَاهُ فَيُلْقِمُهُ حَجَرًا فَيَنْطَلِقُ يَسْبَحُ ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَيْهِ كُلَّمَا رَجَعَ إِلَيْهِ فَغَرَ لَهُ فَاهُ فَأَلْقَمَهُ حَجَرًا قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَذَانِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ قَالَ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ كَرِيهِ الْمَرْآةِ كَأَكْرَهِ مَا أَنْتَ رَاءٍ رَجُلاً مَرْآةً وَإِذَا عِنْدَهُ نَارٌ يَحُشُّهَا وَيَسْعَى حَوْلَهَا قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَذَا قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ فَانْطَلَقْنَا فَأَتَيْنَا عَلَى رَوْضَةٍ مُعْتَمَّةٍ فِيهَا مِنْ كُلِّ لَوْنِ الرَّبِيعِ وَإِذَا بَيْنَ ظَهْرَيْ الرَّوْضَةِ رَجُلٌ طَوِيلٌ لاَ أَكَادُ أَرَى رَأْسَهُ طُولاً فِي السَّمَاءِ وَإِذَا حَوْلَ الرَّجُلِ مِنْ أَكْثَرِ وِلْدَانٍ رَأَيْتُهُمْ قَطُّ قَالَ قُلْتُ لَهُمَا مَا هَذَا مَا هَؤُلاَءِ قَالَ قَالاَ لِي انْطَلِقْ انْطَلِقْ قَالَ فَانْطَلَقْنَا فَانْتَهَيْنَا إِلَى رَوْضَةٍ عَظِيمَةٍ لَمْ أَرَ رَوْضَةً قَطُّ أَعْظَمَ مِنْهَا وَلاَ أَحْسَنَ قَالَ قَالاَ لِي ارْقَ فِيهَا قَالَ فَارْتَقَيْنَا فِيهَا فَانْتَهَيْنَا إِلَى مَدِينَةٍ مَبْنِيَّةٍ بِلَبِنِ ذَهَبٍ وَلَبِنِ فِضَّةٍ فَأَتَيْنَا بَابَ الْمَدِينَةِ فَاسْتَفْتَحْنَا فَفُتِحَ لَنَا فَدَخَلْنَاهَا فَتَلَقَّانَا فِيهَا رِجَالٌ شَطْرٌ مِنْ خَلْقِهِمْ كَأَحْسَنِ مَا أَنْتَ رَاءٍ وَشَطْرٌ كَأَقْبَحِ مَا أَنْتَ رَاءٍ قَالَ قَالاَ لَهُمْ اذْهَبُوا فَقَعُوا فِي ذَلِكَ النَّهَرِ قَالَ وَإِذَا نَهَرٌ مُعْتَرِضٌ يَجْرِي كَأَنَّ مَاءَهُ الْمَحْضُ فِي الْبَيَاضِ فَذَهَبُوا فَوَقَعُوا فِيهِ ثُمَّ رَجَعُوا إِلَيْنَا قَدْ ذَهَبَ ذَلِكَ السُّوءُ عَنْهُمْ فَصَارُوا فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ قَالَ قَالاَ لِي هَذِهِ جَنَّةُ عَدْنٍ وَهَذَاكَ مَنْزِلُكَ قَالَ فَسَمَا بَصَرِي صُعُدًا فَإِذَا قَصْرٌ مِثْلُ الرَّبَابَةِ الْبَيْضَاءِ قَالَ قَالاَ لِي هَذَاكَ مَنْزِلُكَ قَالَ قُلْتُ لَهُمَا بَارَكَ اللهُ فِيكُمَا ذَرَانِي فَأَدْخُلَهُ قَالاَ أَمَّا الْآنَ فَلاَ وَأَنْتَ دَاخِلَهُ قَالَ قُلْتُ لَهُمَا فَإِنِّي قَدْ رَأَيْتُ مُنْذُ اللَّيْلَةِ عَجَبًا فَمَا هَذَا الَّذِي رَأَيْتُ قَالَ قَالاَ لِي أَمَا إِنَّا سَنُخْبِرُكَ أَمَّا الرَّجُلُ الأَوَّلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ يُثْلَغُ رَأْسُهُ بِالْحَجَرِ فَإِنَّهُ الرَّجُلُ يَأْخُذُ الْقُرْآنَ فَيَرْفُضُهُ وَيَنَامُ عَنْ الصَّلاَةِ الْمَكْتُوبَةِ وَأَمَّا الرَّجُلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ يُشَرْشَرُ شِدْقُهُ إِلَى قَفَاهُ وَمَنْخِرُهُ إِلَى قَفَاهُ وَعَيْنُهُ إِلَى قَفَاهُ فَإِنَّهُ الرَّجُلُ يَغْدُو مِنْ بَيْتِهِ فَيَكْذِبُ الْكَذْبَةَ تَبْلُغُ الْآفَاقَ وَأَمَّا الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ الْعُرَاةُ الَّذِينَ فِي مِثْلِ بِنَاءِ التَّنُّورِ فَإِنَّهُمْ الزُّنَاةُ وَالزَّوَانِي وَأَمَّا الرَّجُلُ الَّذِي أَتَيْتَ عَلَيْهِ يَسْبَحُ فِي النَّهَرِ وَيُلْقَمُ الْحَجَرَ فَإِنَّهُ آكِلُ الرِّبَا وَأَمَّا الرَّجُلُ الْكَرِيهُ الْمَرْآةِ الَّذِي عِنْدَ النَّارِ يَحُشُّهَا وَيَسْعَى حَوْلَهَا فَإِنَّهُ مَالِكٌ خَازِنُ جَهَنَّمَ وَأَمَّا الرَّجُلُ الطَّوِيلُ الَّذِي فِي الرَّوْضَةِ فَإِنَّهُ إِبْرَاهِيمُ صلى الله عليه وسلم وَأَمَّا الْوِلْدَانُ الَّذِينَ حَوْلَهُ فَكُلُّ مَوْلُودٍ مَاتَ عَلَى الْفِطْرَةِ قَالَ فَقَالَ بَعْضُ الْمُسْلِمِينَ يَا رَسُولَ اللهِ وَأَوْلاَدُ الْمُشْرِكِينَ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَأَوْلاَدُ الْمُشْرِكِينَ وَأَمَّا الْقَوْمُ الَّذِينَ كَانُوا شَطْرٌ مِنْهُمْ حَسَنًا وَشَطْرٌ قَبِيحًا فَإِنَّهُمْ قَوْمٌ خَلَطُوا عَمَلاً صَالِحًا وَآخَرَ سَيِّئًا تَجَاوَزَ اللهُ عَنْهُمْ.

সামুরাহ ইবনু জুনদাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই তাঁর সহাবীদেরকে বলতেন, তোমাদের কেউ কোন স্বপ্ন দেখেছ কি? রাবী বলেন, যাদের ক্ষেত্রে আল্লাহর ইচ্ছা, তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে স্বপ্ন বর্ণনা করত। তিনি একদিন সকালে আমাদেরকে বললেনঃ গত রাতে আমার কাছে দু’জন আগন্তুক আসল। তারা আমাকে উঠাল। আর আমাকে বলল, চলুন। আমি তাদের সঙ্গে চললাম। আমরা কাত হয়ে শুয়ে থাকা এক লোকের কাছে আসলাম। দেখলাম, অন্য এক লোক তার নিকট পাথর নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে তার মাথায় পাথর নিক্ষেপ করছে। ফলে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। আর পাথর নিচে গিয়ে পড়ছে। এরপর আবার সে পাথরটি অনুসরণ করে তা আবার নিয়ে আসছে। ফিরে আসতে না আসতেই লোকটির মাথা আগের মত আবার ভাল হয়ে যায়। ফিরে এসে আবার তেমনি আচরণ করে, যা পূর্বে প্রথমবার করেছিল। তিনি বলেন, আমি তাদের (সাথীদ্বয়কে) বললাম, সুবহান্নাল্লাহ্! এরা কারা? তিনি বললেন, তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম, এরপর আমরা চিৎ হয়ে শোয়া এক লোকের কাছে আসলাম। এখানেও দেখলাম, তার নিকট এক লোক লোহার অাঁকড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর সে তার চেহারার একদিকে এসে এটা দ্বারা মুখমন্ডলের একদিক মাথার পিছনের দিক পর্যন্ত এবং অনুরূপভাবে নাসারন্ধ্র,চোখ ও মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলছে। আওফ (রহ.) বলেন, আবূ রাজা (রহ.) কোন কোন সময় ‘ইয়ুশারশিরু’ শব্দের পরিবর্তে ‘ইয়াশুক্কু’ শব্দ বলতেন। এরপর ঐ লোকটি শায়িত লোকটির অপরদিকে যায় এবং প্রথম দিকের সঙ্গে যেমন আচরণ করেছে তেমনি আচরণই অপরদিকের সঙ্গেও করে। ঐ দিক হতে অবসর হতে না হতেই প্রথম দিকটি আগের মত ভাল হয়ে যায়। তারপর আবার প্রথমবারের মত আচরণ করে। তিনি বলেনঃ আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ্! এরা কারা? তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং চুলার মত একটি গর্তের কাছে পৌঁছলাম। রাবী বলেন, আমার মনে হয় যেন তিনি বলেছিলেন, আর তথায় শোরগোলের শব্দ ছিল। তিনি বলেন, আমরা তাতে উঁকি মারলাম, দেখলাম তাতে বেশ কিছু উলঙ্গ নারী ও পুরুষ রয়েছে। আর নিচ থেকে বের হওয়া আগুনের লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করছে। যখনই লেলিহান শিখা তাদেরকে স্পর্শ করে, তখনই তারা উচ্চস্বরে চিৎকার করে উঠে। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, এরা কারা? তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। তিনি বলেন, আমরা চললাম এবং একটা নদীর (তীরে) গিয়ে পৌঁছলাম। রাবী বলেন, আমার যতদূর মনে পড়ে তিনি বলেছিলেন, নদীটি ছিল রক্তের মত লাল। আর দেখলাম, এই নদীতে এক ব্যক্তি সাঁতার কাটছে। আর নদীর তীরে অন্য এক লোক আছে এবং সে তার কাছে অনেকগুলো পাথর একত্রিত করে রেখেছে। আর ঐ সাঁতারকারী লোকটি বেশ কিছুক্ষণ সাঁতার কাটার পর সে লোক কাছে এসে পৌঁছে যে নিজের নিকট পাথর একত্রিত করে রেখেছে। সেখানে এসে সে তার মুখ খুলে দেয় আর ঐ লোক তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দেয়। এরপর সে চলে যায়, সাঁতার কাটতে থাকে; আবার তার কাছে ফিরে আসে, যখনইসে তার কাছে ফিরে আসে তখনই সে তার মুখ খুলে দেয়, আর ঐ ব্যক্তি তার মুখে একটা পাথর ঢুকিয়ে দেয়। তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? তারা বলল, চলুন, চলুন। তিনি বরৈন, আমরা চললাম এবং এমন একজন কুশ্রী লোকের কাছে এসে পৌঁছলাম, যা তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কুশ্রী বলে মনে হয়। আর দেখলাম, তার নিকট রয়েছে আগুন, যা সে জ্বালাচ্ছে ও তার চতুর্দিকে দৌড়াচ্ছে। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, ঐ লোকটি কে? তারা বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং একটা সজীব শ্যামল বাগানে হাজির হলাম, যেখানে বসন্তের হরেক রকম ফুলের কলি রয়েছে। আর বাগানের মাঝে আসমানের থেকে অধিক উঁচু দীর্ঘকায় একজন পুরুষ রয়েছে যার মাথা যেন আমি দেখতেই পাচ্ছি না। এমনিভাবে তার চারপাশে এত বিপুল সংখ্যক বালক-বালিকা দেখলাম যে, এত অধিক আর কখনো আমি দেখিনি। আমি তাদেরকে বললাম, উনি কে? এরা কারা? তারা আমাকে বলল, চলুন, চলুন। আমরা চললাম এবং একটা বিরাট বাগানে গিয়ে পৌঁছলাম। এমন বড় এবং সুন্দর বাগান আমি আর কখনো দেখিনি। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, এর ওপরে চড়ুন। আমরা ওপরে চড়লাম। শেষ পর্যন্ত সোনা-রূপার ইটের তৈরি একটি শহরে গিয়ে আমরা হাজির হলাম। আমরা শহরের দরজায় পৌঁছলাম এবং দরজা খুলতে বললাম। আমাদের জন্য দরজা খুলে দেয়া হল, আমরা তাতে প্রবেশ করলাম। তখন সেখানে আমাদের সঙ্গে এমন কিছু লোক সাক্ষাৎ করল যাদের শরীরের অর্ধেক খুবই সুন্দর, যা তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে সুন্দর মনে হয়। আর শরীরের অর্ধেক এমনই কুশ্রী ছিল যা তোমার দৃষ্টিতে সবচেয়ে কুশ্রী মনে হয়। তিনি বলেন, সাথীদ্বয় ওদেরকে বলল, যাও ঐ নদীতে গিয়ে নেমে পড়। আর সেটা ছিল প্রশস্ত প্রবাহিত নদী, যার পানি ছিল দুধের মত সাদা। ওরা তাতে গিয়ে নেমে পড়ল। অতঃপর এরা আমাদের কাছে ফিরে এল, দেখা গেল তাদের এ শ্রীহীনতা দূর হয়ে গেছে এবং তারা খুবই সুন্দর আকৃতির হয়ে গেছে। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, এটা জান্নাতে আদন এবং এটা আপনার বাসস্থান। তিনি বলেন, আমি বেশ উপরের দিকে তাকালাম, দেখলাম ধবধবে সাদা মেঘের মত একটি প্রাসাদ আছে। তিনি বলেন, তারা আমাকে বলল, এটা আপনার বাসগৃহ। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম, আল্লাহ্ তোমাদের মাঝে বরকত দিন! আমাকে ছেড়ে দাও। আমি এতে প্রবেশ করি। তারা বলল, আপনি অবশ্য এতে প্রবেশ করবেন। তবে এখন নয়। তিনি বলেন, আমি এ রাতে অনেক বিস্ময়কর বিষয় দেখতে পেলাম, এগুলোর তারপর্য কী? তারা আমাকে বলল, আচ্ছা! আমরা আপনাকে বলে দিচ্ছি। ঐ যে প্রথম ব্যক্তিকে যার কাছে আপনি পৌঁছেছিলেন, যার মাথা পাথর দিয়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা হচ্ছিল, সে হল ঐ ব্যক্তি যে কুরআন গ্রহণ করে তা ছেড়ে দিয়েছে। আর ফরজ সালাত ছেড়ে ঘুমিয়ে থাকে। আর ঐ ব্যক্তি যার কাছে গিয়ে দেখেছেন যে, তার মুখের এক ভাগ মাথার পিছন দিক পর্যন্ত, এমনিভাবে নাসারন্ধ্র ও চোখ মাথার পিছন দিক পর্যন্ত চিরে ফেলা হচ্ছিল সে হল ঐ ব্যক্তি, যে সকালে নিজ ঘর থেকে বের হয়ে এমন কোন মিথ্যা বলে যা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আর এ সকল উলঙ্গ নারী-পুরুষ যারা চুলা সদৃশ গর্তের ভিতর আছে তারা হল ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণীর দল। আর ঐ ব্যক্তি, যার কাছে পৌঁছে দেখেছিলেন যে, সে নদীতে সাঁতার কাটছে ও তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে সে হল সুদখোর। আর ঐ কুশ্রী ব্যক্তি, যে আগুনের কাছে ছিল এবং আগুন জ্বালাচ্ছিল আর সে এর চারপাশে দৌড়াচ্ছিল, সে হল জাহান্নামের দারোগা, মালিক ফেরেশ্তা। আর এ দীর্ঘকায় ব্যক্তি যিনি বাগানে ছিলেন, তিনি হলেন, ইবরাহীম (আঃ)। আর তাঁর আশেপাশের বালক-বালিকারা হলো ঐসব শিশু, যারা ফিত্রাতের (স্বভাবধর্মের) ওপর মৃত্যুবরণ করেছে। তিনি বলেন, তখন কিছু সংখ্যক মুসলিম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! মুশরিকদের শিশু সন্তানরাও কি? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন ঃ মুশরিকদের শিশু সন্তানরাও। আর ঐসব লোক যাদের অর্ধাংশ অতি সুন্দর ও অর্ধাংশ অতি কুশ্রী তারা হল ঐ সম্প্রদায় যারা সৎ-অসৎ উভয় কাজ মিশ্রিতভাবে করেছে। আল্লাহ্ তাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। [বুখারী ৭০৪৭.৮৪৫; মুসলিম ৪২/৪, হাঃ ২২৭৫, আহমাদ ২০১১৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৫৫৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৫৭১)

★অন্য হাদীসে এসেছেঃ
আবু হাসসান (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন,
 আমি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললাম, ‘আমার দুটি সন্তান মারা গিয়েছে। আপনি কি রাসুল (সা.) থেকে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করবেন, যাতে আমার অন্তর সান্ত্বনা পায়? আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হ্যাঁ, আমি নবি করিম (সা.)-কে  বলতে শুনেছি, ‘ছোট বয়সে মৃত্যুবরণকারী সন্তানেরা জান্নাতের প্রজাপতির মতো। তারা যখন বাবা অথবা বাবা-মায়ের উভয়ের সঙ্গে মিলিত হবে, তখন তার পরিধেয় কাপড় কিংবা হাত ধরবে, যেভাবে এখন আমি তোমার কাপড়ের আঁচল ধরেছি। এরপর সেই কাপড় বা হাত আর ছাড়বে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাকে তার মা-বাবাসহ জান্নাতে প্রবেশ না করাবেন। (মুসলিম, হাদিস নং : ৬৩৭০)


প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
কুরআন সুন্নাহ এর আলোকে এ বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। 
এটি বানোয়াট কথা।
,
(০২)
এতে কোনো গুনাহ হবেনা।
,
(০৩)
কোনো বিশেষ ফজিলত নেই।
,
(৪.৫))
কোনো সওয়াব হয়নি।
তবে হাদীস মনে করে/শরীয়তের কাজ মনে করে/আবশ্যকীয় মনে করে  এমনটি করলে গুনাহ হবে।
,
(০৬)
কুরআন সুন্নাহের আলোকে তার জন্য ধৈর্য ধারন করার কথা এসেছে।
বিশেষ কোনো আমলের কথা আসেনি।   

★হাদীস শরীফে এসেছেঃ
মুআজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোনো মুসলিমের অর্থাৎ মা-বাবার তিনটি সন্তান (তাদের আগে) মারা যাবে, আল্লাহ তাদেরকে নিজের রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, দুজন মারা গেলেও কি এমন প্রতিদান পাবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, দুজন মারা গেলেও। এবার সাহাবিরা বললেন, একজন মারা গেলেও কি এমন প্রতিদান পাবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, একজন মারা গেলেও। অতঃপর রাসুল (সা.) বলেন, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, যদি কোন নারীর গর্ভপাত হয় এবং ওই মা ধৈর্য্য ধরে ও সওয়াবের আশা করে, তাহলে সন্তানও তাঁর নাড়ী ধরে টেনে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং : ১৬০৯, মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং : ২২০৯০)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...