তালাক সম্পর্কে জরুরী মাসআলাঃ
তালাক সাধারণতঃ দুই প্রকার (১) ছরীহ্ ও (২) কেনায়া। প্রত্যেক প্রকার তালাক আবার দুই ভাগে বিভক্ত। (১) রেজয়ী ও (২) বাইন।
রেজয়ী তালাকঃ কোন স্বামী যদি স্ত্রীকে রেজয়ী তালাক দেয় অতঃপর যদি ফিরিয়ে নিতে চায়, তাহলে বিনা বিবাহে গ্রহণ করতে পারবে। যদি স্ত্রীর ইদ্দত শেষ না হয়ে থাকে। তা এক তালাকে রেজয়ী হোক বা দুই তালাকে রেজয়ী হোক।
উল্লেখ্য, তালাকে রেজয়ী দুই তালাক পর্যন্তই হয়। আর যদি স্ত্রীর ইদ্দত পার হয়ে যায় তাহলে বিনা বিবাহে স্ত্রীকে গ্রহণ করতে পারবে না।
বাইন তালাকঃ যা প্রয়োগ করলে বিবাহ ব্যতীত স্ত্রীকে গ্রহণ করা যায়না। যদি তা এক তালাক বাইন বা দুই তালাক বাইন হয়।
আর যদি তিন তালাক বাইন দেয়, যাকে তালাকে মুগল্লাজাও বলা হয়। তাহলে সাধারণভাবে বিবাহ দোহরিয়েও স্ত্রীকে গ্রহণ করা যাবেনা।
আল্লাহ্ পাক কালামুল্লাহ শরীফের বলেনঃ “তালাক হচ্ছে দুই বার অর্থাৎ দুই তালাক স্ত্রীকে দেয়ার পরও বিনা তাহলিলে দুই তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে নিয়ে ঘর সংসার করতে পারবে।”
[ সূরা বাকারাঃ ২২৯ ]
এরপর আল্লাহ্ বলেনঃ “অতঃপর স্বামী যদি (দুই তালাক প্রাপ্তা স্ত্রীকে তৃতীয়) তালাক দেয় তাহলে তিন তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী উক্ত তালাক দাতা স্বামীর জন্য বিনা তাহলিলে হালাল হবেনা। অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত অন্য স্বামী গ্রহণ না করবে।”
[ সূরা বাকারাঃ ২৩০ ]
এরপর আল্লাহ্ পাক বলেনঃ “অতঃপর দ্বিতীয় স্বামী যদি উক্ত স্ত্রীকে তালাক দেয় তখন প্রথম স্বামী ও উক্ত স্ত্রী যদি পূনঃরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয় তাতে কোন গুণাহ্ হবেনা।”
এর ব্যাখ্যায় তাফসীরে উল্লেখ করা হয়েছে, যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয় তাহলে তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী তালাকদাতা স্বামীর জন্য সম্পূর্ণ হারাম হয়ে যায়। এখন যদি তালাকদাতা স্বামী তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে গ্রহণ করতে চায় তাহলে শরীয়তের ফয়সালা হলো, তালাক প্রাপ্তা স্ত্রী তার ইদ্দত পালন করবে অতঃপর অন্যত্র বিবাহ্ বসবে। বিবাহের পর যদি দ্বিতীয় স্বামী উক্ত স্ত্রীকে স্ত্রী হিসেবে ব্যবহার করে তালাক দিয়ে দেয় এরপর তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী ইদ্দত পালন করে তখন প্রথম স্বামীর জন্য এই স্ত্রীকে বিবাহ্রে মাধ্যমে গ্রহণ করা জায়েয বা হালাল হবে। এ পদ্ধতিকেই অনেকে হিলা বলে উল্লেখ করে থাকে। এটা কুরআন-সুন্নাহ সম্মত।
হিলা শব্দের অর্থ হলো, হালাল হওয়া। এ শব্দটি কুরআন শরীফে সূরা বাক্বারার ২৩০ নং আয়াত শরীফের "তাহিল্লু" শব্দ থেকে এসেছে। এটা বাবে ضرب থেকে এসেছে। যার মাদ্দা বা মূল হচ্ছে, "হাল্লান" বা "হিল্লুন"। যার অর্থ হচ্ছে, হালাল হওয়া।
সূরা বাক্বারার ২৩০ নং আয়াত শরীফের "তাহিল্লুন" শব্দের ব্যাখ্যায় ‘নূরুল আনওয়ার’ কিতাবে "মুহাল্লিলিয়াতুন", "মুহাল্লিলুন" ইত্যাদি শব্দ উল্লেখ করা হয়েছে। যার অর্থ হলো, দ্বিতীয় স্বামী (প্রথম স্বামীর জন্য) হালালকারী।
এই হিলা পদ্ধতির উপরে বর্ণিত নিয়মই বিশুদ্ধ পদ্ধতি। এর আরো দুটি ছূরত হতে পারে।
প্রথম ছূরত হচ্ছে- যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে একাধিক সন্তান হওয়ার পর তিন তালাক দিয়ে দেয় তখন স্ত্রী সন্তান ব্যতীত থাকার কারণে চরম অশান্তিতে অবস্থান করে। আর বিপরীত দিকে স্বামীও স্ত্রী ব্যতীত সন্তানদেরকে নিয়ে চরম কষ্টে দিনাতিপাত করে। এ অবস্থায় যদি কোন লোক স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের উপকারার্থে উক্ত তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ইদ্দতের পর বিনা শর্তে বিবাহ্ ও ব্যবহার করে তালাক দিয়ে দেয় যাতে প্রথম স্বামী বিবাহ্ করতে পারে। কারণ এতে প্রথম স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের শান্তির কারণ হবে। তাহলে উক্ত লোক নিয়ত অনুযায়ী নেকী লাভ করবে।
আর দ্বিতীয় ছূরত হচ্ছে- তৃতীয় কোন ব্যক্তি অথবা স্বামী নিজে তাদের এই অশান্তি দূর করার লক্ষ্যে অন্য কোন ব্যক্তির সাথে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর ইদ্দতের পর এই শর্তে বিবাহ্ দেয় যে উক্ত ব্যক্তি তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে বিবাহ্ করে স্ত্রী হিসাবে ব্যবহার করে অতি সত্তর তালাক দিয়ে দিবে। যদি উক্ত ব্যক্তি শর্ত মোতাবিক কাজ সম্পাদন করে তাহলে উক্ত তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে।
এ অবস্থায় প্রশ্ন আসতে পারে যে, শর্ত দিয়ে বিবাহ করা জায়েয রয়েছে কিনা? কারণ সময় নির্দিষ্ট করে বিবাহ্ করাকে নিকাহে মুতা বলা হয়। যা আমাদের আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম। যা শিয়াদের আক্বাঈদ মতে জায়েয।
এছাড়াও হাদীস শরীফে উল্লেখ করা হয়েছেঃ “আল্লাহ্ পাক লা’নত বর্ষণ করেন, যে হালাল করেছে ও যার জন্য হালাল করা হয়েছে।”
[ দারেমী, ইবনে মাজাহ ]
এর জবাবে বলতে হয়, মুতা বিবাহ আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম হওয়ার কারণে বিবাহে কোন শর্ত আরোপ করলে শর্ত বাতিল হয়ে বিবাহ্ শুদ্ধ হিসেবে শরীয়তে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকে।
সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি কোন তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে কোন শর্ত দিয়ে বিবাহ ও ব্যবহার করে তালাক দেয় তাহলে উক্ত তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রী প্রথম স্বামীর নিকট পূনরায় বিবাহ বসতে পারবে। অর্থাৎ বিবাহ্ পড়িয়ে দিলেই প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যাবে। যা সম্পূর্ণ রূপে শরীয়তসম্মত।
হ্যাঁ, তবে যে ব্যক্তি শর্ত দিয়ে বিবাহ্ করেছে বা দিয়েছে সে ব্যক্তি শর্তের কারণে গুণাহ্গার হবে তবে তার বিবাহে কোন ত্রুটি হবে না বরং তার বিবাহ সম্পূর্ণ রূপেই শরীয়ত সম্মত হবে।
উপরোক্ত লা’নতের হাদীস শরীফের ব্যাখ্যায় বলতে হয়, প্রকৃত পক্ষে এ হাদীসের উদ্দেশ্য সকলের প্রতি লা’নত বর্ষণ নয় বরং যারা এ কাজে উৎসাহিত করবে বা এ কাজকে ব্যবসা অথবা পেশা হিসেবে গ্রহণ করবে তাদের জন্যই লানত বর্ষিত হবে। আর যদি কেউ কারো উপকারার্থে বিনা শর্তে এ কাজ করে দেয় তাহলে সে অবশ্যই নেকী লাভ করবে। এটা তার জন্য লা’নতের কারণ হবেনা বরং রহমতের কারণ।