ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-
শরীয়তের বিধান হলো যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এক ফোটা দুধ বা তার চেয়েও কম দুধ বাচ্চার পেটে চলে যায়,তাহলেই মাহরাম হয়ে যাবে।
এটাই হানাফি মাযহাব সহ জমহুরদের মত।
সুরা নিসার ২৩ নং আয়াতে মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
৪:২৩ حُرِّمَتۡ عَلَیۡکُمۡ اُمَّهٰتُکُمۡ وَ بَنٰتُکُمۡ وَ اَخَوٰتُکُمۡ وَ عَمّٰتُکُمۡ وَ خٰلٰتُکُمۡ وَ بَنٰتُ الۡاَخِ وَ بَنٰتُ الۡاُخۡتِ وَ اُمَّهٰتُکُمُ الّٰتِیۡۤ اَرۡضَعۡنَکُمۡ وَ اَخَوٰتُکُمۡ مِّنَ الرَّضَاعَۃِ وَ اُمَّهٰتُ نِسَآئِکُمۡ وَ رَبَآئِبُکُمُ الّٰتِیۡ فِیۡ حُجُوۡرِکُمۡ مِّنۡ نِّسَآئِکُمُ الّٰتِیۡ دَخَلۡتُمۡ بِهِنَّ ۫ فَاِنۡ لَّمۡ تَکُوۡنُوۡا دَخَلۡتُمۡ بِهِنَّ فَلَا جُنَاحَ عَلَیۡکُمۡ ۫ وَ حَلَآئِلُ اَبۡنَآئِکُمُ الَّذِیۡنَ مِنۡ اَصۡلَابِکُمۡ ۙ وَ اَنۡ تَجۡمَعُوۡا بَیۡنَ الۡاُخۡتَیۡنِ اِلَّا مَا قَدۡ سَلَفَ ؕ اِنَّ اللّٰهَ کَانَ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا ﴿ۙ۲۳﴾
তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদেরকে, তোমাদের মেয়েদেরকে, তোমাদের বোনদেরকে, তোমাদের ফুফুদেরকে, তোমাদের খালাদেরকে, ভাতিজীদেরকে, ভাগ্নীদেরকে, তোমাদের সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদেরকে, তোমাদের শ্বাশুড়ীদেরকে, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে রয়েছে তাদেরকে, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাক তবে তোমাদের উপর কোন পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদেরকে এবং দুই বোনকে একত্র করা(তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
★এখানে মাহরামদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে, সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে,
সুতরাং অল্প দুধ করালেও হারাম হয়ে যাবে।
কেননা কোনো পরিমান নির্দিষ্ট নেই।
وقلیل الرضاع وکثیره سواء في إثبات الحرمة ؛ لأن المنصوص علیه فعل الإرضاع دون العدد. قال اللّٰہ تعالیٰ: وَاُمَّہَاتُکُمُ اللَّاتِيْ اَرْضَعْنَکُمْ
محمود بن أحمد، برهان الدين، الامام، المحیط، 4: 95
সারমর্মঃ অল্প হোক বা বেশি হোক,হুরমত প্রমানিত হওয়ার দিক দিয়ে সমান।
قیل لابن عمر رضي اللّٰه عنهما إن ابن الزبیر یقول لا تحرم الرضعة ولا الرضعتان. فقال: قضاء اللّٰه تعالیٰ أولیٰ من قضاء ابن الزبیر. قال اللّٰه تعالیٰ: وَاُمَّهٰتُکُمُ اللاَّتِیْ اَرْضَعْنَکُمْ وَاَخَوَاتُکُمْ مِنَ الرَّضَاعَةِ.
فخرالدين الزيلعي، عثمان بن علي، تبیین الحقائق، 2: 631
সারমর্মঃ ইবনে যুবায়ের রাঃ যখন মাসয়ালা বলেছিলেন যে এক বা দুই বার দুধ পানের দ্বারা রাজায়াত প্রমানিত হয়না,তখন ইবনে ওমর রাঃ বলেছেন যে আল্লাহর ফায়সালা ইবনে যুবায়েরের ফায়সালা থেকে সঠিক।
قلیل الرضاع وکثیره إذا حصل في مدة الرضاع تعلق به التحریم. کذا في الهدایة
نظام الدین و جماعته، الفتاویٰ الهندیة، 1: 342
সারমর্মঃ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দুধ অল্প পরিমান পান করুক বা বেশি পরিমান, তার সাথে হুরমতের সম্পর্ক স্থাপন হবে।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনার খালাতো ভাইয়ের সাথে আপনার বোনের বিবাহ বৈধ হয়নি।
দ্রুত পৃথক হয়ে যেতে হবে।
আরো জানুনঃ
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
আপনি যে মতের কথা উল্লেখ করেছেন,সেটি ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মত।
সেটি ইমাম আবু হানিফা রহঃ এবং জমহুর উলামায়ে কেরামদের মত নয়।
সুতরাং শাফেয়ী মাযহাব অনুসারী গন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারেন।
তাদের দলিলঃ
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : كَانَ فِيمَا أُنْزِلَ مِنَ الْقُرْاٰنِ : «عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ يُحَرِّمْنَ». ثُمَّ نُسِخْنَ بِخَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ فَتُوُفِىْ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ وَهِىَ فِيمَا يُقْرَأُ مِنَ الْقُرْاٰنِ. رَوَاهُ مُسْلِمٌ
‘আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কুরআন মাজীদে (প্রথমে) নাযিল হয়েছিল, [(وَأُمَّهَاتُكُمُ اللَّاتِىْ أَرْضَعْنَكُمْ) অর্থাৎ- ‘‘এবং তোমাদের মাতাগণ যারা তোমাদেরকে দুগ্ধপান করিয়েছেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৩) এ আয়াতের শেষাংশে] عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ ‘‘নিশ্চিত জানা যায় দশবার’’ দুগ্ধপানে হারাম করে, পরে خَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ ‘‘নিশ্চিত জানা যায় পাঁচবার’’-এর দ্বারা তা মানসূখ (রহিত) হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেন। অথচ (সাহাবীরা) এটা কুরআনে পড়ত।
সহীহ : মুসলিম ১৪৫২, নাসায়ী ৩৩০৭, আবূ দাঊদ ২০৬২, ইরওয়া ২১৪৭।
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, মানসূখ তিন প্রকার- (১) হুকুম ও তিলাওয়াত উভয় মানসূখ, যেমন ১০ ঢোক দুধ পান করার আয়াত। (২) তিলাওয়াত মানসূখ, তবে হুকুম বলবৎ রয়েছে। যেমন পাঁচ ঢোক দুধ পান করানোর আয়াত। (৩) হুকুম মানসূখ তিলাওয়াত বলবৎ রয়েছে, যেমন- ‘‘তোমাদের মধ্যে যারা মারা যাবে এবং স্ত্রী রেখে যাবে, তারা যেন তাদের স্ত্রীদের ঘর থেকে বের না করে, তাদের এক বছরের ভরণ-পোষণের ওয়াসিয়্যাত করে।’’ (সূরা আল বাকারা ২ : ২৪৩)
কতটুকু পরিমাণ দুধ পান করলে দুধ মা সাব্যস্ত হবে, এ ব্যাপারে ‘উলামাগণের মাঝে ইখতিলাফ রয়েছে। ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এবং ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ) ও তার অনুসারীদের মতে পাঁচ ঢোকের কমে দুধমা সাব্যস্ত হবে না। জুমহূর ‘উলামাগণের মতে ১ ঢোক পান করলেই দুধ মা সাব্যস্ত হবে। এ বর্ণনায় রয়েছে ইবনুল মুনযির, ‘আলী, ইবনু মাস্‘ঊদ, ইবনু ‘উমার, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ), ‘আত্বা, তাঊস ইবনুল মুসাইয়্যাব, হাসান, মাকহূল, যুহরী, কাতাদাহ (রহঃ) প্রমুখগণ থেকে।
আবূ সূর, আবূ ‘উবায়দ, ইবনুল মুনযির ও দাঊদ (রহঃ)-এর মতে তিন ঢোকের কম দুধ পান করলে দুধ মা সাব্যস্ত হবে না। ইমাম শাফি‘ঈ ও তার অনুসারীগণ দলীল গ্রহণ করেছেন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) পাঁচ ঢোক দুধ পান করানো হাদীস দ্বারা। ইমাম মালিক (রহঃ) কুরআনুল মাজীদে এ আয়াত, ‘‘তোমাদের মা যারা তোমাদের দুধ পান করিয়েছেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ২৩)। তার মতে নির্ধারিত কোনো সংখ্যা (ঢোকের সংখ্যা) নেই। দাঊদ ও তার সহযোগীরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস এক ঢোক বা দু’ঢোকে দুধ মা সাব্যস্ত হবে না, এ হাদীস থেকে দলীল গ্রহণ করেছেন। (শারহে মুসলিম ৯/১০ খন্ড, হাঃ ১৪৫২)