بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
আমাদের সমাজে প্রতিনিহতই শোনা যায় জ্বীনের মানুষের উপর ভর করা
কিংবা মানুষের যাদুগ্রস্থ হচ্ছে। এটাকে সাধারণভাবে আরবীতে সাহর বলে। এটি এমন একটি অবস্থা
যখন মানুষের নিজের উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং সাময়িক
স্মৃতিভ্রম ঘটে। পবিত্র কুরআন এবং হাদীসের আলোকে সাহর একটি নিশ্চিত বিষয়। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী জ্বীনেরা মানুষের আকার
ধারণ করতে পারে এবং মানুষের মত কথা বলতে পারে। মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীর আকারও
ধারণ করতে পারে বলে হাদীসে বলা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন,
وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِّنَ
الْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ الْقُرْآنَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوا أَنصِتُوا ۖ
فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلَىٰ قَوْمِهِم مُّنذِرِينَ
"যখন আমি একদল জ্বীনকে আপনার (অর্থাৎ মুহাম্মাদ এর)
প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম, তারা কোরআন পাঠ শুনছিল। তারা যখন কোরআন পাঠের জায়গায় উপস্থিত হল,
তখন পরস্পর বলল,
চুপ থাক। অতঃপর যখন পাঠ সমাপ্ত হল,
তখন তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে
(জ্বীন সম্প্রদায়) সতর্ককারীরূপে ফিরে গেল।” (সূরা আল-আহক্বাফ,
২৯)
আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র এরশাদ করেন,
قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ
مِّنَ الْجِنِّ فَقَالُوا إِنَّا سَمِعْنَا قُرْآنًا عَجَبًا
”বলুনঃ আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে,
জ্বীনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে,
অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর
কোরআন শ্রবণ করেছি।” (সূরা জ্বীন, ১)
অপর আয়াতে আল্লাহ বলেন,
الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ
إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ
“যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে,
যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি,
যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে
দেয়।” (সূরা বাক্বারা, ২৭৫)
শয়তানের আসরে মানুষ মোহাবিষ্ট হয়ে পড়ে- এই বিষয়টি নিশ্চিত। ইমাম
কুরতুবী, তাবারী, ইবনে-কাসীর সহ অধিকাংশ তাফসীরবিদ এই আয়াতকে জ্বীনের মানুষের উপর ভর করার সুনির্দিষ্ট
প্রমান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (তাফসীরে কুরতুবী ৩/৩৫৫,
তাফসীরে তাবারী ৩/১০১,
তাফসীরে ইবনে কাসীর ১/৩২৬)
সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে- রাসুল (সা.) বলেছেন,
“শয়তান আদম সন্তানের শরীরে
প্রবাহিত হয়, যেমন রক্ত শরীরে প্রবাহিত।” (বুখারী, ৩৩/২৫১। মুসলিম, ২১৭৫)
ইমাম আহমদ (র.) এর ছেলে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত,
“আমি আমার বাবা (ইমাম আহমাদ)
কে বললাম- কিছু মানুষ মানুষের শরীরে জ্বীনের ভর করাকে বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন- ও
আমার সন্তান, তারা মিথ্যা বলছে। আসর করা অবস্থায় অসুস্থ লোকের মুখ দিয়ে জ্বীন কথাও বলতে পারে।”
(মাজমুউল ফাতাওয়া- ইবনে তাইমিয়াহ ১৯/১২)
ইমাম আহমদ এবং ইমাম বায়হাকী কর্তৃক লিপিবদ্ধ সহীহ হাদিসে উল্লেখ
করা হয়েছে, রাসুল (সা.) একবার একটি অসুস্থ বালকের সাক্ষাত পেয়েছিলেন যার উপর জ্বীনের ভর ছিল।
রাসুল (সা.) ছেলেটির দিকে ফিরে জোরে বলেন- “ও আল্লাহর শত্রু,
বের হয়ে আসো। ও আল্লাহর শত্রু,
বের হয়ে আসো। ছেলেটি দ্রুত সুস্থ হয়ে
ওঠে।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, ৩৫৪৮; মুসনাদে আহমদ ৪/১৭১, ১৭২)
এছাড়াও বিভিন্ন সাহাবীদের থেকে অসংখ্য সহীহ হাদিস বর্ণনা করা
হয়েছে এই প্রসঙ্গে যেখানে রাসুল (সা.) সাহরগ্রস্থ রোগীর ওপরে দুআ করে সাহর মুক্ত করেছেন।
মানুষ ছাড়াও অন্যান্য কিছু প্রাণী জ্বীনের উপস্থিতি সম্পর্কে
জানতে পারে। হাদীসে বলা হয়েছে, আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত আছে,
রাসুল(সঃ) বলেছেন-
“যখন তোমরা গাধার চিত্কার শুনতে পাও,
তখন আল্লাহর কাছে শয়তানের থেকে আশ্রয়
প্রার্থনা কর. কারণ শয়তানকে দেখতে পাবার কারণেই তারা চিত্কার করে।” (বুখারী,
৬/৩৫০. মুসলিম ১৭/৪৭)
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত দীর্ঘ একটি হাদীসে এক দুষ্ট লোকের
কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে প্রতি রাতে যাকাতের মাল চুরি করতে আসতো। আবু হুরায়রা প্রতি
রাতেই তাকে ধরে ফেলতেন। কিন্তু লোকটি বিভিন্ন অনুরোধ করে মাফ নিয়ে চলে যেত এবং পরের
রাতে আবার চুরি করতে আসতো। পরপর তিন রাতে সেই মানুষটিকে ধরার পরে রাসুল(সঃ) কে ঘটনা
অবহিত করলে তিনি আবু হুরায়রা কে জিজ্ঞেস করেন, “ওহে আবু হুরায়রা, তুমি কি জানো তুমি এই তিন রাতে কার সাথে কথা বলেছ?
ওটা শয়তান ছিল।” (বুখারী,
৩২৭৫)
বদরের যুদ্ধের সময় ইবলিশ শয়তান মক্কার কুরাইশদের কাছে বনু
কিনানাহর সর্দার সূরাক্বা ইবনে যুশাম এর আকার ধরে গিয়ে তাদেরকে রাসুল(সঃ) এর বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করার প্ররোচনা দিয়েছিল। (ইবনে কাসীর, আল বিদায়া ওয়াল নিহায়া,
৫/৬২)
আবু সাইদ খুদরী থেকে বর্ণিত, রাসুল(সঃ) বলেছেন-
“মদিনার কিছু সংখ্যক জ্বীন মুসলমান হয়েছে। এদেরকে
(প্রাণী হিসেবে) যদি কেউ দেখো, তাহলে তিনবার সাবধান করবে। তারপরেও আবার এলে সেই প্রাণীকে হত্যা
করবে।” (মুসলিম, ২২৩৬)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
সাধারণত মানুষ জ্বীনদেরকে দেখতে পায় না, তবে জ্বীনরা মানুষকে
দেখতে পায়। মানুষ ব্যতীত অন্যান্য প্রাণী জ্বীন দেখতে পায় বলে আমরা উপরের আলোচনায় জানতে
পেরেছি। তারা বিভিন্ন রুপ গ্রহণ করতে সক্ষম। তবে প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে বর্ণিত বিষয়টি
সুস্পষ্টভাবে কুরআন ও হাদীসে পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে আমরা যতটুকু ইসলামের আলোকে জানতে
পারি তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাটই শ্রেয়।