আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
174 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (24 points)
(১) অনিচ্ছাকৃত হত্যার ক্ষেত্রে কিসাস নেয়া যাবে??

যেমন কাউকে খুব বেশি প্রহার করার কারণে মৃত্যু হলো। কিন্তু মেরে ফেলা উদ্যেশ্য ছিল না।

(২) এক্ষেত্রে কিসাস নেয়া যাবে?? নাকি দিয়াত নিতে হবে??


....................................................................................

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

ইসলামে মানবহত্যা মহাপাপ। আল্লাহর সঙ্গে শিরক করার পর মানবহত্যাকে সবচেয়ে বড় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে ইসলামে। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ أَكْبَرُ الْكَبَائِرِ الإِشْرَاكُ بِاللهِ وَقَتْلُ النَّفْسِ وَعُقُوقُ الْوَالِدَيْنِ وَقَوْلُ الزُّورِ أَوْ قَالَ وَشَهَادَةُ الزُّورِ.

 ‘সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, মানুষ হত্যা করা, মা-বাবার অবাধ্যতা করা এবং মিথ্যা কথা বলা।’ (বুখারি : ৬৮৭১)

ইসলামী শরিয়ত সামাজিক অবক্ষয় রোধে হত্যার কঠিন শাস্তির বিধান দিয়েছে। হত্যার ধরন হিসেবে ইসলাম বিভিন্ন ধরনের শাস্তি নির্ধারণ করেছে। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো

১. ইচ্ছাকৃত হত্যা : ইচ্ছাকৃতভাবে ধারালো মারণাস্ত্র বা তার মতো বস্তু দিয়ে কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করা, গাড়িচাপা দিয়ে হত্যা করা, আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা, পাহাড় বা ছাদ থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা, হিংস্র প্রাণীর খামারে ছেড়ে দিয়ে হত্যা করা, বিষপান করিয়ে হত্যা করা, যাদুর মাধ্যমে হত্যা করা এগুলোও ইচ্ছাকৃত হত্যার অন্তর্ভুক্ত। ইচ্ছাকৃত হত্যার শাস্তি হলো আখেরাতে সে জাহান্নামে যাবে এবং দুনিয়াতে তার থেকে কেসাস (হত্যার বদলা) নেওয়া হবে। কেসাস শুধু ইচ্ছাকৃতভাবে অস্ত্র দ্বারা হত্যার কারণেই ওয়াজিব হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি নিহতদের ব্যাপারে কেসাস গ্রহণ করা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে।’ (সুরা বাকারা : ১৭৮)

২. ইচ্ছাকৃতের মতো হত্যা : যে জিনিস দিয়ে সাধারণত মানুষকে হত্যা করা যায় না তা দ্বারা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা। যেমন : ছোট লাঠি বা রড দিয়ে পিটিয়ে বা কিল-ঘুষি দিয়ে হত্যা করা। এই প্রকার হত্যার শাস্তি হলো হত্যাকারীর পরিবার নিহতের পরিবারকে চার প্রকারের একশ উট প্রদান করবে। আর হত্যাকারী নিজে একটি মুসলমান গোলাম দাসত্ব থেকে মুক্ত করবে। তা সম্ভব না হলে লাগাতার ষাট দিন রোজা রাখবে।

৩. ভুলক্রমে হত্যা : যেখানে হত্যাকারী ইচ্ছাকৃতভাবে নিহত ব্যক্তিকে আঘাত করেনি, বরং অকস্মাৎ অন্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত অস্ত্রের আঘাতে কেউ নিহত হয়ে গেল। যেমন, কেউ পাখি শিকার করার জন্য গুলি চালাল, কিন্তু তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কোনো মানুষের ওপর পড়ল।

৪. ভুলক্রমের মতো হত্যা : এমন হত্যা যেখানে হত্যাকারীর অন্তরে হত্যার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না এবং হত্যার পরিবেশও ছিল না। কিন্তু তার কোনো কাজ হত্যার কারণ হয়েছে। যেমন, ছাদ থেকে অন্যের ওপর পড়ার কারণে সে ব্যক্তি নিহত হলো বা ঘুমন্ত অবস্থায় গড়িয়ে কারও ওপর পতিত হওয়ার কারণে সে ব্যক্তি নিহত হলো।

৩য় ও ৪র্থ এই দুই প্রকার হত্যার শাস্তি হলো হত্যাকারীর পরিবার নিহতের পরিবারকে পাঁচ প্রকারের একশ উট বা এক হাজার দিনার অথবা দশ হাজার দিরহাম পরিমাণ সম্পদ প্রদান করবে। মতান্তরে দুইশ গরু অথবা এক হাজার ছাগল প্রদান করবে। আর হত্যাকারী একটি মুসলমান গোলামকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করবে। তা সম্ভব না হলে লাগাতার ষাট দিন রোজা রাখবে। তবে এই দুই প্রকার হত্যায় পরকালে গুনাহ হবে না।

৫. কারণবশত হত্যা : স্বাভাবিক কোনো কাজ কারও মৃত্যুর কারণ হওয়া। যেমন কেউ অন্যের জমি খনন করেছে বা অন্যের জমিনে পাথর রেখে দিল এবং সেখানে পড়ে বা পাথরের আঘাতে কেউ মারা গেল। তাহলে এটাকে বলা হবে কারণবশত হত্যা। এই প্রকার হত্যায় হত্যাকারীর পরিবার নিহতের পরিবারকে পাঁচ প্রকারের একশ উট বা এক হাজার দিনার অথবা দশ হাজার দিরহাম পরিমাণ সম্পদ প্রদান করবে।

উপরিউক্ত শাস্তির বিধানে নিহতের পরিবার ইচ্ছা করলে হত্যাকারীর পরিবারকে ক্ষমা করে দিতে পারে।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতটি দুই নাম্বার প্রকারের অন্তর্ভুক্ত।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

...