بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
যদি কোন সুস্থ্য ব্যক্তি রাগের বশে তালাক দেয়। তাহলে তালাক পতিত
হয়ে যাবে। কারণ তালাক সাধারণত রাগের বশেই মানুষ দিয়ে থাকে। মোহাব্বত করে তালাক দেয়না।
সুতরাং তা পতিত হবে।
ঠিক তেমনি তালাক শব্দ। এটি খুবই জঘন্য একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল
বলা হয়েছে হাদীসে। এ ভয়ানক শব্দটি নিয়ত থাকুক বা না থাকুক রাগে বলুক আর ভাবেসে বলুক
স্ত্রীকে উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ দিয়ে এ শব্দ বের হলেই তালাক পতিত হয়ে যায়।
হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ
رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ
جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ “
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে, ইচ্ছেকৃত
করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়। তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা স্ত্রীকে ফিরিয়ে
নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯,
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}
وفي رد المحتار- ويقع طلاق من غضب
خلافا لابن القيم الخ وهذا الموافق عندنا لما مر فى المدهوش، ( رد المحتار، كتاب
الطلاق، مطلب فى طلاق المدهوش-4/452)
যার সারমর্ম হলো রাগ অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক হয়ে যাবে।
তালাক তো দেওয়াই হয় রাগ হয়ে। কয়জন আছে, শান্তভাবে তালাক দেয়? আসলে তো এমনই হওয়া উচিত ছিল যে, যদি বাস্তবসম্মত ও অনিবার্য
প্রয়োজনে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হয় তাহলে বড়দের সঙ্গে পরামর্শ করে একে অন্যের
কল্যাণকামী হয়ে বুঝে-শুনে, সঠিক মাসআলা জেনে নিয়ে মাসআলা অনুযায়ী
তালাক প্রদানের মাধ্যমে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করবে।
কিন্তু আফসোস! অধিকাংশ
মানুষ মাসআলা জানার চেষ্টাও করে না,
আর না তাদের মধ্যে এই সুবুদ্ধি আছে যে, বড়দের
সাথে পরামর্শ করবে, চিন্তা-ভাবনা করবে। নিজের ইচ্ছাবিরোধী কোনো
কিছু পেলেই রাগের বশে তালাক দিয়ে ফেলে। আর তা এক বা দুইটি নয়; এক নিঃশ্বাসে তিন তালাক।
যখন রাগ প্রশমিত হয় তখন অনুতপ্ত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের কথা
বানাতে থাকে। বলে, আমি রাগের
মাথায় বলে ফেলেছি, তালাক দেওয়ার ইচ্ছা ছিল না। এসব লোকের জেনে
রাখা উচিত যে, তালাক পতিত হওয়ার জন্য নিয়তের কোনো প্রয়োজন
নেই। এটা কোনো ইবাদত নয় যে, এর জন্য নিয়ত করতে হবে। নিয়ত থাক
বা না থাক সর্বাবস্থায় তালাক শব্দ বলে ফেললে বা কাগজে লিখে দিলেই তালাক হয়ে যায়।
তেমনিভাবে রাগের অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক হয়ে যায়, এমনকি
হাস্যরস বা ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দিলেও তা পতিত হয়ে যায়।
অবশ্য কেউ যদি প্রচন্ড রেগে যায় ও রাগের ফলে বেহুঁশ হয়ে পড়ে
আর এ অবস্থায় সে কী বলেছে তার কিছুই মনে না থাকে তাহলে ঐ অবস্থার তালাক কার্যকর হবে
না। শর্ত হলো বেহুশ হয়ে যাওয়া,এবং সেই সময়ের কোনো কথা মনে না থাকা।
★দাম্পত্য জীবন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অনেক বড় ও বিশেষ
একটি নেয়ামত। স্বামী-স্ত্রী সকলের কর্তব্য,
এই নেয়ামতের যথাযথ মূল্যায়ন করা এবং একে অপরের সকল অধিকার আদায় করা।
স্ত্রীর জন্য উচিত নয়, কথায় কথায় স্বামীর কাছে তালাক চাওয়া।
আবার স্বামীর জন্যও জায়েয নয় আল্লাহ তাআলার দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করা।
বিয়ে, তালাক ও দাম্পত্য জীবনের সকল বিধান ও মাসআলা শিক্ষা করা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের
জন্য জরুরি। বিশেষ করে স্বামীর কর্তব্য হল, তালাকের মাসআলা ও
এর পরিণতি সম্পর্কে অবগত না হয়ে মুখে কখনো তালাক শব্দ উচ্চারণ না করা। আর যদি কোনো
কারণে তালাক দেয় এবং এমনভাবে দেয় যে, এখন আর তাদের একসাথে থাকা
শরীয়তে বৈধ নয় তাহলে তাদের আল্লাহকে ভয় করা উচিত। বিভিন্ন টাল-বাহানা, অজুহাতের আশ্রয় নিয়ে কিংবা ভুল কথার উপর ভিত্তি করে অথবা মূল ঘটনা গোপন রেখে
একসাথে বাস না করা উচিত। বিয়ে শুধু একটি সময়ের বিষয় নয়, সারা
জীবনের বিষয়।
বাস্তবেই যদি তালাক হয়ে যায় এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈবাহিক
সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় এরপরও স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসাথে বাস করে তাহলে তা হবে কবীরা
গুনাহ এবং উভয়েই যেন ব্যভিচারের গুনাহ এ লিপ্ত।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
জ্বী রাগের মাথায় ও সুস্থ মস্তিস্কে তালাকের একই হুকুম। তবে কেউ যদি প্রচন্ড রেগে যায় ও রাগের ফলে বেহুঁশ হয়ে পড়ে আর এ অবস্থায় সে
কী বলেছে তার কিছুই মনে না থাকে তাহলে ঐ অবস্থার তালাক কার্যকর হবে না। শর্ত হলো বেহুশ
হয়ে যাওয়া,এবং সেই সময়ের কোনো কথা মনে না থাকা।