উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
শরীয়তের বিধান হলো যদি কোন অবিশ্বাসী পুরস্কার পাবার যোগ্য কোন কাজ করে থাকে , তাহলে তাকে এই পৃথিবীতেই তাকে তার প্রতিদান দিয়ে দেয়া হবে , পরকালে নয় ।
তার অবিশ্বাস তার কাজকে গ্রহণযোগ্য হতে বাধা প্রদান করবে এইভাবে যে , সে পরকালে এর থেকে উপকৃত হতে পারতো , কারণ ভাল কাজ গ্রহণযোগ্য হবার জন্য একটা শর্ত যে , তাকে মুসলিম হতে হবে ।
আত-তাবারী (রাহিঃ) বলেছেন:
আল্লাহকে ভয় করা ছাড়া যদি কোন ব্যক্তি কোন সঠিক কাজ করে থাকে – যেমন, সে মুশরিক অথবা বহুঈশ্বরবাদী – তাকে এই পৃথিবীতেই তার প্রতিদান দিয়ে দেয়া হবে , যেমন সে যদি আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করে , যারা অভাবী তাদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে তাদেরকে দান করে , এবং অন্যান্য ভাল কাজ । মহান আল্লাহ তাকে এই সমস্ত ভাল কাজের জন্য এই পৃথিবীতেই তাকে পুরস্কৃত করবেন , যেমন তার জীবনযাত্রার মান এবং জীবিকা বৃদ্ধি করে দেবেন , তাকে সুখ সাচ্ছন্দ এবং যা সে ভালবাসে তা তাকে দান করবেন , এই পৃথিবীতে যা তার জন্য ক্ষতিকর তা তার থেকে হটিয়ে দিবেন , এবং এরকম আরো অনেক প্রতিদান তাকে দিবেন । কিন্তু আখিরাতে এই সমস্ত প্রতিদানের কোন ভাগ তার জন্য থাকবে না ।
তাফসীর আত-তাবারী, ১৫/২৬৫ ।
হাফিয ইবনু হাজার (রাহিঃ) বলেছেন:
আল-কাযী আইয়্যাদ বলেছেন : অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ আলিমরা ঐক্যমত্য করেছেন যে , অবিশ্বাসীদের কর্মকান্ড পরকালে তাদের কোন উপকার দিবে না ; আনন্দময় কিছু দিয়ে তাদেরকে তার প্রতিদান দেয়া হবে না এবং কোন শাস্তিও তাদের থেকে কমানো হবে না , যদিও তাদের কিছু সংখ্যককে অন্যদের থেকে আরো গুরুতর শাস্তি প্রদান করা হবে ।
আল-ফাতহ, ৯/৪৮
এটা বোঝা উচিত যে মহান আল্লাহ , তাদের ভাল কাজের (যা লোকদেরকে উপকৃত করেছে) পুরস্কার নষ্ট করে দিবেন না ; কিন্তু তাদের কাজের পুরস্কার এই পৃথিবীতের আসবে , পরকালে নয় । বিশ্বাসীদের জন্য , তাদের ভাল কাজের প্রতিদান এই পৃথিবীতে এবং পরকালেও দেয়া হবে ।
আনাস ইবনু মালিক (রাদ্বিঃ) হতে বর্ণিত , তিনি বলেছেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন : “যদি কোন কাফির কোন ভাল কাজ করে , এর জন্য তাকে এই পৃথিবীতেই তার জীবিকার ভাল উপকরণ দেয়া হবে । আর ঈমানদারদের জন্য , আল্লাহ তাদের সৎকর্মগুলিকে পরকালে তাদের জন্য সংরক্ষণ করবেন এবং এই পৃথিবীতে তাদের আনুগত্যের পরিমাণ অনুপাতে তাদের প্রতিদানের ব্যবস্তা করে দিবেন ।
বর্ণনা করেছেন মুসলিম (২৮০৮).
অন্য একটি বর্ণনা অনুযায়ী : : “আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের সাথে তাদের ভাল কাজের প্রতিদান দেয়ার ব্যাপারে অন্যায় আচরণ করবেন না । তিনি এই পৃথিবীতে ভাল কাজের কারণে তাদের পুরস্কৃত করবেন এবং আখিরাতেও তাদের ভাল কাজের জন্য তাদের প্রতিদান দেবেন । আর কাফিরদের জন্য , তাদের ভাল কাজের জন্য (যা তারা আল্লাহর ওয়াস্তে করেছিল) এই পৃথিবীতেই তাদের জীবন জীবিকার ভাল উপকরণ দেয়া হবে , অতঃপর যখন সে পরকালে যাবে , তখন তাকে প্রতিদান দেয়ার জন্য কোন ভাল কাজ অবশিষ্ট থাকবে না ।”
আপনার এটা বোঝা উচিত যে , দুনিয়াতে এই প্রতিদান নির্দিষ্ট নয় ; বরং এটা আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল । মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন (অর্থের ব্যাখ্যা):
“ যে কেউ দ্রুত লাভের আকাঙ্ক্ষা করে, তাকে আমি এখানেই যা কিছু দিতে চাই দিয়ে দেই, তারপর তার ভাগে জাহান্নাম লিখে দেই, যার উত্তাপ সে ভুগবে নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে।” [সূরা আল-ইসরা’ ১৮:১৮]
আশ-শানক্বেতী (রাহিঃ) বলেছেন:
এই ব্যাপারে এটা বোঝা উচিত যে , আমরা কিসের জন্য কুর’আন এবং সুন্নাহ থেকে প্রমাণ উপস্থাপন করছি , যে অবিশ্বাসিরা এই পৃথিবীতেই তাদের সৎকর্মের জন্য পুরস্কৃত হতে পারে , যেমন তার পিতা-মাতাকে সম্মান করা , আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা , মেহমান এবং প্রতিবেশীদের হক্ক আদায় করা , দুস্থ মানুষদের সাহায্য করা এবং এরকম আরো অনেক – এই সমস্ত বিষয় মহিমান্বিত আল্লাহর ইচ্ছধীন , যেমন তিনি একটি আয়াতে বলেছেন (অর্থের ব্যাখ্যা):
“ যে কেউ আশু লাভের আকাঙ্ক্ষা করে, তাকে আমি এখানেই যা কিছু দিতে চাই দিয়ে দেই, তারপর তার ভাগে জাহান্নাম লিখে দেই, যার উত্তাপ সে ভুগবে নিন্দিত ও ধিকৃত হয়ে।” [সূরা আল-ইসরা’ ১৭:১৮]
,
★★শরীয়তের বিধান হলো কোনো অমুসলিম যদি মসজিদ,মাদ্রাসা ইত্যাদিতে দান করে,তার টাকা যদি হালাল হয়,এবং তার থেকে টাকা নিলে ভবিষ্যতে মসজিদ মাদ্রাসার যদি কোনো ক্ষতি হওয়ার আশংকা না থাকে,তাহলে তার দান গ্রহন করা জায়েজ আছে।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১৩/২৪৯)
ফাতাওয়ায়ে আলমগীরীতে আছে
ولو أوصی بثلث مالہ بأن یحج عنہ قوم من المسلمین أو یبنی بہ مسجد للمسلمین إن کان ذٰلک لقوم بأعیانہم صحت الوصیۃ۔ (الفتاویٰ الہندیۃ، کتاب الوصایا / الباب الثامن في وصیۃ الذمي والحربي ۶؍۱۳۲)
যার সারমর্ম হলো যদি কোনো অমুসলিম মসজিদে দান করার অছিয়ত করে,তাহলে তার অছিয়ত ছহিহ আছে।
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত দানশীল ব্যাক্তি তার দানের প্রতিদান দুনিয়াতেই পাবে।