উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
ইসলামে কিছু নাম এমন আছে,যেগুলো রাখা হারাম,কিছু নাম এমন রয়েছে,যেগুলো রাখা মাকরুহ।
ইহা ছাড়া বাকি সকল নাম রাখা জায়েজ।
★ইসলামে যেসব নাম রাখা হারাম:
আল্লাহর নাম নয় এমন কোন নামের সাথে গোলাম বা আব্দ (বান্দা) শব্দটিকে সম্বন্ধ করে নাম রাখা হারাম। যেমন,
আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের দাস),
আব্দুল কালাম (কথার দাস),
আব্দুল কাবা (কাবাগৃহের দাস),
আব্দুন নবী (নবীর দাস),
গোলাম রসূল (রসূলের দাস),
গোলাম নবী (নবীর দাস),
আব্দুস শামছ (সূর্যের দাস),
আব্দুল কামার (চন্দ্রের দাস),
আব্দুল আলী (আলীর দাস),
আব্দুল হুসাইন (হোসাইনের দাস),
আব্দুল আমীর (গর্ভনরের দাস),
গোলাম মুহাম্মদ (মুহাম্মদের দাস),
গোলাম কাদের (কাদেরের দাস) ইত্যাদি।
অনুরূপভাবে যেসব নামকে কেউ কেউ আল্লাহর নাম মনে করে ভুল করেন অথচ সেগুলো আল্লাহর নাম নয় সেসব নামের সাথে আব্দ বা দাস শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও হারাম। যেমন- আব্দুল মাবুদ (মাবুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেব কুরআন ও হাদীছে আসেনি, বরং আল্লাহর বিশেষণ হিসেবে এসেছে) আব্দুল মাওজুদ (মাওজুদ শব্দটি আল্লহর নাম হিসেব কুরআন ও হাদীছে আসেনি)
অনুরূপভাবে শাহেনশাহ (জগতের বাদশাহ) নাম রাখা হারাম। [মুসলিম] মালিকুল মুলক (রাজাধিরাজ) নাম রাখা হারাম। সাইয়্যেদুন নাস (মানবজাতির নেতা) নাম রাখা হারাম। [তুহফাতুল মাওলুদ ১/১১৫]
সরাসরি আল্লাহর নামে নাম রাখা হারাম। যেমন- আর-রাহমান, আর-রহীম, আল-আহাদ, আস-সামাদ, আল-খালেক, আর-রাজেক, আল- আওয়াল, আল-আখের ইত্যাদি।
★যেসব নাম রাখা মাকরুহ :
ক) যেসব নামের মধ্যে আত্মস্তুতি আছে সেসব নাম রাখা মাকরুহ। যেমন, মুবারক (বরকতময়) যেন সে ব্যক্তি নিজে দাবী করছেন যে তিনি বরকতময়, হতে পারে প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। অনুরূপভাবে বাররা (পূন্যবতী)।·
খ) শয়তানের নামে নাম রাখা। যেমন- ইবলিস, ওয়ালহান, আজদা, খিনজিব, হাব্বাব ইত্যাদি।
গ) ফেরাউনদের নামে নাম রাখা। যেমন- ফেরাউন, হামান, কারুন, ওয়ালিদ।[তুহফাতুল মাওদুদ ১/১১৮]
ঘ) বিশুদ্ধ মতে ফেরেশতাদের নামে নাম রাখা মাকরুহ। যেমন- জিব্রাইল, মিকাইল, ইস্রাফিল।
ঙ) যে সকল নামের অর্থ মন্দ। মানুষ যে অর্থকে ঘৃণা করে এমন অর্থবোধক কোন নাম রাখা। যেমন, কালব (কুকুর) মুররা (তিক্ত) হারব (যুদ্ধ)।
চ) একদল আলেম কুরআন শরীফের নামে নাম রাখাকে অপছন্দ করেছেন। যেমন- ত্বহা, ইয়াসীন, হামীম ইত্যাদি। [ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৭]
তবে অনেকে এই নাম গুলো জায়েজও বলেন।
ছ) ইসলাম বা উদ্দীন শব্দের সাথে সম্বন্ধিত করে নাম রাখা মাকরূহ। ইসলাম ও দ্বীন শব্দদ্বয়ের সুমহান মর্যাদার কারণে। [ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৫, তুহফাতুল মাওদুদ ১/১৩৬]·
জ) দ্বৈতশব্দে নাম রাখাকে শায়খ বকর আবু যায়দ মাকরুহ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন- মোহাম্মদ আহমাদ, মোহাম্মদ সাঈদ।
ঝ) অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে আব্দ (দাস) শব্দ বাদে অন্য কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করা। যেমন- রহমত উল্লাহ (আল্লাহর রহমত)।
ঞ) শায়খ বকর আবু যায়দের মতে রাসূল শব্দের সাথে কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও মাকরূহ। যেমন- গোলাম রাসূল (গোলাম শব্দটিকে যদি আরবী শব্দ হিসেবে ধরা হয় এর অর্থ হবে রাসূলের চাকর বা বাছা তখন এটি মাকরূহ। আর যেসব ভাষায় গোলাম শব্দটি দাস অর্থে ব্যবহৃত হয় সেসব ভাষার শব্দ হিসেবে নাম রাখা হয় তখন এ ধরনের নাম রাখা হারাম যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।)
,
★★অনন্য নামের অর্থ অদ্বিতীয়,অভিন্ন, একমাত্র, অতুলনীয় । এর মতো আর কোনোটি হয় না ।
এই নাম রাখা বা এই নামে কাউকে ডাকার দ্বারা কেউ ইবাদতের ক্ষেত্রে যে আল্লাহ অদ্বিতীয়, এমন অর্থ উদ্দেশ্য নেয়না।
বরং অভিন্ন বা অতুলনীয় অর্থই উদ্দেশ্য নিয়ে থাকে,তাই এই নাম রাখা জায়েজ আছে।
,
এটা শিরকী নাম নয়।
,
তবে নাম রাখার ক্ষেত্রে একটি বিধান সেটা হলো যেসব নামের মধ্যে আত্মস্তুতি আছে সেসব নাম রাখা মাকরুহ।
যেমন মুবারক (বরকতময়) যেন সে ব্যক্তি নিজে দাবী করছেন যে তিনি বরকতময়, হতে পারে প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো।
অনন্যা নামটিও অনেকটা এমনই অর্থই বহন করে,
তাই সতর্কতামূলক অনন্যা নাম না রাখাই ভালো।