আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+2 votes
953 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (3 points)

আসসালামু আলাইকুম। বিভিন্ন বিখ্যাত সাইটে ফতওয়া দেখলাম, চুল স্ট্রেইট করা যা রিবন্ডিং বা চুল নরম করার মাধ্যমে করা হয়, তা স্বামীর কাছে সুন্দর হয়ে থাকার জন্য হয় তাহলে তাতে কোন সমস্যা নাই যদি না তা গায়রে মাহরামের সামনে নিজের সৌন্দর্য প্রকাশে না হয়, অন্য ধর্মের মানুষর ট্রেন্ড অনুসরণের জন্য না হয় এবং প্রক্রিয়া টায় যদি চুলের কোন ক্ষতি ও অপচয় না থাকে। কিন্তু চুল রিবন্ডিং সাধারণত যে দুইভাবে করা হয়, স্ট্রেইট ও সফ্ট রিবন্ডিং, দুইটিতেই বিভিন্ন ক্যমিক্যাল, ও উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার করা হয় (সফ্ট রিবন্ডিং এ তুলনামূলক কম ক্ষতিকারক ক্যমিক্যাল ও কম উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার হয়) যা মাথার উপরিভাগের চুলে বিদ্যমান আন্ত:আণবিক বন্ধন ভেঙে সোজা চুলের আন্ত:আণবিক বন্ধনে রূপান্তর করা হয়, যেটা নতুন গজানো চুলে থাকে না। তো কেউ যদি চুল কাটতে থাকে তাহলে বিভিন্ন ক্যমিক্যাল এর মাধ্যমে তার রূপান্তরিত সোজা চুল একসময় আর থাকে না। কিন্তু নতুন চুল না গজালে তার নিজ হাতে রূপান্তরিত চুলগুলো থেকে যায়। চুলের প্রাকৃতিক গঠন যা ছিল অর্থাৎ আল্লাহ শুরুতে যে গঠন টা দিছে তা alter করে যে transformed চুল create করা হইছে তা থেকে যাবে। 

নর্মালি মেয়েরা যে স্ট্রেইট করার মেশিন ঘরে নিত্যদিন ব্যবহার করে, যারা এবং যে দেশ থেকে স্ট্রেইট মেশিন এর জন্ম তারাই বলে যে এটা ব্যবহার করলে ও চুল এর ক্ষতি হয়। সেখানে রিবন্ডিং এ যে তাপমাত্রা ব্যবহার হয় তা ফুটন্ত গরম পানির চেয়ে ও বেশি আনুমানিক 180 ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেখানে তো চুলের ক্ষতি হবেই। যারা এসব প্রক্রিয়ার জনক তারাই বলে যে এগুলো করলে চুলের ক্ষতি হবেই। 

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, উপরের প্রত্যেকটা জিনিস ই আমার কাছে গুনাহ মনে হচ্ছে। চুলে বেশি হিট দিয়ে চুল কিছুক্ষণের জন্য সোজা সুন্দর দেখানোর জন্য চুলে স্থায়ী ক্ষতি করা ও আল্লাহ যার চুলে যে গঠন দিয়েছে তা পরিবর্তন করা, সবকিছুই গুনাহ মনে হচ্ছে। তা সত্বে ও কেন বিভিন্ন সাইটে এটা জায়েয? ফতওয়া তে লিখা ছিল ক্ষতি করা যাবে না, কিন্তু ক্ষতি করা ছাড়া চুল স্ট্রেইট হয় না। ক্ষতি করা ছাড়া চুল স্মুথ বা সফ্ট করা যায় কিন্তু স্ট্রেইট বা সোজা করা যায় না। তাহলে কি চুল সোজা করার জন্য চুলের যে ক্ষতি গুলো হচ্ছে যেটা চুলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান, প্যাক, ক্যমিক্যাল দিয়ে কখনো মেরামত করা যায় কখনো করা যায় না, তা ক্ষতির তালিকায় ধরা হচ্ছে না? 

এসব প্রক্রিয়া আর পরিণতির পর চুল রিবন্ডিং করাটা আসলে কতটুক আর কিভাবে শরিয়ত সম্মত তা একটু বিশদ্ভাবে বুঝিয়ে দিলে উপকৃত হব ইন শা আল্লাহ। ধৈর্য সহকারে আমার মাসআলা টা বুঝার জন্য ও এটা নিয়ে সাহায্য করার জন্য শুকরিয়া। জাযাকুমল্লহু খইরন ।

1 Answer

0 votes
by (583,410 points)


ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহাম।
জবাবঃ-
https://www.ifatwa.info/466 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে,
এখন সহসাই প্রশ্ন জাগতে পারে যে, তাহলে কোন প্রকার/ধরণের পরিবর্তন-পরিবর্ধন হারাম?
কেননা আমরা কিছু পরিবর্তন কে জায়েয বলে জানি ও দেখি।
যেমনঃ- মুছ কাটা,নক কাটা,গোপ্তস্তান পরিস্কার করা,ইত্যাদি ইত্যাদি।

এবং আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন করা হালাল না হারাম?
এ সম্পর্কে মূলনীতি কি?

প্রতি উত্তরে বলা যায় যে,
উলামাগণ এর অনেক কারণ বের করে থাকেন।
আল্লামা কুরতুবী রাহ বলেনঃ
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻘﺮﻃﺒﻲ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ : " ﻭﻫﺬﻩ ﺍﻷﻣﻮﺭ ﻛﻠﻬﺎ ﻗﺪ ﺷﻬﺪﺕ ﺍﻷﺣﺎﺩﻳﺚ ﺑﻠﻌﻦ ﻓﺎﻋﻠﻬﺎ ﻭﺃﻧﻬﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻜﺒﺎﺋﺮ ، ﻭﺍﺧﺘﻠﻒ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻌﻨﻰ ﺍﻟﺬﻱ ﻧﻬﻰ ﻷﺟﻠﻬﺎ ، ﻓﻘﻴﻞ : ﻷﻧﻬﺎ ﻣﻦ ﺑﺎﺏ ﺍﻟﺘﺪﻟﻴﺲ ، ﻭﻗﻴﻞ : ﻣﻦ ﺑﺎﺏ ﺗﻐﻴﻴﺮ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻛﻤﺎ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ، ﻭﻫﻮ ﺃﺻﺢ ، ﻭﻫﻮ ﻳﺘﻀﻤﻦ ﺍﻟﻤﻌﻨﻰ ﺍﻷﻭﻝ ، ﺛﻢ ﻗﻴﻞ : ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻤﻨﻬﻲ ﻋﻨﻪ ﺇﻧﻤﺎ ﻫﻮ ﻓﻴﻤﺎ ﻳﻜﻮﻥ ﺑﺎﻗﻴﺎً ؛ ﻷﻧﻪ ﻣﻦ ﺑﺎﺏ ﺗﻐﻴﻴﺮ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ، ﻓﺄﻣﺎ ﻣﺎﻻ ﻳﻜﻮﻥ ﺑﺎﻗﻴﺎً ﻛﺎﻟﻜﺤﻞ ﻭﺍﻟﺘﺰﻳﻦ ﺑﻪ ﻟﻠﻨﺴﺎﺀ ﻓﻘﺪ ﺃﺟﺎﺯ ﺍﻟﻌﻠﻤﺎﺀ ﺫﻟﻚ "
এই সমস্ত জিনিষে অভ্যস্ত লোকদেরকে হাদীসে অভিসম্পাত করা হয়েছে এবং তা কবিরা গুনাহ।কোন কারণে নিষেধ করা হয়েছে এ সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মধ্যে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয়।
কেউ বলেন দোষ গোপন করে ধোকা দেওয়ার কারণে,আবার কেউ বলেন,আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন আনার কারণে যেমনটা ইবনে মসউদ রাযি বলেছেন।ইবনে মাসউদ রাযি এর উল্লিখিত কারণটাই হারাম হওয়ার বিশুদ্ধ কারণ বলে মনে হয়।এবং এই ব্যাখ্যা প্রথমোক্ত অর্থকেও শামিল রাখে।অতঃপর বলা হয়,এই নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র ঐ সমস্ত বিষয়ে যাতে পরিবর্তনটা স্থায়ীভাবে থাকে, সুতরাং যে সমস্ত পরিবর্তন স্থায়ীভাবে অবশিষ্ট থাকে না,যেমন সুরমা ওমহিলাদের বিভিন্ন প্রকার সৌন্দর্যবর্ধন সামগ্রী তা জায়েয-ই হবে।
(তাফসীরে ক্বুরতুবী৫/৩৯৩)

ইমাম ক্বুরতুবী রাহ এর উপরোল্লিখিত বক্তব্যে হারাম হওয়ার একটি সুনির্দিষ্ট মূলনীতির দিকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
আর তা হল,স্থায়ী "তাগাইয়ুরে খালক্বিল্লাহ"
(অর্থাৎ আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন যা স্থায়িভাবে থাকবে)
ইমাম ক্বুরতুবী রাহ এর উক্ত আলোচনা থেকে অনুধাবনকৃত মূলনীতি অত্যন্ত সুস্পষ্ট বলেই মনে হচ্ছে।কেননা উনার বর্ণনাকৃত মূলনীতির আলোকে পরস্পর বিরোধী বর্ণনা তথা হাদীসে বর্ণিত(আল্লাহর সৃষ্টিতে)হারাম পরিবর্তন এবং হালাল পরিবর্তন যেমন সুরমা ইত্যাদির মধ্যে একটা সামঞ্জস্যসাধন অদ্য সম্ভবপর হবে।(শেষ)

সুপ্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
যেহেতু চুলের রিবন্ডিংটা স্থায়ী নয়, তাই জায়েযের ফাতাওয়া দেয়া হয়ে থাকে।
তবে আপনি যদি ক্ষতিকর মনে করেন, তাহলে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...