ওয়া আলাইকুমুস সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম।
জবাবঃ
ছেলে বা মেয়ের বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক
হবার মূল নিদর্শন বীর্যস্খলন হওয়া। এটির প্রকাশক অনেক কিছুই হতে পারে। যেমন
১. ছেলে মেয়েদের সেটি স্বপ্নদোষের মাধ্যমে
প্রকাশিত হতে পারে।
২. ছেলেদের দাড়ি গোফ উঠা আর মেয়েদের স্তন বড়
হওয়া ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ পেতে পারে।
৩. মেয়েদের হায়েজ আসা, গর্ভধারণ করা ইত্যাদির মাধ্যমেও বালেগ
হওয়া সাব্যস্ত হয়।
وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنكُمُ الْحُلُمَ [٢٤:٥٩]
তোমাদের সন্তান-সন্ততিরা যখন
বায়োঃপ্রাপ্ত হয়, [সূরা আননূর-৫৯]
এইতো গেল নিদর্শন হিসেবে বালেগ হওয়া
নির্ধারণ করা। যা নির্ধারণ করা খুবই সহজ। কিন্তু কথা হল, যদি নিদর্শন বুঝা না যায়,তাহলে বয়স হিসেবে কিভাবে বালেগ হওয়া
নির্ধারণ করবে?
বয়সের ভিত্তিতে বালেগ ও নাবালেগ নির্ধারণে
ফুক্বাহায়ে কেরামের মাঝে বিস্তর মতভেদ হয়ে গেছে। আসলে এটি নির্ণয় করা একটু দূঃরহ
ব্যাপারও। কারণ সমাজ, পরিবেশ এবং
রাষ্ট্রের আবহওয়ার ভিন্নতার কারণে মানুষের শারীরিক গঠনে, আচরণে ভিন্নতা দেখা দেয়। সেই হিসেবে
প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া না হওয়ার বিষয়টিও যেহেতু শরীরের সাথে অনেকটা সম্পর্কিত, তাই এটির বয়সসীমা নির্ধারণও বেশ দুঃসাধ্য
বিষয়।
এ কারণেই ফুক্বাহায়ে কেরামের মাঝে বালেগ
হবার বয়স নির্ধারণে মতভেদ হয়ে গেছে। যেমন- ক). সতের বছর। খ). পনের বছর। ইত্যাদি।
তবে প্রাধান্য পাওয়া বক্তব্য হল, বালেগ হবার উপরোক্ত আলামতগুলো যদি কোন
ছেলে বা মেয়ের মাঝে প্রকাশিত না হয়, তাহলে সন্তানের বয়স পনের বছর হলেই উক্ত ছেলে মেয়ে বালেগ
হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।
عن ابن عمر رضي الله عنهما أنه عُرِض على النبي صلى الله عليه
وسلم يوم أُحدٍ وله أربع عشرة سنة فلم يُجِزْه، وعُرِض عليه يوم الخندق وله خمس
عشرة سنة فأجازه.
ইবনে উমর রাঃ উহুদের জিহাদে অংশ নেবার
অনুমতি চাইলেন, তখন তার বয়স ছিল
চৌদ্দ বছর। রাসূল সাঃ তাকে অনুমতি প্রদান করেননি। কিন্তু খন্দকের জিহাদের অংশ নিতে
অনুমতি চাইলে অনুমতি দেয়া হয়, তখন তার বয়স ছিল পনের বছর। [আলআহাদ ওয়ালমাছানী, হাদীস নং-৭৪৬]
বুঝা গেল, শরীয়তের মুকাল্লাফ হতে হলে আর কোন আলামত
না থাকলে বয়স হিসেবে কমপক্ষে পনের বছর হতে হয়। আল ইনায়া শারহুল হেদায়া ৮/২০১;আদ্দুররুল মুখতার ৬/১৫৩;তাফসীরে কুরতুবী ১২/১৫১, -সহীহ বুখারী হাদীস : ২৬৬৪, ৪০৯৭; আললুবাব ফী শরহিল কিতাব ২/১৬।
হাদীস শরীফে এসেছে-
مروا أولادكم بالصلاة وهم أبناء سبع سنين
واضربوهم عليها وهم أبناء عشر وفرقوا بينهم في المضاجع
অর্থ : তোমাদের সন্তানদেরকে
নামাযের আদেশ দাও যখন তাদের বয়স সাত বছর হবে। আর দশ বছর বয়স হলে নামাযের জন্য
তাদেরকে প্রহার কর এবং তাদের পরস্পরের বিছানা আলাদা করে দাও। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ৪৯৫
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ
عَلِيٍّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " رُفِعَ
الْقَلَمُ عَنْ ثَلاَثَةٍ عَنِ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنِ الصَّبِيِّ
حَتَّى يَشِبَّ وَعَنِ الْمَعْتُوهِ حَتَّى يَعْقِلَ " .
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিন ব্যক্তির উপর থেকে দন্ডবিধি রহিত করে দেওয়া হয়েছে, ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ না
সে জাগ্রত হয়, শিশু যতক্ষন না সাবালক হয়, বেহুশ ব্যক্তি যতক্ষণ না তার হুশ ফিরে এসেছে। - ইবনু মাজাহ
২০৪১, ২০৪২, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১৪২৩ [আল মাদানী প্রকাশনী]
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. প্রশ্নোক্ত
ক্ষেত্রে বালেগ হওয়ার পর থেকে যত নামাজ, রোজা করেনি সবগুলোর কাযা আদায় করবে। ৭ বছর বয়স বা ১০ বছর বয়স থেকে নয়। নিয়ত
এভাবে করবে ‘আমি জীবনের সর্ব প্রথম ফজরের নামাজের কাযা আদায় করছি।’ আবার নিয়ত করবে
‘আমি জীবনের সর্ব প্রথম ফজরের নামাজের কাযা আদায় করছি।’ এভাবে সব ফজর নামাজগুলোর
কাযা আদায় করবে। এভাবে নিয়ত করার কারণ হলো যখন সে জীবনের সর্ব প্রথম ফজরের নামাজের
কাযা আদায় করে ফেলবে তখন অটোমেটিক জীবনের দ্বিতীয় ফজরের নামাজ প্রথমে হয়ে যাচ্ছে।
এভাবে জহর, আসর, মাগরীব, ইশা ও বেতরের নামাজ কাযা আদায় করবে।
তেমনীভাবে
রোজার নিয়ত করে কাযা আদায় করবে অর্থাৎ এভাবে নিয়ত করবে ‘আমি জীবনের
সর্ব প্রথম রোজার কাযা আদায় করছি।’
২. ১০ বছর বয়সে বাচ্চা নামাজ না পড়লে এই জন্যে মারতে বলা
হয়ে যাতে করে বালেগ হয়ে সে কোন নামাজ কাযা না করে এবং ছোট থেকেই যেনো নামাজ পড়ায়
অব্যস্থ হয়ে যায়।
৩. যেহেতু সে ঐ সময় নাবালেগ ছিলো। তাই ঐ সময়ের গুনাহ ও
খারাপ চিন্তা মাফ। সুতরাং এতে পেরেশানীর কোন কিছু নেই।
৪. বালেগ হওয়ার আলামত যেই বছর থেকে
প্রকাশ পেয়েছে সেই বছর থেকে নামাজ, রোজা
কাযা করবে।