উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
লজ্জাস্থান খোলা অবস্থায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা,(চাই সেটা বাংলা ভাষায় হোক বা আরবী ভাষায়,) বা কুরআন তেলাওয়াত করা এটা আল্লাহর সাথে বেয়াদবি করার শামীল।
যদিও সেই ঘরে কেউ না থাকুক,তারপরেও এটা নাজায়েজ।
সুতরাং এহেন কাজ থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
সুস্থ ব্যাক্তির জন্য এটাকে কোনো ভাবেই জায়েজ বলা যায়না।
তবে এমনিতেই মাথায় কাপড় না থাকা,ওড়না না থাকা,ইত্যাদি অবস্থায় দোয়া, তিলাওয়াত জায়েজ। এতে সমস্যা নেই।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ-
حدثنا بهز بن حكيم حدثني أبي عن جدي قال قلت : يا رسول الله عوراتنا ما نأتي منها وما نذر ؟ قال احفظ عورتك إلا من زوجتك أو مما ملكت يمينك فقال الرجل يكون مع الرجل ؟ قال إن استطعت أن لا يراها أحد فافعل قلت والرجل يكون خاليا قال فالله أحق أن يستحيا منه
এক হাদিসে এসেছে যে, মুয়াবিয়া বিন হাইদা হতে বর্ণিত। একদা রাসূল সা. বলেছেন যে, তুমি তোমার বিবি ও তোমার দাসী ছাড়া অপরের নিকট হতে তোমার লজ্জাস্থানকে সর্বদা রক্ষা কর (অর্থাৎ ঢেকে রাখবে)। আমি বললাম-“ইয়া রাসূলাল্লাহ! বলুন! যদি কোন ব্যক্তি নির্জনে একাকী থাকে! (তখনও কি তা ঢেকে রাখতে হবে? প্রয়োজন ছাড়া খোলা নিষিদ্ধ?) তিনি বললেন (হ্যাঁ) আল্লাহ তায়ালাকে অধিক লজ্জা করা উচিত। [জামে তিরমিজী, হাদীস নং-২৭৬৯]
,
★তবে সতর খোলা অবস্থায় মনে মনে দোয়া,যিকির,কুরআন তেলাওয়াত করা যেতে পারে,এটি জায়েজ আছে।
۔
কুরআন তেলাওয়াত করার আদব সমূহঃ
প্রথম আদব : নিয়ত শুদ্ধ করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের ওপর আগুনের শাস্তি কঠোর করা হবে বলে জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন ওই কারি, যিনি ইখলাসের সঙ্গে কোরআন তিলাওয়াত করতেন না। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৮২; সহিহ ইবন হিব্বান, হাদিস : ৪০৮)
দ্বিতীয় আদব : পবিত্র হয়ে অজু অবস্থায় কোরআন তিলাওয়াত করা। অজু ছাড়াও কোরআন পড়া যাবে, তবে তা অজু অবস্থায় পড়ার সমান হতে পারে না।
তৃতীয় আদব : কোরআন তিলাওয়াতের আগে মিসওয়াক করা। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছে, ‘তোমাদের মুখগুলো কোরআনের পথ। তাই সেগুলোকে মিসওয়াক দ্বারা সুরভিত করো।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২৯১)
চতুর্থ আদব : তিলাওয়াতের শুরুতে আউজুবিল্লাহ পড়া। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘সুতরাং যখন তুমি কোরআন পড়বে, তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাও।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৮)
পঞ্চম আদব : বিসমিল্লাহ পড়া। তিলাওয়াতকারীর উচিত সুরা তাওবা ছাড়া সব সুরার শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া। রাসুলুল্লাহ (সা.) থেকে প্রমাণিত যে তিনি এক সুরা শেষ করে বিসমিল্লাহ বলে আরেক সুরা শুরু করতেন। শুধু সুরা আনফাল শেষ করে সুরা তাওবা শুরু করার সময় বিসমিল্লাহ পড়তেন না।
ষষ্ঠ আদব : তারতিলের সঙ্গে (ধীরস্থিরভাবে) কোরআন পড়া। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তারতিলের সঙ্গে কোরআন তিলাওয়াত করো।’ (সুরা : মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৪)
সপ্তম আদব : সুন্দর করে মনের মাধুরী মিশিয়ে কোরআন পড়া। বারা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে এশার নামাজে সুরা ত্বিন পড়তে শুনেছি। আমি তাঁর চেয়ে সুন্দর কণ্ঠে আর কাউকে তিলাওয়াত করতে শুনিনি।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫৪৬; মুসলিম, হাদিস : ১০৬৭)
অষ্টম আদব : সুরসহকারে কোরআন তিলাওয়াত করা। এটি সুন্দর করে কোরআন তিলাওয়াতের অংশ। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘সে আমার উম্মত নয়, যে সুরসহযোগে কোরআন পড়ে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৫২৭; আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৭১)
নবম আদব : রাতে ঘুম পেলে বা ঝিমুনি এলে তিলাওয়াত থেকে বিরত থাকা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ রাতে নামাজ পড়ে, ফলে তার জিহ্বায় কোরআন এমনভাবে জড়িয়ে আসে যে সে কী পড়ছে তা টের পায় না, তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৮৭২; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৮২১৪)
অর্থাৎ তার উচিত এমতাবস্থায় নামাজ না পড়ে বিছানায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়া, যাতে তার মুখে কোরআন ও অন্য কোনো শব্দের মিশ্রণ না ঘটে এবং কোরআনের আয়াত এলোমেলো হয়ে না যায়।
দশম আদব : ফজিলতপূর্ণ সুরাগুলো ভালোভাবে শিক্ষা করা এবং সেগুলো বেশি বেশি তিলাওয়াত করা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ কি রাত্রিকালে কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ তিলাওয়াতে অক্ষম? তারা বলল, কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ কিভাবে পড়া যাবে! তিনি বলেন, ‘সুরা ইখলাস কোরআনের এক-তৃতীয়াংশের সমতুল্য।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৯২২; বুখারি, হাদিস : ৫০১৫)
একাদশ আদব : ধৈর্য নিয়ে কোরআন তিলাওয়াত করা। যিনি অনায়াসে কোরআন পড়তে পারেন না, তিনি আটকে আটকে ধৈর্যসহ পড়বেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোরআন পাঠে যে অভিজ্ঞ ব্যক্তি কোরআন তিলাওয়াত করে, সে সম্মানিত রাসুল ও পুণ্যাত্মা ব্যক্তিদের সঙ্গে থাকবে। আর যে ব্যক্তি তোতলাতে তোতলাতে সক্লেশে কোরআন তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দ্বিগুণ নেকি লেখা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৯৩৭; মুসলিম, হাদিস : ১৮৯৮)
দ্বাদশ আদব : কোরআন তিলাওয়াতের আরেকটি আদব হলো তিলাওয়াতের সময় ক্রন্দন করা। আল্লাহ তাআলা তিলাওয়াতের সময় ক্রন্দনরতদের প্রশংসা করে বলেন, ‘আর তারা কাঁদতে কাঁদতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১০৯)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) আমাকে বলেছেন, আমাকে তুমি তিলাওয়াত করে শোনাও। বললাম, আমি আপনাকে তিলাওয়াত শোনাব, অথচ আপনার ওপরই এটি অবতীর্ণ হয়েছে? তিনি বলেন, আমি অন্যের তিলাওয়াত শুনতে পছন্দ করি। অতঃপর আমি তাঁকে সুরা নিসা পড়ে শোনাতে লাগলাম। যখন আমি সুরা নিসার ৪১ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করলাম, তিনি বললেন, ব্যস, যথেষ্ট হয়েছে। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম তাঁর চোখ থেকে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে। (বুখারি, হাদিস : ৫০৫০; মুসলিম, হাদিস : ১৯০৩)
আয়াতটি হলো, ‘যখন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং তোমাকে উপস্থিত করব তাদের ওপর সাক্ষীরূপে, তখন কী অবস্থা হবে?’
কাসিম (রহ.) একবার আয়েশা (রা.)-এর কাছ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তিনি দেখেন, আয়েশা (রা.) একটি আয়াত বারবার আবৃত্তি করছেন আর কেঁদে কেঁদে দোয়া করছেন। আয়াতটি হলো, ‘অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং আগুনের আজাব থেকে আমাদের রক্ষা করেছেন।’ (সুরা : তুর, আয়াত : ২৭)
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) যখন এ আয়াত তিলাওয়াত করেন, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেন। আয়াতটি হলো, ‘আর মৃত্যুর যন্ত্রণা অবশ্যই আসবে, যা থেকে তুমি পলায়ন করতে চাইতে।’ (সুরা : ক্বফ, আয়াত : ১৯)
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখন এ আয়াতটি পড়তেন, তখনই তিনি কান্নাকাটি করতেন। আয়াতটি হলো, ‘...আর তোমাদের মনে যা আছে, তা যদি তোমরা প্রকাশ করো অথবা গোপন করো, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৮৪)
মূল কথা হলো, কোরআন তিলাওয়াতের সময় কান্নাকাটি করা এবং চোখে পানি আসা ঈমানের আলামত। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোরআনের পাঠকদের মধ্যে ওই ব্যক্তির কণ্ঠ সর্বোত্তম, যার তিলাওয়াত কেউ শুনলে মনে হয় যে সে কাঁদছে।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৩৯)
ত্রয়োদশ আদব : কোরআন তিলাওয়াতের আরেকটি আদব হলো এর মর্ম নিয়ে চিন্তা করা। এটিই তিলাওয়াতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদব। তিলাওয়াতের সময় চিন্তা-গবেষণা করাই এর প্রকৃত সুফল বয়ে আনে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আমি তোমার প্রতি নাজিল করেছি এক বরকতময় কিতাব, যাতে তারা এর আয়াতগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং যাতে বুদ্ধিমানরা উপদেশ গ্রহণ করে।’ (সুরা : সদ, আয়াত : ২৯)
ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞরা লিখেছেন, তিন দিনের কম সময়ে কোরআন খতম করা অনুচিত। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তিন দিনের কম সময়ে যে কোরআন খতম করবে, সে কোরআন বুঝবে না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩৯৬)
জায়েদ বিন সাবেত (রা.)-কে একজন জিজ্ঞেস করলেন, সাত দিনে কোরআন খতম করাকে আপনি কোন দৃষ্টিতে দেখেন? তিনি বলেন, এটা ভালো। অবশ্য আমি এটাকে ১৫ দিনে বা ১০ দিনে খতম করাই পছন্দ করি। আমাকে জিজ্ঞেস করো, তা কেন? তিনি বলেন, আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করছি। জায়েদ বলেন, যাতে আমি তার স্থানে স্থানে চিন্তা করতে পারি এবং থামতে পারি।’ (মুয়াত্তা মালেক, হাদিস : ৪৭২)
চতুর্দশ আদব : তিলাওয়াতের সময় সিজদার আয়াত এলে সিজদা দেওয়া। সিজদার নিয়ম হলো, তাকবির দিয়ে সিজদায় চলে যাওয়া।
পঞ্চদশ আদব : যথাসম্ভব আদবসহ বসা। আর বসা, দাঁড়ানো, চলমান ও হেলান দেওয়া—সর্বাবস্থায় তিলাওয়াত করার অনুমতি রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যারা আল্লাহকে স্মরণ করে দাঁড়িয়ে, বসে ও কাত হয়ে এবং আসমান ও জমিনের সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা করে...।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৯১)
۔
সুতরাং এসব আদব মেনে কুরআন তেলাওয়াত করা চাই।