আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
250 views
in ব্যবসা ও চাকুরী (Business & Job) by (42 points)
আসসালামু আলাইকুম

ধরুন একজন নারী ছাত্রবস্থায় বিয়ে করল। এবং বাচ্চা নিলো।মা মেডিকেলে পড়েন। এমতাবস্থায় শিশুসন্তানকে যদি সেই মা বাসায় কারো কাছে রেখে মেডিকেলে ক্লাস করতে যান, অথবা ডাক্তারি করতে যান, তাহলে কি এখানে সন্তানের হক নষ্ট করা হচ্ছে? সন্তানের কি অধিকার রয়েছে তার শৈশবের পুরোটা জুড়ে মায়ের উপস্থিতিতে মায়ের যত্ন পাবার? এটা কি মাতৃত্বের দায়িত্বের মাঝে পড়ে যে সন্তান মায়ের 'সময়' পাবে?  যদি সন্তানকে দাদী-নানী/ কাজের লোকের কাছে রেখে অন্যত্র কাজে যান, এই ব্যাপারে জানতে চাচ্ছি যে পরকালে আল্লাহর জবাবদিহির সম্মুখীন হতে হবে কিনা।

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব ,

   নাবালক সন্তানাদির লালন-পালনের দায়িত্ব হল স্ত্রীর তথা উক্ত সন্তানাদির মা। এসম্পর্কে অন্যতম ফাতাওয়া গ্রন্থ ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত আছে.......

ِ أَحَقُّ النَّاسِ بِحَضَانَةِ الصَّغِيرِ حَالَ قِيَامِ النِّكَاحِ أَوْ بَعْدَ الْفُرْقَةِ الْأُمُّ

অর্থাৎ-নাবালক সন্তানাদির লালন-পালনের অগ্রাধিকার ভিত্ততে হক্বদার মা,চায় (উক্ত সন্তানাদির পিতার সাথে) বর্তমানে বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট থাকুক অথবা না থাকুক।

তবে নিম্নোক্ত কারনসমূহের রুণ মা তার অগ্রাধিকার হারাবে,অর্থাৎ তার  লালন-পালনের আর অধিকার থাকবে না।

إلَّا أَنْ تَكُونَ مُرْتَدَّةً أَوْ فَاجِرَةً غَيْرَ مَأْمُونَةٍ كَذَا فِي الْكَافِي. سَوَاءٌ لَحِقَتْ الْمُرْتَدَّةُ بِدَارِ الْحَرْبِ أَمْ لَا، فَإِنْ تَابَتْ فَهِيَ أَحَقُّ بِهِ كَذَا فِي الْبَحْرِ الرَّائِقِ. وَكَذَا لَوْ كَانَتْ سَارِقَةً أَوْ مُغَنِّيَةً أَوْ نَائِحَةً فَلَا حَقَّ لَهَا هَكَذَا فِي النَّهْرِ الْفَائِقِ.

মা যদি মুরতাদ হয়ে যায়, অথবা চরিত্রহীনা ব্যভিচারিণী  গোনাহগার হয়, অথবা চুর-ডাকাত হয়

অথবা গায়িকা হয় অথবা বিভিন্ন গোনাহের কাজে ভাড়াটে পেশাজীবী হয় (তাহলে এমতাবস্থায় তার লালন পালনের অধিকার থাকবে না)।(ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/৫৪১)

(দারুল ফিকর (বাইরুত) মাকতাবা থেকে ৬ খন্ডে ১৩১০হিজরীতে প্রকাশিত)

شُرُوطُ الْحَضَانَةِ.

قَالَ الرَّمْلِيُّ: وَيُشْتَرَطُ فِي الْحَاضِنَةِ أَنْ تَكُونَ حُرَّةً بَالِغَةً عَاقِلَةً أَمِينَةً قَادِرَةً، وَأَنْ تَخْلُوَ مِنْ زَوْجٍ أَجْنَبِيٍّ، وَكَذَا فِي الْحَاضِنِ الذَّكَرِ سِوَى الشَّرْطِ الْأَخِيرِ، هَذَا مَا يُؤْخَذُ مِنْ كَلَامِهِمْ. اهـ.

অর্থাৎ-ইমাম রমলী রাহ বলেনঃ সন্তান লালন-পালনকারী(মা)এর জন্য নিম্নোক্ত শর্তাবলী থাকা একান্ত আবশ্যক, আযাদ হওয়া,বালিগ হওয়া, জ্ঞানসম্পন্না হওয়া,নিরাপত্তা রক্ষাকারিণী হওয়া, লালন-পালনের সামর্থ্য থাকা,আজনবী অর্থাৎমাহরাম বা আত্মীয় নয় এমন কোনো স্বামীর সাথে বিবাহ উনার বন্ধনে আবদ্ধ না হওয়া।(এ সমস্ত শর্তাবলী পাওয়া গেলে উনার অধিকার থাকবে নতুবা নয়)

উপরোক্ত শর্তাবলী ঠিক তেমনিভাবে পুরুষ হাযিন বা সন্তান লালন-পালনকারী পুরুষের জন্যও প্রযোয্য তবে শেষোক্ত শর্ত প্রযোয্য নয়।

-রদ্দুল মুহতার- ৩/৫৫৫(দারুল ফিকর বাইরুত, মাকতাবা থেকে ৬ খন্ডে প্রকাশিত,১৪১২হিঃ-১৯৯২ইং।)

সন্তান লালন পালনে মার অগ্রাধিকার থাকলেও এতে মা স্বাধীন, মাকে সন্তান লালন-পালন করতে জোড় করে বাধ্য করা যাবে না,

(وَلَا تُجْبَرُ) مَنْ لَهَا الْحَضَانَةُ (عَلَيْهَا إلَّا إذَا تَعَيَّنَتْ لَهَا) بِأَنْ لَمْ يَأْخُذْ ثَدْيَ غَيْرِهَا أَوْ لَمْ يَكُنْ لِلْأَبِ وَلَا لِلصَّغِيرِ مَالٌ بِهِ يُفْتَى خَانِيَّةٌ وَسَيَجِيءُ فِي النَّفَقَةِ.

وَإِذَا أَسْقَطَتْ الْأُمُّ حَقَّهَا صَارَتْ كَمَيِّتَةٍ، أَوْ مُتَزَوِّجَةٍ فَتَنْتَقِلُ لِلْجَدَّةِ بَحْرٌ.

অর্থাৎ-হাযিনা (শরয়ী সন্তান লালন-পালনকারী)কে সন্তান লালন-পালন করতে বাধ্য করা যাবেনা, তবে সন্তান অন্য কারো দুধ না খাওয়া ও তার পিতার টাকা না থাকার ধরুণ মার জন্য যদি লালন-পালন করা নির্দিষ্ট হয়ে যায়,তাহলে এক্ষেত্রে মাকে বাধ্য করা যাবে।

এবং যখন মা তার হক্বকে বিসর্জন দিয়ে দিবে তখন মৃতব্যক্তি বা বিবাহিত ব্যক্তির ন্যায় হয়ে যাবে এবং লালন-পালনের উক্ত দায়িত্ব সন্তানের নানীর কাছে চলে যাবে।আদ্দুররুল মুখতার,৩/৫৫৯;

মহিলা যদি ইদ্দতে না থাকে এবং সন্তানেরও পয়সা না থাকে তাহলে সে পিতার কাছ থেকে লালন-পালন বাবৎ টাকা নিতে পারবে যদি পিতার সামর্থ্য থাকে।অন্যথায় ছেলের সম্পদ থেকে নিবে,কিন্তু ইদ্দতে থাকাবস্থায় মজুরী বাবৎ টাকা নিতে পারবে না।আহসানুল ফাতাওয়া,৫/৪৭৪;ইমদাদুল আহকাম,২/৮৭৮;

লালনপালন কারী যেই হোক না কেন?কতক্ষণ পর্যন্ত লালনপালনের এই অধিকার তার থাকবে?

যতক্ষণ পর্যন্ত সন্তানাদি লালন পালনের মুখাপেক্ষী ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তানাদি উক্ত লালনপালন কারীর কাছে থাকবে। অবশ্য লালন পালনের সমস্ত খরছ পিতার উপরই বর্তাবে।

দুর্রুল মুখতারে বর্ণিত আছে,

(ﻭاﻟﺤﺎﺿﻨﺔ) ﺃﻣﺎ، ﺃﻭ ﻏﻴﺮﻫﺎ (ﺃﺣﻖ ﺑﻪ) ﺃﻱ ﺑﺎﻟﻐﻼﻡ ﺣﺘﻰ ﻳﺴﺘﻐﻨﻲ ﻋﻦ اﻟﻨﺴﺎء ﻭﻗﺪﺭ ﺑﺴﺒﻊ ﻭﺑﻪ ﻳﻔﺘﻰ ﻷﻧﻪ اﻟﻐﺎﻟﺐ. ﻭﻟﻮ اﺧﺘﻠﻔﺎ ﻓﻲ ﺳﻨﻪ، ﻓﺈﻥ ﺃﻛﻞ ﻭﺷﺮﺏ ﻭﻟﺒﺲ ﻭاﺳﺘﻨﺠﻰ ﻭﺣﺪﻩ ﺩﻓﻊ ﺇﻟﻴﻪ ﻭﻟﻮ ﺟﺒﺮا ﻭﺇﻻ لا،

শরীয়ত যে মহিলাকেই লালনপালনের অধিকার দিবে,ঐ মহিলাই উক্ত সন্তানের লালনপালনের হকদার। ছেলে হলে ঐ সময় পর্যন্ত সে লালনপালন পাবে যতক্ষণ না সে মহিলাদের থেকে অমুখাপেক্ষী হচ্ছে। ফুকাহায়ে কিরামগণ সে সময়কে সাত বৎসর উল্লেখ করেছেন।এবং এটার উপরই ফাতাওয়া।

যদি লালনপালনকারী এবং পিতার মধ্যকার উক্ত সন্তানের বয়স নিয়ে মতপার্থক্য হয়, তাহলে দেখতে হবে যদি সন্তান নিজে নিজে একাই খাওয়া দাওয়া করতে পারে,কাপড় পরিধান ও পস্রাব-পায়খানা করতে পারে তাহলে জোরজবরদস্তি মূলক হলেও উক্ত সন্তানকে পিতার নিকট সমঝিয়ে দেওয়া হবে।নতুবা দেওয়া যাবে না।

নারীদের চাকুরীর বিধান সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন:  https://www.ifatwa.info/3503

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

সাধারণত ইসলাম নারীদের জব করতে নিরুৎসাহিত করে। বিশেষ কোন কারণ ছাড়া চাকুরী না করাই শ্রেয়। তবে কেউ যদি পরিপূর্ণ ভাবে শরয়ী পর্দা মেইন্টেইন করে পড়াশুনা বা জব করতে চায় তাহলে তার অনুমতি রয়েছে।

সন্তান লালন পালনের দায়িত্ব মায়ের উপর। তবে ভরণ পোষনসহ যাবতীয় খরচ বাবাকেই বহন করতে হবে। মা তার সন্তানকে অন্যের কাছে রেখে জবে যেতে পারে, তবে মায়ের আদর স্নেহ ও ভালোবাসা অন্য কারো দ্বারা কখনই পূরণ হবার নয়। বিধায় আমরা পরামর্শ দিব সন্তানকে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বে আর তা না হলে কমপক্ষে সাত বছর পর্যন্ত মা যেন লালন পালনের ক্ষেত্রে বেশী সময় দেন যা শিশুদের সুসন্তান হিসেবে গড়ে উঠতে অগ্রাণী ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ।

 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...