বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-
(০১)
তদরূপ স্বামীর উপর স্ত্রীরও কিছু অধিকার ও হক্ব রয়েছে যেমন, বিয়ের পর স্ত্রীর ব্যক্তিগত অধিকার রক্ষা করে স্ত্রীকে একটি বাসস্থান ও খাদ্য এবং বস্র দান করা।এটা স্বামীর উপর স্ত্রীর অধিকার ওহক্ব এবং শরীয়ত কর্তৃক ওয়াজিব। এ সম্পর্কে কোরআনের ঘোষনা হলঃ
ﻭَﻋَﺎﺷِﺮُﻭﻫُﻦَّ ﺑِﺎﻟْﻤَﻌْﺮُﻭﻑ
নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। (সূরা নিসা-১৯)
নারীদের সাথে সদ্ভাবে ব্যবহার করতে হলে তাদেরকে নিয়মমাফিক অন্ন-বস্র-বাসস্থান দিতে হবে,স্ত্রীর চিকিৎসা করানো স্বামীর উপর ওয়াজিব নয় এবং ঘরের রান্নাবান্না স্ত্রীর উপর ওয়াজিব নয়।তবে উভয়টা একটি ভালো ও উত্তম এবং প্রশংসনীয় কাজ ।
স্ত্রীর বাসস্থান কি রকম হবে?
এ সম্পর্কে ফুকাহায়ে কিরামদের নিম্নোক্ত কিছু আলোচনা লক্ষণীয়.....
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ উনার চিরাচরিত নিয়মানুযায়ী উক্ত আলোচনার বিস্তারিত ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা করেন,যা নিচে পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করা হল,
قَوْلُهُ خَالٍ عَنْ أَهْلِهِ إلَخْ) ؛ لِأَنَّهَا تَتَضَرَّرُ بِمُشَارَكَةِ غَيْرِهَا فِيهِ؛؛ لِأَنَّهَا لَا تَأْمَنُ عَلَى مَتَاعِهَا وَيَمْنَعُهَاذَلِكَ مِنْ الْمُعَاشَرَةِ مَعَ زَوْجِهَا وَمِنْ الِاسْتِمْتَاعِ إلَّا أَنْ تَخْتَارَ ذَلِكَ؛ لِأَنَّهَا رَضِيَتْ بِانْتِقَاصِ حَقِّهَا هِدَايَةٌ )
স্ত্রীকে এমন একটি বাসস্থান দান করা স্বামীর জন্য ওয়াজিব,যা স্বামীর পরিবার থেকে খালি থাকবে,কেননা সে অন্যর উপস্থিতির ধরুণ কষ্ট উপভোগ করবে,এবং তার মাল সামানা পুরোপুরি সংরক্ষিত থাকবে না।তৃতীয় কারো উপস্থিতি স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক জীবন ও একান্ত সময় অতিবাহিত করতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে। এ জন্য একটি পৃথক বাসস্থান স্ত্রীর মৌলিক অধিকার।তবে যদি সে তার নিজ অধিকার বিসর্জন দিতে রাজি হয় যায় তাহলে তার জন্য অনুমিত রয়েছে (যদি এক্ষেত্রে গোনাহের কোনো সম্ভাবনা না থাকে)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
স্ত্রীকে অন্ন বস্র ও বাসস্থান দান করা স্বামীর উপর ওয়াজিব। এবং এসব গুলো স্বামীর আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করবে। স্বামীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় মধ্যম ধরণের অন্ন বস্র ও বাসস্থান স্বামীর উপর ওয়াজিব হবে। প্রয়োজনে এ বিষয়টা দুই জন ন্যায় পরায়ন ব্যক্তি বা শরয়ী কোর্ট নির্ধারণ করে দিবে। চিকিৎসা করানো সুন্নত বিষয়, ওয়াজিব বা ফরয কোনো বিষয় নয়। সেজন্য চিকিৎসার বিষয়টা শরীয়ত স্বামীর উপর ওয়াজিব করে দেয়নি। কেননা অসুস্থ ব্যক্তিকে শরীয়তও চিকিৎসা করানো ওয়াজিব বলছেনা। স্ত্রী সে নিজের মহর থেকে প্রাপ্ত টাকা দ্বারা চিকিৎসা করাবে, বা বাবার কাছ থেকে প্রাপ্ত ওয়ারাছত দ্বারা সে চিকিৎসা করাবে।
পর্দার পরিবেশ নিশ্চিত করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব স্বামীর, নয়তো এজন্য তাকে কঠোর শাস্তির সম্মুখিন হতে হবে।
(০২)
স্ত্রী সহবাসের শরয়ী নিয়ম সংক্ষেপে নিম্নে পেশ করা হলো
★নিয়ত খালেস করে নেয়া। অর্থাৎ, কাজটির মাধ্যমে নিজেকে হারাম পথ থেকে বিরত রাখার, মুসলিম উম্মাহর সংখ্যা বৃদ্ধি করার এবং সাওয়াব অর্জনের নিয়ত করা। এ মর্মে আবু যার রাযি. থেকে বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে,
وَفِي بُضْعِ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ . قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي أَحَدُنَا شَهْوَتَهُ وَيَكُونُ لَهُ فِيهَا أَجْرٌ؟ قَالَ : أَرَأَيْتُمْ لَوْ وَضَعَهَا فِي حَرَامٍ أَكَانَ عَلَيْهِ فِيهَا وِزْرٌ فَكَذَلِكَ إِذَا وَضَعَهَا فِي الْحَلاَلِ كَانَ لَهُ أَجْرٌ
স্ত্রী সহবাসও সদকা। তারা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেউ যদিস্ত্রী সহবাস এতেও কি সে সাওয়াব পাবে? তিনি বললেন, তোমরা কি মনে কর যদি সে কামাচার করে হারাম পথে তাতে কি তার গুনাহ হবে না? অনুরূপভাবে যদি সে কামাচার করে হালাল পথে তবে সে সাওয়াব পাবে। (মুসলিম ২২০১)
★সহবাসের সময় শৃঙ্গার তথা চুম্বন, আলিঙ্গন, মর্দন ইত্যাদি করা। হাদিসে এসেছে,
كان رسول الله ﷺ يُلاعبُ أهله ، ويُقَبلُها
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে আলিঙ্গন, চুম্বন ইত্যাদি করতেন। (যাদুল মা’আদ ৪/২৫৩)
★সহবাসের শুরু করার সময় দোয়া পড়া–
بِسْمِ اللّهِ اللّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَ جَنِّبِ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
‘আল্লাহর নামে শুরু করছি, হে আল্লাহ! আমাদেরকে তুমি শয়তান থেকে দূরে রাখ এবং আমাদেরকে তুমি যা দান করবে (মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবে) তা থেকে শয়তানকে দূরে রাখ।’
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, এরপরে যদি তাদের দু’জনের মাঝে কিছু ফল দেয়া হয় অথবা বাচ্চা পয়দা হয়, তাকে শয়তান কখনো ক্ষতি করতে পারবে না। (বুখারী ৪৭৮৭)
★যেকোনো আসনে স্ত্রী সহবাসের অনুমতি ইসলামে আছে। মুজাহিদ রহ. نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ (তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবেই ইচ্ছা তোমাদের ক্ষেতে গমণ কর।)-এই আয়াতের তফসিরে বলেন, قَائِمَةً وَقَاعِدَةً وَمُقْبِلَةً وَمُدْبِرَةً فِي الْفَرْجِ ‘দাঁড়ানো ও বসা অবস্থায়, সামনের দিক থেকে এবং পিছনের দিক থেকে (সঙ্গম করতে পারো, তবে তা হতে হবে) স্ত্রীর যোনিপথে।’ ( দুররে মানছুর ১/২৬৫ তাফসীর তাবারী ২/৩৮৭-৩৮৮ মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ৪/২৩২)
★মলদ্বারে সহবাস হারাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لا يَنْظُرُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى رَجُلٍ جَامَعَ امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَا
যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করে, আল্লাহ্ তার দিকে (দয়ার দৃষ্টিতে) তাকান না। (ইবন মাজাহ ১৯২৩)
★ঋতুবতী অবস্থায় সহবাস হারাম। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ أَتَى حَائِضًا أَوِ امْرَأَةً فِي دُبُرِهَا أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُولُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ
যে ব্যাক্তি ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে সহবাস করলো অথবা স্ত্রীর মলদ্বারে সঙ্গম করলো অথবা গণকের নিকট গেলো এবং সে যা বললো তা বিশ্বাস করলো, সে অবশ্যই মুহাম্মাদ ﷺ -এর উপর নাযিলকৃত জিনিসের (আল্লাহ্র কিতাবের) বিরুদ্ধাচরণ করলো। (তিরমিযী ১৩৫ আবূ দাঊদ ৩৯০৪)
★একবার সহবাসের পর পুনরায় সহবাস করতে চাইলে অজু করে নেয়া মুস্তাহাব। হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِذَا أَتَى أَحَدُكُمْ أَهْلَهُ ثُمَّ أَرَادَ أَنْ يَعُودَ فَلْيَتَوَضَّأْ بَيْنَهُمَا وُضُوءًافإنه أنشط للعود
যখন তোমাদের কেউ নিজ স্ত্রীর সাথে সহবাস করার পর আবার সহবাস করতে চায় তখন সে যেন এর মাঝখানে ওযু করে নেয়। কেননা, এটি দ্বিতীয়বারের জন্য অধিক প্রশান্তিদায়ক। (মুসলিম ৩০৮ হাকিম ১/২৫৪)
তবে গোসল করে নেয়া আরো উত্তম। কেননা, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, هَذَا أَزْكَى وَأَطْيَبُ وَأَطْهَرُ এরূপ করা অধিকতর পবিত্র, উত্তম ও উৎকৃষ্ট। ( আবু দাউদ ২১৯)
(সংগৃহীত)
(০৩)
এটি নাজায়েজ হবেনা।
বিস্তারিত জানুনঃ
(০৪)
এক্ষেত্রে স্বামীর আগ্রহের পরেও স্ত্রী সহবাস করতে না চাইলে স্ত্রীর গুনাহ হবে।
হাদীস শরীফে আছে,
إذا دعا الرجل زوجته لحاجته فالتأته، وإن كانت على التنور
স্বামী যখন নিজ প্রয়োজনে স্ত্রীকে ডাকবে তখন সে যেন তাতে সাড়া দেয়, যদিও সে চুলায় (রান্নার কাজে) থাকে (জামে তিরমিযী, হাদীস : ১১৬০; সুনানে নাসাঈ, হাদীস : ৮৯৭১)।