উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
,
শরীয়তের বিধান হলো তাস খেলা জায়েজ নেই ।
তাস,লুডু ইত্যাদি খেলার দ্বারা যেহেতু মুসলমানদের মুল্যবান সময় নষ্ট হয়,তাই ইসলাম কোনোভাবেই তাস খেলার অনুমতি দেয়না।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১৬/৫০৯ ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়্যাহ ১০/৩২৬)
আলেমদের অভিমত তাস খেলা হারাম । কারণ এই খেলা পুরোটাই ভাগ্য নির্ভর । এবং প্রচুর সময় নষ্ট করে মানুষকে দ্বীন হতে গাফেল করে দেয় । এবং এটি আরো বড় ফিতনা যেমন - জুয়া , মারামারির দিকে মানুষকে দ্রুত নিয়ে যায় । তাসের সাথে টাকা দিয়ে জুয়া খেললে ত তা হারাম এমনিতেই । টাকা ছাড়া খেলাও নাজায়েজ ।
আলেমরা এই ভাগ্য সর্বস্ব, অপ্রয়োজনীয়, ক্ষতিকর , দ্বীন হতে গাফেলকারী খেলাকে হারাম বলেন ।
,
খেলা-ধুলা মানুষের জন্মগত স্বভাব। এর উদ্দেশ্য সাময়িক শরীর চর্চা। যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বয়স ভেদে মানুষের শরীর চর্চার ধরনের পরিবর্তন হয়। কিন্তু সাময়িক শরীর চর্চার বদলে যদি তা কেবল সময়ের অপচয় হয়, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হয়, যদি ঐ ব্যক্তি দ্বীন থেকে গাফেল হয়, দায়িত্ব বিস্মৃত হয় বা তাতে জুয়া মিশ্রিত হয়, তখন ঐ খেলা হারামে পরিণত হয়।
,
একদিন দু’জন আনছার ছাহাবী তীর নিক্ষেপ প্রতিযোগিতা করছিলেন। হঠাৎ একজন বসে পড়লেন। তখন অপরজন বিস্মিত হয়ে বললেন, কি ব্যাপার। কষ্ট হয়ে গেল নাকি? জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, প্রত্যেক বস্ত্ত যা আল্লাহর স্মরণকে ভুলিয়ে দেয়, সেটাই অনর্থক (لَهْو) … (নাসাঈ, ছহীহাহ হা/৩১৫)।
,
এতে বুঝা যায় যে, বৈধ খেলাও যদি আল্লাহর স্মরণকে ভুলিয়ে দেয়, তবে সেটাও জায়েয হবে না। ইমাম বুখারী (রহঃ) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন, ‘প্রত্যেক খেলা-ধুলা (لَهْو) বাতিল, যদি তা আল্লাহর আনুগত্য থেকে উদাসীন করে দেয়’ (ফাৎহুলবারী ‘অনুমতি গ্রহণ’ অধ্যায় ৭৯, অনুচ্ছেদ ৫২; ১১/৯৪ পৃঃ)।
,
আল্লাহ বলেন, লোকদের মধ্যে এমন কিছু লোক আছে, যারা অজ্ঞতাবশে বাজে কথা খরিদ করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুৎ করার জন্য এবং সত্য পথকে তারা বিদ্রুপ করে, তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি’। ‘যখন তার নিকট আমাদের আয়াত সমূহ পাঠ করা হয়, তখন সে দম্ভভরে মুখ ফিরিয়ে নেয়, যেন সে এটা শুনতেই পায়নি। যেন তার দুই কানে বধিরতা আছে। অতএব তুমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ দাও’ (লোকমান ৬-৭)।
,
★আল-কুরতুবী (রহঃ) বলেন; “তাস এবং পাশা খেলা হারাম ,জুয়ার উদ্দেশ্যে খেলা হোক বা না হোক।কারণ আল্লাহ্ মদ,জুয়া ইত্যাদি হারাম করেছেন এ জন্য যে এগুলো শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং এগুলো মানুষকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিরত রাখে।আর যেসব কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হয় না,এবং যেই কাজে অংশগ্রহণকারীদের মনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং হিংসাত্মক মনোভাব কাজ করে সেগুলো সম্পূর্ণরুপে হারাম।”(আল-জামিলী আহকাম-আল কুরআনঃ৬/২৯১)
,
আল্লাহ তায়ালা বলেন
قال اللّٰہ تعالیٰ: {وَالَّذِیْنَ ہُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُوْنَ} [المؤمنون: ۳]
মুমিন তারাই যারা অনার্থক কাজ করা থেকে বিরত থাকে।
হাদীস শরীফে এসেছে
عن أبي ہریرۃ رضي اللّٰہ عنہ قال: قال رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم: من حسن إسلام المرء ترکہ ما لا یعنیہ۔ (سنن الترمذي، أبواب الزہد / باب ما جاء من تکلّم بالکلمۃ لیضحک الناس ۲؍۵۸ رقم: ۲۲۱۷، شعب الإیمان للبیہقي ۴؍۲۵۵، المعجم الکبیر ۳؍۱۲۸ رقم: ۲۸۸۶)
রাসুল সাঃ বলেন যে ইসলামের সৌন্দর্যতা হলো অনার্থক কাজ করা থেকে বিরত থাকা।
قال العلامۃ الحصکفي: کل ما أدی إلی ما لا یجوز؛ لا یجوز۔ (الدر المختار، کتاب الحظر والإباحۃ / فصل في اللبس ۶؍۳۶۰ دار الفکر بیروت)
যেই কাজ নাজায়েজ দিকে ধাপিত করে,সেটাও নাজায়েজ হয়ে যায়।
ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছে
وأما الشطرنج فإنہ وإن أفاد علم الفروسیۃ لکن حرمتہ عندنا بالحدیث، لکثرۃ غوائلہ بأکباب صاحبہ علیہ، فلا بقي نفہ بضررہ کما نصوا علیہ، بخلاف ما ذکرنا۔ (الدر المختار وحاشیۃ ابن عابدین، کتاب الحظر والإباحۃ / فصل في البیع ۶؍۴۰۴ دار الفکر بیروت)
وکرہ تحریمًا اللعب بالنرد وکذا الشطرنج (الدر المختار) وإنما کرہ؛ لأن من اشتغل بہ ذہب عناء ہ الدنیوي وجاء ہ العناء الأخروي فہو حرام وکبیرۃ عندنا۔ (رد المحتار مع الدر المختار، کتاب الحظر والإباحۃ / فصل في البیع ۶؍۳۹۴ دار الفکر بیروت)
যার সারমর্ম হলো যেহেতু তাস খেলা আখেরাত থেকে গাফেল করে দেয়,তাই তাহা মাকরুহে তাহরিমি।
মাজমাউল আনহুর গ্রন্থে এসেছে
ویحرم اللعب بالنرد أو الشطرنج وکل لہوٍ، لقولہ علیہ السلام: کل لعب ابن آدم حرام۔ (مجمع الأنہر ۲؍۵۵۳ دار إحیاء التراث العربي بیروت)
তাসের মাধ্যমে খেলা হারাম।
.
★সুতরাং অবসর সময়ে পারিবারিক ভাবে সময় কাটানোর জন্য তাস খেলা জায়েজ নেই।
মুসলমানদের অবসর বলতে কোনো সময় নেই।
সময় পেলেই আল্লাহর যিকির,ইবাদতে লিপ্ত থাকা চাই।