উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
۔
১) পিতা জীবদ্দশায় থাকা অবস্থায় সম্পত্তি বিক্রি করলে বিক্রিত টাকা সে নিজের ইচ্ছেমতো শরীয়ত সম্মত পন্থায় যেখানে খুশি, নিজের সন্তানদের মধ্যে যার জন্য খুশি প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যয় করতে পারবে।
এতে কোনো সমস্যা নেই।
(০২)
মোহরানা সংক্রান্ত বুঝার জন্য বিস্তারিত জানুনঃ
দেনমোহর বিয়ের আকদের পর সহবাসের পূর্বে প্রদান করাই উত্তম। তবে যদি স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়াই সহবাসের অনুমতি প্রদান করে তাহলে কোন সমস্যা নেই। বাকি স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়া প্রথম সহবাসের পূর্বে বাঁধা প্রদান করতে পারবে। কিন্তু একবার সহবাস হয়ে গেলে আর বাঁধা দিতে পারবে না। কিন্তু স্বামীর জিম্মায় দেনমোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে।
স্ত্রী যদি উক্ত দেনমোহর মাফ না করে, আর স্বামীও তা পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে স্বামীর অপরাধী সাব্যস্ত হবে। তাই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেয়া জরুরী।
وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا [٤:٤]
আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর। [সূরা নিসা-৪]
فَمَا اسْتَمْتَعْتُم بِهِ مِنْهُنَّ فَآتُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ فَرِيضَةً ۚ وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ فِيمَا تَرَاضَيْتُم بِهِ مِن بَعْدِ الْفَرِيضَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:٢٤]
অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা গ্রহণ করবে,তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। [সূরা নিসা-২৪]
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ [٥:٥]
তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর। [সূরা মায়িদা-৫]
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ أَن تَنكِحُوهُنَّ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ [٦٠:١٠]
তোমরা, এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে তোমাদের অপরাধ হবে না। [সূরা মুমতাহিনা-১০]
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত মহিলা যেহেতু পুরোপুরি মোহরানা পরিশোধের আগেই স্বামীকে সহবাসের অনুমতি প্রদান করেছে, এবং এখন পর্যন্ত সংসার করে যাচ্ছে,তাই এখন আর সে উক্ত স্বামীর সাথে কোনো তালবাহানা করতে পারবেনা।
,
কিন্তু স্বামীর জিম্মায় দেনমোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে।
স্ত্রী এখন কোথাও যেতে পারবেনা।
,
তবে স্বামী যদি তাকে তালাক দেয়,বা স্ত্রী যদি স্বামী কর্তৃক তালাকে তাফবিজের অনুমতি প্রাপ্তা হয়ে নিজেকে নিজে তালাক দেয়,তাহলে সে ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর অন্যত্রে বিবাহ বসতে পারবে।
(০৩)
পর্দা না করা বা না বুঝে পর্দা করা থেকে স্ত্রীকে নিষেধ করা কুফরীর মত কাজ। কিন্তু এর দ্বারা ব্যক্তি কাফির হয়ে যায় না।
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا بَعِيدًا [٤:١١٦
নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না,যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা,ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়। [সূরা নিসা-১১৬]
১
عَنْ سَلَمَةَ بْنِ نُعَيْمٍ، قَالَ: وَكَانَ مِنْ أَصْحَابِ الرَّسُولِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” مَنْ لَقِيَ اللهَ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ، وَإِنْ زَنَى، وَإِنْ سَرَقَ ”
হযরত সালামা বিন নুআইম রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ এর একদল সাহাবা রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হয় [মৃত্যুবরণ করে] যে সে শিরক করেনি, তাহলে সে ব্যক্তি জান্নাতী হবে। যদিও সে যিনা এবং চুরি করে থাকে। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৮২৮৪, ২১৪৩৪, বুখারী, হাদীস নং-১২৩৭]
২
হযরত আবু জর গিফারী রাঃ থেকে একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন।
فَقَالَ: “مَا مِنْ عَبْدٍ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، ثُمَّ مَاتَ عَلَى ذَلِكَ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ ” قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: “وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ ” قُلْتُ: وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ؟ قَالَ: “وَإِنْ زَنَى وَإِنْ سَرَقَ ” ثَلَاثًا، ثُمَّ قَالَ فِي الرَّابِعَةِ: “عَلَى رَغْمِ أَنْفِ أَبِي ذَرٍّ “
যে ব্যক্তি বলে আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তারপর সে উক্ত হালাতে ইন্তেকাল করে তাহলে সে জান্নাতী হবে। আমি বললাম, যদি সে যিনা করে এবং চুরি করে তাহলেও? রাসূল সাঃ ইরশাদ করলেন, যদিও সে যিনা করে বা চুরি করে। আমি আবার বললাম- যদি সে যিনা করে এবং চুরি করে তাহলেও? রাসূল সাঃ ইরশাদ করলেন, যদিও সে যিনা করে বা চুরি করে। এভাবে তিনবার বললাম, তখন চতুর্থবারের সময় রাসূল সাঃ বললেন, যদিও আবু জরের নাক কুঞ্চিত হয় তবু। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২১৪৬৬] জ্জ
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস পরিস্কার ভাষায় প্রমাণ করছে, পাপ করার দ্বারা ব্যক্তি গোনাহগার হয়, কিন্তু ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় না। সে তার পাপের শাস্তি ভোগ করে একদিন জান্নাতী হবেই ইনশাআল্লাহ।
বাকি কোন ব্যক্তি যদি পর্দার বিধান পরিত্যাগ করে এ আক্বিদা রেখে যে, পর্দা করা ফরজ নয়। তাহলে উক্ত ব্যক্তি কাফির। এতে কোন সন্দেহ নেই।
সুতরাং আপনার স্বামী যদি বিশ্বাসের সাথে বলে যে পর্দা করা ফরজ নয়,তাহলে তাহার সাথে ঘর সংসার করা কোনো মুসলিম মহিলার জন্য জায়েজ হবেনা।
হ্যাঁ যদি সে এমনিতেই এমন কথা বলে,তাহলে তার সাথে ঘর সংসার করতে কোনো সমস্যা নেই।
তবে তার হুকুম অমান্য করে স্ত্রীকে অবশ্যই পর্দা করতে হবে।
,
০৪) মেয়ের অভিভাবক যদি মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে তৎপর না থাকে মেয়ের বিয়ের বয়স পার হয়ে যাবার পরও, তবে মেয়ের মনে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ফিতনার উদ্ভব হলে তার দায়ভার অভিভাবকদের উপর পড়বে।
,
(০৫) অভিভাবক বা স্বামীর অনুমতি ব্যাতিত কোনো মহিলা নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস আনতে ঘর থেকে বের হতে পারবেনা।
,
(৬.৭)
শরীয়তের বিধান হলো নামাজে আমলে কাছির করলে নামাজ ভঙ্গ হয়ে যায়।
আমলে কাছির বলা হয়, নামাজের ভিতর এমন কোনো কাজ করা যা করলে তাকে দেখনেওয়ালা মনে করে যে সে নামাজের মধ্যে নেই।
বা দুই হাত ব্যাবহার করে নামাজের মধ্যে কোনো কাজ করা।
মারাকিল ফালাহ গ্রন্থে আছেঃ
ویفسدہا العمل الکثیر لا القلیل، والفاصل بینہما أن الکثیر ہو الذي لا یشک الناظر لفاعلہ أنہ لیس في الصلاۃ، وإن اشتبہ فہو قلیل علی الأصح۔ (مراقي الفلاح) وقال الطحطاوي: کذا في التبیین وہو قول العامۃ وہو المختار وہو الصواب کما في المضمرات۔ (طحطاوي ۱۷۷، حلبي کبیر ۴۴۱، بدائع الصنائع ۱؍۵۵۳، حاشیۃ الطحطاوي ۳۲۲)
আমলে কাছির বলা হয় নামাজের ভিতর এমন কোনো কাজ করা যা করলে তাকে দেখনেওয়ালা মনে করে যে সে নামাজের মধ্যে নেই।
,
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদি এমন সামান্য হাটু বাকা করেন,যাহাকে আমলে কাছির বলা যায়না, তাহলে নামাজের কোনো সমস্যা হবেনা।
তবে হাটু যদি বেশি বাকা করা হয়,তাহলে যদিও সেটা নামাজের শেষ ওয়াক্তেই হোক,নামাজ ভঙ্গ হয়ে যাবে।
,
০৮) শরীয়তের বিধান হলো অভিভাবক বা স্বামীর অনুমতি ব্যাতিত কোনো মহিলা তার ঘর থেকে বাহিরে বের হতে পারবেনা। নিজের ঘরে থাকলে যদি বারবার গীবত শেকায়েত জাতীয় গুনাহে লিপ্ত হতে হয়,
তাহলেও এ থেকে বাঁচতে ঘর ছেড়ে অন্যত্রে চলে যেতে পারবেনা।
তবে সে সেখানে থেকেই গুনাহ থেকে বাঁচতে আপ্রান চেষ্টা করে যাবে।