আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
509 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (45 points)
আসসালামু আলাইকুম।

আমার পরিচিত একজন পুরুষ আছেন উনি অনেক পরোপকারী। উনি অনেক দান করেন, মানুষ কে করযে হাসানা দেন। সবার বিপদে কম বেশি এগিয়ে যান উনি,সাধ্যমত সাহায্য করেন মানুষ কে মা শা আল্লাহ। উনার এই পরোপকারীতার জন্য বিভিন্ন বিবাহিত- অবিবাহিত মহিলারা উনার কাছে সাহায্য চান, বিভিন্ন সময় ফোন করে,চ্যাট করে। বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ চান, কথা বলেন ইত্যাদি। বিধবা মহিলাদের কে ও উনি সাহায্য করেন। তবে এই বিষয়টা নিয়ে উনার ওয়াইফ নারাজ। যদিও উনার ওয়াইফ উনাকে অন্য খারাপ কোন সন্দেহ করেন না। এবং তাদের সম্পর্ক ভালো মা শা আল্লাহ। উনার ওয়াইফের কথা হলো- এভাবে পরনারীর সাথে অপ্রোয়োজনীয় কথা হচ্ছে, সময় নষ্ট হচ্ছে, এবং পরনারীর সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও করতে হচ্ছে ঐ লোককে। এবং এসব মহিলাদের মধ্যে অনেকে আছেন সুন্দরী,বেপর্দা নারী। উনাকে বললে উনি বলেন, আমি তো পাপ করছি না। আমি শুধু তাদেরকে সাহায্য করছি। কিন্তু স্ত্রী এটা কিছুতেই মানতে চান না। স্ত্রীর এই চাওয়াটা কি অন্যায়? আর ঐ লোকের জন্য কি এটা জায়েজ হচ্ছে এভাবে গাইরে মাহরাম দের সাথে কথা বলা,চ্যাটিং করা। আমাদের রাসূল (স) এর কাছে তো অনেক মহিলা সাহাবিয়াতগণ আসতেন পরামর্শে জন্য।এই বিষয় টা নিয়ে উনাদের দাম্পত্য জীবনে টুকটাক মনোমালিন্যতা চলছে। বিষয়টা যদি দয়া করে হাদীস এর আলোকে বুঝিয়ে বলতেন।

1 Answer

0 votes
by (62,670 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পরিপূর্ণ পর্দা করা ফরজ।

 মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ    

قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ [٢٤:٣٠]

 

وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١]

মুমিনদেরকে বলুনতারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।

ঈমানদার নারীদেরকে বলুনতারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমানতা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামীপিতাশ্বশুরপুত্রস্বামীর পুত্রভ্রাতাভ্রাতুস্পুত্রভগ্নিপুত্রস্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদীযৌনকামনামুক্ত পুরুষও বালকযারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞতাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করেতারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণতোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা করযাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}

 

 আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন-

يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান) তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনাযাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহেজাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ

 

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}

 

বিখ্যাত তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী রাহ. উক্ত আয়াতের আলোচনায় বলেনউক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে কোনো প্রয়োজনে পর্দার আড়াল থেকে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। (তাফসীরে কুরতুবী ১৪/১৪৬)

 

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত তা তো সহজেই অনুমেয়।

 

প্রশ্ন হল নারীদের আওয়াজ কি সতরের অন্তর্ভুক্ত?

এ সম্পর্কে উলামাদের মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। এমনকি হানাফি মাযহাবের উলামাদের মধ্যেও মতবিরোধ রয়েছে-

হানাফি উলামাদের কিছুসংখ্যকের গবেষকদের বর্ণননামতে নারীদের আওয়াজ সতরের অন্তর্ভুক্ত। তবে এ রেওয়াত মারজুহ(অগ্রগণ্য নয়)।

অন্যদিকে কিছুসংখ্যক গবেষকদের বর্ণনামতে নারী আওয়াজ সতরের অন্তর্ভুক্ত নয়।এ রেওয়াত-ই রাজেহ (অগ্রগণ্য) অর্থাৎ ফিৎনার আশঙ্কা না থাকলে কোমলতা পরিহার করে প্রয়োজনে গায়রে মাহরাম পুরুষের সাথে নারী কথা বলতে পারবে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/1058

 সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

১. শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পরিপূর্ণ পর্দা করা ফরজ। আর প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তির জন্য দান সদকাহ করা ফরজ ওয়াজিব কিছু নয়। তাই পর্দার বিধান লঙ্ঘন করে কোনো পরনারীর সাথে কথা বার্তা বলে দান সদকাহ করার কোন মূল্যই আসে না। তবে হ্যাঁ, ফিৎনার আশঙ্কা না থাকলে কোমলতা পরিহার করে পরিপূর্ণ পর্দার সাথে পরনারীকে দান সদকাহ করা যাবে।

২. উক্ত ব্যক্তি পরনারীর মাঝে দান সদকাহটা তার স্ত্রীর মাধ্যমে করতে পারে তাহলে আর তাদের মাঝে মনোমালিন্যতা থাকবে না। এতে স্ত্রীও খুশি থাকবে। আবার উক্ত ব্যক্তি দান সদকাহ করারও সওয়াব পাবে।

৩. রাসূল সা. ছিলেন একজন রাসূল ও রাষ্ট্র প্রধান। তাই অনেক সময় মহিলাদের সাথে কথা বলা জরুরী ছিলো। সুতরাং তাঁর সাথে আমাদেরকে তুলনা করা যাবে না। তা ছাড়া তিনি পর্দার সাথেই তাদের সাথে কথা বার্তা বলতেন। আবার নবীজীর ব্যাপারে তো  ফিৎনার আশঙ্কার কল্পনা করাও অসম্ভব ছিলো।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...