ওয়া আলাইকুমুস সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম।
জবাবঃ
একাকী যিকির করা
বা কয়েকজন একত্রিত হয়ে উঁচু আওয়াজে যিকির করা উভয়টিই শরীয়তে অনুমোদিত। তা
মসজিদে হোক বা অন্য কোথাও।
হযরত আবু
হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
আল্লাহ তাআলা
বলেন, আমার প্রতি বান্দার ধারণা
অনুযায়ী আমি তার সাথে থাকি। সে যদি একাকী আমার যিকির করে তাহলে আমি গোপনে তাকে
স্মরণ করি। সে কোনো মজলিসে আমার যিকির করলে আমি তাদের চেয়ে উত্তম মজলিসে তার
আলোচনা করি।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৭৪০৫
ইমাম সুয়ূতী
রাহ. বলেন, জামাতে যিকির করলে আওয়াজ
তো হবেই।-আলহাবী লিলফাতাওয়া ২/১২৯
তবে এক্ষেত্রে
বিশেষভাবে কয়েকটি শর্ত পূরণ করা অত্যাবশ্যক। যথা :
১. লোক দেখানোর
উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত হওয়া।
২. কোনো ব্যক্তির
নামাযে বা অন্য কোনো ইবাদতে বিঘ্ন না ঘটানো।
৩. কোনো ব্যক্তির
বিশ্রামে সমস্যা না হওয়া।
৪. আওয়াজ
স্বাভাবিক হওয়া, চিৎকার করে বা অতিরিক্ত
উঁচু আওয়াজে না হওয়া এবং মাইক ব্যবহার না করা।
৫. সাধারণভাবে
এবং সহীহ-শুদ্ধ করে যিকির করা। যিকিরের শব্দ উচ্চারণে লাহনে জলী থেকে বেঁচে থাকা।
যদি উল্লেখিত শর্তাবলি পাওয়া যায় তবে ইজতিমায়ী যিকির করতে কোনো অসুবিধা নেই। আর
যদি কোনো ক্ষেত্রে উল্লেখিত শর্তসমূহ বা তা থেকে কোনো একটি শর্ত না পাওয়া যায়
তাহলে সেক্ষেত্রে কাজটি শরীয়তসম্মত হবে না। উল্লেখ্য, বর্তমানে অনেক যিকিরের মজলিসে উল্লেখিত
শর্তগুলোর অনেক কিছুই লঙ্ঘিত হতে দেখা যায়,
যা সংশোধনযোগ্য। -রদ্দুল
মুহতার ১/৬৬০; সিবাহাতুল ফিকরি ফিলজাহরি
বিযযিকর, আবদুল হাই লাখনৌভী পৃ. ৩৮; নতীজাতুল ফিকরি ফিলজাহরি বিযযিকর, (আলহাবী লিল ফাতাওয়া ২/১২৮) ইমাম সুয়ূতী; ইমদাদুল ফাতাওয়া ৫/১৫১
হালকায়ে জিকির বা
জিকিরের মজলিসে জিকির
হালকায়ে জিকির বা
জিকিরের মজলিস কায়েম করে জিকির করা জায়েজ আছে। হাদীসের মাঝে এর অনেক প্রমাণ ও
ফযীলত বিদ্যমান রয়েছে। যেমন-
১
عَنِ الْأَغَرِّ أَبِي مُسْلِمٍ،
أَنَّهُ قَالَ: أَشْهَدُ عَلَى أَبِي هُرَيْرَةَ وَأَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ
أَنَّهُمَا شَهِدَا عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ:
«لَا يَقْعُدُ قَوْمٌ يَذْكُرُونَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا حَفَّتْهُمُ
الْمَلَائِكَةُ، وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ، وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السَّكِينَةُ،
وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيمَنْ عِنْدَهُ»
হযরত আবূ হুরায়রা
ও হযরত আবূ সাঈদ রাঃ দুইজনই সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, আমরা রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শুনেছি,
তিনি বলেছেন যে, যে জামাত আল্লাহর জিকিরে মশগুল থাকে, ফেরেশতারা উহাকে চারিদিক থেকে ঘিরে নেয়।
আল্লাহর রহমাত তাদেরকে ঢেকে নেয়। তাদের উপর সকীনা নাজিল হয়। আর আল্লাহ তাআলা নিজ
মজলিসে (গর্ব করে) তাদের আলোচনা করেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৭০০, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১১৮৭৫]
২
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ
عَنْهُ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” يَقُولُ
اللَّهُ تَعَالَى: أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِي بِي، وَأَنَا مَعَهُ إِذَا ذَكَرَنِي،
فَإِنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِي نَفْسِي، وَإِنْ ذَكَرَنِي فِي
مَلَإٍ ذَكَرْتُهُ فِي مَلَإٍ خَيْرٍ مِنْهُمْ،
আবূ হুরাইরাহ
(রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ ঘোষণা করেন, আমি সে রকমই, যে রকম বান্দা
আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি বান্দার সঙ্গে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে। যদি সে
মনে মনে আমাকে স্মরণ করে;আমিও তাকে নিজে
স্মরণ করি। আর যদি সে জন-সমাবেশে আমাকে স্মরণ করে, তবে আমিও তাদের
চেয়ে উত্তম সমাবেশে তাকে স্মরণ করি। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৭৪০৫]
৩
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ،
قَالَ: خَرَجَ مُعَاوِيَةُ، إِلَى الْمَسْجِدِ فَقَالَ: مَا يُجْلِسُكُمْ؟
قَالُوا: جَلَسْنَا نَذْكُرُ اللَّهَ. قَالَ: آللَّهِ مَا أَجْلَسَكُمْ إِلاَّ ذَاكَ؟
قَالُوا: وَاللَّهِ مَا أَجْلَسَنَا إِلاَّ ذَاكَ. قَالَ: أَمَا إِنِّي لَمْ
أَسْتَحْلِفْكُمْ تُهْمَةً لَكُمْ، وَمَا كَانَ أَحَدٌ بِمَنْزِلَتِي مِنْ رَسُولِ
اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقَلَّ حَدِيثًا عَنْهُ مِنِّي، إِنَّ
رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ عَلَى حَلْقَةٍ مِنْ
أَصْحَابِهِ فَقَالَ: مَا يُجْلِسُكُمْ؟ قَالُوا: جَلَسْنَا نَذْكُرُ اللَّهَ
وَنَحْمَدُهُ لِمَا هَدَانَا لِلإِسْلاَمِ وَمَنَّ عَلَيْنَا بِهِ، فَقَالَ:
آللَّهِ مَا أَجْلَسَكُمْ إِلاَّ ذَاكَ؟ قَالُوا: آللَّهِ مَا أَجْلَسَنَا إِلاَّ
ذَاكَ. قَالَ: أَمَا إِنِّي لَمْ أَسْتَحْلِفْكُمْ لِتُهْمَةٍ لَكُمْ، إِنَّهُ
أَتَانِي جِبْرِيلُ وَأَخْبَرَنِي أَنَّ اللَّهَ يُبَاهِي بِكُمُ الْمَلاَئِكَةَ
আবূ সাঈদ
আল-খুদরী (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন,
মু’আবিয়াহ
(রাযিঃ) মাসজিদে গেলেন। তিনি (মাসজিদে কিছুলোক বসা দেখে তাদেরকে) বললেন, তোমাদের কিসে বসিয়ে রেখেছে? তারা বললেন,
আমরা বসে বসে
আল্লাহ তা’আলার যিকর করছি। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম!
তোমাদেরকে আল্লাহ তা’আলার যিকরই কি বসিয়ে রেখেছে? তারা বললেন, আল্লাহর শপথ আল্লাহ তা’আলার যিকরই আমাদেরকে
বসিয়ে রেখেছে। তিনি বললেন, শোন! তোমাদের
মিথ্যা বলার সন্দেহে আমি তোমাদেরকে শপথ করাইনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম হতে আমার চেয়ে কম হাদীস বর্ণনাকারীও কেউ নেই।
সম্মিলিত জিকির
সম্মিলিত জিকির
বলতে সকলে একই সুরে একই জিকির কোরাস করে করাকে বুঝানো হচ্ছে। এভাবে জিকির করার কোন
প্রমাণ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবাযুগ থেকে পাওয়া যায় না।
তাই এভাবে জিকির করাকে সুন্নত মনে করা বা বিশেষ সওয়াবের কাজ মনে করলে তা বিদআত
হবে। এভাবে সম্মিলিতভাবে কোরাস করে জিকির করাকে আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ অপছন্দ
করে মজলিস থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। [ফাতওয়া মাহমূদিয়া, ঢাবেল-৪/৪৪০, কিতাবুন
নাওয়াজিল-৪৫৫-৪৫৬]
عَنْ أَبِي الْبَخْتَرِيِّ، قَالَ:
بَلَغَ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُودٍ أَنَّ قَوْمًا، يَقْعُدُونَ مِنَ الْمَغْرِبِ
إِلَى الْعِشَاءِ يُسَبِّحُونَ يَقُولُونَ: قُولُوا كَذَا وَقُولُوا كَذَا، قَالَ
عَبْدُ اللهِ: «إِنْ قَعَدُوا فَآذِنُونِي» ، فَلَمَّا جَلَسُوا أَتَوْهُ
فَانْطَلَقَ فَدَخَلَ مَعَهُمْ فَجَلَسَ وَعَلَيْهِ بُرْنُسٌ، فَأَخَذُوا فِي
تَسْبِيحِهِمْ فَحَسَرَ عَبْدُ اللهِ عَنْ رَأْسِهِ الْبُرْنُسَ، وَقَالَ: «أَنَا
عَبْدُ اللهِ بْنُ مَسْعُودٍ» ، فَسَكَتَ الْقَوْمُ، فَقَالَ: «لَقَدْ جِئْتُمْ
بِبِدْعَةٍ ظَلْمَاءَ، أَوْ لَقَدْ فَضَلْتُمْ أَصْحَابَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِلْمًا» ، فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي تَمِيمٍ: مَا جِئْنَا
بِبِدْعَةٍ ظَلْمَاءَ، وَلَا فَضَلْنَا أَصْحَابَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ
وَسَلَّمَ عِلْمًا، فَقَالَ عَمْرُو بْنُ عُتْبَةَ بْنِ فَرْقَدٍ: أَسْتَغْفِرُ
اللهَ يَا ابْنَ مَسْعُودٍ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ، فَأَمَرَهُمْ أَنْ يَتَفَرَّقُوا،
(المعجم الكبير للطبرانى، رقم الحديث-8630، مصنف عبد الرزاق، رقم الحديث-5409)
তবে হক্কানী কোন
পীর যদি মুরীদদেরকে জিকিরের প্রশিক্ষণ করানোর জন্য সম্মিলিতভাবে কোরাসের সাথে
জিকির করান, সেটিকে বিদআত বলার সুযোগ
নেই। কারণ, এ সূরতটিকে সওয়াবের কাজ
বা সুন্নত মনে করে করা হচ্ছে না, বরং তালীম বা প্রশিক্ষণের
জন্য করা হচ্ছে। তাই এটি বিদআতের পারিভাষিক সংজ্ঞায় পড়বে না। যেমন দ্বীন শিক্ষার
একাডেমিক পদ্ধতি কোন সুন্নত বা সওয়াবের নিয়তে আবিস্কার করা হয়নি। বরং দ্বীন শিখানো
বা প্রশিক্ষণের জন্য আবিস্কার করা হয়েছে। তবে কোরাস করে সম্মিলিত সুরে না করে
স্বতন্ত্র স্বরে জিকির করাই উচিত। তবে প্রশিক্ষণ হলে ভিন্ন কথা।
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১. হ্যাঁ, মসজিদে ফজরের পরে
হালকায়ে যিকির করে। অর্থাৎ কয়েকজন মিলে একজনের নেতৃত্বে সশব্দে জোরে জোরে যিকির
করেন। এইটা শরীয়তসম্মত যদি এ সূরতটিকে সওয়াবের কাজ বা সুন্নত মনে করে না করা হয়।
২. আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসঊদ (রাঃ) তা অপছন্দ করেছিলেন। এটা তার ব্যক্তিগত মত অথবা তারা হয়তো উক্ত
সূরতটিকে সওয়াবের কাজ বা সুন্নত মনে করে করেছিলো।
৩. হালকায়ে জিকির
বা জিকিরের মজলিসে জিকির করা এটা রাসূল
সা. এর জামানা থেকেই চলে আসছে।