بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
১. সাধারণ অবস্থায় জানাযার ক্ষেত্রে বিলম্ব না করার কথা হাদীসে
এসেছে। হযরত আবু হুরায়রা রা. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَسْرِعُوا بِالْجِنَازَةِ، فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً
فَخَيْرٌ تُقَدِّمُونَهَا، وَإِنْ يَكُ سِوَى ذَلِكَ، فَشَرٌّ تَضَعُونَهُ عَنْ
رِقَابِكُمْ
তোমরা জানাযাকে দ্রুত নিয়ে যাও। কেননা মৃত বক্তি যদি নেক লোক
হয়, তাহলে
কল্যাণের দিকেই তোমরা তাকে নিয়ে যাচ্ছ। আর যদি মন্দ হয় তাহলে সেক্ষেত্রে তোমাদের ঘাড়
থেকে আপদ সরিয়ে দিচ্ছ। (সহীহ বুখারী, হাদীস ১৩১৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৪৪)
অন্যদিকে আরেকটি হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
তিন সময়ে জানাযার নামায ও অন্যসব নামায পড়তে নিষেধ করেছেন।
হযরত উকবা বিন আমের রা. বলেন-
ثَلَاثُ سَاعَاتٍ كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ
عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْهَانَا أَنْ نُصَلِّيَ فِيهِنَّ، أَوْ أَنْ نَقْبُرَ
فِيهِنَّ مَوْتَانَا: حِينَ تَطْلُعُ الشَّمْسُ بَازِغَةً حَتّٰى تَرْتَفِعَ،
وَحِينَ يَقُومُ قَائِمُ الظَّهِيرَةِ حَتّٰى تَمِيلَ الشَّمْسُ، وَحِينَ
تَضَيَّفُ الشَّمْسُ لِلْغُرُوبِ حَتّٰى تَغْرُبَ
তিনটি সময় এমন রয়েছে, যাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
আমাদের নামায পড়তে বা আমাদের মৃতদেরকে দাফন করতে (অর্থাৎ তাদের জানাযা পড়তে) নিষেধ
করতেন।
১. সূর্য উদিত হওয়ার সময় থেকে (দুই বর্ষা পরিমাণ) উপরে ওঠা পর্যন্ত।
২. দ্বিপ্রহরে ছায়া যখন স্থীর থাকে তখন থেকে সূর্য মধ্যাকাশ
থেকে হেলে যাওয়া পর্যন্ত।
৩. সূর্য অস্তমুখী হওয়া থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮৩১)
অতএব স্বাভাবিক অবস্থায় জানাযা বিলম্ব করবে না। তবে উক্ত নিষিদ্ধ
সময়ের আগে জানাযা হাজির হলে ঐ সময় শেষ হওয়ার পর তা আদায় করবে। তবে যদি কোনো ক্ষেত্রে
এমন হয় যে, বিলম্ব করলে লাশের ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে বা অভিভাবক ও আত্মীয়দের বেশি সমস্যা
হয়, কিংবা জানাযা এমন এলাকায় হয় যেখানে রাতে দাফন করতে অসুবিধা
হয়, তাহলে এ ধরনের ওজরের কারণে নিষিদ্ধ সময়ে জানাযা আদায় করে
নিতে পারবে।(বাদায়েউস সানায়ে ১/২২৯; খুলাসাতুল ফাতাওয়া ১/৬৭,
২২৩; ফাতহুল কাদীর ১/২০২; তাবয়ীনুল হাকায়েক ১/৩২৯; আলবাহরুর রায়েক ১/২৪৯;
ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২; ইলাউস সুনান ৮/৩৫৮)
২. যেহেতু ডিপিএসের টাকার উপর ব্যক্তির মালিকানা পরিপূর্ণ বাকি
থাকে। তাই এসব সম্পত্তির উপর যাকাত আসবে। যাকাত না আসার কোন কারণ নেই। -(ফাতাওয়ায়ে
হিন্দিয়া, ১/১৭৫;
বাহরুর রায়েক, ২/২০২)
৩. হজ ফরয; প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তাদের জীবনকালে এটি পালন করা বাধ্যতামূলক
যদি তারা শারীরিকভাবে উপযুক্ত এবং আর্থিকভাবে এটি করতে সক্ষম হয়। পক্ষান্তরে ওমরাহ
সুন্নত। হজ এক নির্দিষ্ট সময়ে করতে হয় কিন্তু ওমরাহ বৎসরে যে কোন সময়ই করা যায়। তবে
৯ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত ওমরাহ করা মাকরূহ।
ওমরাহ সুন্নত; ফরজ নয়। এর দলিল হচ্ছে,
জাবির রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, ওমরাহ বাধ্যতামূলক কিনা? তিনি উত্তর দিয়েছেন,
لا، وأن
تعتَمِرَ خيرٌ لك না। তবে ওমরাহ করা তোমার জন্য কল্যাণকর। (তিরমিযী ৯৩১)
বার বার হজ ওমরাহ করা জরুরী নয়। তবে হ্যাঁ, সামর্থ্য থাকলে বার
বার হজ ওমরাহ করা যেতে পারে। কেননা, হাদিসে হজ-ওমরাহ বার বার
করার ফজিলত বর্ণিত হয়েছে, যেমন-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ
رَسُولُ اللَّهِ ﷺ تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّهُمَا
يَنْفِيَانِ الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ
وَالذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَلَيْسَ لِلْحَجَّةِ الْمَبْرُورَةِ ثَوَابٌ إِلاَّ
الْجَنَّةُ
আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাযি. বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, তোমরা হজ ও ওমরা একটার
পর অপরটা কর; কারণ এ দুটো আমল দারিদ্র ও গুনাহ বিদূরিত করে দেয়।
যেমন ভাটার আগুনে লোহা ও সোনা-রূপার ময়লা-জং দূরিভূত হয়ে থাকে। একটি কবুল হজ্জের প্রতিদান
তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। ( ইবনু মাজাহ ২৮৮৭, তিরমিযী ৮১০)
সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে আপনি চাইলে উমরা করতে পারেন তবে
আপনার জন্য উচিত হজ্জ করার সামর্থ হলে প্রথমে হজ্জ করে নেওয়া।কারণ, হজ্জ ফরজ হওয়া পর তা আদায় না
করলে আপনি গুনাহগার হবেন।আর উমরা করা যেহেতু সুন্নাত বিধায় পরবর্তিতে আপনার সামর্থ
হলে যে কোন সময়ে আপনি তা আদায় করতে পারবেন। তাছাড়া হজ্জের সফরে একসাথে
হ্জ্জ ও উমরা আদায় করারও সুযোগ আছে।