بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
নারীদের চুলে বেণি বা ঝুঁটি গেঁথে মাথা বাঁধা উত্তম। চুল বেশি
বা লম্বার আন্দাজ যেন পরপুরুষ না করতে পারে, সেদিকে লক্ষ রাখা নারীর কর্তব্য। কারণ নারীর
সুকেশ এক সৌন্দর্য, যা পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করা হারাম। রাসুলুল্লাহ
(সা.) বলেছেন, ‘শেষ জমানার আমার উম্মতের মধ্যে কিছু এমন লোক হবে,
যাদের নারীরা হবে অর্ধনগ্ন। তাদের মাথা কৃশ (খোঁপা) উটের কুঁজের মতো
হবে। তোমরা তাদের অভিশাপ করো, কারণ তারা অভিশপ্ত।’
চুল বেশি দেখানোর উদ্দেশ্যে কৃত্রিম চুল বা পরচুলা ব্যবহার করা
হারাম। স্বামী চাইলেও তা মাথায় লাগানো যাবে না। হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) অভিসম্পাত করেছেন ওই সব নারীর ওপর, যারা পরচুলা লাগিয়ে দেয় এবং যে পরচুলা লাগাতে বলে।’ (বুখারি, হাদিস : ৫৯৩৭)
তবে সিঁথি শুরু করার সময় ডান দিক থেকে শুরু করাটা রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট পছন্দনীয় ছিলো। সুতরাং ডান দিক চুল আঁচড়ানো শুরু করা উত্তম।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه
وسلم يُعْجِبُهُ التَّيَمُّنُ فِي تَنَعُّلِهِ وَتَرَجُّلِهِ وَطُهُورِهِ وَفِي
شَأْنِهِ كُلِّهِ
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম জুতা পরা, চুল আঁচড়ানো এবং পবিত্রতা অর্জন করা তথা
প্রত্যেক কাজই ডান দিক থেকে শুরু করতে ভালবাসতেন। (সহীহ বুখারী, ইফা হাদীস নং ১৬৯)
মহিলার মাথার কেশ একটি প্রকৃতিগত সৌন্দর্য। সুকেশিনী নারী মুগ্ধ
করে তার স্বামীর চক্ষু ও মন। সুতরাং সেই সৌন্দর্যেরও আদব রয়েছে ইসলামে। কেশবিন্যাসে
মহিলার সিঁথি হবে মাথার মাঝে। এই অভ্যাসের বিরোধিতা করে সে মাথার এক সাইডে সিঁথি করতে
পারে না।(ফাতাওয়া ইবনে উষাইমীন ২/৮২৭)
সাধারণতঃ বাঁকা সিঁথির এ ফ্যাশন দ্বীনদার মহিলাদের নয়।
আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন,
‘‘দুই শ্রেণীর মানুষ জাহান্নামবাসী হবে যাদেরকে এখনো আমি দেখিনি। তন্মধ্যে
প্রথম শ্রেণী হল সেই লোক, যাদের সঙ্গে থাকবে গরুর লেজের মত চাবুক;
যার দ্বারা তারা লোকেদেরকে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হল সেই মহিলাদল,
যারা কাপড় পরা সত্ত্বেও যেন উলঙ্গ থাকবে, (যারা
পাতলা অথবা খোলা লেবাস পরিধান করবে।) এরা (পর পুরুষকে নিজের প্রতি) আকৃষ্ট করবে এবং
নিজেরাও (তার প্রতি) আকৃষ্ট হবে; তাদের মাথা হবে হিলে যাওয়া উটের
কুজের মত। তারা জান্নাত প্রবেশ করবে না এবং তার সুগন্ধও পাবে না। অথচ তার সুগন্ধ এত-এত
দূরবর্তী স্থান হতে পাওয়া যাবে।’’( মুসলিম - ২১২৮)
উক্ত হাদীসে ‘মাইলাত’ (আকৃষ্টা)র ব্যাখ্যায় অনেকে বলেছেন, যারা মাথার একপাশে বাঁকা
সিঁথি কাটে। যা সাধারণতঃ পতিতাদের অভ্যাস।( শারহুন নওবী)
বেণী বা চুঁটি গেঁথে মাথা বাঁধাই উত্তম। খোঁপা বা লোটন মাথার
উপরে বাঁধা অবৈধ। পিছন দিকে ঘাড়ের উপর যদি কাপড়ের উপর তার উচ্চতা ও আকার নজরে আসে তবে
তাও বৈধ নয়। মহিলার চুল বেশী বা লম্বা আছে -একথা যেন পরপুরুষে আন্দাজ না করতে পারে।
যেহেতু নারীর সুকেশ এক সৌন্দর্য; যা কোন প্রকারে বেগানার সামনে প্রকাশ করা হারাম।( ফাতাওয়া ইবনে
উষাইমীন ২/৮৩০, )
অনুরূপ কারণে বৈধ নয় গাডার বা ক্লিপ দিয়ে সমস্ত চুলকে পিছন দিকে
টাইট করে গোড়ায় বেঁধে ঘোড়ার লেজের মত উঁচু করে ছেড়ে রাখা।
প্রিয় রাসুল (ﷺ) বলেন,
‘‘আমার শেষ যামানার উম্মতের মধ্যে কিছু এমন লোক হবে যারা ঘরের মত জিন্
(মোটর গাড়ি) তে সওয়ার হয়ে মসজিদের দরজায় দরজায় নামবে। (গাড়ি করে নামায পড়তে আসবে।)
আর তাদের মহিলারা হবে অর্ধনগ্না; যাদের মাথা কৃশ উটের কুঁজের
মত (খোঁপা) হবে। তোমরা তাদেরকে অভিশাপ করো। কারণ, তারা অভিশপ্তা!’’(আহমাদ
২/২২৩, ইবনে হিববান, ত্বাবারানী,
সিলসিলাহ সহীহাহ হা/২৬৮৩ )
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!
বাকা সিঁথি করে পরপুরুষের দৃষ্টি আকর্ষন করা যদি উদ্দেশ্য হয়
তাহলে তা নাজায়েয । তবে যদি কেউ স্বাভাবিক ভাবে ডানদিকে বা বামদিকে সিঁথি করে এবং বেগানা
বেপর্দা নারীর মত ডিজাইন বা ফ্যাশন করা উদ্দেশ্য না হয় এবং উপরে উল্লেখিত অবস্থার সাথে
মিলে না যায় তাহলে তা জায়েয আছে।