بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
আরশ,
কুরসী, লাওহে মাহফুয, পানি,
আসমান, ফেরেশতা, জিন ইত্যাদি
প্রথম পর্যায়ের সৃষ্টির অন্তর্ভূক্ত। মানুষ কোন ক্রমেই উপরোক্ত সৃষ্টিসমূহের পূর্বে
সৃষ্টি হয় নি। নিম্নে আরশ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো:
আল্লাহ তায়াল কালামে পাকে এরশাদ করেন,
إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ
الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ
عَلَى الْعَرْشِ ۖ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ ۖ مَا مِن شَفِيعٍ إِلَّا مِن بَعْدِ
إِذْنِهِ ۚ ذَٰلِكُمُ اللَّهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ ۚ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ
নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ যিনি তৈরি করেছেন আসমান ও
জমিনকে ছয় দিনে, অতঃপর
তিনি আরশের ওপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি কার্য পরিচালনা করেন। কেউ সুপারিশ করতে পারবে
না তবে তাঁর অনুমতি ছাড়া ইনিই আল্লাহ তোমাদের পালনকর্তা। অতএব, তোমরা তাঁরই ইবাদত করো। তোমরা কি কিছুই চিন্তা করো না’ (সূরা ইউনুস-৩)
আল্লাহ তায়াল অন্যত্র এরশাদ করেন,
وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ
السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ
আর তিনিই আসমানসমূহ আর যমীনকে ছ’দিনে সৃষ্টি করেছেন। ইতোপূর্বে
তাঁর আরশ ছিল পানির উপর। ( সূরা হুদ আয়াত 7)
অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে,
اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ
السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ۖ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ
‘আল্লাহ,
যিনি ঊর্ধ্বদেশে স্থাপন করেছেন আকাশমন্ডলীকে স্তম্ভ ব্যতীত। তোমরা সেগুলো
দেখ। অতঃপর তিনি আরশের ওপর অধিষ্ঠিত হয়েছেন।’ (সুরা রাদ : ২)
তবে আল্লাহ তায়ালা কীভাবে আরশের ওপর অধিষ্ঠিত রয়েছেন সেটা অজ্ঞাত।
মানুষের পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়। ঈমানদারের উচিত কোরআনের আয়াতের প্রতি বিশ্বাস রাখা।
আরশ বিদ্যমান রয়েছে ও আরশে আল্লাহ তায়ালা অধিষ্ঠিত আছেন এ বিশ্বাস রাখা।
আরশ সবচেয়ে বড় সৃষ্টি : মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় সৃষ্টি হলো আরশ।
আরশের চেয়ে অতিকায় ও পরাবাস্তব কোনো বস্তু আল্লাহ সৃষ্টি করেননি। পবিত্র কোরআনে এসেছে,
فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ
الْحَقُّ ۖ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ
‘অতএব
সর্বশীর্ষ মহিমাময় আল্লাহ, তিনি সত্যিকার মালিক, তিনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের অধিপতি।’ (সুরা মুমিনুন
: ১১৬)।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায়
প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) উল্লেখ করেছেন, ‘কেননা তিনি আরশের অধিপতি, যা সমস্ত সৃষ্টির জন্য ছাদস্বরূপ। সমস্ত আসমান ও সমস্ত জমিন এবং উভয়ের ভেতরে
যা রয়েছে ও উভয়ের মাঝখানে যা রয়েছে, সব কিছু আরশের নিচে অবস্থিত।’
(তাফসিরে ইবনে কাসির : ২/৪০৫)
আরশের ব্যাপ্তি : আরশের বিশালতা ও ব্যাপ্তি সাত আসমান, সাত জমিন ও কুরসি থেকেও বড়। আল্লাহর আরশ সাত
আসমান সাত জমিন ও কুরসি সবগুলোকেই বেষ্টন করে আছে। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন, আসমান ও জমিনের দূরত্ব পাঁচশ বছর,
প্রত্যেক আসমানের দূরত্ব পাঁচশ বছর, সপ্তম আসমান
ও কুরসির দূরত্ব পাঁচশ বছর, কুরসি ও পানির দূরত্ব পাঁচশ বছর,
আরশ পানির ওপর, আল্লাহ আরশের ওপর। আল্লাহর কাছে
তোমাদের কোনো আমল গোপন নয়। (বায়হাকি : ৪০১ পৃষ্ঠা)
ফেরেশতাগণ আরশ বহন করেন : নিশ্চয় আল্লাহর আরশ সবচেয়ে বড় সৃষ্টি।এই
বিশাল আরশ কীভাবে স্থির আছে? কারা বহন করছেন আরশ? এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা কোরআন মাজিদে
ইরশাদ করেছেন,
‘যারা
আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে তাদের পালনকর্তার সপ্রশংসা পবিত্রতা বর্ণনা করে,
তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে
বলে হে আমাদের পালনকর্তা! আপনার রহমত ও জ্ঞান সব কিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব যারা তওবা
করে ও আপনার পথে চলে তাদের ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করুন।’ (সুরা
গাফির : ৭)।
কেয়ামতের দিন আরশ বিশালদেহী আটজন ফেরেশতার কাঁধের ওপর থাকবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘ফেরেশতাগণ
আকাশের প্রান্ত দেশে থাকবে ও আটজন ফেরেশতা আপনার পালনকর্তার আরশকে তাদের ঊর্ধ্বে বহন
করবে।’ (সুরা হাক্কাহ : ১৭)। আরশ বহনকারী ফেরেশতাদের বিশালতা সম্পর্কে হজরত জাবির
(রা.) থেকে বর্ণিত আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর যেসব ফেরেশতা আরশ বহন করে আছে তাদের একজনের সঙ্গে কথা বলার জন্য আমাকে
অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। তার কানের লতি থেকে কাঁধ পর্যন্ত স্থানের দূরত্ব হলো সাতশ বছরের
দূরত্বের সমান।’ (আবু দাউদ : ৪৭২৭)। তা ছাড়া কিছু ফেরেশতা আরশের চতুর্দিকে ঘুরে ঘুরে
দিনরাত আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনি
ফেরেশতাগণকে দেখবেন, তারা আরশের চারপাশ ঘিরে তাদের পালনকর্তার
পবিত্রতা ঘোষণা করছে। তাদের সবার মাঝে ন্যায় বিচার করা হবে। বলা হবে সমস্ত প্রশংসা
বিশ্বপালক আল্লাহর।’ (সুরা জুমার : ৭৫)
আরশের রয়েছে খুঁটি : আরশের
অনেক খুঁটি রয়েছে। যেভাবে সিংহাসনের খুঁটি থাকে। এ সম্পর্কে হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.)
থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) বলেন, ‘কেয়ামতের দিন সমস্ত মানুষ
বেহুঁশ হবে। অতঃপর সর্বপ্রথম আমারই হুঁশ ফিরবে। তখন আমি মুসাকে (আ.) দেখতে পাব যে,
তিনি আরশের খুঁটিসমূহের মধ্যে একটি খুঁটি ধরে রয়েছেন। আমি জানি না,
আমার আগেই কি তাঁর হুঁশ এলো, নাকি তুর পাহাড়ে বেহুঁশ
হওয়ার প্রতিদান তাকে দেওয়া হলো।’ (বুখারি : ৩৩৯৮