بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
ইসলামে মিলাদ, কুলখানি, চল্লিশা সহ নানান
দিবসের কোন মূল্যই নেই। যদি মূল্য থাকতো, তাহলে রাসূল সাঃ নিজেই
তা পালন করতেন। রাসূল সাঃ এর ছেলেগণ নবীজী সাঃ এর জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেছেন। কিন্তু
নবীজী সাঃ কোন সন্তানের বেলায়ই উক্ত রুসুমগুলো পালন করেননি।
খলীফায়ে রাশেদীনসহ কোন সাহাবী নবীজী সাঃ এর জন্য উপরোক্ত রুসুমগুলো
পালন করেননি। কোন মুহাদ্দিস, কোন মুফাসসির, কোন তাবেয়ী, কোন তাবে তাবেয়ী, কোন মুজতাহিদ ইমামগণ উক্ত রুসুম পালন
করেননি।
কুরআন ও হাদীস বা ফিক্বহের কিতাবে এরকম রুসুমের কথা উল্লেখ নেই।
তাই এসব পালন করা বিদআত। যে অনুষ্ঠান পালন বিদআত, সে অনুষ্ঠানে দান করাও জায়েজ নেই।
তবে মৃতের জন্য এমনিতে দুআর আয়োজন করা যেতে পারে নির্দিষ্ট দিনের
পাবন্দী না করে। যেকোন দিন মৃতের ঈসালে সওয়াবের জন্য গরীবদের খাওয়ানো যায়। দান-সদকা
করা যেতে পারে। কুরআন পড়ে ঈসালে সওয়াব করা যেতে পারে। কিন্তু ৩য়, ২১ বা চল্লিশা বা
মৃত্যুবার্ষিকী ইত্যাদি তারিখ নির্ধারণ পূর্বক এসব রুসুম পালন বিধর্মীর অনুসরণের কারণে
নিষিদ্ধ।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ
صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ»
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি যে জাতির
সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪০৩১, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৯৬৬, মুসনাদুশ শিহাব, হাদীস নং-৩৯০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-১৮৬২, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৮৩২৭, মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩৩০১৬}
ঈসালে সওয়াব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন :
https://www.ifatwa.info/3565
https://www.ifatwa.info/1044
* সমস্ত মানুষ হযরত আদম ও হাওয়া আলাহিস সালাম
এর সন্তান। সেই হিসেবে সকল ধর্মবর্ণের মানুষ পরস্পর ভাই ভাই।
যেমন ইবরাহিম আলাহিস সালাম তার বিবি সারা এর ব্যাপারে বলেছিলেন, তিনি তার বোন। (বুখারি,
হাদিস নং-৩৩৫৮, সহিহ মুসলিম, হাদিস নং-২৩৭১)
আদম আলাহিস সালামের সন্তান হিসেবে মানুষ পরস্পর সবাই ভাই ভাই।
নারী পুরুষ সবাই ভাই বোন।কুরআনে কারিমে মুসলমানদের পরস্পর ভাই ভাই বলে সম্বোধন করা
হয়েছে,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ [٤٩:١٠]
মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। (সূরা হুজুরাত-১০)
সেই সাথে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতে মুহাম্মদির
রূহানি পিতা। তার বিবিগণ মুমিনদের রুহানী আম্মাজান।
কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,
النَّبِيُّ أَوْلَىٰ بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِمْ
ۖ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ ۗ [٣٣:٦]
নবি মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর
স্ত্রীগণ তাদের মাতা। (সূরা আহযাব-৬)
উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা একথা পরিস্কার হল যে, প্রতিটি মানুষ পরস্পর
ভাই ভাই আদম আলাহিস সালামের সন্তান হিসেবে। পুরুষ নারী পরস্পর ভাই বোন আদম ও হাওয়া
আলাইহি সালামের সন্তান হিসেবে।
আর মুসলমানগণ আলাদাভাবে আরো গভীর ভাই ভাই মুসলিম হিসেবে। আর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত হিসেবে নবি আমাদের রূহানী পিতা আর তার
সম্মানিতা স্ত্রীগণ মুমিনদের আম্মাজান।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১.যদি মৃত ব্যক্তি তার মৃত্যুর পূর্ব থেকেই উক্ত বিদআত কর্মকান্ডের
সাথে জড়িত থাকে এবং তার মৃত্যুর পর তিনদিান, চল্লিশা,কুলখানী ইত্যাদী
করার অসিয়ত করে যায় তাহলে তার মৃত্যুর পরে উক্ত কুসংস্কার কাজগুলো যারা করবে তারাও
গুনাহগার হবে এবং মৃত ব্যক্তি অসিয়ত করার কারণে সেও গওনাহগার হবে। তবে যদি মৃত ব্যক্তি
উক্ত কাজগুলি নিজেও অপছন্দ করে থাকে এবং তার মৃত্যুর পর সেগুলি না করার অছিয়ত করে যায়
তাহলে পরবর্তিতে যারা উক্ত বেদআতী কাজ করবে তারা গুনাহগার হবে কিন্তু মৃত ব্যক্তির
কোন গুনাহ হবে না।
২. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম আলাইহি সালামের
সন্তান এবং মুসলমানদের নবী হিসেবে সমস্ত মুসলমানদের ভাই।আবার তিনি নবী হিসেবে উম্মতের
রূহানী পিতাও। তেমনি নবীজীর স্ত্রীগণ মুসলিম হিসেবে সমস্ত মুসলমানদের বোন। আবার নবীজীর
স্ত্রী হিসেবে সমস্ত মুমিনদের আম্মাজান।এটা শুধুই দৃষ্টিকোণ হিসেবে পার্থক্য।সুতরাং
রাসূলুল্লাহ সাঃ কে রুহানি পিতা বলা অসংগত হবে না।বলা যেতে পারে।