بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে সতর্ক
করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কোনো নারীর পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলা উচিত নয়। সূরা
আহজাবের ৩২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীদের পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে
কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না
করেন। যদিও এ আয়াতটি নবীর স্ত্রীদের উদ্দেশ্য করে নাজিল হয়েছিল, তবে তা সব মুমিনের বেলায়
প্রযোজ্য।
সূরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ পুরুষ-নারী সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের
নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَىٰ ۖ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً
وَسَاءَ سَبِيلً
'তোমরা
ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।'(সূরা বনি ইসরাইল, ৩২)
সূরা নূরে ব্যভিচারের শাস্তি উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন,
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ
مِّنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ
‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী
উভয়কে একশ ঘা করে বেত্রাঘাত কর।’(সূরা নূর, ২)
রাসুলুলুল্লাহ (সা.) ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘হে মুসলমানরা! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর। কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর
মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে। যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা
হচ্ছে, তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে, তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে এবং তার দারিদ্র্য চিরস্থায়ী হবে। আর যে তিনটি
শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে, সে আল্লাহর অসন্তোষ,
কঠিন হিসাব ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে। ' (বায়হাকি, হা নম্বর-৫৬৪)
স্ত্রীদের তাদের দেবরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার ক্ষেত্রেও সাবধনতার
বিধান রেখেছে। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না। ’এক আনসার সাহাবি বললেন,
ইয়া রাসূলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? নবীজি(সা.)বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য। ’ (মুসলিম,
২৪৪৫)
*মিথ্যা বলা এমনিতেই নাজায়েজ। সেই সাথে কুরআন
ছুঁয়ে মিথ্যা বলা আরো জঘন্য অপরাধ। আপনার স্বামীকে বলুন, খাস
দিলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে এবং তওবা করতে।
ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।আর কুরআন হাতে নিয়ে মিথ্যা বলা তো অত্যন্ত
গর্হিত কাজ।
হাদিস শরিফে এসেছে,
مَنْ حَلَفَ بِسُورَةٍ مِنَ الْقُرْآنِ لَقِيَ اللَّهَ
بِعَدَدِ آيِهَا خَطَايَا
হযরত সাহাম ইবনে মিনজাব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন শরীফের কোন একটি সূরার কসম করবে সে ঐ সূরার প্রত্যেকটি আয়াতের
বদলায় একটি করে গুনাহ নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে।(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা
হাদীস ১২৩৬০)
অবশ্য নাজায়েয হলেও
কেউ যদি বলে, আমি কুরআন শরীফের কসম করে বলছি, তাহলে এর দ্বারা কসম
সংঘটিত হয়ে যাবে। এ শপথ ভঙ্গ করলে কাফফারাও ওয়াজিব হবে। আর যদি কসম শব্দ না বলে শুধু
বলে যে, কুরআন শরীফ ছুঁয়ে কিংবা মাথায় নিয়ে বলছি, তবে এর দ্বারা কসম সংঘটিত হবে না। (ফাতহুল কাদীর ৪/৩৫৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/৫৩; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৭১৩;
ইমদাদুল আহকাম ৩/৩৮)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন!
১.পরোকিয়ার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। ঐ বোনের জন্য উচিত তার স্বামীকে
মুহাব্বত ও ভালোবাসা দিয়ে বুঝানো যাতে সে উক্ত গুনাহ থেকে তওবা করে ফিরে আসে। আরো ভালো
হয় স্থানীয় কোন বড় আলেমের কাছে তাকে নিয়ে যাবে যিনি তাকে গোনাহ থেকে ফিরে আসার বিষয়ে
বিভিন্ন নছিহত করবেন। আশা করি ধীরে ধীরে এই পদ্ধতি তার গুনাহ থেকে বিরত থাকার জন্য
কাজে আসবে ।
মিথ্যা বলা এমনিতেই নাজায়েজ। সেই সাথে কুরআন ছুঁয়ে মিথ্যা বলা
আরো জঘন্য অপরাধ। যা
থেকে তওবা করা আবশ্যক।
২,৩.কুরআন ছুয়ে কসম করা জায়েয নেই তবে যদি কেউ কসম করে ফেলে
তাহলে কসম হয়ে যাবে । উক্ত কসম ভঙ্গ করলে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। কথায় কথায় কুরআন ছুয়ে
কিছু বলা বা কাউকে বলতে বলা মোটেও উচিত না। এমন কাজ পরবর্তিতে আর করবে না এবং অতীতের
জন্য ইস্তেগফার করবে।
৪.যদি সে কসম না করে শুধু স্পর্শ করে বলে তাহলে কাফ্ফারা দিতে
হবে না । কিন্তু কুরআন ছুয়ে মিথ্যা বলে সে জঘন্য অপরাধ করেছে বিধায় আল্লাহ তায়ালার
কাছে উক্ত গোনাহের জন্য খুব বেশী ইস্তেগফার করবে।
৫.জ্বী এমন দুআ করা জায়েয আছে।