ওয়া আলাইকুমুস সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির
রাহিম।
জবাবঃ
■ কিয়ামত কবে হবে তা একমাত্র
আল্লাহ তায়ালাই জানেন। ইরশাদ হয়েছে-
يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّي ۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلَّا هُوَ ۚ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً ۗ يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ اللَّهِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ
আপনাকে জিজ্ঞেস করে, কেয়ামত কখন অনুষ্ঠিত হবে? বলে দিন এর খবর তো
আমার পালনকর্তার কাছেই রয়েছে। তিনিই তা অনাবৃত করে দেখাবেন নির্ধারিত সময়ে। আসমান
ও যমীনের জন্য সেটি অতি কঠিন বিষয়। যখন তা তোমাদের উপর আসবে অজান্তেই এসে যাবে।
আপনাকে জিজ্ঞেস করতে থাকে,
যেন আপনি তার অনুসন্ধানে লেগে আছেন। বলে দিন, এর সংবাদ বিশেষ করে আল্লাহর নিকটই রয়েছে। কিন্তু তা অধিকাংশ
লোকই উপলব্ধি করে না। (সূরা আরাফ, আয়াত
১৮৭)
■ আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র ইরশাদ করেন-
حَتَّىٰ
إِذَا
فُتِحَتْ
يَأْجُوجُ
وَمَأْجُوجُ
وَهُم
مِّن
كُلِّ
حَدَبٍ
يَنسِلُونَ
যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে
এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভুমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৯৬)
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ أَسِيدٍ الْغِفَارِيِّ، قَالَ اطَّلَعَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلَيْنَا وَنَحْنُ نَتَذَاكَرُ فَقَالَ " مَا تَذَاكَرُونَ " . قَالُوا نَذْكُرُ السَّاعَةَ . قَالَ " إِنَّهَا لَنْ تَقُومَ حَتَّى تَرَوْنَ قَبْلَهَا عَشْرَ آيَاتٍ " . فَذَكَرَ الدُّخَانَ وَالدَّجَّالَ وَالدَّابَّةَ وَطُلُوعَ الشَّمْسِ مِنْ مَغْرِبِهَا وَنُزُولَ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ صلى الله عليه وسلم وَيَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ وَثَلاَثَةَ خُسُوفٍ خَسْفٌ بِالْمَشْرِقِ وَخَسْفٌ بِالْمَغْرِبِ وَخَسْفٌ بِجَزِيرَةِ الْعَرَبِ وَآخِرُ ذَلِكَ نَارٌ تَخْرُجُ مِنَ الْيَمَنِ تَطْرُدُ النَّاسَ إِلَى مَحْشَرِهِمْ
হুযায়ফা ইবনু আসীদ আল গিফারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা আলোচনা করছিলাম। এমতাবস্থায় রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট আসলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছো? তাঁরা বললেন- আমরা কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করছি। তখন তিনি বললেনঃ কিয়ামত কায়িম
হবে না যতক্ষন না তোমরা দশটি বিশেষ নিদর্শন দেখবে। অতঃপর তিনি ধুম্র, দাজ্জাল, দাব্বা, পশ্চিম দিগন্ত হতে সূর্য উদিত হওয়া, মারইয়াম তনয় ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর অবতরণ, ইয়াজুজ মা-জুজ এবং তিনবার ভূমি ধ্বসে যাওয়া তথা পূর্ব
প্রান্তে একটি ভূমি ধ্বস,
পশ্চিম প্রান্তে একটি ভূমি ধ্বস, এবং আরব উপদ্বীপে একটি ভূমি ধ্বসের কথা উল্লেখ করলেন। এ
নিদর্শনসমূহের পর এক আগুন প্রকাশিত হবে, ইয়ামান থেকে এবং মানুষকে তাড়িয়ে হাশরের ময়দানে দিকে নিয়ে যাবে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৭০২১)
■ অপর এক হাদীসে এসেছে-
নাওয়াস ইবনু সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত।…এমতাবস্থায় আল্লাহ তাআলা ঈসা (আলাইহিস সালাম) এর প্রতি এ মর্মে
অহী নাযিল করবেন যে,
আমি আমার এমন কিছু বিশেষ বান্দা আবির্ভূত করেছি, যাদের সাথে কারোই যুদ্ধ করার ক্ষমতা নেই। সুতরাং তুমি আমার
বান্দাদের তূর পর্বতে সমবেত কর। তখন আল্লাহ তাআলা ইয়াজুয-মাযুয সম্প্রদায়কে প্রেরণ
করবেন। তারা প্রতি উঁচু ভূমি হতে ছুটে আসবে। তাদের প্রথম দলটি তবরিস্তান উপসাগরের
নিকট এসে এর সমুদয় পানি পান করে নিঃশেষ করে দিবে। অতঃপর তাদের সর্বশেষ দলটি এ
স্থান দিয়ে যাত্রাকালে বলবে, এ সমুদ্রে এক সময়
অবশ্যই পানি ছিল। তারা আল্লাহর নবী ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীদেরকে
অবরোধ করে রাখবে। ফলে তাদের নিকট একটি বলদের মাথা বর্তমানে তোমাদের নিকট একশ
দ্বীনারের মূল্যের চেয়েও অধিক উৎকৃষ্ট প্রতিপন্ন হবে।
তখন আল্লাহর নবী ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীগণ
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। ফলে আল্লাহ তা’আলা ইয়াজুয-মাজুজ সম্প্রদায়ের প্রতি
আযাব প্রেরণ করবেন। তাদের ঘাড়ে এক প্রকার পোকা হবে। এতে একজন মানুষের মৃত্যুর
ন্যায় তারাও সবাই মরে খতম হয়ে যাবে। অতঃপর ঈসা (আলাইহিস সালাম) ও তাঁর সঙ্গীগণ
পাহাড় হতে যমীনে বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু তারা অর্ধ হাত জায়গাও এমন পাবেন না যথায় তাদের
পঁচা লাশ ও লাশের দুর্গন্ধ নেই। অতঃপর ঈসা (আলাইহিস সালাম) এবং তাঁর সঙ্গীগণ
পুনরায় আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করবেন। তখন আল্লাহ তাআলা উটের ঘাড়ের ন্যায় লম্বা এক
ধরনের পাখি প্রেরণ করবেন। তারা তাদেরকে বহন করে আল্লাহর ইচ্ছা মাফিক স্থানে নিয়ে
ফেলবে।
এরপর আল্লাহ এমন মুষলধারে বৃষ্টি বর্যণ করবেন যার ফলে
কাচা-পাকা কোন ঘরই তাকে বাধাগ্রস্ত করবে না। এতে যমীন বিধৌত হয়ে পরিচ্ছন্ন
পিচ্ছিল মৃত্তিকায় পরিণত হবে। অতঃপর পুনরায় যমীনকে এ মর্মে নির্দেশ দেয়া হবে যে, হে যমীন! তুমি আবার শস্য উৎপন্ন কর এবং তোমার বরকত ফিরিয়ে
দাও। সেদিন একদল মানুষ একটি ডালিম ভক্ষণ করবে এবং এর বাকলের নীচে লোকেরা ছায়া
গ্রহণ করবে। দুধের মধ্যে বরকত হবে। ফলে দুগ্নবতী একটি উটই ছোট ছোট অনেক গোত্রের
জন্য যথেষ্ট হবে,
দুগ্ধবতী একটি গাভী এক বড় গোত্রীয় মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে
এবং যথেষ্ট হবে দুগ্ধবতী একটি বকরী এক দাদার সন্তানের (গোষ্ঠীর) জন্য। এ সময়
আল্লাহ তায়াআলা অত্যন্ত আরামদায়ক একটি বাতাস প্রেরণ করবেন। এ বাতাস সমস্ত ঈমানদার
লোকদের বগলে গিয়ে লাগবে এবং সমস্ত মুমিন মুসলিমদের রুহ কবয করে নিয়ে যাবে। তখন
একমাত্র মন্দ লোকেরাই এ পৃথিবীতে বাকী থাকবে। তারা গাধার ন্যায় পরস্পর একে অন্যের
সাথে ব্যাক্তিচারে লিপ্ত হবে। এদের উপরই কিয়ামত সংঘটিত হবে। (সহীহ মুসলিম ৭১০৬)
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
না, কথাগুলো সত্য নয়। তার কয়েকটি কারণ হলো:
১. ইয়াজুজ-মা‘জুজ বের হওয়া কিয়ামতের বড় দশটি আলামতের একটি। আর তা একেবারে কিয়ামতের আগে সংঘটিত হবে।
২. ইয়াজুজ-মা‘জুজ বের হওয়ার সময় ঈসা আ. থাকবেন।
৩. তারা সংখ্যায় এতো বেশী হবে যে, দুনিয়ার সব কিছু খেয়ে শেষ করে ফেলবে।
উল্লেখ্য যে, ইয়াজুজ-মা‘জুজ বের হওয়া সম্পর্কের হাদীসগুলো বেশী বেশী
পড়ুন। তাহলেই তাদের মিথ্যাচারিতা আপনার নিকট আরো স্পষ্ট হয়ে যাবে।