আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
351 views
in সালাত(Prayer) by (25 points)
edited by
আসসালামু আ'লাইকুম

১) আমাদের মসজিদে একজন লোককে প্রায়ই দেখি যে- উনি সামনের কাতারে দাঁড়ানোর পর যদি দেখে পিছনে বয়স্ক কেও / আলেম পিছনের কাতারে দাড়িয়ে আছে তখন তিনি নিজে পিছনের কাতারে গিয়ে অন্যজনকে সামনের কাতারে দেয় ।

তাই আমি কালকে ওনাকে বলেছি যে- নবীজি সা বলেছেন - মানুষ যদি জানত সামনের কাতারে দাঁড়ানোর নেকি কি তাহলে তারা হামাগুরি দিয়েও আসত । এরপর বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করেছি । তিনি বলেন - আমি আসলে ওনাদের সম্মান করে দেই আমি আসা করি এতে আমার নেকির কমতি হবে না , আলেমরা তো নবীর ওয়ারিস সেই হিসেবে সম্মান করি । (যদিও বেশির ভাগ সময় এলাকার বয়স্ক লোক বাঁ নেতাদের দিয়ে থাকে )  আমি বললাম - আপনার নেকির চিন্তা আপনাকে করতে হবে , আলেমরা তো এমনিতেই অনেক আমল করতে পারে,যেহেতু তারা ওই সেক্তরেই থাকে তাছাড়া ওনারা কাওকে আমলের কথা বললে যদি অন্যকেও করে তাহলেও তারা আমল না করেও নেকি পায় । তাই আপনার আমার নেকি অর্জনের সুযোগ বাদ দেয়া যাবেনা । এক হল সামনের কাতারে দাঁড়ানোর নেকি , যার সিউরিটি নবীজি সা দিয়েছেন , আরেক হল আপনার আশা যে নেকি পাবেন যার সিউরিটি নাই ।

...আমার প্রশ্ন হল - উনি নিয়মিত এরকম করলে কি নেকি পাবেন ? নাকি এ সম্পর্কে নস থেকে কিছু পাওয়া যায় না । ওনাকে বলেছিলাম এই সম্পর্কে আমি জেনে আপনাকে জানাব । এখন আমি ওনাকে গিয়ে কি বলব ?

২) একজন নামাজির কতটুকু সামনে দিয়ে যাওয়া গুনাহ ? এক সালাফি আলেমকে বলতে শুনলাম - নামাজির সিজদার জায়গা বাঁ তার থেকে ১ হাতের বেশি পর্যন্ত হল তার জায়গা । সুত্রা না থাকলেও এই জায়গার সামনে দিয়ে গেলে গুনাহ হবে না । এ বিষয়ে হানাফি ফিকহ এর বক্তব্য কি ?

যেমন- অনেক সময় দেখা যায় ৫-৬ নং কাতারে কেও নামাজ পড়ছে সুত্রা না দিয়ে , আর আমি ১-২ নং কাতারে এখন আমাদের বের হতে হলে বাঁ অন্য পাশে যেতে হলে সোজা ওনার পিছনে গিয়ে ৫-৬ কাতার পার হয়ে আবার ১-২ নং কাতারে আসতে হয় ।

1 Answer

+1 vote
by (60,240 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা নাজায়েজ তথা গুনাহের কাজ । হাদীসে এ বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। যেমন-

عن أبي هريرة قال قال النبي صلى الله عليه و سلم ( لو يعلم أحدكم ما له في أن يمر بين يدي أخيه معترضا في الصلاة . كان لأن يقيم مائة عام خير له من الخطوة التي خطاها (سنن ابن ماجه، كتاب الصلاة، باب المرور بين يدى المصلى، رقم الحديث-946

অনুবাদ-হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি কোন নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করে সে যদি জানতো [এর শাস্তি কতটা ভয়াবহ], তাহলে তার কাছে একশত বছর দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে হতো নামাযীর সামনে দিয়ে এ পদক্ষেপের তুলনায়। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৯৪৬, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১৯২৫২}

 

অন্য হাদীসে এসেছে-

قَالَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم– « لَوْ يَعْلَمُ الْمَارُّ بَيْنَ يَدَىِ الْمُصَلِّى مَاذَا عَلَيْهِ لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ ». قَالَ أَبُو النَّضْرِ لاَ أَدْرِى قَالَ أَرْبَعِينَ يَوْمًا أَوْ شَهْرًا أَوْ سَنَةً (سنن ابى داود، كتاب الصلاة، باب مَا يُنْهَى عَنْهُ مِنَ الْمُرُورِ بَيْنَ يَدَىِ الْمُصَلِّى، رقم الحديث-701)

অনুবাদ-রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-নামাযীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কীরূপ শাস্তি-ভোগের আশংকা রয়েছে, তবে চল্লিশ পর্যন্ত ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাও ভালো মনে করতো।

হযরত আবুন নাযর বলেন-আমার জানা নেই, হাদীসে চল্লিশের কী অর্থ, চল্লিশ দিন, চল্লিশ মাস, নাকি চল্লিশ চছর? {সুনানে আব দাউদ, হাদীস নং-৭০১, }

 

যদি মসজিদে নামায পড়ে, আর মসজিদ ছোট হয়, তাহলে সামনে দিয়ে অতিক্রম বিলকুল করতে পারবে না। চাই যত দূরত্ব দিয়েই অতিক্রম করুক না কেন। গুনাহ হবেই।

কিন্তু যদি মসজিদে বড় হয়, বা ময়দানে নামায পড়ে, তাহলে নামাযী ব্যক্তি নামাযে দাড়িয়ে সেজদার স্থানের দিকে তাকালে যতদূর পর্যন্ত দেখতে পায়, ততটুকু দূরুত্বের বাহির দিয়ে অতিক্রম করবে। আর এর পরিমাণ হল-তিন কাতার সম পরিমাণ। যেটা প্রায় ৪/৫ গজ। আর যদি কোন ষ্টেশনে নামায পড়ে, তাহলে সেজদার স্থান বাদ দিয়ে সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েজ হবে। এতে কোনো রকমের গুনাহ হবেনা {ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১১/১৭৮}

( ومرور مار في الصحراء أو في مسجد كبير بموضع سجوده ) في الأصح ( أو ) مروره ( بين يديه )__ ( في ) بيت و ( مسجد ) صغير ، الخ ( وإن أثم المار ) (رد المحتار-كتاب الصلاة، باب مايفسد الصلاة-2/398

অনুবাদ-ময়দান বা বড় মসজিদে সেজদার স্থান ছাড়া সামনে দিয়ে অতিক্রম করলে কোন সমস্যা নেই। তবে বাড়ি বা ছোট মসজিদে হলে গোনাহ হবে। {ফাতওয়ায়ে শামী-২/৩৯৮, মাজমাউল আনহুর-১/১৮৩, আল বাহরুর রায়েক-২/১৫}

 

এখানে আরেকটু বিষয় স্পষ্ট করছি,  

নামাযীর ঠিক সামনে বসা ব্যক্তি নিজ স্থান থেকে সড়ে যেতে পারবে। যেহেতু এর দ্বারা নামাযী ব্যক্তির সামনে দিয়ে অতিক্রম করার বিষয় পাওয়া যায় না। সে আস্তে করে স্বীয় স্থান থেকে উঠে চলে যাবে।


হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ صَلَّى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي مَرَضِهِ خَلْفَ أَبِي بَكْرٍ قَاعِدًا فِي ثَوْبٍ مُتَوَشِّحًا بِهِ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . قَالَ وَهَكَذَا رَوَاهُ يَحْيَى بْنُ أَيُّوبَ عَنْ حُمَيْدٍ عَنْ ثَابِتٍ عَنْ أَنَسٍ . وَقَدْ رَوَاهُ غَيْرُ وَاحِدٍ عَنْ حُمَيْدٍ عَنْ أَنَسٍ وَلَمْ يَذْكُرُوا فِيهِ عَنْ ثَابِتٍ . وَمَنْ ذَكَرَ فِيهِ عَنْ ثَابِتٍ فَهُوَ أَصَحُّ .

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রোগাক্রান্ত অবস্থায় এক কাপড় পরে আবূ বাকার (রাঃ)-এর পিছনে বসে বসে নামায আদায় করেছেন। (তিরমিযী ৩৬৩)

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

১. তাকে বলবেন: তার জন্য উত্তম হলো তিনি যেই সামনের কাতারে দাঁড়িয়েছেন সেখানেই দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করবেন। কাউকে সম্মান দেখিয়ে সামনের কাতার থেকে পিছনে চলে আসা ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এসেছে যে, রাসূল সা. আবু বকর রা. এর পিছনে সালাত আদায় করেছেন।

২.  যদি মসজিদে নামায পড়ে, আর মসজিদ ছোট হয়, তাহলে সামনে দিয়ে অতিক্রম বিলকুল করতে পারবে না। চাই যত দূরত্ব দিয়েই অতিক্রম করুক না কেন। গুনাহ হবেই।

কিন্তু যদি মসজিদে বড় হয়, বা ময়দানে নামায পড়ে, তাহলে নামাযী ব্যক্তি নামাযে দাড়িয়ে সেজদার স্থানের দিকে তাকালে যতদূর পর্যন্ত দেখতে পায়, ততটুকু দূরুত্বের বাহির দিয়ে অতিক্রম করবে। আর এর পরিমাণ হল-তিন কাতার সম পরিমাণ। যেটা প্রায় ৪/৫ গজ। আর যদি কোন ষ্টেশনে নামায পড়ে, তাহলে সেজদার স্থান বাদ দিয়ে সামনে দিয়ে অতিক্রম করা জায়েজ হবে। এতে কোনো রকমের গুনাহ হবেনা {ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-১১/১৭৮}


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...