জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
(১.২)
প্রথমেই আমরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে নেইঃ
★চার ইমামের মাঝে কেনো মাসয়ালা নিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হলোঃ
-কোনো মাসয়ালাতে শুধু একই রকমের হাদীস থাকলে সেটি নিয়ে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ নেই।
কোনো মাসয়ালায় একাধিক রকমের হাদীস পাওয়া গেলে সেক্ষেত্রে ইমামদের মাঝে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে।
এক্ষেত্রে ইজতিহাদের ভিত্তিতে ইমামগন যেই মত অবলম্বন করেছেন,সবই ছহীহ।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حديث ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَنَا، لَمَّا رَجَعَ مِنَ الأَحْزَابِ: لاَ يُصَلِّيَنَّ أَحَدٌ الْعَصْرَ إِلاَّ فِي بَنِي قُرَيْظَةَ فَأَدْرَكَ بَعْضُهُمُ الْعَصْرَ فِي الطَّرِيقِ فَقَالَ بَعْضُهُمْ: لاَ نُصَلِّي حَتَّى نَأْتِيَهَا وقَالَ بَعْضُهُمْ: بَلْ نُصَلِّي، لَمْ يُرَدْ مِنَّا ذلِكَ فَذُكِرَ لِلنَبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمْ يُعَنِّفْ وَاحِدًا مِنْهُمْ
ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহযাব যুদ্ধ হতে ফিরার পথে আমাদেরকে বললেন, বনু কুরাইযা এলাকায় পৌছার পূর্বে কেউ যেন ‘আসর সলাত আদায় না করে। কিন্তু অনেকের রাস্তাতেই আসরের সময় হয়ে গেল, তখন তাদের কেউ কেউ বললেন, আমরা সেখানে না পৌছে সলাত আদায় করব না। আবার কেউ কেউ বললেন, আমরা সলাত আদায় করে নেব, আমাদের নিষেধ করার এ উদ্দেশ্য ছিল না (বরং উদ্দেশ্য ছিল তাড়াতাড়ি যাওয়া) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ কথা উল্লেখ করা হলে, তিনি তাদের কারোর সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেননি।
(অর্থাৎ উভয়ই ছহীহ ছিলো)
সহীহুল বুখারী, পৰ্ব ১২ খাওফ, অধ্যায় ৫, হাঃ ৯৪৬; মুসলিম, পর্ব ৩২: জিহাদ, অধ্যায় ২৩, হাঃ ১৭৭০
ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ – ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ- « ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻢُ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺻَﺎﺏَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺧْﻄَﺄَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮٌ
হযরত আমর বিন আস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম বলতে গিয়ে ইজতিহাদ করে,
আর তার ইজতিহাদ সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদে ভুল হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব।
{সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৯১৯, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৪৫৮৪, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৭৬}
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,বোন!
যেকোনো এক মাযহাবই মানতে হবে,একই সাথে সকল মাযহাব মানা যাবেনা।
ইসলামী স্কলার গন বলেছেনঃ
যাকে ইচ্ছে তাকে মানা শরীয়তের অনুসরন নয় মন পূজা যখন যে ইমামকে ইচ্ছে তাকে মানার প্রবণতা দ্বীনে শরীয়তের পাবন্দী হবে না, হবে কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ। মন যখন চাইবে ইমাম আবু হানীফার অনুসরণ করা, আবার মন যখন চাইবে ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মতকে অনুসরন করা, কিংবা অন্য কোন ইমামের অনুসরণ করা এটা দ্বীনে শরীয়তের আনুগত্ব হবে? না মন আর খাহেশাতের আনুগত্ব হবে?
যখন মন চাইল ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মাযহাব অনুসরণ করে বলে দিলেন যে, মহিলাদের স্পর্শ করলে অজু ভাঙ্গবে না। আর ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর বক্তব্য যে, মহিলা স্পর্শ করলে অজু ভেঙ্গে যায়, মতটিকে ছেড়ে দিলেন সুযোগের সদ্ব্যবহার করার জন্য।
আবার কিছুক্ষণ পর হাত কেটে গেল, এবার যখন দেখা গেল যে, ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর মাযহাব অনুপাতে অজু ভেঙ্গে গেছে, আর ইমাম শাফেয়ী রহঃ এর মতে অজু ভাঙ্গেনি। তখন সাথে সাথেই মাযহাব পাল্টে বলতে শুরু করে দিলেন যে, না, না আমি হানাফী না, আমি শাফেয়ী। তাই আমার অজু ভাঙ্গেনি। এভাবে প্রতিটি মাসআলায় স্বীয় খাহেশাত অনুযায়ী মত পাল্টাতেই থাকলে এর নাম দ্বীন মানা? না মনপূজা?
,
এ কারণেই শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেনঃ “লাগামহীনভাবে যে মাযহাব যখন মনে চায়, সেটাকে মানা সুষ্পষ্ট হারাম ও অবৈধ।
{ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-২/২৪১}
আরো জানুনঃ
,
সমস্ত মাসয়ালাতেই নিজ মাযহাব অনুযায়ী আমল করতে হবে।
অন্যথায় নফস ও খাহেশাতের পূজা হবে,যাহা হারাম।
আল্লাহ তায়ালা সুরা সোয়াদের ২৬ নং আয়াতে ইরশাদ করেনঃ
وَ لَا تَتَّبِعِ الۡهَوٰی فَیُضِلَّکَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَضِلُّوۡنَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ لَهُمۡ عَذَابٌ شَدِیۡدٌۢ بِمَا نَسُوۡا یَوۡمَ الۡحِسَابِ ﴿۲۶﴾
আর প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, কেননা তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে। নিশ্চয় যারা আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত হয় তাদের জন্য কঠিন আযাব রয়েছে। কারণ তারা হিসাব দিবসকে ভুলে গিয়েছিল।
বিস্তারিত জানুনঃ
https://ifatwa.info/12256/
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
সুতরাং যেকোনো এক মাযহাব মানতে হবে।
এটির উপরেই উম্মাহ একমত হয়েছে।
,
বিস্তারিত জানুনঃ
https://ifatwa.info/1936/
★আকিদা সংক্রান্তঃ-
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا أَبُو سَعِيدٍ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو خَالِدٍ الأَحْمَرُ، قَالَ سَمِعْتُ مُجَالِدًا، يَذْكُرُ عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ كُنَّا عِنْدَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم ـ صلى الله عليه وسلم ـ فَخَطَّ خَطًّا وَخَطَّ خَطَّيْنِ عَنْ يَمِينِهِ وَخَطَّ خَطَّيْنِ عَنْ يَسَارِهِ ثُمَّ وَضَعَ يَدَهُ فِي الْخَطِّ الأَوْسَطِ فَقَالَ " هَذَا سَبِيلُ اللَّهِ " . ثُمَّ تَلاَ هَذِهِ الآيَةَ (وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلاَ تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ) .
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর নিকট উপস্থিত থাকা অবস্থায় তিনি একটি সরল রেখা টানলেন এবং তাঁর ডান দিকে দুটি সরল রেখা টানলেন এবং বাম দিকেও দুটি সরল রেখা টানলেন। অতঃপর তিনি মধ্যবর্তী রেখার উপর তাঁর হাত রেখে বলেনঃ এটা আল্লাহ্র রাস্তা। অতঃপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেন (অনুবাদ) এবং এ পথই আমার সরল পথ। অতএব তোমরা এ পথেরই অনুসরণ করো এবং বিভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, অন্যথায় তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। (সূরাহ আনআম ৬: ১৫৩)
(ইবনে মাজাহ ১১)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
আশ'আরী এবং মাতুরিদি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত।আছারী (সালাফি আকীদা) সম্পর্কে অনেক উলামায়ে কেরাম আহলে হক তথা আহলে সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন।
আশায়েরা বলা হয়, যাদের নিসবত ইমাম আবুল হাসান আশআরী রহঃ এর দিকে। আর যাদের নিসবত ইমাম আবু মানসূর মাতুরিদী রহঃ এর দিকে, তাদের বলা হয় মাতুরিদী।
আশায়েরা মাতুরিদী উভয় দলের আকিদাই সঠিক।
মূলত তারা উভয়ে আল্লাহর নবী সাঃ এবং সাহাবায়ে কেরামের আকিদাসমূহ সংকলন করেছেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীদের মাঝে এ দুইজনের সংকলন ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করে।
তাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীগণ এ দুইজনের একজনের দিকে নিজেদের আকিদাগত বিষয়ে নিসবত করে থাকেন।
তাদের উভয়ের মাঝে কিছু সংখ্যক মতভেদ রয়েছে। তবে তা বলতে গেলে আক্ষরিক মতভেদ। মূল মতভেদ নয়। আর এসব মতভেদ হয়েছে এমন বিষয়ে, যে বিষয়ে সাহাবায়ে কেরাম থেকে সুষ্পষ্ট কোন বক্তব্য পাওয়া যায় না।
ভ্রান্ত মুতাযিলা ও মুজাসসিমা ও জাহমিয়া ফিরক্বার বিরুদ্ধে আবুল হাসান আশআরী রহঃ শক্ত হাতে কলম ধরেন। জাহমিয়া ও মু’তাযিলাদের বিরুদ্ধে তিনি “আলমুযিজ” নামক তিন খন্ডে গ্রন্থ রচনা করেন।
ইমাম আশআরী রহঃ মুহাদ্দিস, ফক্বীহ ও মুতাযিলাদের মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে মুহাদ্দিসদের মত পোষণ করতেন। তিনি সর্বদাই বিদআতপন্থীদের থেকে দূরে থাকতেন। তিনি আক্বীদা বিষয়ে প্রথমে নছ তথা কুরআন সুন্নাহ তারপর তার সমর্থনে আকল তথা যুক্তিকেও ব্যবহার করতেন। [ইসলামী বিশ্বকোষ, ইফাবা, ইলমুল কালাম-৫৭]
বিস্তারিত জানুনঃ
★প্রশ্নে উল্লেখিত সকলেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত।
তাদের আকীদায় শাব্দিক আর ব্যাখ্যাগত কিছু পার্থক্য৷ রয়েছে।
মূল বিষয় অনেকটা একই।
পরামর্শ থাকবে আপনি নিম্নোক্ত আকীদা পোষন করবেনঃ-
https://ifatwa.info/4063/
এই আকীদা আপনার মধ্যে থাকলে আপনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
আর বেশি পার্থক্য ইত্যাদির প্রয়োজন নেই।
,
★খারেজী শিয়া প্রসঙ্গ
ইসলামে বিভিন্ন দল হবে,হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ حُرَيْثٍ أَبُو عَمَّارٍ، حَدَّثَنَا الْفَضْلُ بْنُ مُوسَى، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " تَفَرَّقَتِ الْيَهُودُ عَلَى إِحْدَى وَسَبْعِينَ أَوِ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً وَالنَّصَارَى مِثْلَ ذَلِكَ وَتَفْتَرِقُ أُمَّتِي عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً "
আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামঃ বলেছেনঃ ইয়াহুদীরা একাত্তর অথবা বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছিল এবং খৃষ্টানেরাও অনুরূপ দলে বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উন্মাত বিভক্ত হবে তিয়াত্তর দলে।
হাসান সহীহঃ তিরমিজি ২৬৪০ ইবনু মা-জাহ (৩৯৯১)
কিছু শিয়াদের আকিদা মারাত্বক পর্যায়ের।যেমন (১)বর্তমানে আমাদের সামনে যে কুরআনে কারীম রয়েছে,সেটা বিকৃত।
(২)হযরত আবু বকর উমর কাফির।
(৩) হযরত আযেশা রাযি এর ইফকের ঘটনা বাস্তব সম্মত।
এমন সব আকিদা গ্রহণ কারী অবশ্যই কাফির।
এতে সাথে কোনো রকম সম্পর্ক রক্ষা করা যাবে না।
শিয়া সংক্রান্ত জানুনঃ
★খারেজী বলা হয় যারা সিফফিন যুদ্ধে আলী রাঃ এর দল ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।
বিস্তারিত জানুনঃ
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
বাংলা ভাষায় লিখিত মুহতারাম মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন সাহেব দাঃবাঃ এর লিখিত ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ বইটিতে খারেজী এবং শীয়া দের নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা আছে।
অধ্যায়ন করতে পারেন।