উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১) ঈশার নামাজের পর দুনিয়াবি (অনার্থক) কাজ বা (অনার্থক) কথাবার্তা বলা মাকরুহ।
তবে জরুরী কাজ বা কথা হলে কোনো সমস্যা নেই।
ফাতাওয়ায়ে শামী (১/৩৪১)
حَدَّثَنَا جَرِيرٌ ، عَنْ مَنْصُورٍ ، عَنْ خَيْثَمَةَ ، عَنْ رَجُلٍ مِنْ قَوْمِهِ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " لَا سَمَرَ بَعْدَ الصَّلَاةِ
অর্থাৎ ঈশার নামাজের পর কথা বলা যাবেনা (মুসনাদ আহমদ হাদীস নং ৩৬০৩)
,হজরত আয়েশা (রা.) সূত্রে বর্ণিত, আমি রাসুল (সা.)-কে কখনো এশার আগে ঘুমাতে এবং এশার পর গল্পগুজব করতে দেখিনি। এশার পর হয়তো জিকিরে মশগুল থাকতেন, এতে তো কেবল লাভই, নচেৎ ঘুমিয়ে পড়তেন, এর দ্বারা সব অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে মুক্ত থাকা যায়। আয়েশা (রা.) বলেন, তিন ধরনের মানুষের জন্য রাত জাগার অনুমতি রয়েছে : বিয়ের রাতে নবদম্পতি, মুসাফির ও নফল নামাজ আদায়কারী। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হা. : ৪৮৭৯)
,
(০২)
ফজরের পরের সময় টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়।
এই সময় ঘুমানো ঠিক নয়।
রাসুল সাঃ এই সময়ে উম্মতের জন্য বরকতের দূয়া করেছেন,সুতরাং এই সময়ে কেহ ঘুমাইলে সে বরকত থেকে বঞ্চিত হবে।
রাসুল সাঃ দোয়া করতেন, তিনি বলতেনঃ
اللَّهُمَّ بَارِكْ لأُمَّتِي فِي بُكُورِهَا
‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন।’
বর্ণনাকারী বলেন, ‘এ জন্যই রাসুল (সা.) কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন। আর সাখর (রা.) ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনিও তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তাঁর ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয় এবং তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন।’ [আবু দাউদ : ২৬০৬]
ছাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ীন ফজরের পর ঘুমানোকে মাকরুহ মনে করেতেন। উরওয়া ইবনু যুবাইর (রহ.) বলেন, যুবাইর (রা.) তাঁর সন্তানদেরকে ভোরবেলা ঘুমানোর ব্যাপারে নিষেধ করতেন। উরওয়া (রহ.) বলেন,
إِنِّي لَأَسْمَعُ بِالرَّجُلِ يَتَصَبَّحُ فَأَزْهَدُ فِيهِ
‘আমি যখন কারো সম্পর্কে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’ [মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা, ৫/২২২]
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) তাঁর এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন,
أتنام في الساعة التي تُقسَّم فيها الأرزاق؟
‘ওঠো, তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ [যাদুল মাআ’দ : ৪/২৪১
,
(০৩) দুপুরের খাবারের পর স্বল্প সময়ের জন্য একটু বিশ্রাম নেওয়া। এটাকে কাইরুলা বলা হয়।
এটার জন্য ঘুমানো জরুরি নয়, এটা রাত্রি বেলা ইবাদত বান্দেগীতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
(কিতাবুন নাওয়াজেল ১৫/২৭৪)
তবে এটার অজুহাত দেখিয়ে লম্বা ঘুম পাড়া যাবেনা।
এটা স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর।
হাদিস শরিফে আছেঃ
عن ابن عباس رضي اللّٰہ عنہما عن النبي صلی اللّٰہ علیہ وسلم قال: استعینوا بطعام السحر علی صیام النہار والقیلولۃ علی قیام اللیل۔ (سنن ابن ماجۃ، کتاب الصیام / باب ما جاء في السحور ۱۲۱ رقم: ۱۶۹۳ دار الفکر بیروت)
وفي روایۃ: وبقیلولۃ النہار علی قیام اللیل۔ (صحیح ابن خزیمۃ رقم: ۱۹۳۹، فیض القدیر ۱؍۴۹۴، فتح الباري ۱۴؍۸۲ دار الکتب العلمیۃ بیروت، الترغیب والترہیب مکمل رقم: ۱۶۴۱)
যার সারমর্ম হলো তোমরা দুপুরে কাইলুলা করার মাধ্যমে ইবাদতের জন্য রাত্রি জাগরনের শক্তি সঞ্চয় করো।
,
★বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনের বেলা বিশেষ করে দুপুরে ঘুমানো বিপজ্জনক। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অনুযায়ী, সকাল ৬টা থেকে সকাল ১০টা দেহের সক্রিয় সময়। এই সময় যদি ব্যায়াম করা হয় তবে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। আর দুপুরের খাবার হলো দিনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
★বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুপুরে খাবার খেয়ে ঘুমালে ঠান্ডার প্রকোপ বৃদ্ধি, স্থূলত্ব, গলার রোগ, বমি বমি ভাব দেখা দেয়। বুদ্ধিমত্তা ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়। হতে পারে চর্মরোগও।
★ন্যাচারোপ্যাথি বিশেষজ্ঞ ও আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের মতে, দিবানিদ্রা হজমশক্তি মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। কমিয়ে দিতে পারে স্মৃতিশক্তি। বাড়াতে পারে চর্মরোগ, হার্টের রোগ ও স্ট্রোকের আশঙ্কা। তাই রোগের প্রকোপ কমাতে রোজকার রুটিন থেকে দিবানিদ্রাকে বাদ দিতে হবে।
★হোমিওপ্যাথী চিকিৎসকদের মতে, দুপুরে খাওয়ার পরেই হজমের জন্য পরিপাকতন্ত্র কঠোর পরিশ্রম শুরু করে। এ সময় পেটের মধ্যে অ্যাসিডের মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। দুপুরবেলা ভরপেট খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লে পাকস্থলী ঠিকমতো নড়াচড়া করতে না পারায় বুক জ্বালাপোড়া এবং গলা জ্বলার মতো অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়। তাই খাওয়া শেষে না শুয়ে কিছুক্ষণ হাঁটা কিংবা বসে থাকা উচিত। পূর্ণবয়স্ক মানুষের জন্য সাত-আট ঘণ্টা ঘুম জরুরি সত্যি। তবে তা কখনই দিনেরবেলা নয়।