আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
596 views
in সুন্নাহ-বিদ'আহ (Sunnah and Bid'ah) by (26 points)
আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ,বর্তমানে দায়ীদের উপর আপতিত বিপদ আপদ থেকে উত্তরনের একটি পন্থা হিসেবে একজন আলেম দুয়ায়ে আনাস ইবনু মালিক এর আমলের কথা উল্লেখ করেছেন।ইন্টারনেটে এই দুয়া সার্চ দিলে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের দুয়া আসে,আসলে সত্যিই আমলযোগ্য কোন দুয়াটি একটু জানাবেন।এই দুয়া যে হাদীসে বর্নিত হয়েছে তার বিশুদ্ধতা কেমন? এই দুয়ার সাথে হাজ্জাজ ইবনু ইউসুফের যে ঘটনা আছে তা কি সত্যি?
এখন দেখা যায় অনেক দ্বায়ী যারা ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছে তারা তাগুতের রোষানলে পতিত হচ্ছে।কেউ যদী মানুষকে ইমান ও আক্বীদা সহীহ করার দাওয়াত দিতে চায় তাহলে নিরাপত্তার জন্য কি কি আমল ও পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে?ইমানের দাওয়াতে কিভাবে মনোবল দৃঢ় রাখা যেতে পারে যেন শত্রুর আক্রমণে নির্ভয় থাকা যায়? মুসলিমদের ইমান আক্বীদা ঠিক করার জন্য কি কি পদক্ষেপ ও কি কি সাধারণ মানুষের উপযোগী  পুস্তকাদি পাঠ করা যায়?

1 Answer

0 votes
by (58,470 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

 

জবাব,

আব্দুল্লাহ বিন আবান সাকাফী বলেন, আমাকে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, আনাস বিন মালেক (রা)-কে নিয়ে আসার জন্য নির্দেশ দিল । নির্দেশ দেয়া হল যে, যেকোনভাবে তাকে হাজ্জাজের সামনে উপস্থিত করা হোক।

আমি জানতাম যে, তিনি হাজ্জাজের সামনে উপস্থিত হওয়া এবং তার সাথে সাক্ষাত করা পছন্দ করতেন না। তারপরও আমি স্বীয় ঘোড়ায় চড়ে তার ঘরে গিয়ে পৌঁছলাম। তাঁকে তাঁর ঘরের সামনেই পেলাম, আমি বললামঃ আপনাকে আমীর স্মরণ করেছেন এবং তিনি আপনার সাথে সাক্ষাত করতে চান।

তিনি বললেনঃ কোন আমীর?

আমি বললামঃ আবু মুহাম্মাদ হাজ্জাজ ।

বললঃ আল্লাহ তাকে অপদস্ত করুন। আমি এর চেয়ে অধিক ইজ্জতহীন কাউকে দেখি নাই। কেননা ইজ্জতওয়ালা তো সে, যে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য করে আর লাঞ্ছিত পদদলিত হয় সে, যে আল্লাহর নাফরমানী করে এবং পাপে লিপ্ত থাকে, আর তোমার সাথীর অবস্থা হল এই যে,

"সে আল্লাহর বিদ্রোহ, অবাধ্যতা, সীমালঙ্ঘন করেছে এবং কিতাব ও সুন্নাতের বরখেলাফ করেছে। আল্লাহ অবশ্যই তার কাছ থেকে প্রতিশোধ নিবেন।"

আমি বললামঃ বেশি কথা বলবেন না; বরং আমার সাথে সোজা আমীরের নিকট চলুন । তিনি আপনাকে ডেকেছেন।

আমরা উভয়ে তখন হাজ্জাজ বিন ইউসুফেরে নিকট আসলাম, হাজ্জাজ তাকে দেখে বলল ঃতুমি আনাস বিন মালেক?

আনাস বিন মালেক উত্তরে বললেনঃ হ্যা!

হাজ্জাজ বললঃ তুমিই কি ঐ ব্যক্তি, যে আমাকে গালি-গালাজ করে, আর আমার জন্য বদ দু'আ করে?

আনাস বিন মালেকঃ হ্যা।

হাজ্জাজ বললঃ এর কারণ কি?

আনাস বিন মালেকঃকেননা, তুমি আল্লাহর নাফরমানী কর, আল্লাহর রাসূলের বিরোধিতা কর, তুমি ইসলামের শত্রুদেরকে ইজ্জত ও এহতেরাম কর; কিন্তু আল্লাহর ওলীগণকে অপদস্ত কর ।

হাজ্জাজ রাগান্বিত হয়ে বলতে লাগলঃ তুমি জান যে, আমি তোমার সাথে কি আচরণ করব?

তিনি বললেনঃ আমার তো জানা নেই।

হাজ্জাজ বললঃ তোমাকে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে হত্যা করা হবে। আনাস (রা) ঐ সময়ে ঐতিহাসিক কথাটি বললেনঃ

«لو علمت أن ذلك بيدك لعبدتك من دون الله »

"যদি আমি জানতাম যে, এ ক্ষমতা তোমার হাতে তাহলে আল্লাহ ব্যতীত তোমারই ইবাদত করতাম।"

হাজ্জাজ বললঃ কেন আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়?

আনাস (রা) বললেন : আল্লাহর রাসূল আমাকে এমন এক দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন যে ব্যক্তি ঐ দু'আ প্রতিদিন সকালে পাঠ করবে

«لم يكن لأحد عليه سبيل»

কেউ তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর আজ সকালেও আমি ঐ দু'আ পড়েছি । হাজ্জাজ তাহলে ঐ দু'আ আমাকেও শিক্ষা দাও।

আনাস (রা) বললেনঃ

«معاذ الله أن أعلمه لأحد مادمت أنت في الحياة»

আল্লাহ রক্ষা করুন, তুমি জীবিত থাকাকালে আমি কাউকেও এ দু’আ শিখাব না।

হাজ্জাজ নির্দেশ দিল যে তাকে ছেড়ে দাও। তার এক সভাসদ বলল : আমীর! পূর্ণ এক রাত খোঁজাখুঁজির পর পাওয়া গেছে, এখন তাকে কি করে ছেড়ে দিচ্ছেন?

হাজ্জাজ বললঃ

«لقد رأيت على عـاتـقـه أسـديـن عـظـيـمـيـن فـاتـحـيـن أفواههما

আমি দেখলাম যে, তার দু' কাঁধে দুইটি সিংহ আমার দিকে মুখ খুলে রেখেছে। যখন আনাস (রা)-এর মৃত্যুর সময় হল তখন তাঁর ভাইদেরকে তিনি ঐ দু'আ শিক্ষা দিয়েছেন।(শামায়েলে কুবরা-২/২৮০,)

 দোয়াটি এই,

(بسم الله الرحمن الرحيم. بسم الله خير الأسماء. بسم الله رب الأرض والسماء. بسم الله الذي لا يضر مع اسمه شيء في الأرض ولا في السماء أذى. بسم الله افتتحت وبالله ختمت وبه أمنت. بسم الله أصبحت، وعلى الله توكلت. بسم الله على قلبي ونفسي. بسم الله على عقلي وذهني. بسم الله على أهلي ومالي. بسم الله على ما أعطاني ربي. بسم الله الشافي. بسم الله المعافي. بسم الله الوافي. بسم الله الذي لا يضر مع أسمه شيء في الأرض ولا في السماء وهو السميع العليم. هو الله الله .. الله الله ..الله ربي لا أشرك به شيئاً الله أكبر. الله أكبر. الله أكبر. الله أكبر. وأعز وأجل مما أخاف وأحذر. أسألك اللهم بخيرك من خيرك الذي لا يعطيه غيرك. عز جارك، وجل ثناؤك، ولا إله غيرك. اللهم إني أعوذ بك من شر نفسي. ومن شر كل سلطان ومن شر كل شيطان مريد، ومن شر كل جبار عنيد، ومن شر كل قضاء سوء، ومن شر كل دابة أنت آخذ بناصيتها إن ربي على صراط مستقيم. وأنت على كل شيء حفيظ (إن ولي الله الذي نزل الكتاب وهو يتولى الصالحين). اللهم إني أستجيرك، واحتجب بك من كل شيء خلقته واحترس بك من جميع خلقك، وكل ما ذرأت وبرأت. وأحترس بك منهم، وأفوض أمري إليك. وأقدم بين يدي في يومي هذا، وليلتي هذه، وساعتي هذه وشهري هذا. بسم الله الرحمن الرحيم. (قل هو الله أحد الله الصمد، لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا أحد). عن أمامي: بسم الله الرحمن الرحيم. (قل هو الله أحد الله الصمد، لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا أحد) ومن فوقي: بسم الله الرحمن الرحيم. (قل هو الله أحد الله الصمد، لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا أحد). وعن يميني: بسم الله الرحمن الرحيم. (قل هو الله أحد الله الصمد، لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا أحد). عن شمالي: بسم الله الرحمن الرحيم. (قل هو الله أحد الله الصمد، لم يلد ولم يولد ولم يكن له كفوا أحد). بسم الله الرحمن الرحيم (الله لا إله إلا هو الحي القيوم لا تأخذه سنة ولا نوم، له ما في السماوات وما في الأرض من ذا الذي يشفع عنده إلا بإذنه يعلم ما بين أيديهم وما خلفهم ولا يحيطون بشيء من علمه إلا بما شاء وسع كرسيه السماوات والأرض ولا يؤده حفظهما وهو العلي العظيم).

উক্ত দোয়াটি পড়ার পরে নিচে অংশটুকু সাত বার পড়বে,

بسم الله الرحمن الرحيم. (شهد الله أنه لا إله إلا هو والملائكة وأولوا العلم قائماً بالقسط لا إله إلا هو العزيز الحكيم). ونحن على ما قال ربنا من الشاهدين (فإن تولوا. فقل: حسبي الله لا إله إلا هو عليه توكلت وهو رب العرش العظيم) "سبع مرات".

ফজীলত, যে দোয়ার বদৌলতে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ হযরত আনাস (রাঃ) কে শাস্তি— দিতে চেয়েও শাস্তি দিতে পারে নি। হযরত আব্বাছ (রাঃ) বলেন, একদিন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ হযরত আনাস (রাঃ) এর উপর রাগাম্বিত হয়ে বললো, তোমাকে কঠিন শাস্তি দিব, কিন্তু আব্দুল মালেক বিন মারওয়ানের লিখিত বিষয়ের কারণে শাস্তি দিলাম না। প্রত্যুত্তরে হযরত আনাস (রাঃ) বললেন যে, লিখিত বিষয় না থাকলেও তুমি আমাকে কিছুই করতে পারতে না। হাজ্জাজ বললো, কেন তোমাকে শাস্তি দিতে পারবো না? কে আমাকে বাঁধা দিবে? হযরত আনাস (রাঃ) বললেন, আমাকে আমার প্রিয় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন, যা পাঠ করলে আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না।

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

জ্বী উক্ত ঘটনাটি সঠিক এবং এই মর্মে বিশুদ্ধ সূত্রে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। হক্কানী উলামায়ে কেরাম যাবতীয় বিপদ আপদ ও প্রতিকূল অবস্থা থেকে মু্ক্তি পাওয়ার জন্য দোয়ায়ে আনাসের প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব আরোপ করে থাকেন। বিধায় আমাদের সকলের জন্য বিষেশতঃ যারা মাঠে ময়দানে দাওয়াতী কাজ করেন তাদের জন্য উক্ত আমল নিয়মিত করা উচিৎ। প্রতিদিন ফজরের পরে দোয়টি পড়লে পরের দিন ফজর পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালা হেফাজতের জিম্মাদারী নিয়ে নেন। দায়ীরা সর্বদা আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে দাওয়াতী কাজ করে থাকেন । আল্লাহই তাদেরকে যাবতীয় মসিবত থেকে হেফাজত করেন । তবে দ্বীনের পথে চলতে গিয়ে মাঝে মাঝে কিছু পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক । কিন্তু এতে বিচলিত হওয়া যাবে না বরং আল্লাহ তায়ালার কাছে বেশী বেশী দোয়া ও ইস্তেগফার করতে হবে। তিনিই বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন ইনশাআল্লাহ।

 ইসলামী আকীদা সম্পর্কে ইলম অর্জন করা আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী।  ইসলামী আকীদা বিষয়ে প্রথম বই লেখেন ইমাম আবু হানিফা( র:)। বইটি আল ফিকহুল আকবার নামে পরিচিত। পরবর্তিতে আকীদা বিষয়ে অসংখ্য বই লেখা হয়েছে। এর মধ্যে প্রাচীন কয়েকটি বই হল - ইমাম আহমাদ (র.) লিখিত "আস-সুন্নাহ", ইমাম আবু দাউদ (র.) সুলাইমান লিখিত "আস-সুন্নাহ", ইমাম আবু জাফর ত্বহাবী (র.) কর্তৃক  লিখিত "আকীদাতু আহলিস সুন্নাহ" এছাড়া আরো অনেক বই রয়েছে।

আপনি ইমান সম্পর্কে জানতে ইমাম আবু জাফর ত্বহাবী (র: )এর লিখিত (আকীদাতু ত্বহাবী, বাংলা ট্রান্সলেশন আছে),বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম মাওলানা আ:মালেক সাহেব কর্তৃক রচিত (ইমান সবার আগে) ও মাওলানা হেমায়েত সাহেব কর্তৃক রচিত  (ইসলামী আকীদা ও ভ্রান্তমতবাদ )বইগুলো অধ্যায়ন করতে পারেন। এছাড়াও আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর উলামায়ে কেরামের লেখা বিভিন্ন বই রয়েছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (26 points)
  দোআটি হরকত দিয়ে দিতেন যদী অনুগ্রহ করে

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...