উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم
পোশাক মানুষের মৌলিক চাহিদা। লজ্জাস্থান আবৃত রাখা এবং সুন্দর ও পরিপাটি থাকার চাহিদা মানুষের স্বভাবজাত। তদ্রূপ শীত-গ্রীষেমর প্রকোপ ও বাইরের ধুলোবালি থেকে শরীরকে রক্ষার জন্য তা একটি প্রয়োজনীয় আবরণ। তাই পোশাক আল্লাহ তাআলার নেয়ামত। কুরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে-
يا بني آدم قد انزلنا عليكم لباسا يوارى سوآتكم وريشا ولباس التقوى ذلك خير ذلك من آيت الله لعلهم يذكرون.
হে আদমের সন্তান্তসন্ততি! আমি তোমাদের জন্য পোশাকের ব্যবস্থা করেছি, তোমাদের দেহের যে অংশ প্রকাশ করা দুষণীয় তা ঢাকার জন্য এবং তা সৌন্দর্য্যেরও উপকরণ। বস’ত তাকওয়ার যে পোষাক সেটাই সর্বোত্তম। এসব আল্লাহর নির্দেশনাবলির অন্যতম। যাতে মানুষ উপদেশ গ্রহণ করে।-সূরা আরাফ : ২৬
★পুরুষদের ক্ষেত্রে এবং নারীদের ক্ষেত্রে কোন পোশাক যৌন আবেদনময়ী হবে,এটা স্থান কাল পাত্র ভেদে বিভিন্ন রকমের হতে পারে।
তবে এক্ষেত্রে কিছু মূলনীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হল :
★লেবাস অবশ্যই সতর-আবৃতকারী হতে হবে। পুরোপুরিভাবে সতর আবৃত না হলে সেটা অবশ্যই যৌন আবেদনময়ী পোশাক হবে।
কুরআন মজীদের আয়াত ‘যা তোমাদের লজ্জাস্থানকে আবৃত করে’ বাক্যাংশে এই মুলনীতির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। এর দ্বারা বোঝা যায়,পোষাকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য সতর ঢাকা।
ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত নামাযে সতর ঢাকা ফরয়। পুরুষের নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত আর নারীর মুখমণ্ডল, টাখনু পর্যন্ত পা ও কব্জি পর্যন্ত হাত ছাড়া গোটা শরীর নামাযে আবৃত রাখা ফরয। তদ্রূপ গায়রে মাহরাম ও পরপুরুষের সামনে মুখমণ্ডলসহ গোটা শরীর আবৃত রাখাও জরুরি। অতএব পোষাকের মাধ্যমে যাতে এই প্রয়োজন পূরণ হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা অপরিহার্য।
★এত সংক্ষিপ্ত পোষাক পরিধান করা যে, সতর বা সতরের কিছু অংশ খোলা থাকে বা এত পাতলা কাপড় ব্যবহার করা যে, শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দৃষ্টিগোচর হয়, পুরুষ মহিলা সবার জন্যই হারাম ও নিষিদ্ধ।
এটা যৌন আবেদনময়ী পোশাক।
★তদ্রূপ এত আঁটসাঁট পোষাক, যার উপর দিয়ে শরীরের আবরণীয় অঙ্গসমূহ ফুটে ওঠে তাও বর্জনীয়।
এটা যৌন আবেদনময়ী পোশাক।
পুরুষের জন্য প্রচলিত জিন্সের প্যান্ট বা সাধারণ আঁট-সাট প্যান্ট পরিধান করা অনুচিত। উপরন’ তা পরা হয় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে, যা একটা হারাম কাজ।
★পশ্চিমাদের অনুকরণে মুসলিম মহিলাদের মাঝেও যে পোষাকের প্রচলন ঘটছে তাতে প্রশ্ন জাগে যে,তাদের কাছে পোষাকের দর্শন আসলে কী? শরীর আবৃত করা, না কিছু অংশ আবৃত করে বাকি অংশ আরো প্রকাশিত করা। পোষাকের হাতা, আঁচল দিন দিন সংক্ষিপ্ত হচ্ছে। অন্যদিকে কাঁধ ও গলার পরিধি প্রশস্ত হচ্ছে। অর্থাৎ যত দিন যাচ্ছে পোষাক অধিকার হারাচ্ছে শরীরের উপর থেকে।
এগুলো সবই যৌন আবেদনময়ী পোশাক।
★নারী-পুরুষ একে অন্যের সাদৃশ্য গ্রহণও যৌন আবেদনময়ী পোশাক এর আওতায় পরে।
এ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে অত্যন্ত কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীর বেশধারণকারী পুরুষের উপর আর পুরুষের বেশধারণকারিনী নারীর উপর লানত করেছেন।-বুখারী, হাদীস : ৩৮৮৫
বেশ ধারণ করার অন্যতম মাধ্যম হল পোষাক। অতএব নারীর জন্য পুরুষের পোষাক পরিধান করা আর পুরুষের জন্য নারীর পোষাক পরিধান করা হারাম ও কবীরা গুনাহ।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, নারীর পোষাক পরিধানকারী পুরুষকে এবং পুরুষের পোষাক পরিধানকারী নারীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন।-আবু দাউদ, হাদীস : ৪০৯২
আজকাল অনেক নারীকে তো প্যান্ট ও টি-শার্টও পরতে দেখা যায়। এসব যে কেবল পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণের কারণেই হারাম তা নয়, নির্লজ্জতা, পর্দাহীনতা আর বিজাতির সামঞ্জস্যগ্রহণ ইত্যাদি বহু কারণেই তা হারাম ও কবীরা গুনাহ।
এটাও যৌনআবেদনময়ী পোশাক।
★★★উল্লেখ থাকে যে পোষাক ক্রয় করার সময় যথাসাধ্য সুন্দর ভালো, পরিপাটি পোশাকই নির্বাচন করতে হয়,এটা কোনো সমস্যাকর বিষয় নয়।
সমস্যা হলো ইসলামী নীতিবহির্ভূত কোনো পোশাক ক্রয়,পরিধান করা যাবেনা।
সুন্দর পরিপাটি পোশাক পরিধান করা নবীজীর নির্দেশ।
★জাবির রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এলেন এবং এক ব্যক্তির মাথার চুল এলোমেলো দেখলেন। তখন তিনি ইরশাদ করলেন, ‘এই লোকের কি এমন কিছু নেই, যা দিয়ে সে তার মাথা পরিপাটি করবে?’ অপর এক ব্যক্তিকে ময়লা কাপড় পরিহিত দেখে বললেন, ‘এর কাছে কি এমন কিছু নেই যা দিয়ে তার কাপড় ধৌত করবে।’-আবু দাউদ, হাদীস : ৪০৫৬
★হযরত সাহ্ল ইবনে হানজালিয়া রা. তিনি বলেন, (কোনো এক সফর থেকে ফেরার পথে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে লক্ষ করে ইরশাদ করলেন, তোমরা তোমাদের ভাইদের কাছে আগমন করছ। সুতরাং তোমাদের হাওদাগুলো গুছিয়ে নাও এবং তোমাদের পোষাক পরিপাটি কর। যাতে তোমাদেরকে (সাক্ষাৎ করতে আসা) মানুষের ভিড়ে তিলকের মতো (সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন) মনে হয়। (জেনে রেখো) আল্লাহ তাআলা স্বভাবগত নোংরামি বা ইচ্ছাকৃতভাবে নোংরা থাকা,কোনোটাই পছন্দ করেন না।-আবু দাউদ, হাদীস : ৭০৮৩