আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
459 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (32 points)
reopened by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু
আশা করি ভালো আছে। আমি দীর্ঘ অনেক
 দিন যাাবত ওয়াসওয়াসা সমস্যায় ভুগতাছি, আমার মনে মাঝে মাঝে আজে ভাজে কথা মনে আসে,আমি না চাইলেও এগুলো মনে আসে। দয়া করে কিভাবে এই থেকে বের হতে পারবো, একটু সমাধান দিলে উপকার হবে আর নিচে কিছু প্রশ্ন দিছি এগুলো সারাক্ষণ মাথায় আসে।

১।নাস্তিকদের কি কাফের বলা যাবে?
২।নাস্তিক আর কাফের রা কি এক?
৩। কিছু দিন আগে সমস্যা টা বেশি ছিল যে কাউকে দেখলে মনে হইতো উনি কি মুসলিম না অমুসলিম? আবার যদি অমুসলিম হয় তাহলে যদি উনাকে কাফের মনে না করি তাহলে তো উল্টো আমার হবে?
এছাড়া আরো অনেক কিছু মাথায় আসে।
দয়া করে একটু সমাধান দেন।

1 Answer

0 votes
by (58,500 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

ইসলামী স্কলারদের মতে কাউকে নাস্তিক, মুরতাদ বা কাফের বলা  সম্পর্কে বিস্তারিতঃ  

মুসলমান এর পরিচয়ঃ

রাসূল সাঃ হাদীসে মুসলমান হওয়ার পরিচয় দিয়েছেন।

 عن أنس بن مالك قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( من صلى صلاتنا واستقبل قبلتنا وأكل ذبيحتنا فذلك المسلم

অনুবাদ-হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যে ব্যক্তি আমাদের মত নামায পড়ে, আমাদের কিবলাকেই কিবলা নির্ধারণ করে, এবং আমাদের জবাইকৃত পশু খায়, সে মুসলমান। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮৪} অন্য হাদীসে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন।

صلوا على كل ميت من أهل القبلة

অর্থাৎ তোমরা আহলে কিবলার উপর জানাযা নামায পড়বে। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-৯} প্রথম হাদীসটিতে তিনটি বিষয়কে যদিও মৌলিকভাবে মুসলমানিত্বের প্রমাণবাহী সাব্যস্ত করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় হাদীসে আহলে কিবলা তথা আমাদের কিবলা নির্ধারণ করলেই তাকে মুসলমান ধর্তব্য করে জানাযা পড়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখানে প্রশ্ন হল আমাদের কিবলাকে কিবলা নির্ধারণ করা তথা আহলে কিবলা হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য কি? শুধু কিবলাকে নিজের কিবলা মনে করে সকল প্রকার গুমরাহী আক্বিদা রাখলেও ব্যক্তি মুসলমান থাকবে? বিষয়টি আসলে এমন নয়। একথার ব্যাখ্যা আছে। আহলে কিবলা বলতে কি অর্থ? ফুক্বাহায়ে কেরাম এর ব্যাখ্যা করেছেন।

মোল্লা আলী কারী রহঃ শরহুর ফিক্বহুল আকবারে “আহলে কিবলা” এর ব্যাখ্যায় লিখেন-

ভাল করে জেনে রাখ যে, আহলে কিবলা দ্বারা উদ্দেশ্য হল ঐ ব্যক্তি, যে ঐ সকল আক্বিদাকে মান্য করে, যা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়। যেমন পৃথিবী সৃজিত বস্তু, কিয়ামত, হাশর-নশর, আল্লাহ তাআলার ইলম সমস্ত দেখা অদেখা বস্তুর উপর বিস্তৃত। এমন ধরণের অন্যান্য আক্বিদা। যে ব্যক্তি সারা জীবন ইবাদত বন্দেগীতে কাটায়, কিন্তু এর সাথে পৃথিবী সৃজিত নয় বরং প্রাকৃতিক বলে বিশ্বাস করে, কিংবা কিয়ামতে মানুষের জীবিত হওয়াকে বা অথবা আল্লাহ তাআলার ইলম বিস্তৃত হওয়াকে অস্বিকার করে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি আহলে কেবলার অন্তুভূক্ত নয়। আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতে আহলে কেবলাকে কাফের না বলার দ্বারা উদ্দেশ্য এটাই যে, এসব ব্যক্তিদের মাঝে কাউকে ততক্ষণ পর্যন্ত কাফের বলা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের থেকে এমন কোন কাজ সংঘটিত হয় যা কুফরীর আলামত বা কুফরকে আবশ্যক করে। (শরহুল ফিক্বহিল আকবার-১৮৯}

কাফের এর পরিচয়ঃ

উল্লেখিত মুসলমান কাকে বলে? এর সংজ্ঞার দ্বারাই কাফের কাকে বলে তা জানা হয়ে গেছে। তা হল-ইসলাম ধর্মের আবশ্যকীয় কোন একটি বিশ্বাসকে অস্বিকার করার নাম কুফরী। শুধু কালিমা পড়ে, তারপর রাসূল সাঃ এর আখলাক ও জীবনাচারকে অমান্য ও অবজ্ঞা করলেও কেউ মুসলমান থাকতে পারে না। যেমনটি আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা দিয়েছেন-

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا [٤:٦٥

অতএব,তোমার পালনকর্তার কসম,সে লোক ঈমানদার হবে না,যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে।{সূরা নিসা-৬৫} সুতরাং বুঝা গেল যে, কাফের ঐ ব্যক্তি যে জরূরিয়্যাতে দ্বীনের মধ্য থেকে সর্বনিম্ন যে কোন একটি বিষয়কে অস্বিকার করে। বেশি করলে যে কাফের তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

মুরতাদ এর পরিচয়ঃ

মুরতাদ বলা হয় ঐ ব্যক্তিকে যে প্রথমে মুসলমান ছিল। তারপর ইসলামের যে কোন জরূরিয়্যাতে দ্বীন অস্বিকার করে কাফের হয়ে গেছে। উক্ত ব্যক্তির নাম মুরতাদ। আর যে ব্যক্তি মুরতাদ সে কাফেরও হয়ে যায়। এখানে একটি বিষয় বুঝে রাখতে হবে যে, কাফের মানেই মুরতাদ নয়। কিন্তু মুরতাদ মানেই কাফের। পার্থক্যটা এজন্য যে, কোন ব্যক্তি প্রথমে মুসলমান না হয়ে যদি শুরুতেই ইসলামের আবশ্যকীয় কোন বিষয় অস্বিকার করে, তাহলে সে কাফের। কিন্তু মুরতাদ নয়। কিন্তু যে ব্যক্তি মুসলমান থেকে তারপর কুফরী কাজ করে কাফের হয়, সে হল মুরতাদ। সাথে সাথে কুফরী কাজ করার দ্বারা কাফেরও।

নাস্তিক এর পরিচয়ঃ

নাস্তিকতা বা এথিজম হল স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতা। তথা একথার বিশ্বাস করা যে, স্রষ্টা বলতে কিছু নেই। আসমান, জমিন, গ্রহ-তারা সবই এমনিতেই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর কোন স্রষ্টা নেই। এক কথায় স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতার বিশ্বাসের নাম নাস্তিক্যতা। নাস্তিকতার অর্থ বুঝলে আমাদের অনেক বিষয় বুঝে আসবে। যেমন- ১-নাস্তিক মানেই কাফের। কারণ কাফের হওয়ার জন্য দ্বীনে ইসলামের যে কোন একটি আবশ্যকীয় বিষয় অস্বিকার করলেই হয়। আর সেখানে নাস্তিক সেতো কোন কিছুই মানে না, তাই সে যে কাফের এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২-নাস্তিক মুরতাদ ও হতে পারে। কারণ কোন ব্যক্তি যদি মুসলমান ছিল প্রথমে, তারপর (আল্লাহ না করুন) স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতায় বিশ্বাসী হয়ে যায়, তাহলে লোকটি নাস্তিক ও হল, সাথে সাথে মুরতাদও হল। সেই সাথে কাফেরতো হলোই। ৩-কাফের ও মুরতাদ হওয়ার জন্য নাস্তিক হওয়া জরূরী নয়। বরং নাস্তিক না হয়েও কাফের বা মুরতাদ হতে পারে। কিন্তু নাস্তিক হলেই কাফের হয়ে যায়। যদি মুসলমানিত্ব থেকে নাস্তিকতার দিকে গেলে সাথে মুরতাদও হয়ে যায়। এ বিষয়টি আরো ভাল করে বুঝতে হবে। কাফের হলেই তাকে নাস্তিক হতে হবে এমন শর্ত নয়। কারণ কাফের হল ইসলামের জরূরী বিষয়ের কোন একটি অস্বিকার করা। আর নাস্তিক মানে হল স্রষ্টা অস্বিকার করা। তাহলে কোন ব্যক্তি ইসলামের জরূরী কোন বিষয়ের অস্বিকার করে যদি স্রষ্টা আছে মানে,তাহলে উক্ত ব্যক্তি কাফের, কিন্তু নাস্তিক নয়। এ হিসেবে খৃষ্টান নাস্তিক নয়। নয় ইহুদীরাও। নয় হিন্দু বৌদ্ধরাও। কারণ তারা সবাই একজন স্রষ্টা আছেন মর্মে বিশ্বাস করে। কিন্তু তারা সবাই কাফের। কারণ তারা ইসলামের জরূরী বিষয় অস্বিকার করে।

আরো বিস্তারিত জানুনhttps://ifatwa.info/5957/

ওয়াসওয়াসা থেকে বাঁচার আমল জানুনhttps://ifatwa.info/27329/

 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

১. নাস্তিকরা যেহেতু আল্লাহর অস্তিত্বকেই বিশ্বাস করে না। তাই তাদেরকে অবশ্যই কাফের বলা যাবে।

২. হুকুমের দিক থেকে নাস্তিক ও কাফের এক। তবে সংজ্ঞার দিক থেকে পার্থক্য রয়েছে যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

৩. কাউকে দেখলে কাফের বা অমুসলিম মনে করা অনার্থক চিন্তা। তাই এর থেকে বিরত থাকা চাই। উক্ত প্রশ্নের আরো বিস্তারিত উত্তর জানতে ক্লিক করুন- https://ifatwa.info/5957/


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (32 points)
@মুফতি আবদুল  ওয়াহিদ 
ওস্তাদ আপনি উপরে নাস্তিক এর বিস্তারিত ব্যাখায় লিখছেন নাস্তিক রা কাফের,কিন্তুু উওরের লিখছেন তাদের কাফের বলা যাবে না একটু ক্লিয়ার করলে ভালো হইতো ওস্তাদ 
by (58,500 points)
সংশোধন করা হয়েছে। জাযাকাল্লাহ
by (32 points)

বারাকাল্লাহু ফিক ওস্তাদ। ❣️

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 177 views
...