আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
371 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (80 points)

১। আল্লাহ তায়ালা সব ধরণের অঙ্গ-প্রতঙ্গ থেকে মুক্ত। অঙ্গ-প্রতঙ্গের ধারণা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র 

 

২। আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তিনি দেহ ও অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিশিষ্ট নন। সৃষ্টি যেমন বিভিন্ন অংশ মিলে গঠিত হয়, আল্লাহ তায়ালা এধরণের অংশ অংশ মিলে গঠিত হওয়ার ধারণা থেকে মুক্ত। ছোট বা বড় কোন ধরণের অংশের ধারণা সম্পূর্ণ তাউহীদ পরিপন্থী ও কুফুরী। 

 

৩। কুরআন ও সুন্নাহের কিছু কিছু শব্দ আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে যেগুলো সাধারণত: অংশ বা অঙ্গ বোঝায়। এগুলোর বিষয়ে আহলে সুন্নতের সর্বসম্মত ঐকমত্যপূর্ণ মতামত হল, এগুলো আল্লার ক্ষেত্রে অংশ বা অঙ্গ প্রমাণ করে না। এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর জন্য অংশ বা অঙ্গ সাব্যস্ত করা সুস্পষ্ট কুফুরী। 

 

যেমন, আল্লাহর রং (সিবগাতুল্লাহ), আল্লাহর চেহারা(ওয়াজহুল্লাহ), আল্লাহর হাত (ইয়াদুল্লাহ)। 

 

প্রশ্ন: এগুলো থেকে আল্লাহর অংশ বা অঙ্গ সাব্যস্ত করা যদি কুফুরী হয়, তাহলে পবিত্র কুরআনে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে কেন?

 

উত্তর: পবিত্র কুরআন যেহেতু আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং আরবী ভাষার অলংকার খুবই উচ্চাঙ্গের, এজন্য পবিত্র কুরআন অলঙ্কারের শাস্ত্রের দিক থেকে সবার উপরে। 

 

ভাষা ও সাহিত্যে অঙ্গ ও অংশের অর্থ নেয়া ছাড়াও এজাতীয় শব্দ ব্যবহার করা যায়। যেমন, কুরআনে আছে দিনের চেহারা (ওয়াজহান নাহার)। অথচ আমরা জানি, রাত-দিনের কোন চেহারা হয় না। এটা সাহিত্যের অলঙ্কার। 

 

কুরআনে আছে, সত্যের পা ( কাদামা সিদক)। আমরা সবাই জানি, সত্য - মিথ্যার কোন হাত-পা হয় না। এরপরও ভাষার অলঙ্কারের হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

 

কুরআনে আছে, পিতা-মাতার জন্য নম্রতার ডানা (জানাহাজ জুল) বিছিয়ে দাও। অথচ আমরা জানি, নম্রতার কোন ডানা হয় না। 

 

সুতরাং আরবী ভাষা ও সাহিত্যের উচ্চাঙ্গের অলঙ্কারের কারণে এধরণের ব্যবহার থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। এগুলো কোন দোষণীয় বিষয় নয়। 

 

বরং এগুলো কুরআনের সৌন্দর্য্য। কারণ, যখন বলা হয়, তোমরা আল্লাহর রঙে রঙীন হও, তখন যে মর্ম ও উদ্দেশ্য বোঝান হয়, স্বাভাবিকভাবে বললে এতো অর্থবোধক হয় না। যদি বলি, তোমরা ভালো গুণে গুণান্বিত হও, তাহলে এটা অতটা আবেদনময় হয় না। 

 

আগের উদাহরণে পিতার জন্য নম্রতার ডানা বিছিয়ে দেয়ার কথাটাই ধরুণ। সরল-স্বাভাবিকভাবে যদি বলা হয়, তোমরা পিতা-মাতার সাথে ভালো আচরণ করো, এটা যতটুকু আবেদনময়, এর চেয়ে শতগুণ অর্থবহ হলো, তোমরা পিতা-মাতার সামনে দয়া-মায়া ও নম্রতার ডানা বিছিয়ে দাও। 

 

এজন্য, একথা ভাবা কখনও উচিৎ হবে না যে, যেসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক হয়, সেসব বিষয় পবিত্র কুরআনে আসলো কেন? নাউজুবিল্লাহ।  

 

পবিত্র কুরআনের ক্ষেত্রে এধরণের আপত্তি বা ধারণা খুবই মারাত্মক। কারণ, যেটা পবিত্র কুরআনের সৌন্দর্য্য সেটাকে কুরআনের ত্রুটি বিবেচনা করা হচ্ছে। অথচ পবিত্র কুরআন সব - ধরণের দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। এজন্য আমরা দেখি যে, এসব আয়াত ও বক্তব্যে সাহাবায়ে কেরাম কোন আপত্তি করেননি। কারণ তারা মাতৃভাষার অলংকার ও উচ্চাঙ্গের সাহিত্য সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন।

 

প্রশ্ন: এসব শব্দের ক্ষেত্রে অংশ বা অঙ্গ বিশ্বাস না করে কি এগুলো আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা যায়?

 

উত্তর: এসব শব্দের বাহ্যিক, আক্ষরিক বা সরল অর্থ হল দেহের অংশ বা অঙ্গ। এজন্য অংশ বা অঙ্গের অর্থ বাদ দিলে বাহ্যিক বা আক্ষরিক আর কোন অর্থ অবশিষ্ট থাকে না। 

 

যেহেতু বাহ্যিক সরল অর্থ তথা অংশ বা অঙ্গ অর্থটা সকলের মতে কুফুরী, এজন্য এই কুফুরী অর্থ বাদ দেয়ার পর এই শব্দগুলোর আর কোন সরল অর্থ অবশিষ্ট থাকে না, যা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা যায়। 

 

এখন আমাদের সামনে দু'টি বিষয় থাকছে,

 

১। মূল শব্দ, যার বাহ্যিক অর্থকে বাদ দেয়া হয়েছে। 

 

২। শব্দের অনেক রুপক অর্থ ও ব্যবহার। 

 

এই পরিস্থিতিতে আলিমদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে। কেউ বলেছেন, বাহ্যিক অর্থ বাদ দেয়ার পর মূল যে শব্দটা অবশিষ্ট থাকছে, এ শব্দকে আল্লাহর সিফাত বা গুণ বলা হবে। তবে এক্ষেত্রে আলাদা কোন অর্থ সাব্যস্ত করা হবে না।  

 

প্রশ্ন হয়, অর্থহীন আবার শব্দ হয় নাকি? তখন তারা বলেন, অর্থটা আমাদের জানা নেই। আল্লাহ ভালো জানেন। একে পরিভাষায়, ইসবাত মায়াত তানজীহ বলে। অর্থাৎ বাহ্যিক অর্থ পরিত্যাগ করে শুধু শব্দটাকে সিফাত বা গুণ সাব্যস্ত করা। 

 

আরেকদল আলিম বলেন, শব্দকে বাহ্যিক অর্থ থেকে বাদ দেয়ার পর আমাদের দায়িত্ব শেষ। আমরা আগ বেড়ে একে সিফাত বা গুণ বলব না আবার নাকচও করব না। এ বিষয়ে পুরো বিষয়টা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিব। একে পরিভাষায় তাফয়ীদ মায়াত তানজীহ ( বাহ্যিক অর্থ বাদ দিয়ে শব্দকে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়া) বলে।

 

প্রথম মতের সাথে দ্বিতীয় মতের পার্থক্যটা স্পষ্ট। প্রথম দল শব্দকে তার সরল অর্থ থেকে বাদ দেয়ার পর নিজেদের পক্ষ থেকে সিফাত বলছেন। তবে অর্থের বিষয়টি তারা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিচ্ছেন। আর দ্বিতীয় দল সিফাতও বলছেন না। নাকচও করছেন না। বরং পুরো বিষয়টিকেই আল্লাহর উপর ছেড়ে দিচ্ছেন। তিনিই ভালো জানেন। 

 

এখানে আরেকদল আছেন। যারা শব্দের সরল অর্থ(অংশ বা অঙ্গ) বাদ দেয়ার পর, শব্দকে পুরোপুরি অর্থহীন বলতে নারাজ। তারা বলেন, কুরআন সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। বাহ্যিক অর্থ যেহেতু নেয়া সম্ভব হচ্ছে না, সুতরাং আরবী ভাষার নিয়ম মেনে এ শব্দের সবচেয়ে উপযোগী রুপক অর্থটি নিতে হবে। পরিভাষায় যাকে, তা'বীল মায়াত তানজীহ বলে। 

 

তাদের বক্তব্য হল, মূল শব্দের সরল বা বাহ্যিক অর্থ (অংশ বা অঙ্গ) নেয়াটা অসম্ভব হলেও পুরো বাক্যের ব্যবহার থেকে একটি সুস্পষ্ট মর্ম বোঝা যায়। আনুষঙ্গিক মর্ম থেকে বক্তার মূল উদ্দেশ্য বোঝা গেলেই যথেষ্ট। 

 

যেমন কুরআনে এসেছে, নিশ্চয় তোমাদেরকে আল্লাহর চেহারার জন্য আহার করাচ্ছি। 

 

এখানে চেহারা শব্দটি সরল বা বাহ্যিক অর্থ (অংশ বা অঙ্গ) নেয়া সম্ভব নয়। বরং এটি সবার মতে কুফুরী। সুতরাং আল্লাহর চেহারা দ্বারা বাহ্যিক চেহারা উদ্দেশ্য নেয়া যাচ্ছে না। তবে আনুষঙ্গিক বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, এখানে আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য আহার করান হচ্ছে। সুতরাং এখানে চেহারা দ্বারা সন্তষ্টি উদ্দেশ্য। এটাই মূলত: তা'বীল মায়াত তানজীহ। 

 

এখন প্রশ্ন হল, আক্বিদায় তো মতবিরোধ হওয়ার কথা না, তাহলে এই মতবিরোধে কে সঠিক?

 

উত্তর: এখানে অকাট্যভাবে ঐকমত্যের বিষয় আছে। সেটি হল, এসব শব্দের সরল বা বাহ্যিক অর্থে বিশ্বাস করা কুফুরী। এ বিষয়ে উপরের তিনটি দলই একমত। এবং এই ঐকমত্যের বিষয়টিই আহলে সুন্নতের আক্বিদার মূল। 

 

সরল অর্থ বাদ দেয়ার পর শুধু শব্দকে আল্লাহর সিফাত বলা বা কোন কিছু না বলে পুরো বিষয়কে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়া অথবা আরবী সাহিত্য ও অলংকারের নিয়ম মেনে আনুষঙ্গিক বক্তব্য থেকে রুপক অর্থ নেয়া, সবগুলোই আহলে সুন্নতের নিকট গ্রহণযোগ্য। কোনটাই বাতিল না। সালাফ থেকে উপরের সবগুলিই পাওয়া যায়। একেকজন তাদের বুঝ ও গবেষণা অনুযায়ী একেকটাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। 

 

প্রশ্ন: তথাকথিত সালাফীদের সাথে পার্থক্য কোথায়?

 

সালাফীরা এখানে শব্দকে তার বাহ্যিক বা সরল অর্থে বিশ্বাস করতে বলে। যা আহলে সুন্নতের মতে, সুস্পস্ট বাতিল। 

 

তাদেরকে যদি বলা হয়, হাতের বাহ্যিক অর্থ তো অংশ বা অঙ্গ। দেহের অংশ বা অঙ্গের অর্থ ছাড়া হাতের আর তো কোন সরল অর্থ বা উদ্দেশ্য নেই। তখন তারা বলে, না না। আমরা তো অংশ বা অঙ্গের অর্থে বিশ্বাস করি না। 

 

তাহলে হাতের সরল বা বাহ্যিক অর্থটা কী? তখন আর বলতে পারে না। 

 

এজন্য মতবাদ হিসেবে, তথাকথিত সালাফীদের মূলনীতিটা দেহবাদী কুফুরী মূলনীতি। এদের কিছু কিছু আলিম হয়ত অংশ বা অঙ্গে বিশ্বাস করে না, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ অংশ বা অঙ্গে বিশ্বাস করার কারণে দেহবাদী আক্বিদা রাখে। এজন্য মূলনীতির দিক থেকে সালাফীরা আহলে সুন্নত বহির্ভূত বাতিল আক্বিদার জামাত। তবে এদের মধ্যে যারা আল্লাহর অঙ্গ বা অংশে বিশ্বাস করে না এবং বাহ্যিক বা সরল অর্থ নেয়ার দাওয়াত দেয় না, এদেরকে ভ্রষ্ট না বললেও যারা সাধারণ মানুষকে বাহ্যিক বা সরল অর্থে বিশ্বাস করতে বলে এরা ভ্রষ্ট। 

 

মোটকথা, মূলনীতির দিক থেকে সালাফী মতবাদ আহলে সু১। আল্লাহ তায়ালা সব ধরণের অঙ্গ-প্রতঙ্গ থেকে মুক্ত। অঙ্গ-প্রতঙ্গের ধারণা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র 

 

২। আল্লাহ তায়ালা এক ও অদ্বিতীয়। তিনি দেহ ও অঙ্গ-প্রতঙ্গ বিশিষ্ট নন। সৃষ্টি যেমন বিভিন্ন অংশ মিলে গঠিত হয়, আল্লাহ তায়ালা এধরণের অংশ অংশ মিলে গঠিত হওয়ার ধারণা থেকে মুক্ত। ছোট বা বড় কোন ধরণের অংশের ধারণা সম্পূর্ণ তাউহীদ পরিপন্থী ও কুফুরী। 

 

৩। কুরআন ও সুন্নাহের কিছু কিছু শব্দ আল্লাহর দিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে যেগুলো সাধারণত: অংশ বা অঙ্গ বোঝায়। এগুলোর বিষয়ে আহলে সুন্নতের সর্বসম্মত ঐকমত্যপূর্ণ মতামত হল, এগুলো আল্লার ক্ষেত্রে অংশ বা অঙ্গ প্রমাণ করে না। এগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর জন্য অংশ বা অঙ্গ সাব্যস্ত করা সুস্পষ্ট কুফুরী। 

 

যেমন, আল্লাহর রং (সিবগাতুল্লাহ), আল্লাহর চেহারা(ওয়াজহুল্লাহ), আল্লাহর হাত (ইয়াদুল্লাহ)। 

 

প্রশ্ন: এগুলো থেকে আল্লাহর অংশ বা অঙ্গ সাব্যস্ত করা যদি কুফুরী হয়, তাহলে পবিত্র কুরআনে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে কেন?

 

উত্তর: পবিত্র কুরআন যেহেতু আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং আরবী ভাষার অলংকার খুবই উচ্চাঙ্গের, এজন্য পবিত্র কুরআন অলঙ্কারের শাস্ত্রের দিক থেকে সবার উপরে। 

 

ভাষা ও সাহিত্যে অঙ্গ ও অংশের অর্থ নেয়া ছাড়াও এজাতীয় শব্দ ব্যবহার করা যায়। যেমন, কুরআনে আছে দিনের চেহারা (ওয়াজহান নাহার)। অথচ আমরা জানি, রাত-দিনের কোন চেহারা হয় না। এটা সাহিত্যের অলঙ্কার। 

 

কুরআনে আছে, সত্যের পা ( কাদামা সিদক)। আমরা সবাই জানি, সত্য - মিথ্যার কোন হাত-পা হয় না। এরপরও ভাষার অলঙ্কারের হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

 

কুরআনে আছে, পিতা-মাতার জন্য নম্রতার ডানা (জানাহাজ জুল) বিছিয়ে দাও। অথচ আমরা জানি, নম্রতার কোন ডানা হয় না। 

 

সুতরাং আরবী ভাষা ও সাহিত্যের উচ্চাঙ্গের অলঙ্কারের কারণে এধরণের ব্যবহার থাকাটা খুবই স্বাভাবিক। এগুলো কোন দোষণীয় বিষয় নয়। 

 

বরং এগুলো কুরআনের সৌন্দর্য্য। কারণ, যখন বলা হয়, তোমরা আল্লাহর রঙে রঙীন হও, তখন যে মর্ম ও উদ্দেশ্য বোঝান হয়, স্বাভাবিকভাবে বললে এতো অর্থবোধক হয় না। যদি বলি, তোমরা ভালো গুণে গুণান্বিত হও, তাহলে এটা অতটা আবেদনময় হয় না। 

 

আগের উদাহরণে পিতার জন্য নম্রতার ডানা বিছিয়ে দেয়ার কথাটাই ধরুণ। সরল-স্বাভাবিকভাবে যদি বলা হয়, তোমরা পিতা-মাতার সাথে ভালো আচরণ করো, এটা যতটুকু আবেদনময়, এর চেয়ে শতগুণ অর্থবহ হলো, তোমরা পিতা-মাতার সামনে দয়া-মায়া ও নম্রতার ডানা বিছিয়ে দাও। 

 

এজন্য, একথা ভাবা কখনও উচিৎ হবে না যে, যেসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক হয়, সেসব বিষয় পবিত্র কুরআনে আসলো কেন? নাউজুবিল্লাহ।  

 

পবিত্র কুরআনের ক্ষেত্রে এধরণের আপত্তি বা ধারণা খুবই মারাত্মক। কারণ, যেটা পবিত্র কুরআনের সৌন্দর্য্য সেটাকে কুরআনের ত্রুটি বিবেচনা করা হচ্ছে। অথচ পবিত্র কুরআন সব - ধরণের দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। এজন্য আমরা দেখি যে, এসব আয়াত ও বক্তব্যে সাহাবায়ে কেরাম কোন আপত্তি করেননি। কারণ তারা মাতৃভাষার অলংকার ও উচ্চাঙ্গের সাহিত্য সম্পর্কে সম্যক অবগত ছিলেন।

 

প্রশ্ন: এসব শব্দের ক্ষেত্রে অংশ বা অঙ্গ বিশ্বাস না করে কি এগুলো আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা যায়?

 

উত্তর: এসব শব্দের বাহ্যিক, আক্ষরিক বা সরল অর্থ হল দেহের অংশ বা অঙ্গ। এজন্য অংশ বা অঙ্গের অর্থ বাদ দিলে বাহ্যিক বা আক্ষরিক আর কোন অর্থ অবশিষ্ট থাকে না। 

 

যেহেতু বাহ্যিক সরল অর্থ তথা অংশ বা অঙ্গ অর্থটা সকলের মতে কুফুরী, এজন্য এই কুফুরী অর্থ বাদ দেয়ার পর এই শব্দগুলোর আর কোন সরল অর্থ অবশিষ্ট থাকে না, যা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা যায়। 

 

এখন আমাদের সামনে দু'টি বিষয় থাকছে,

 

১। মূল শব্দ, যার বাহ্যিক অর্থকে বাদ দেয়া হয়েছে। 

 

২। শব্দের অনেক রুপক অর্থ ও ব্যবহার। 

 

এই পরিস্থিতিতে আলিমদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে। কেউ বলেছেন, বাহ্যিক অর্থ বাদ দেয়ার পর মূল যে শব্দটা অবশিষ্ট থাকছে, এ শব্দকে আল্লাহর সিফাত বা গুণ বলা হবে। তবে এক্ষেত্রে আলাদা কোন অর্থ সাব্যস্ত করা হবে না।  

 

প্রশ্ন হয়, অর্থহীন আবার শব্দ হয় নাকি? তখন তারা বলেন, অর্থটা আমাদের জানা নেই। আল্লাহ ভালো জানেন। একে পরিভাষায়, ইসবাত মায়াত তানজীহ বলে। অর্থাৎ বাহ্যিক অর্থ পরিত্যাগ করে শুধু শব্দটাকে সিফাত বা গুণ সাব্যস্ত করা। 

 

আরেকদল আলিম বলেন, শব্দকে বাহ্যিক অর্থ থেকে বাদ দেয়ার পর আমাদের দায়িত্ব শেষ। আমরা আগ বেড়ে একে সিফাত বা গুণ বলব না আবার নাকচও করব না। এ বিষয়ে পুরো বিষয়টা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিব। একে পরিভাষায় তাফয়ীদ মায়াত তানজীহ ( বাহ্যিক অর্থ বাদ দিয়ে শব্দকে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়া) বলে।

 

প্রথম মতের সাথে দ্বিতীয় মতের পার্থক্যটা স্পষ্ট। প্রথম দল শব্দকে তার সরল অর্থ থেকে বাদ দেয়ার পর নিজেদের পক্ষ থেকে সিফাত বলছেন। তবে অর্থের বিষয়টি তারা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিচ্ছেন। আর দ্বিতীয় দল সিফাতও বলছেন না। নাকচও করছেন না। বরং পুরো বিষয়টিকেই আল্লাহর উপর ছেড়ে দিচ্ছেন। তিনিই ভালো জানেন। 

 

এখানে আরেকদল আছেন। যারা শব্দের সরল অর্থ(অংশ বা অঙ্গ) বাদ দেয়ার পর, শব্দকে পুরোপুরি অর্থহীন বলতে নারাজ। তারা বলেন, কুরআন সুস্পষ্ট আরবী ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। বাহ্যিক অর্থ যেহেতু নেয়া সম্ভব হচ্ছে না, সুতরাং আরবী ভাষার নিয়ম মেনে এ শব্দের সবচেয়ে উপযোগী রুপক অর্থটি নিতে হবে। পরিভাষায় যাকে, তা'বীল মায়াত তানজীহ বলে। 

 

তাদের বক্তব্য হল, মূল শব্দের সরল বা বাহ্যিক অর্থ (অংশ বা অঙ্গ) নেয়াটা অসম্ভব হলেও পুরো বাক্যের ব্যবহার থেকে একটি সুস্পষ্ট মর্ম বোঝা যায়। আনুষঙ্গিক মর্ম থেকে বক্তার মূল উদ্দেশ্য বোঝা গেলেই যথেষ্ট। 

 

যেমন কুরআনে এসেছে, নিশ্চয় তোমাদেরকে আল্লাহর চেহারার জন্য আহার করাচ্ছি। 

 

এখানে চেহারা শব্দটি সরল বা বাহ্যিক অর্থ (অংশ বা অঙ্গ) নেয়া সম্ভব নয়। বরং এটি সবার মতে কুফুরী। সুতরাং আল্লাহর চেহারা দ্বারা বাহ্যিক চেহারা উদ্দেশ্য নেয়া যাচ্ছে না। তবে আনুষঙ্গিক বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, এখানে আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য আহার করান হচ্ছে। সুতরাং এখানে চেহারা দ্বারা সন্তষ্টি উদ্দেশ্য। এটাই মূলত: তা'বীল মায়াত তানজীহ। 

 

এখন প্রশ্ন হল, আক্বিদায় তো মতবিরোধ হওয়ার কথা না, তাহলে এই মতবিরোধে কে সঠিক?

 

উত্তর: এখানে অকাট্যভাবে ঐকমত্যের বিষয় আছে। সেটি হল, এসব শব্দের সরল বা বাহ্যিক অর্থে বিশ্বাস করা কুফুরী। এ বিষয়ে উপরের তিনটি দলই একমত। এবং এই ঐকমত্যের বিষয়টিই আহলে সুন্নতের আক্বিদার মূল। 

 

সরল অর্থ বাদ দেয়ার পর শুধু শব্দকে আল্লাহর সিফাত বলা বা কোন কিছু না বলে পুরো বিষয়কে আল্লাহর উপর ছেড়ে দেয়া অথবা আরবী সাহিত্য ও অলংকারের নিয়ম মেনে আনুষঙ্গিক বক্তব্য থেকে রুপক অর্থ নেয়া, সবগুলোই আহলে সুন্নতের নিকট গ্রহণযোগ্য। কোনটাই বাতিল না। সালাফ থেকে উপরের সবগুলিই পাওয়া যায়। একেকজন তাদের বুঝ ও গবেষণা অনুযায়ী একেকটাকে প্রাধান্য দিয়েছেন। 

 

প্রশ্ন: তথাকথিত সালাফীদের সাথে পার্থক্য কোথায়?

 

সালাফীরা এখানে শব্দকে তার বাহ্যিক বা সরল অর্থে বিশ্বাস করতে বলে। যা আহলে সুন্নতের মতে, সুস্পস্ট বাতিল। 

 

তাদেরকে যদি বলা হয়, হাতের বাহ্যিক অর্থ তো অংশ বা অঙ্গ। দেহের অংশ বা অঙ্গের অর্থ ছাড়া হাতের আর তো কোন সরল অর্থ বা উদ্দেশ্য নেই। তখন তারা বলে, না না। আমরা তো অংশ বা অঙ্গের অর্থে বিশ্বাস করি না। 

 

তাহলে হাতের সরল বা বাহ্যিক অর্থটা কী? তখন আর বলতে পারে না। 

 

এজন্য মতবাদ হিসেবে, তথাকথিত সালাফীদের মূলনীতিটা দেহবাদী কুফুরী মূলনীতি। এদের কিছু কিছু আলিম হয়ত অংশ বা অঙ্গে বিশ্বাস করে না, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ অংশ বা অঙ্গে বিশ্বাস করার কারণে দেহবাদী আক্বিদা রাখে। এজন্য মূলনীতির দিক থেকে সালাফীরা আহলে সুন্নত বহির্ভূত বাতিল আক্বিদার জামাত। তবে এদের মধ্যে যারা আল্লাহর অঙ্গ বা অংশে বিশ্বাস করে না এবং বাহ্যিক বা সরল অর্থ নেয়ার দাওয়াত দেয় না, এদেরকে ভ্রষ্ট না বললেও যারা সাধারণ মানুষকে বাহ্যিক বা সরল অর্থে বিশ্বাস করতে বলে এরা ভ্রষ্ট। 

 

মোটকথা, মূলনীতির দিক থেকে সালাফী মতবাদ আহলে সুন্নত বহির্ভূত।মূলনীতিটা দেহবাদী আক্বিদার অনুরুপ।ন্নত বহির্ভূত।মূলনীতিটা দেহবাদী আক্বিদার অনুরুপ।

 

উপরে উল্লিখিত কথাগুলো কি ঠিক?আমি যদি আকিদা রাখি যে আল্লাহর আকার আল্লাহর মত সেটা কল্পনা করা যাবে না এই আকিদা ঠিক হবে ?

1 Answer

0 votes
by (574,260 points)
edited by
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম


প্রথমে একটি হাদীস দেখে নেইঃ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
تفكَّروا في كلِّ شيءٍ , ولا تتفكَّروا في اللهِ                                                                                                     
তোমরা সব কিছু নিয়ে গবেষণা কর। কিন্তু আল্লাহর সত্ত্বা নিয়ে গবেষণা করো না।

ইমাম যুরকানী রহঃ বলেন, হাদীসটি হাসান লিগাইরিহী। [মুখতাসারুল মাকাসিদ, বর্ণনা নং-৩১৮]

আল্লাহর আকার নিরাকার ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা নিষেধ। আল্লাহ তাআলা আছেন। তিনি সকল কিছুর স্রষ্টা। তার কাছেই আমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তিনিই রিজিকের মালিক। ইত্যাদি আকীদা রাখা আবশ্যক।

কিন্তু তিনি দেখতে কেমন? তার আকৃতি কেমন? ইত্যাদি নিয়ে গবেষণা করা সম্পূর্ণরূপে নিষেধ। সালাফে সালেহীনগণ এসব বিষয়ে আলোচনা করাকে অপছন্দ করতেন। আমরাও এসব নিয়ে আলোচনা করাকে অপছন্দ করি।

তাই এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকাই নিরাপদ বলে মনে করি।

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছেঃ

هُوَ الَّذِي أَنزَلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ مِنْهُ آيَاتٌ مُّحْكَمَاتٌ هُنَّ أُمُّ الْكِتَابِ وَأُخَرُ مُتَشَابِهَاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ زَيْغٌ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَابَهَ مِنْهُ ابْتِغَاءَ الْفِتْنَةِ وَابْتِغَاءَ تَأْوِيلِهِ ۗ وَمَا يَعْلَمُ تَأْوِيلَهُ إِلَّا اللَّهُ ۗ وَالرَّاسِخُونَ فِي الْعِلْمِ يَقُولُونَ آمَنَّا بِهِ كُلٌّ مِّنْ عِندِ رَبِّنَا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ [٣:٧]

তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট,সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে,তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর,তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। {সূরা আলে ইমরান-৭}

তাই আল্লাহর সত্ত্বার আকার নিরাকার নিয়ে কথা বলা সম্পূর্ণই নিষিদ্ধ বিষয়। কারণ এসব মুতাশাবিহাত এর অন্তর্ভূক্ত। যার সঠিক অবস্থান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না।

আমরা আল্লাহর “হাত, পা, চেহারা” ইত্যাদি অর্থ প্রকাশক শব্দের উপর ঈমান আনি। কিন্তু এগুলোর অবস্থা কেমন? আকার আছে নাকি নেই? ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা করি না। মন্তব্য করি না।

আমরা কুরআনে বর্ণিত গভীর জ্ঞানীদের কাতারে শামিল হতে চাই। 
,
বিস্তারিত জানুনঃ

আপনি যদি আকিদা রাখেন যে আল্লাহর আকার আল্লাহর মত, সেটা কল্পনা করা যাবে না, এই আকিদা ঠিক হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (80 points)
হযরত আমি হয়তো বুঝাতে পারি নাই।আমি আল্লাহর আকার নিজে কিরূপ আকিদা রাখা উচিত তা জানতে চাচ্ছিলাম।আমি যদি আকিদা রাখি আল্লাহর আকার আল্লাহর মত আর কোনো কিছু কল্পনা করবো না এই আকিদা কি ঠিক?
by (574,260 points)
হ্যাঁ উক্ত আকীদা সঠিক।
আলহামদুলিল্লাহ।   

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 178 views
...