আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
739 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (18 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।

১.হায়জের সময় স্বামীর যৌনাঙ্গে স্ত্রীর মুখ দেওয়া হারাম নাকি হালাল?? শরীয়ত এ বিষয়ে কি বলছে?! অপছন্দনীয় কথার অর্থ কি?? অপছন্দনীয় এবং মাখরুহ কি একই বিষয়?!

২. স্বামীর সামনে মিউজিক চালিয়ে কি নাচ করা জায়েজ??

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)

 

بسم الله الرحمن الرحيم

 

জবাব,

 

স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের দেহ থেকে সব উপায়ে সুখ নেয়ার অনুমতি ইসলামে আছে।

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

نِسَاؤُكُمْ حَرْثٌ لَّكُمْ فَأْتُوا حَرْثَكُمْ أَنَّىٰ شِئْتُمْ

তোমাদের স্ত্রীগণ তোমাদের জন্য ক্ষেতস্বরূপ; অতএব তোমরা যেভাবেই ইচ্ছা তোমাদের ক্ষেতে গমণ কর।’ (সূরা বাকারা ২২৩)

অন্যত্র তিনি বলেন,

هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ

তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ।’ (সূরা বাকারা ১৮৭)

তবে এ ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখা বাঞ্ছনীয়। যথাক্রমে-

১- যে উপায়ে সুখ নেয়া হারাম হওয়ার ব্যাপারে স্পষ্ট দলিল আছে, তা পরিহার করতে হবে। যেমন, মলদ্বারে সহবাস এবং ঋতুবতী ও প্রসব পরবর্তী সময়ে নির্গত রক্তস্রাব অবস্থায় সহবাস।

২- স্বামী-স্ত্রী পরস্পর থেকে সুখ ভোগ করার সময় ইসলামী শিষ্টাচার ও নীতি-নৈতিকতার প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।

সহবাসের সঠিক নিয়ম বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন- জিজ্ঞাসা নং–৫৭৮।

দুই. এবার আসা যাক, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের লজ্জাস্থান মুখে দেয়া প্রসঙ্গে।  এ ক্ষেত্রে নিষিদ্ধতার ব্যাপারে কোরআন হাদিসে স্পষ্ট কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় না বিধায় বিষয়টিকে অকাট্য হারাম বলার সুযোগ নেই। তবে এর মাঝে ইসলামী শিষ্টাচার-বহির্ভূত কিছু দিক রয়েছে। যেমন,

১. লজ্জাস্থান থেকে নির্গত নাপাক (বীর্য, মযি ইত্যাদি) জিহ্বা, মুখ ইত্যাদিতে লাগবে। আর জরুরত ছাড়া নাপাক স্পর্শ করাকে ফকিহগণ বৈধ মনে করেন না।

২. মানুষের শরীরের সবচে’ সম্মানিত অঙ্গ হলো চেহারা। আর লজ্জাস্থান হলো নাপাকির জায়গা। সুতরাং সম্মানিত জায়গাকে নাপাকির জায়গায় স্পর্শ করানো অবশ্যই নিন্দনীয়।

৩. মুখ দ্বারা আল্লাহর কালাম তিলাওয়াত করা হয়, যিকির করা হয়। এই মুখে নাপাক লাগানো এবং নাপাকির স্থান চুমো দেয়া বা Suck করা বড় গর্হিত কাজ।

৪. মুখের অনেক জীবাণু লজ্জাস্থানে রোগ সংক্রামণের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া লজ্জাস্থানের জীবাণু মুখে এবং মুখের ভায়া হয়ে ভেতরে রোগ সংক্রামণ করার আশংকা থাকে। দুর্ঘটনাবশত ধারালো দাঁতও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এসব কারণে ফকিহগণ এটাকে মাকরুহ বলেছেন। তবে সহবাসের পূর্বে নাপাক না লাগার শর্তে কিছু ফকিহ লজ্জাস্থানে চুমু দেয়ার (লেহন নয়) অবকাশ দিলেও এটাকে পরিহার করাকে উত্তম বলেছেন। যেমন, প্রসিদ্ধ হানাফি ফকিহ বুরহানুদ্দীন মাহমুদ ইবন তাজুদ্দীন রহ. বলেন,

إذا أدخل الرجل ذكره في فم امرأته يكره لأنه موضع قراءۃ القرآن فلا یلیق به إدخال الذکر به

যদি পুরুষ নিজের লজ্জাস্থান স্ত্রীর মুখে প্রবেশ করায় তাহলে তা মাকরুহ হবে। কেননা, মুখ কোরআন তেলাওয়াতের স্থান। সুতরাং এখানে লজ্জাস্থান প্রবেশ করানো অনুচিত।’ (আল্মুহীতুল বুরহানী ৮/১৩৪)

আল মাউসুয়াতুল ফিকহিয়্যা (৯/৩২)– এসেছে,

وصرح الحنابلة بجواز تقبیل الفرج قبل الجماع ، وکراہته بعدہ

হাম্বলি ফকিহগণ স্পষ্টভাবে বলেছেন, সহবাসের পূর্বে হলে স্ত্রীর লজ্জাস্থান চুমো দেয়া জায়েয এবং পরে মাকরুহ।’

* স্বামী তার স্ত্রীর কাছ থেকে ততটুকু মনোরঞ্জনেরই প্রত্যাশা করতে পারে, যতটুকু শরীয়ত বিরোধী নয়। এক্ষেত্রে কোন নির্দিষ্ট বিধান নেই যে, এই কাজ করতে পারবে, বা ঐ কাজ করতে পারবে না।

তবে মূলনীতি এটাই শরীয়ত গর্হিত কোন কিছু করতে পারবে না।

আপনি এমন বিষয় উল্লেখ করেছেন যাতে শরীয়ত নিষিদ্ধ বিষয়ও অন্তর্ভূক্ত।অর্থাৎ মিউজিক দিয়ে নাচা।, মিউজিক দিয়ে নাচ করা  হারাম ও নাজায়েজ।

তাই উপরোক্ত কাজ করার আদেশ দেয়া যেমন স্বামীর জন্য অন্যায় অবৈধ। তা পালন করাও আপনার জন্য অবৈধ।

নবী সা: বলেন,

لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوقٍ فِي مَعْصِيَةِ اللَّهِ

আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হয়ে কোন সৃষ্টির আনুগত্য করা জায়েজ নয়। [মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১০৯৫, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৭০৭]

 عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: «لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ المُتَشَبِّهِينَ مِنَ الرِّجَالِ بِالنِّسَاءِ، وَالمُتَشَبِّهَاتِ مِنَ النِّسَاءِ بِالرِّجَالِ»

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ অভিশাপ দিয়েছেন সেসব পুরুষকে যারা মহিলাদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে, আর সেসব নারীদের যারা পুরুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৫৮৮৫, ৫৫৪৬, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৯০৪]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ: «الدُّفُّ حَرَامٌ، وَالْكُوبَةُ حَرَامٌ، وَالْمِزْمَارُ حَرَامٌ

হযরত আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দফ হারাম। বাদ্যযন্ত্র হারাম। মদের পেয়ালা হারাম। বাঁশী হারাম। [সুনানে সুগরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৩৫৯, সুনানে কুরবা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২১০০০]

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

১. যদি পুরুষ নিজের লজ্জাস্থান স্ত্রীর মুখে প্রবেশ করায় বা স্ত্রীর লজ্জাস্থানে মুখ দেয় তাহলে তা মাকরুহ হবে। কেননা, মুখ কোরআন তেলাওয়াতের স্থান। সুতরাং এজাতীয় বিষয় থেকে দূরে থাকায় শ্রেয়।

২. মিউজিক দিয়ে নাচা ইসলামে হারাম।তবে স্বামীকে খুশী করতে মাঝে মধ্যে যদি স্ত্রী মিউজিক ছাড়া নাচে,তাহলে সেটার রুখসত থাকবে। তবে পর-পুরুষের সামনে বা নিয়মিত নাচা কখনো অনুমোদনযোগ্য হবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...