بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
তালাক শব্দ। এটি খুবই
জঘন্য একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ
عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ
مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم
قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ
" .
কাসীর ইবন উবায়দ
.......... ইবন উমার (রাঃ) নবী করীম সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা
করেছেন যে, আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট নিকৃষ্টতম হালাল বস্তু
হল তালাক।(আবূ
দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪,
আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।)
এ ভয়ানক শব্দটি নিয়ত
থাকুক বা না থাকুক রাগে বলুক আর ভালবেসে বলুক স্ত্রীকে উদ্দেশ্য নিয়ে মুখ দিয়ে এ শব্দ
বের হলেই তালাক পতিত হয়ে যায়।
হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّ
رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” ثَلَاثٌ جِدُّهُنَّ
جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ: الطَّلَاقُ، وَالنِّكَاحُ، وَالرَّجْعَةُ
“
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ
থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তিনি বিষয় এমন যে,
ইচ্ছেকৃত করলে ইচ্ছেকৃত এবং ঠাট্টা করে করলেও ইচ্ছেকৃত বলে ধর্তব্য হয়।
তা হল, তালাক, বিবাহ এবং তালাকে রেজয়ীপ্রাপ্তা
স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২০৩৯, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৯৪}
★দাম্পত্য জীবন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অনেক বড় ও বিশেষ একটি
নেয়ামত। স্বামী-স্ত্রী সকলের কর্তব্য, এই নেয়ামতের যথাযথ
মূল্যায়ন করা এবং একে অপরের সকল অধিকার আদায় করা। স্ত্রীর জন্য উচিত নয়,
কথায় কথায় স্বামীর কাছে তালাক চাওয়া। আবার স্বামীর জন্যও জায়েয নয়
আল্লাহ তাআলার দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করা।
বিয়ে, তালাক ও দাম্পত্য জীবনের সকল বিধান ও মাসআলা শিক্ষা করা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের
জন্য জরুরি। বিশেষ করে স্বামীর কর্তব্য হল, তালাকের মাসআলা ও
এর পরিণতি সম্পর্কে অবগত না হয়ে মুখে কখনো তালাক শব্দ উচ্চারণ না করা। আর যদি কোনো
কারণে তালাক দেয় এবং এমনভাবে দেয় যে, এখন আর তাদের একসাথে থাকা
শরীয়তে বৈধ নয় তাহলে তাদের আল্লাহকে ভয় করা উচিত। বিভিন্ন টাল-বাহানা, অজুহাতের আশ্রয় নিয়ে কিংবা ভুল কথার উপর ভিত্তি করে অথবা মূল ঘটনা গোপন রেখে
একসাথে বাস না করা উচিত। বিয়ে শুধু একটি সময়ের বিষয় নয়, সারা
জীবনের বিষয়।
বাস্তবেই যদি তালাক হয়ে
যায় এবং শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় এরপরও স্বামী-স্ত্রী হিসেবে
একসাথে বাস করে তাহলে তা হবে কবীরা গুনাহ এবং উভয়েই যেন ব্যভিচারের গুনাহ এ লিপ্ত।
*****প্রিয় প্রশ্নকারী
দ্বীনি ভাই/ বোন!
★তোমাকে আমি ছেড়ে দিলাম ,যা খুশি তাই করো,তুমি মুক্ত ,তুমি
স্বাধীন ইত্যাদী এজাতীয় বাক্যগুলি কেনায়া (ইঙ্গিতসূচক) শব্দ বা বাক্যের অন্তর্ভুক্ত
।
★★শরিয়তের পরিভাষায় প্রশ্নে উল্লেখিত জাতীয় শব্দে তালাক দেয়াটাকে
বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে
নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত
হয় ৷
সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে
এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে
যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া,
১/৩৭৫)
হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ
وَالضَّرْبُ الثَّانِي:
الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ دَلالَةٍ حَالٍ.
وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا الطّلاقُ
الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ: اعْتَدِّي،
وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی
بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ
ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ:
اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ،
وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ،
وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي،
وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ
يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ
يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ،
وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ،
وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ
خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ
وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ
إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.
احمد بن محمد البغدادي
المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر
والتوزيع، بيروت
برهان الدين علي المرغيناني،
الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية
সারমর্মঃ
কেহ যদি তার স্ত্রীকে
বলে যে তোমাকে আমি ছেড়ে দিলাম, যা খুশি তাই করো,তুমি মুক্ত, তুমি
স্বাধীন, তুমি স্বামী খুজো,বা স্বামী তালাশ
করো,তাহলে এটিও কেনায়া তালাক। কেনায়া তালাক হলো ইঙ্গিতসূচক শব্দ
দ্বারা যেটা হয়। কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক।
আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয়।
আরো জানুনঃ
https://ifatwa.info/7162/
https://ifatwa.info/7406/
★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে এহেন বাক্য বলার সময় যদি তালাকের নিয়ত
থাকে,তাহলে এতে এক তালাকে বায়েন পতিত হবে।আর যদি তালাকের নিয়ত না থাকে তাহলে তালাক
পতিত হবে না।
আপনার বর্ণনানুপাতে আপনার
স্বামী যেহেতু তালাক দেবার উদ্দেশ্যে উক্ত বাক্য বা শব্দটি বলেনি,বিধায় এতে তালাক পতিত হবে না। তবে পরর্বর্তিতে এজাতীয় শব্দ ব্যবহার করা থেকে
বিরত থাকার আপ্রাণ চেষ্ট করবে।