আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
210 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (16 points)
আসসালামু আলাইকুম ভাই।
ছোট বেলা থেকে যে মুসলিম এবং অমুসলিম বন্ধুদের সাথে চলা ফেরা করে এসেছি, তারা যদি দ্বীনদার না হয় তাহলে তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা উচিত হবে কিনা জানতে চাচ্ছিলাম।  ( এদের মধ্যে যদি কেউ এমন থাকে নেশা করে এবং মেয়ে সম্পর্কিত দোষ আছে)
[ আমি দ্বীন মেনে চলার চেষ্টা করছি এবং অন্য বন্ধুর দ্বারা প্রভাবিত হবার সুযোগ কম ]

1 Answer

0 votes
by (57,240 points)
edited by

وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 
জবাব,
মুমিন মুসলমান যেন কখনো মুমিনদের ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে সে ব্যাপারে সতর্ক করেছেন আল্লাহ। আবার শর্তসাপেক্ষে অমুসলিমকে বন্ধু ভাবার কথাও বলেছেন। কুরআনে পাকে সে ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন-
لاَّ يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاء مِن دُوْنِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللّهِ فِي شَيْءٍ إِلاَّ أَن تَتَّقُواْ مِنْهُمْ تُقَاةً وَيُحَذِّرُكُمُ اللّهُ نَفْسَهُ وَإِلَى اللّهِ الْمَصِيرُ
অর্থ : `মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফেরকে (অবিশ্বাসী)বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। তবে ব্যতিক্রম হলো, যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোনো অনিষ্ট কিংবা ক্ষতির আশঙ্কা কর, তবে (আত্মরক্ষার কৌশল অবলম্বন করে) তাদের সঙ্গে সাবধানতা অবলম্বন করবে। আর আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের সম্পর্কে তোমাদের সতর্ক করেছেন এবং সবাকেই তাঁর কাছে ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ২৮)

ধরিত্রীতে বেঁচে থাকার জন্য মানুষের যেমন খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান প্রয়োজন, তেমনি সমাজে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির। কেননা মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে চলা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। আর মানুষের স্বভাব-প্রকৃতিই এমন যে কোনো মানুষ একাকী থাকতে চায় না। সমাজের অন্য সবার সঙ্গে প্রীতির মেলবন্ধনে জড়িয়ে থাকতে আগ্রহী। এই পারস্পরিক সম্পর্ক, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মায়াজাল মানুষের মধ্যে বন্ধুত্বের আবহ সৃষ্টি করে।

মানবজীবনে আদর্শ বন্ধু নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন অতীব জরুরি। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বন্ধুত্ব গ্রহণ এবং এর মর্যাদা সম্পর্কে বহু বাণী উল্লিখিত হয়েছে। আসলে যে কাউকে বন্ধু বলা যায় না, বন্ধু বানানো যায় না। সত্যবাদী, নামাজি, দ্বীনদার ও পরোপকারী ব্যক্তিকে বন্ধু হিসেবে নির্বাচন করা উচিত। এ জন্য কোরআনে বন্ধু নির্বাচনের দিকনির্দেশনা প্রদান করে ঘোষিত হয়েছে-'আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং আপনি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে তাদের থেকে নিজের দৃষ্টি ফিরিয়ে নেবেন না। যার মনকে আমার স্মরণ থেকে অবচেতন করে দিয়েছি, যে নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে এবং যার কার্যকলাপ হচ্ছে সীমা অতিক্রম করা, আপনি তার আনুগত্য করবেন না।' (সুরা কাহাফ : ২৮)

বন্ধু নির্বাচনে কেমন ব্যক্তি অগ্রাধিকার পাবে-এ ব্যাপারে উৎসাহিত করতে গিয়ে পবিত্র কোরআনে আরো সুস্পষ্ট ঘোষণা এসেছে। ইরশাদ হচ্ছে-'হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও।' (সুরা তাওবা : ১১৯)
অন্যদিকে বন্ধু নির্বাচনে জোরালো নির্দেশনা প্রদান করে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-'মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে সঙ্গী নির্বাচন করবে না।' (তিরমিজি)
এ ছাড়া পবিত্র কোরআনে মুমিনের বৈশিষ্ট্য ও গুণাবলি আলোচনা প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেছেন-'আর ইমানদার পুরুষ ও নারী একে অন্যের পৃষ্ঠপোষক (বন্ধু)। তারা একে অন্যকে ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং যাবতীয় মন্দ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠা করে, জাকাত পরিশোধ করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশানুযায়ী জীবন পরিচালনা করে। তারা এমন লোক, যাদের প্রতি আল্লাহর রহমত বর্ষিত হবে।' (সুরা তাওবা : ৭১)

অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে-'মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোনো কাফিরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। আর যারা এরূপ করবে, আল্লাহর সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক থাকবে না।' (সুরা আলে ইমরান : ২৮)

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজালি (রহ.) বলেছেন, 'যার সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে তার মধ্যে পাঁচটি গুণ থাকা চাই। তা হলো-'বুদ্ধিমত্তা ও সৎ স্বভাবের অধিকারী হওয়া এবং পাপাচারী, বেদআতি ও দুনিয়াসক্ত না হওয়া।' হজরত ইমাম জাফর আস-সাদিক (রহ.) মুসলিম মিল্লাতকে বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক করে বলেছেন, 'পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সমীচীন নয়। তা হলো-মিথ্যাবাদী, নির্বোধ, ভীরু, পাপাচারী ও কৃপণ ব্যক্তি।'

প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনি ভাই/ বোন!   
সেই অমুসলিম বা ফাসেক ব্যাক্তির সাথে বন্ধুত্ব করা জায়েয নেই, যার মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে দ্বীন থেকে দূরে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।তবে দাওয়াতের উদ্দেশ্যে তাদের সাথে ভালো আচরণ করা ও ধীরে ধীরে তাদেরকে দ্বীনের পথে ফেরানোর জন্য দাওয়াতী মাকসাদে তাদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখা জায়েয আছে। তবে কোন অমুসলিমকে দিল থেকে বন্ধু রুপে গ্রহণ করা যাবে না।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...