আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+1 vote
450 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (64 points)
আসসালামু আলাইকুম। গোনাহ বা অন্যায় হতে দেখলে তা মন থেকে ঘৃনা করা ইমানের সর্বনিম্ন স্তর। চারদিকে প্রতিনিয়ত কত গোনাহ হতে দেখি। কেউ নামায পড়ছেনা, পর্দা করছেনা, কেউ হারাম সম্পর্কে জড়িত, ফ্রি মিক্সিং ইত্যাদি দেখেও অন্তরে ঘৃনার কোন অনুভূতি জন্মায়না। গোনাহ হতে দেখেও স্বাভাবিক থাকতে পারি, যদিও নিজে সে কাজ করতে ঘৃনা করি। ১) এক্ষেত্রে আমার করনীয় কি?
আল্লাহর দেয়া সীমা লঙ্ঘন করে যারা দুনিয়াবি সফলতা , সম্মান অর্জন করে তাদের দেখে যদি হীনমন্যতা কাজ করে বা তাদের অনেক সফল মনে হয়, তখন যদি নিজেকে মনে করিয়ে দেই যে, একাজের পরিনতি আল্লাহর অসন্তুষ্টি জাহান্নামের আযাব । ও এক ভয়ংকর পথ বেছে নিয়েছে। এমন সফলতার কোন দরকার নেই। ২) তাহলে কি অহংকার করা হবে?

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
উত্তর
بسم الله الرحمن الرحيم 
,
(১.২) ইসলামের মৌলিক অবশ্যপালনীয় কর্তব্যের মধ্যে সৎকাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা কখনও শক্তির মাধ্যমে হতে পারে, আবার কখনও রসনা ও শুভবুদ্ধি সৃষ্টির মাধ্যমে হতে পরে।

আবার কখনও শুধু অন্তরের ঘৃণা দ্বারাই হয়ে থাকে। অন্তর দিয়ে সেটা করা সর্বাবস্থায়ই ওয়াজিব হবে। কারণ, এতে কোনো কষ্ট পেতে হয় না। যে ব্যক্তি এতটুকু ঘৃণাও পোষণ করে না, সে প্রকৃত মুমিন নয়। 
আল্লাহ তাআলা যে দুইটি মৌলিক উপাদানের কারণে মুসলিম উম্মাহকে শ্রেষ্ঠ ও কল্যাণকামী জাতি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন, তন্মধ্যে সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ অন্যতম। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, 
كنتم  خبر  أمة  أخرجت للناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر 
‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি।
মানুষের কল্যাণে তোমাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজের বাধা দেবে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১১০)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি জাতি হওয়া উচিত যারা সব ভালো কাজের দিকে আহ্বান করবে, সৎকাজের আদেশ দেবে এবং অসৎকাজে নিষেধ করবে, প্রকৃতভাবে তারাই সফলকাম সম্প্রদায়। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত:১০৪)
অসৎকাজে নিষেধ মুমিনের অন্যতম গুণ
মুমিনদের মৌলিক গুণাবলি উল্লেখ করতে গিয়ে কোরআনে বলা হয়েছে, তারা হচ্ছে আল্লাহর দিকে বারবার প্রত্যাগমনকারী, তার ইবাদাতকারী, তা প্রশংসাবাণী উচ্চারণকারী, তা জন্য জমিনে বিচরণকারী, তার সামনে রুকু ও সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের বাধা দানকারী এবং আল্লাহর সীমারেখা সংরক্ষণকারী। (সুরা তাওবা ৯, আয়াত: ১১২)

মুমিন নারীরা এখানে মুমিন পুরুষদের মতো, এমন গুরুত্বপূর্ণ বিধান পালনে তাদেরও অংশ ও ভূমিকা রয়েছে। ইরশাদ হয়েছে—মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, তারা সবাই পরস্পরের বন্ধু ও সহযোগী। তারা ভালো কাজের হুকুম দেয় এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। (সুরা তাওবা ৯, আয়াত ৭১)

দায়িত্বে অবহেলাকারীদের প্রতি নিন্দা
যারা সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের প্রতিবিধানে এগিয়ে আসে না, তাদের নিন্দাবাদ জ্ঞাপন করা হয়েছে। আল্লাহর কোরআনে বলা হয়েছে- বনী ইসরাঈল জাতির মধ্য থেকে যারা কুফরির পথ অবলম্বন করেছে তাদের ওপর দাউদ ও মরিয়ম পুত্র ঈসার (আ.) মুখ দিয়ে অভিসম্পাত করা হয়েছে। কারণ তারা বিদ্রোহী হয়ে গিয়েছিল এবং বাড়াবাড়ি করতে শুরু করেছিল। তারা পরস্পরকে খারাপ কাজ করা থেকে বিরত রাখা পরিহার করেছিল, তাদের গৃহীত সেই কর্মপদ্ধতি বড়ই জঘন্য ছিল।  (সুরা মায়েদা, আয়াত: ৭৮-৭৯)

এভাবে একজন মুসলমানের পরিচয় শুধু এমনটি হতে পারে না যে, সে শুধু নিজেরই কল্যাণ কামনায় ব্যস্ত থাকবে, ভালো কাজ করবে এবং খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে। নিজস্ব পরিমণ্ডলেই তার যাবতীয় কর্মতৎপরতা সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্য কোনো ভালো ও কল্যাণের প্রতি তার কোনো মনোনিবেশ থাকবে না; যদিও তার চোখের সামনেই তা নিঃশেষ ও ধ্বংস হয়ে যায়। এমনিভাবে তার চতুর্পাশে কোনো খারাপ কিছুর জন্ম ও লালন-পালন দেখলেও সে তা এড়িয়ে যাবে,মুসলিমের ব্যক্তিত্ব কখনো এমনটি হতে পারে না।
পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,
والعصر إن الإنسان لفي الخسر الا اللذين آمنوا  وعملوا الصالحات  وتواصوبالحق وتواصو  بالصبر
 ‘সময়ের কসম! মানুষ আসলেই বড় ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান আনে ও সৎকাজ করে এবং একজন অন্যজনকে হক থাকার ও সবর করার উপদেশ দেয়। ’ (সুরা আসর, আয়াত: ১-৩)
হাদিসে অন্যায় প্রতিরোধের কথা
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُفْيَانُ ، عَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ قَالَ : قَالَ أَبُو سَعِيدٍ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : " مَنْ رَأَى مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ ".

حكم الحديث: صحيح

নবি (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যদি কোনো খারাপ কাজ বা বিষয় দেখে তাহলে সে যেন হাত দিয়ে তা পরিবর্তন করে দেয়, যদি তা করতে অপারগ হয় তাহলে যেন মুখ দিয়ে তার প্রতিবাদ করে, যদি তাও করতে সক্ষম না হয় তাহলে যেন অন্তর দিয়ে তা ঘৃণা করে, আর এটাই হচ্ছে ঈমানের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বলতম স্তর। ’ (বুখারি, হাদিস নং: ১৯৪ নাসায়ী ৫০০৮)
রাসুল (সা.) তখন ইমাম, রাষ্ট্রপ্রধান এবং জাতির শাসক ছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি তার জনসাধারণকে এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন যে, যখনই তাদের কেউ কোনো খারাপ বা অসৎ কিছু দেখতে পাবে তখন সাধ্যমতো তা পরিবর্তনে যেন এগিয়ে আসে। তার বক্তব্য ছিলো—  যখনি তোমাদের কেউ কোনো খারাপ কিছু দেখতে পায়…’। (মুসলিম, হাদিস নং: ২০১)
.

★★★সুতরাং আপনি আপনার সাধ্যের মধ্য হতে তাদেরকে হিকমতের সাথে বুঝাবেন,ধারাবাহিক ভাবে আস্তে আস্তে বুঝাবেন,দরকার পড়লে সংগবদ্ধ হয়ে বুঝাবেন, আপনার এতে যদি সাধ্য না হয়,তাহলে আপনি উক্ত কাজগুলোর প্রতি অন্তরে ঘৃণা রাখবেন।
,
আপনি তাদের কে বুঝাতে গিয়ে অহংকার থেকেও বেঁচে থাকবেন। 
,
আল্লাহ তায়ালা সফলতা দান করুন। 
আমিন।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...