আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,043 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (30 points)
আমরা জানি কেউ শহিদী মৃত্যু কামনা চেয়ে দোয়া করে সে যদি বিছানায় মৃত্যু বরণ করে তাহলে ও সে শহীদ হিসেবে গণ্য হবে।

এখন কেউ যদি এরকম দোয়া করে তাহলে সে এক্সিডেন্টে,পেটের পীড়ায়, পুলিশি নির্যাতন বা যেভাবে মারা গেলে শহিদ হয় সেভাবেই কি মারা যাবে?
অর্থাৎ হাদিসে যেই নিয়তের কথা বলা হয়েছে তা শুধু মাত্র জিহাদের ময়দানে মৃত্যু পাওয়ার জন্য?  নাকি যেসব মৃত্যুতে শহিদি মৃত্যু পাওয়া যায় তাও অন্তর্ভুক্ত?

1 Answer

0 votes
by (58,830 points)

 

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

শহীদি মৃত্যুর জন্য কিছু আমল করা যেতে পারেঃ

হাদীস শরীফে এসেছেঃ

 

عن معقل ابن يسار عن النبي صلى اللهعليه وسلم قال : ” من قال حين يصبح ثلاث مرات : أعوذ بالله السميعالعليم من الشيطان الرجيم . وقرأ ثلاث آيات من آخر سورة الحشر وكلالله به سبعين ألف ملك يصلون عليه حتىمسى ، وإن مات في ذلك اليوم مات شهيدا ، ومن قالها حين يمسى كانبتلك المنزلة

 

হযরত মাকাল বিন ইয়াসার রাঃ রাসূল সাঃ থেকে বর্ণনা করেন। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি সকাল বেলা তিন বার পড়বে “আউজুবিল্লাহিস সামীয়িল আলীমি মিনাশ শাইতানির রাজীম”। তারপর সূরা হাশরের শেষ তিন আয়াত [ হুয়াল্লাহুল্লাজী লা-ইলাহা শেষ পর্যন্ত] তিলাওয়াত করবে। তাহলে আল্লাহ তাআলা উক্ত ব্যক্তির জন্য ৭০ হাজার ফেরেস্তা নিযুক্ত করেন। যারা উক্ত ব্যক্তির জন্য মাগফিরাতের দ্আু করতে থাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। আর এ সময়ের মাঝে যদি লোকটি মারা যায়, তাহলে সে শহীদের মৃত্যু লাভ করে। আর যে ব্যক্তি এটি সন্ধ্যার সময় পড়বে, তাহলে তার একই মর্যাদা রয়েছে। [তথা মাগরিব থেকে সকাল পর্যন্তের জন্য ৭০ হাজার ফেরেস্তা গুনাহ মাফীর জন্য দুআ করে, আর সে সময়ে মারা গেলে শহীদের সওয়াব পাবে]।(সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৩০৯০,

কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-৩৫৯৭,আত তারগীব ওয়াত তারহীব, হাদীস নং-৩৭৯)

حَدَّثَنِي يَحْيَى عَنْ مَالِك عَنْ زَيْدِ بْنِ أَسْلَمَ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ كَانَ يَقُولُ اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ شَهَادَةً فِي سَبِيلِكَ وَوَفَاةً بِبَلَدِ رَسُولِكَ

 

যাইদ ইবন আসলাম (রহঃ) বর্ণনা করেন, উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) বলতেন, হে আল্লাহ! তোমার রাহে শাহাদত আর তোমার রাসূলের এই নগরে (মদীনায়) আমার মৃত্যু তোমার কাছে আমি প্রার্থনা করি।(মুয়াত্তা মালিক ৯৮৯)

সুতরাং এই দোয়া পড়তে হবে।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ شَهَادَةً فِي سَبِيلِكَ

,

قال صلى الله عليه وسلم ((من سأل اللَّه الشهادة بصدق، بلّغه اللَّه منازل الشهداء وإن مات على فراشه)).

وفي لفظ آخر: ((من طلب الشهادة صادقاً أعطيها ولو لم تصبه))

مسلم،  كتاب الإمارة، باب استحباب طلب الشهادة، برقم 1908.

সারমর্মঃ সত্য দীলে আল্লাহর কাছে যে শাহাদত চাইবে,আল্লাহ তায়ালা তাকে শহীদদের মর্যাদা দান করবেন,যদিও সে তার বিছানায় মারা যাক।

,

وعن حفصه رضي اللَّه عنها، أن عمر قال: ((اللَّهم ارزقني شهادة في سبيلك، واجعل موتي في بلد رسولك)) فقالت حفصه: ((أنى يكون هذا؟ قال: يأتيني به اللَّه إن شاء))

انظر صحيح البخاري،  أبواب فضائل أبواب المدينة، باب كراهية النبي أن تُعرى المدينة، برقم 1890 .

 

হযরত ওমর রাঃ এই দোয়া পড়তেনঃ

اللَّهم ارزقني شهادة في سبيلك، واجعل موتي في بلد رسولك)

 

*শহীদি মৃত্যু দুই প্রকার। এক প্রকার হলো প্রকৃত শহীদ। তা হলো, দ্বিন কায়েমের জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দেওয়া। এ ধরনের শহীদের মর্যাদা অনেক বেশি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।’ (সুরা আল-বাকারা : ১৫৪)

 

আরেক প্রকারের শহীদ হলো, হুকুমি। অর্থাৎ তারা শহীদের সাওয়াব প্রাপ্ত হবেন।

আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শহীদ পাঁচ প্রকার। যেমন—১. প্লেগ বা মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী, ২. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী, ৩. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী, ৪. কুপে পড়ে মৃত্যুবরণকারী ও ৫. আল্লাহর রাস্তায় শহীদ (বুখারি ও মুসলিম)

 

সায়িদ ইবনে যায়েদ রা: থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেন, যে তার সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহীদ। যে তার পরিবার-পরিজনদের রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়, সে শহীদ। যে দ্বীন রক্ষায় নিহত হয়, সে শহীদ। যে তার জীবন রক্ষায় নিহত হয় সে শহীদ। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭২; তিরমিজি, হাদিস : ১৪১৮)

 

মহামারী জাতীয় কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা। আনাস ইবনে মালেক রা: বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘তাউন’ হচ্ছে সব মুসলিমের জন্য শাহাদত। (বুখারি ১০/১৬৫-১৬৭; মুসনাদে আহমদ ৩/১৫০, ২২০)

 

সন্তান প্রসবের সময় ও নেফাস অবস্থায় নারী মৃত্যুবরণ করা। উবাদা ইবনে সামিত রা: থেকে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেন-সন্তান প্রসব করতে গিয়ে নারীর মৃত্যু হলে তা শাহাদত। তার সন্তান তাকে জান্নাতের দিকে টেনে নিয়ে যাবে। (মুসনাদে আহমদ ৪/২০১, ৫/৩২৩)

 

পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে কিংবা ভূমিধসে মৃত্যুবরণ করা। আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, শহীদ পাঁচ শ্রেণীর : প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণকারী, পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী, পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী, ভূমিধসে মৃত্যুবরণকারী এবং আল্লাহর পথের শহীদ। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৬৩; মুসলিম, হাদিস :১৯১৫)

 

হজরত জাবির ইবনে ওতাইক বলেন, আল্লাহর রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর পথে নিহত হওয়া ছাড়াও আরো সাত শ্রেণীর শহীদ আছেন। যথা প্লেগ রোগে মৃত্যুবরণকারী শহীদ, পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী শহীদ, জাতুল জাম্বে (ফুসফুসের একটি বিশেষ ব্যাধি) মৃত্যুবরণকারী শহীদ, পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী শহীদ, আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী শহীদ, ধসের নিচে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণকারী শহীদ। সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী নারী শহীদ। (মুসনাদে আহমদ ৫/৪৪৬; আবু দাউদ, হাদিস : ৩১১১; নাসায়ি ৪/১৩-১৪)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

প্রশ্নেলিখিত ছুরতে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদী মৃত্যু কামনা করে দোয়া করায় সে যদি বিছানায় মৃত্যু বরণ করে তাহলেও সে শহীদ হিসেবে গণ্য হবে । এক্সিডেন্টে,পেটের পীড়ায়, পুলিশি নির্যাতন ইত্যাদীতে মৃত্যু হওয়ার দোয়া করা সঠিক হবে না। তবে যদি কোন ব্যক্তি প্লেগ বা মহামারিতে মৃত্যুবরণকারী, পেটের পীড়ায়, পানিতে ডুবে , কুপে পড়ে বা এক্সিডেন্টে ইত্যাদীতে ইন্তেকাল হয় তাহলে সে হুকমী শহীদ হিসেবে গন্য হবে । তবে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হওয়ার তামান্না দিলে থাকা উচিৎ।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...