আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
459 views
in পবিত্রতা (Purity) by (4 points)
closed by
আসসালামু আলাইকুম
আমার এজমা/ হাঁপানি/ শ্বাসকষ্ট অনেক বেশি । আমাকে সারা বছরই গরম পানি খেতে হয় আর গরম পানি দিয়ে দিনের বেলায় গোসল করতে হয় এই শ্বাসকষ্টের সমস্যার কারণে। হায়েজ থেকে পবিত্র হতে রাতে ফরজ গোসল করার প্রয়োজন হয়। আমার দ্বীনি ডাক্তারকে রাতে গোসলের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি নিষেধ করেন । গরম পানি দিয়ে করলে‌ও চুলের গোড়া ভিজা থাকার কারণে ঠান্ডা লাগে সে থেকে শ্বাস কষ্ট হতে পারে । আমি রাতে গোসল না করতে পারলেও ওযু করতে পারি।
আমি কি রাতে ফরজ গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করে সালাত আদায় করব ?
closed
by (21 points)
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহা ওয়া বারাকাতুহ।শ্বাসকষ্টের কারণে সালাতে মুখে তিলাওয়াত করতে অক্ষম হলে মনে মনে তিলাওয়াত করা যাবে?

1 Answer

+1 vote
by (61,230 points)
selected by
 
Best answer

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

যে ব্যক্তির উপর গোসল ফরয হয়েছে সে ব্যক্তি নামায পড়তে চাইলে তার উপর ফরয হচ্ছে পানি দিয়ে গোসল করে নেয়া। দলিল হচ্ছে আল্লাহ্র বানী:

وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا

 “আর তোমরা জুনুবী (অপবিত্র) হলে প্রকৃষ্টভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬]

তবে যদি বেশি অসুস্থ্য হবার শংকা হয়, তাহলে তায়াম্মুম করে সালাত পড়তে পারেন।ঠান্ডা পানি ব্যবহার করলে যদি মারাত্মক পর্যায়ের অসুস্থ্য হবার আশংকা হয়, তখনি কেবল গোসল করার বিধান রহিত হয়। তখন অযু নয় তায়াম্মুম করে নামায নামায আদায় করতে হবে। অজু করলে হবে না। তায়াম্মুমই করতে হবে।এছাড়া সামান্য কষ্ট বা নরমাল অসুস্থ্য হবার শংকা হলে গোসলের বিধান রহিত হবে না। কষ্ট হলেও গোসল করেই সালাত পড়তে হবে।

وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيلٍ حَتَّىٰ تَغْتَسِلُوا ۚ وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَفُوًّا غَفُورًا [٤:٤٣]

আর (নামাযের কাছে যেও না) ফরয গোসলের আবস্থায়ও যতক্ষণ না গোসল করে নাও। কিন্তু মুসাফির অবস্থার কথা স্বতন্ত্র আর যদি তোমরা অসুস্থ হয়ে থাক কিংবা সফরে থাক অথবা তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি প্রস্রাব-পায়খানা থেকে এসে থাকে কিংবা নারী গমন করে থাকে,কিন্তু পরে যদি পানিপ্রাপ্তি সম্ভব না হয়, তবে পাক-পবিত্র মাটির দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-তাতে মুখমন্ডল ও হাতকে ঘষে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ক্ষমাশীল। [সূরা নিসা-৪৩]

أَنَّ عَمْرَو بْنَ العَاصِ: ” أَجْنَبَ فِي لَيْلَةٍ بَارِدَةٍ، فَتَيَمَّمَ وَتَلاَ: {وَلاَ تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا} [النساء: 29] فَذَكَرَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ يُعَنِّفْ

বর্ণিত আছে যে,এক শীতের রাতে আমর ইবনুল আস (রা) জুনুবী হয়ে পড়লে তায়াম্মুম করলেন। আর (এ প্রসঙ্গে) তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করলেনঃ তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু। (৮:২৯) [সহীহ বুখারী-১/৪৯]

তাই কেউ যদি পানি ব্যবহারে অক্ষম হয় পানি না থাকার কারণে কিংবা পানি থাকলেও এর ব্যবহারে রোগের ক্ষতি হতে পারে কিংবা তীব্র ঠাণ্ডার কারণে (তার কাছে পানি গরম করার মত কিছু না থাকলে); তাহলে সে ব্যক্তি পানি দিয়ে গোসল করার পরিবর্তে মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করতে পারেন। এর দলিল হচ্ছে আল্লাহ্র বাণী:

وَإِن كُنتُم مَّرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِّنكُم مِّنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُم مِّنْهُ

 “আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক বা তোমাদের কেউ মলত্যাগ করে আসে বা তোমরা স্ত্রী সহবাস কর এবং পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬] এ আয়াতে দলিল রয়েছে যে, অসুস্থ ব্যক্তি পানি ব্যবহার করার ফলে যদি তার মৃত্যু ঘটা, কিংবা রোগ বেড়ে যাওয়া কিংবা আরোগ্য লাভ বিলম্ব হওয়ার আশংকা থাকে সেক্ষেত্রে তিনি তায়াম্মুম করবেন।

আমর বিন আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: ‘যাতুস সালাসিল’ এর অভিযানে এক ঠাণ্ডার রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়ে গেল। আমি আশংকা করলাম, আমি যদি গোসল করি তাহলে ধ্বংস হয়ে যাব। তাই আমি তায়াম্মুম করলাম। এরপর আমার সাথীদেরকে নিয়ে ফজরের নামায আদায় করলাম। আমার সাথীরা বিষয়টি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে উল্লেখ করলে তিনি বললেন: হে আমর! তুমি কি জুনুবী (গোসল ফরজ হওয়া) অবস্থায় তোমার সাথীদের নিয়ে নামায পড়েছ? তখন আমি তাঁকে জানালাম কি কারণে আমি গোসল করিনি এবং আমি আরও বললাম: আমি শুনেছি আল্লাহ্ বলেন: ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি দয়ালু’ [সূরা নিসা, আয়াত: ২৯] তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেসে দিলেন, কোন কিছু বললেন না।[সুনানে আবু দাউদ (৩৩৪), আলবানী ‘সহিহ সুনানে আবু দাউদ’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]

হাফেয ইবনে হাজার বলেন: এ হাদিসে দলিল রয়েছে যে, পানি ব্যবহার করলে যে ব্যক্তি মারা যাওয়ার আশংকা রয়েছে; সেটা ঠাণ্ডার কারণে হোক কিংবা অন্য কোন কারণে হোক তার জন্য তায়াম্মুম করা জায়েয। তায়াম্মুমকারীর জন্য ওজুকারীদের ইমাম হওয়াও জায়েয।[ফাতহুল বারী (১/৪৫৪)]

শাইখ আব্দুল আযিয বিন বায (রহঃ) বলেন:

যদি আপনার পক্ষে গরম পানি সংগ্রহ করা সম্ভব হয় কিংবা আপনি গরম করতে পারেন কিংবা প্রতিবেশি বা অন্য কারো থেকে কিনে নিতে পারেন তাহলে সেটা করা আপনার উপর আবশ্যকীয়। কেননা আল্লাহ্ বলেন: “তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্কে ভয় কর।”[সূরা তাগাবুন, আয়াত: ১৬] তাই আপনার কর্তব্য হচ্ছে পানি কেনা বা গরম করা কিংবা অন্য যেভাবে শরিয়তের বিধান মোতাবেক ওজু করা যায় সেটা করা। যদি আপনি অপারগ হন এবং ঠাণ্ডা অতি তীব্র হয়, পানি ব্যবহারে বিপদ ঘটার আশংকা থাকে, পানি গরম করা বা আশপাশে কারো থেকে গরম পানি কেনার কোন উপায় না থাকে সেক্ষেত্রে আপনার ওজর গ্রহণযোগ্য এবং তায়াম্মুম করাই আপনার জন্য যথেষ্ট। যেহেতু আল্লাহ্ বলেছেন: “তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহ্কে ভয় কর” এবং তিনি আরও বলেছেন: “পানি না পাও তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবে: তা দ্বারা মুখমণ্ডল ও হাত মাসেহ করবে।”[সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬]

যে ব্যক্তি পানি ব্যবহারে অক্ষম সে ব্যক্তির হুকুম যে ব্যক্তি পানি পায়নি তার হুকুমের অনুরূপ।[মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায (১০/১৯৯-২০০)]

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!

প্রশ্নেলিখিত বর্ণনানুপাতে আপনি যদি প্রকৃতপক্ষেই এমন অসুস্থ হন যে, কোন দ্বীনদার ডাক্তার আপনাকে গোসল করতে নিষেধ করছেন ,অন্যথায় আপনার গুরতর অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে,তাহলে আপনার জন্য তায়াম্মুম করা জায়েয আছে। তবে আপনি আপনার শরীরের যতটুকু ধৌত করতে পারেন ততটুকু ধৌত করা আপনার উপর আবশ্যকীয়। যেমন- হাতদ্বয়, পাদ্বয় ইত্যাদি ধৌত করা; যদি এতে আপনার কোন ক্ষতির আশংকা না থাকে। এরপর আপনি তায়াম্মুম করবেন। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...