بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
وَابْتَلُوا الْيَتَامَىٰ حَتَّىٰ
إِذَا بَلَغُوا النِّكَاحَ فَإِنْ آنَسْتُم مِّنْهُمْ رُشْدًا فَادْفَعُوا
إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ ۖ وَلَا تَأْكُلُوهَا إِسْرَافًا وَبِدَارًا أَن
يَكْبَرُوا ۚ وَمَن كَانَ غَنِيًّا فَلْيَسْتَعْفِفْ ۖ وَمَن كَانَ فَقِيرًا فَلْيَأْكُلْ
بِالْمَعْرُوفِ ۚ فَإِذَا دَفَعْتُمْ إِلَيْهِمْ أَمْوَالَهُمْ فَأَشْهِدُوا
عَلَيْهِمْ ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّهِ حَسِيبًا
‘পিতৃহীনদেরকে পরীক্ষা করতে থাকো, যে পর্যন্ত না তারা বিবাহযোগ্য হয়। অতঃপর তাদের মধ্যে ভালো-মন্দ
বিচারের জ্ঞান দেখলে, তাদের সম্পদ তাদেরকে ফিরিয়ে দাও। তারা বড়
হয়ে যাবে বলে অপচয় করে ও তাড়াতাড়ি করে তা ভক্ষণ করো না। যে অভাবমুক্ত, সে যেন যা অবৈধ তা থেকে নিবৃত্ত থাকে এবং যে বিত্তহীন, সে যেন সঙ্গত পরিমাণে ভোগ করে। আর তোমরা যখন তাদেরকে তাদের সম্পদ সমর্পণ করবে,
তখন তাদের ওপর সাক্ষী রেখো। হিসাব গ্রহণে আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা নিসা,
আয়াত-৬)
ইসলাম মানবকল্যাণের ধর্ম। ইসলামী সমাজদর্শন
চায় মানবসমাজকে দয়া-মায়া-মমতা ভালোবাসার ডোরে আবদ্ধ করে একটি সুখীসমৃদ্ধ কল্যাণকামী
সমাজ গঠন করতে। ইসলাম এতিম অসহায় শিশুর অধিকারের ব্যাপারে পবিত্র কোরআন, হাদিস
ও ফিকহের কিতাবে জোর তাগিদ দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, প্রশাসনিকভাবে
তাদের অধিকার সংরক্ষণের ভিত্তি রচিত করেছে। বাংলা অভিধান অনুযায়ী মাতৃ-পিতৃহীন বালক-বালিকাকে
এতিম বলে। ইসলামের দৃষ্টিতে এমন শিশুকে এতিম বলা হয় যার পিতা মারা গেছে। প্রাপ্তবয়স্ক
হওয়া পর্যন্ত সে এতিম হিসাবে গণ্য হবে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তাকে আর এতিম বলা হবে
না। হানজালা ইবনে হুযাইম আল হানাফী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, স্বপ্নদোষ
হলে কোনো ছেলে শিশু এতিম থাকে না আর ঋতুস্রাব হলে কোনো মেয়ে শিশু এতিম থাকে না। (সিলসিলা
সহিহাহ, পৃষ্ঠা-৩১৮০) অর্থাৎ ছেলেদের স্বপ্নদোষ আর মেয়েদের ঋতুস্রাব
হওয়া প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার অন্যতম আলামত। এই আলামত পাওয়া গেলে ইসলামের দৃষ্টিতে তাদেরকে
এতিম বলা যাবে না। আবার যে শিশুর মা মারা গেছে আর বাবা বেঁচে আছে তাকে ইসলামের দৃষ্টিতে
এতিম বলা হবে না। মা বর্তমান থাকা অবস্থায় অনেক সম্পত্তি থাকলেও বাবার মৃত্যুতে সেই
সন্তান এতিম হিসেবেই গণ্য হবে।
আমাদের প্রিয়নবী হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুকালে এতিম ছিলেন। জন্মের পূর্বেই পিতাকে হারান। তিনি সারাটি
জীবন সমাজের এতিম অসহায়দের জন্য কাজ করেছেন। আল্লাহ বলেন,
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْيَتَامَىٰ ۖ
قُلْ إِصْلَاحٌ لَّهُمْ خَيْرٌ
‘তারা তোমাকে এতিম সম্পর্কে জিজ্ঞেস
করে। বলে দাও, তাদের ইসলাহ তথা সুব্যবস্থা (পুনর্বাসন) করা উত্তম...।’
(সুরা বাকারা, আয়াত-২২০)
এতিমের সাথে কঠোর ও রূঢ় আচরণ ইসলামে
নিষিদ্ধ। আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন,
فَأَمَّا الْيَتِيمَ فَلَا تَقْهَرْ
‘(হে নবী) আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না।’ (সুরা দুহা, আয়াত-৮) এতিমদের প্রতি যে সম্পদ ব্যয় করবে তা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই
হওয়া উচিত। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও
(আল্লাহর ভালোবাসায়) অভাবী, এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে।
(এবং তারা বলে) শুধু আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদের আহার্য দান করি। বিনিময়ে
তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না।’ (সুরা দাহর, আয়াত-৮,
৯)
সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী জান্নাতে
এভাবে থাকব [তিনি তর্জনী ও মধ্য অঙ্গুলি দিয়ে ইঙ্গিত করেন এবং এ দুটির মধ্যে তিনি সামান্য
ফাঁক করেন]।’ (বুখারি, হাদিস নং- ৫৩০৪) এতিমের সাহায্যকারী মর্যাদা
সম্পর্কে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, ‘বিধবা, এতিম ও গরিবের সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর পথে
মুজাহিদের সমতুল্য। অথবা তার মর্যাদা সেই (নামাজের জন্য) রাত জাগরণকারীর মতো,
যে কখনো ক্লান্ত হয় না। অথবা তার মর্যাদা সেই রোজাদারের মতো,
যে কখনো ইফতার (রোজা ভঙ্গ) করে না।’ (মুসলিম, হাদিস
নং- ৫২৯৫) এতিমের প্রতিপালন জান্নাতে যাওয়ার একটি সহজ উপায়। হাদিস শরিফে এসেছে,
‘যে ব্যক্তি কোনো এতিমকে আপন মাতা-পিতার সঙ্গে নিজেদের (পারিবারিক) খাবারের
আয়োজনে বসায় এবং (তাকে এই পরিমাণ আহার্য দান করে যে) সে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করে,
তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।’ (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং-১৮২৫২) অন্যত্র নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ
করেছেন, ‘মুসলিমদের ওই বাড়িই সর্বোত্তম, যে বাড়িতে এতিম আছে এবং তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা হয়। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট
ওই বাড়ি, যে বাড়িতে এতিম আছে অথচ তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা
হয়।’ অতঃপর তিনি তাঁর অঙ্গুলির মাধ্যমে বলেন, ‘আমি ও এতিম প্রতিপালনকারী
জান্নাতে এমনভাবে অবস্থান করব।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-৩৬৭৯)
প্রশ্নকারী প্রিয় দ্বীনি ভাই / বোন!
১.ইয়াতিমের জন্য যদি কেউ কোন টাকা দেয়, তাহলে তা হতে তার প্রয়োজন পুরণার্থে ব্যয় করা যাবে। যেমন তার জামা
বানানো ইত্যাদী।
২. আপনার মেয়েকে যা কিনে দেন তাকেও তা
কিনে দেওয়া আবশ্যক নয়। তবে যদি আপনার সামর্থ থাকে, তাহলে তা তাকে দিতে পারেন , এবং এতে আপনি উত্তম প্রতিদান
পাবেন ইনশাআল্লাহ।
৩.আপনাদের সামর্থ অনুযায়ী তার ভরণ পোষন
দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তার সাথে মন্দ আচরণ করা যাবে না। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোন কিছু
দেওয়া আপনাদের জন্য আবশ্যক নয়। তবে দয়া পর্বশ হয়ে যদি অতিরিক্ত দেন, তাহলে আরো উত্তম সওয়াবের অধিকারী হবেন ইনশাআল্লাহ।