আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
137 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (107 points)
আসসালামু 'আলাইকুম।


আমাদের অনেক সময় এমন হয় যে আমরা ইলম অর্জন করছি,করার পর বুঝতে পারি পূর্বের সালাত আমার হয়নি,বা পূর্বের রোযা হয়নি।কারণ এতদিন আমি সেই রোযা/সালাত ভংগের বিষয়টা জানতাম না,সেক্ষেত্রে কি সেসব আবার পুরা করতে হবে?

যেমন আমার আহলিয়া পিরিয়ডের ব্যাপারে মাসলা জানার পর বা আমি ফরজ গোসলের মাসলা জানার পর,কাপড় পরিষ্কারের মাসলা জানার পর বুঝতে পারি পূর্বের অনেক নামাজ গোসল হয়নি,এখন সেসব কি করণীয়?

যদি পুনরায় আদায় করতে হয়, বিষয়টা অনেক জটিল হবে কারণ হিসাব করাত সম্ভবনা,আন্দাজ মত করাও কঠিন।সঠিক দিক নির্দেশনা দিবেন প্লিজ।

1 Answer

+1 vote
by (52,710 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

নামাজ পড়া ফরজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوا مَعَ الرَّاكِعِينَ

আর নামায কায়েম কর, যাকাত দান কর এবং নামাযে অবনত হও তাদের সাথে, যারা অবনত হয়। ( সূরা বাকারা, আয়াত ৪৩)

অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা বলেন-

فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ

অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন। (সূরা কাউসার, আয়াত ২)

যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় নামাজ ত্যাগ করে তার থেকে (আল্লাহর ) যিম্মদারি উঠে যায়।

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ أَوْصَانِي خَلِيلِي ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَنْ " وَلاَ تَتْرُكْ صَلاَةً مَكْتُوبَةً مُتَعَمِّدًا فَمَنْ تَرَكَهَا مُتَعَمِّدًا فَقَدْ بَرِئَتْ مِنْهُ الذِّمَّةُ وَلاَ تَشْرَبِ الْخَمْرَ فَإِنَّهَا مِفْتَاحُ كُلِّ شَرٍّ " .

আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার প্রিয় বন্ধু (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

আমাকে এই উপদেশ তুমি স্বেচ্ছায় ফরয নামায ত্যাগ করো না। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় তা ত্যাগ করে তারথেকে (আল্লাহর ) যিম্মদারি উঠে যায়। তুমি মদ্যপান করো না। কেননা তা সর্বপ্রকার অনিষ্টের চাবিকাঠি। (সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০৩৪)

রমজানের রোজা রাাখা ফরয।

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)

  হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حِينَ قَفَلَ مِنْ غَزْوَةِ خَيْبَرَ فَسَارَ لَيْلَةً حَتَّى إِذَا أَدْرَكَنَا الْكَرَى عَرَّسَ وَقَالَ لِبِلاَلٍ " اكْلأْ لَنَا اللَّيْلَ " . قَالَ فَغَلَبَتْ بِلاَلاً عَيْنَاهُ وَهُوَ مُسْتَنِدٌ إِلَى رَاحِلَتِهِ فَلَمْ يَسْتَيْقِظِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَلاَ بِلاَلٌ وَلاَ أَحَدٌ مِنْ أَصْحَابِهِ حَتَّى إِذَا ضَرَبَتْهُمُ الشَّمْسُ فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَوَّلَهُمُ اسْتِيقَاظًا فَفَزِعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ " يَا بِلاَلُ " . فَقَالَ أَخَذَ بِنَفْسِي الَّذِي أَخَذَ بِنَفْسِكَ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ فَاقْتَادُوا رَوَاحِلَهُمْ شَيْئًا ثُمَّ تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم وَأَمَرَ بِلاَلاً فَأَقَامَ لَهُمُ الصَّلاَةَ وَصَلَّى بِهِمُ الصُّبْحَ فَلَمَّا قَضَى الصَّلاَةَ قَالَ " مَنْ نَسِيَ صَلاَةً فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى قَالَ { أَقِمِ الصَّلاَةَ لِلذِّكْرَى } " .

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খায়বার যুদ্ধ হতে প্রত্যাবর্তনের একরাতে বিরতিহীনভাবে সফর করতে থাকলে আমাদের ক্লান্তি ভাব দেখা দেয়। ফলে শেষ রাতে তিনি যাত্রা বিরতি করেন এবং বিলাল (রাঃ)–কে বলেনঃ তুমি জেগে থাকবে এবং রাতের দিকে লক্ষ্য রাখবে। কিন্তু বিলাল (রাঃ)–ও নিদ্রাকাতর হয়ে তার উটের সাথে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ফলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) , বিলাল এবং তাঁর সহাবীদের কারোরই ঘুম ভাঙ্গল না। অতঃপর সূর্যের তাপ তাদের গায়ে এসে পড়লে সর্বপ্রথম রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জাগলেন। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অস্থির হয়ে বললেনঃ কী হলো বিলাল! বিলাল বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! যে সত্তা আপনাকে অচেতন রেখেছেন, আমাকেও তিনিই অচেতন রেখেছেন। অতঃপর তারা নিজেদের বাহন নিয়ে কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উযু করলেন এবং বিলালকে নির্দেশ করলে বিলাল ইক্বামাত দিলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সকলকে নিয়ে ফাজ্রের সলাত আদায় শেষে বললেনঃ কেউ সলাত আদায় করতে ভুলে গেলে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই উক্ত সলাত আদায় করে নেয়। কেননা আল্লাহ্ বলেন, “আমার স্মরণার্থে সলাত প্রতিষ্ঠা কর।” (সূরাহ ত্বাহা, ১৪) [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং- ৪৩৫]

অধিক কাযা নামাজ তারতীবকে রহিত করে দেয়। ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াতে আছে-

حتي ترك صلاة شهر ثم قضي ثلاثين فجر ثم ثلاثين ظهرا ثم هكذا صح

মর্মার্থ: কারোর যদি এক মাসের নামাজ কাযা হয়ে যায়। অত:পর সে ত্রিশ দিনের ফজরের নামাজ কাযা করে তারপর জহর…তাহলে তা সহীহ আছে। ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/১৮৩

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

১. প্রতিদিন বা মাঝে মধ্যে  কিছু কিছু করে কাযা আদায় করলে  আর বিষয়টি কঠিন হবে না। তারপর যখন মন সাক্ষ্য দিবে যে, আর কোনো নামাজ, রোজা কাযা আদায় করতে বাকী নেই তখন  আর কাযা আদায় করা লাগবে না।

২. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে বালেগ হওয়ার পর থেকে আন্দাজ করার পর যত নামাজ, রোজা হয়নি বলে ধারণা হয় সেগুলোর কাযা আদায় করবেন। নিয়ত এভাবে করবেন যে, ‘আমি জীবনের সর্ব প্রথম ফজরের নামাজের কাযা আদায় করছি।’ আবার নিয়ত করবেন ‘আমি জীবনের সর্ব প্রথম ফজরের নামাজের কাযা আদায় করছি।’ এভাবে সব ফজর নামাজগুলোর কাযা আদায় করবেন। এভাবে নিয়ত করার কারণ হলো যখন আপনি জীবনের সর্ব প্রথম ফজরের নামাজের কাযা আদায় করে ফেলবেন তখন অটোমেটিক জীবনের দ্বিতীয় ফজরের নামাজ প্রথমে হয়ে যাচ্ছে।

এভাবে জহর, আসর, মাগরীব, ইশা ও বেতরের নামাজ কাযা আদায় করবেন।

তেমনীভাবে রোজার নিয়ত করে কাযা আদায় করবেন অর্থাৎ এভাবে নিয়ত করবেন ‘আমি জীবনের সর্ব প্রথম রোজার কাযা আদায় করছি।’


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...