بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
শরীয়তের
বিধান হলোঃ দেনমোহর বিয়ের আকদের পর প্রদান করাতে কোন সমস্যা নেই। তবে সহবাসের পূর্বে
প্রদান করাই উত্তম। তবে যদি স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়াই সহবাসের অনুমতি প্রদান
করে তাহলে কোন সমস্যা নেই। বাকি স্ত্রী দেনমোহর প্রদান করা ছাড়া প্রথম সহবাসের পূর্বে
বাঁধা প্রদান করতে পারবে। কিন্তু একবার সহবাস হয়ে গেলে আর বাঁধা দিতে পারবে না। কিন্তু
স্বামীর জিম্মায় দেনমোহর আদায় না করলে তা ঋণ হিসেবে বাকি থেকে যাবে।স্ত্রী যদি উক্ত
দেনমোহর মাফ না করে, আর স্বামীও
তা পরিশোধ না করে, তাহলে কিয়ামতের ময়দানে স্বামীর অপরাধী সাব্যস্ত
হবে। তাই দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করে দেয়া জরুরী।
আল্লাহ
তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
واحل لكما ما وراء ذلكم ان تبتغوا باموالكم محصنين غير مسافحين
فما استمتعتم به منهن فاتوهن اجورهن فريضة ولا جناح عليكم فيما تراضيتم به من بعد
الفريضة ان الله كان عليما حكيما
উল্লিখিত
নারীরা ছাড়া অন্যদেরকে তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, যে স্বীয় সম্পদ দ্বারা প্রয়াসী হবে তাদের
সাথে বিবাহবন্ধনে, ব্যভিচারে নয়। অতএব তাদের নিকট থেকে তোমরা
যে আনন্দ উপভোগ করেছ (সে কারণে) তাদের ধার্যকৃত মোহর তাদেরকে প্রদান করবে। আর মোহর
নির্ধারিত থাকার পরও কোনো বিষয়ে পরস্পর সম্মত হলে তাতে তোমাদের কোনো অপরাধ হবে না।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।-সূরা নিসা : ২৪
وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ الْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُحْصَنَاتُ مِنَ
الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ إِذَا آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ
[٥:٥]
তোমাদের
জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমান নারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে,
যখন তোমরা তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর। [সূরা মায়িদা-৫]
وَلَا جُنَاحَ عَلَيْكُمْ أَن تَنكِحُوهُنَّ إِذَا
آتَيْتُمُوهُنَّ أُجُورَهُنَّ [٦٠:١٠]
তোমরা, এই নারীদেরকে প্রাপ্য মোহরানা দিয়ে বিবাহ করলে
তোমাদের অপরাধ হবে না। [সূরা মুমতাহিনা-১০]
মোহরের
পরিমাণ : সকলের ঐক্যমত অনুযায়ী মোহরের কোন নির্দিষ্ট ঊর্ধ্বসীমা নেই। কেননা কুরআন-হাদীসের
এমন কোন প্রমাণ নেই যা এ ব্যাপারে নির্দেশ করে। ইমাম শাওকানী বলেন, ‘‘মোহরের আধিক্যের সীমা না থাকার ব্যাপারে ইজমা
সাব্যস্ত হয়েছে।’’
ইরশাদ
হয়েছে, وَإِنْ أَرَدتُّمُ اسْتِبْدَالَ زَوْجٍ مَّكَانَ زَوْجٍ
وَآتَيْتُمْ إِحْدَاهُنَّ قِنْطَاراً فَلاَ تَأْخُذُواْ مِنْهُ شَيْئاً ‘‘তোমরা যদি এক
স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী গ্রহণ করা স্থির কর এবং তাদের
একজনকে অগাধ অর্থও দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে কিছুই প্রতিগ্রহণ করো না।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ২০)। এ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মোহরের সর্বোচ্চ কোন সীমা নেই।
একদা
উমার (রা) খুতবায় ৪০০ দিরহামের বেশি মোহর নির্ধারণ করতে নিষেধ করে বলেন, তোমরা মোহর নির্ধারণের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করবে
না। কেননা যদি তা পার্থিব জীবনে সম্মানের বস্ত্ত হত অথবা আল্লাহর নিকট তাকওয়ার বস্ত্ত
হত, তবে তা পাওয়ার যোগ্যতম ব্যক্তি হতেন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তিনি তাঁর কোন স্ত্রীর এবং তাঁর কোন কন্যার জন্য বার উকিয়ার বেশী
মোহর ধার্য করেননি। মিম্বর থেকে নামার পর জনৈক কুরাইশী মহিলা তাঁকে বলল, হে উমার! এটা আপনার এখতিয়ারভুক্ত কোন বিষয় নয়। উমার (রা) বললেন, কেন? মহিলাটি বলল, কারণ আল্লাহ
বলেছেন, ‘‘যদি তাদের একজনকে অগাধ অর্থও দিয়ে থাক, তবুও তা থেকে কিছুই প্রতিগ্রহণ করবে না। তোমরা কি মিথ্যা অপবাদ এবং প্রকাশ্য
পাপাচরণ দ্বারা তা গ্রহণ করবে।’’ (সূরা আন নিসা, আয়াত ২০) এ কথা
শুনে উমার (রা) বলেন, একজন মহিলা সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে এবং
একজন পুরুষ ভুল করেছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে, উমার (রা) বলেন,
হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা কর। সবাই উমারের চেয়ে বেশী জ্ঞানী। অতঃপর তিনি
পুনরায় মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি তোমাদেরকে স্ত্রীদের মোহর ৪০০
দিরহামের বেশী ধার্য করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্তু যে ব্যক্তি তার সম্পদ থেকে যত খুশী
স্ত্রীকে প্রদান করতে চায় (সে যেন তা প্রদান করে)।
তবে
মোহর বেশী নির্ধারণ না করাই উত্তম। ইমাম শাওকানী বলেন, ‘‘কারণ মোহরের পরিমাণ কম হলে বিয়ে করা কঠিন
হবে না। ফলে এতে কাঙ্খিত বিয়ের সংখ্যা বাড়বে, গরীবরাও বিয়ে করতে
সমর্থ হবে এবং বংশ বিস্তার লাভ করবে, যা বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য।
পক্ষান্তরে মোহর যদি বেশী হয় তাহলে বড় লোকেরা ছাড়া অন্যরা বিয়ে করতে সমর্থ হবে না।
ফলে সংখ্যাধিক্য গরীবরা অবিবাহিত থেকে যাবে। এতে মুসলিম উম্মাহর সংখ্যাধিক্যতা অর্জিত
হবে না, যে ব্যাপারে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
দিকনির্দেশা প্রদান করেছেন।’’
রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে লোহার আংটি ও কুরআনের আয়াত শিক্ষা দানকে
মোহর নির্ধারণ করা হয়েছিল। আলী (রা) ফাতিমা (রা)-কে একটি বর্ম মোহর হিসেবে প্রদান করে
বিয়ে করেন।
বিখ্যাত
তাবেঈ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়িব এক ইলমের মজলিসে তার ছাত্রের সাথে মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য
তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমার নিকট
কি আছে? সে বলল, আমার নিকট মাত্র ১ দিরহাম
আছে। সাঈদ বললেন, আমি এক দিরহামের বিনিময়ে আমার মেয়ের সাথে তোমার
বিয়ে দিলাম।
মোহরের
নিম্নসীমা নিয়ে ইমামদের
মতামত:
১। হানাফীদের
মতে, মোহরের সর্বনিম্ন সীমা ১০
দিরহাম। এর প্রমাণ এ হাদীসটি- ‘‘১০ দিরহামের কমে মোহর নেই।’’ ইমাম শাওকানী বলেন,
‘‘যদি এই হাদীসটি সহীহ হত তাহলে তা পূর্বোল্লেখিত যেসব হাদীসে মোহরের
পরিমাণ এর চেয়ে কম হতে পারে বলে নির্দেশ করা হয়েছে, সেগুলোর বিরোধী
হত। কিন্তু এই হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়। এ হাদীসে মুবাশশির বিন আবীদ ও হাজ্জাজ বিন আরতাআহ
নামে দু’জন দুর্বল বর্ণনাকারী রয়েছে। হাজ্জাল মুদাললিস এবং মুবাশশির পরিত্যক্ত বর্ণনাকারী
হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেছে।’’
২। মালেকীদের
মতে, মোহরের সর্বনিম্ন পরিমাণ হচ্ছে
১/৪ দীনার অথবা তিন দিরহাম অথবা সমমূল্যের ব্যবসায়ী পণ্য।
৩। শাফেঈ
ও হাম্বলীদের মতে, মোহরের কোন
সর্বনিম্ন সীমা নেই। তাদের মতে, যে জিনিসের মূল্য রয়েছে তা মোহর
হিসেবে গণ্য হতে পারে। আর যে জিনিস মূল্যহীন তা মোহর হতে পারে না। ইমাম শাওকানী এ মতটিকে
প্রাধান্য দিয়েছেন।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
মোহরের সুনির্দিষ্ট
কোন পরিমাণ নেই। তা কমও হতে পারে। আবার বেশিও হতে পারে। পারস্পরিক সমঝোতা এবং সামর্থ্যের
উপর ভিত্তি করে মোহর কম-বেশী হতে পারে। শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভী বলেন, ‘‘নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মোহরের এমন নির্দিষ্ট পরিমাণ নির্ধারণ
করেননি যার কম বা বেশি মোহর নির্ধারণ করা চলবে না। কারণ এ ব্যাপারে লোকদের আগ্রহ প্রকাশ
করার রেওয়াজ ও অভিরুচি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। তাছাড়া চাহিদার ক্ষেত্রেও লোকদের স্তর
রয়েছে। এজন্য তাদের জন্য মোহরের পরিমাণ নির্দিষ্ট করা সম্ভব নয়। যেমন কাঙ্খিত পণ্যের
নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করা অসম্ভব। মোহরের পরিমাণ এমন হওয়া উচিত যা আদায় করার জন্য
প্রয়াস চালাতে হয় এবং তার একটা মূল্য থাকে। আর এমন পরিমাণ হওয়া উচিত নয় যা সাধারণত
লোকদের চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী আদায় করা কষ্টসাধ্য হবে। এটাই মোহরের ক্ষেত্রে রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যে রীতি রয়েছে তার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।’’