আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
406 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (4 points)
আমার দাদু জিনিস পএ আর বিভিন্ন কারণে আমার আম্মুর সাথে রাগারাগি করে এতে করে আম্মু তার দোষ টা দেখিয়ে দিলে,আম্মুকে বদদোয়া করে এই বদদোয়ার কারণে কি আম্মুর কোন ক্ষতি হবে? বা আমাদের? আম্মু চেষ্টা করে কথা না বলতে কিন্তু দাদুর বিহেভিয়ার এর কারণে 5 টাতে একটা না বলে থাকতে পারে না, এপ্রসঙ্গ এ আম্মুর করনিয় কি?

1 Answer

0 votes
by (61,230 points)

بسم الله الرحمن الرحيم

উত্তরঃ হাদীস শরীফে এসেছে,

عن أبي هريرة قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده

অনুবাদঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলমান তো সেই ব্যক্তি ব্যক্তি যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্যান্য মুসলমান নিরাপদ থাকে………।( সুনানে তিরমিজী- ২৬২৭নং হাদীস, সুনানে আবু দাউদ- ২৪৮১নং হাদীস)

সুতরাং কোন মুসলমানের জন্য এমন কোন কাজ করা শোভনীয় নয়, যাতে অপর কোন মুসলমান কষ্ট পায়। কখনো যদি নিজরে অজান্তে কাউকে কষ্ট দিয়ে ফেলে তাহলে তা বুঝার সাথে সাথে তার কাছ থেকে মাফ চেয়ে নেয়া উত্তম চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। তেমনিভাবে কারো কাছ থেকে কোন জুলুমের শিকার হলে তাকে ক্ষমা করে দেয়াই মহৎ চরিত্রের পরিচায়ক। হাদীসে পাকে এসেছে-

..فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَخْبِرْنِي بِفَوَاضِلِ الْأَعْمَالِ فَقَالَ يَا عُقْبَةُ صِلْ مَنْ قَطَعَكَ وَأَعْطِ مَنْ حَرَمَكَ وَأَعْرِضْ عَمَّنْ ظَلَمَكَ

অনুবাদঃ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করো, যে তোমাকে বঞ্চিত করে, তুমি তাকে তুষ্ট করো, যে তোমার প্রতি জুলুম করে, তুমি তার সাথে উত্তম ব্যবহার (ক্ষমা) করো। মুসনাদে আহমদ- ১৭৩৩৪ নং হাদীস।

এছাড়া নবীজি ও সাহাবা কেরাম রা.-এর চরিত্রের মাঝে ক্ষমার গুণ অনেক বেশি পরিলক্ষিত হয়। তাই এই মহৎ গুনে নিজেদের সুসজ্জিত করা উচিত।

কাউকে অভিশাপ দেয়া মুমিনের জন্য শোভা পায় না। অন্য হদীসে এসেছে,

سالم عن ابن عمر قال : قال النبي صلى الله عليه وسلم : لا يكون المؤمنلعانا .

অনুবাদঃ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুমিন কখনো অভিসম্পাদকারী হয় না। সুনানে তিরমিযি-২০৮৮ নং হাদীস।

অন্যত্র এরশাদ হয়েছে,

عن سمرة بن جندب قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم لا تلاعنوا بلعنة الله ولا بغضبه ولا بالنار

অনুবাদঃ রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনতোমরা পরষ্পরে আল্লাহর লা’নত, তার গজব ও  জাহান্নামের অভিশাপ দিবে না। সুনানে তিরমিযি-১৯৮৬

অভিশাপকারী আখেরাতেও মর্যাদা পাবে না। এ ব্যাপারে রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন অভিশাপকারীরা সুপারিশ করতে পারবে না। এবং সাক্ষ্যপ্রদানও করতে পারবে না। সহীহ মুসলিম-২৫৯৮ নং হাদীস।

উমর ইবনুল খত্ত্বাব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তির নাম ছিল ‘আবদুল্লাহ, কিন্তু তাকে ‘হিমার’ (গাধা) উপাধিতে ডাকা হতো। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে হাসাতো। একদিন মদপানের অপরাধের জন্য নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ওপর দণ্ড প্রয়োগ করেছিলেন। এরপর আবার একদিন তাকে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আনা হলে তিনি তাকে চাবুক মারার নির্দেশ করলেন। তখন এক ব্যক্তি বলে উঠল, হে আল্লাহ, এই লোকের উপর তোমার অভিসম্পাত হোক। কতবারই না তাকে এ অপরাধে আনা হল!

তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

«لَا تَلْعَنُوْهُ فَوَ اللهِ مَا عَلِمْتُ أَنَّه يُحِبُّ اللّٰهَ وَرَسُوْلَه»

তাকে অভিশাপ দিও না। আল্লাহর শপথ! আমি তার সম্পর্কে জানি যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে ভালোবাসে।” (বুখারী)

এ সকল হাদীস দ্বারা এ কথা সহজেই অনুমেয় হয় যে, অন্যায়ভাবে কাউকে অভিশাপ দেয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিশাপ ও অভিশাপকারীকে পছন্দ করেননি।

অন্য হাদীসে এসেছে,

عن ابن عباس أن رجلا لعن الريح عند النبي صلى الله عليه و سلم فقال لا تلعن الريح فإنها مأمورة وإنه من لعن شيئا ليس له بأهل رجعت اللعنة عليه

অনুবাদঃ …….ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিতঃ এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাতাসকে লানত দিল, তখন নবীজি বললেন, বাতাসকে লা’নত দিও নাকেননা এ তো আল্লাহরপক্ষ থেকে নির্দেশিত। কউে যদি কোন বস্তুকে লা’নত দেয়আর সে যদি ঐ লা’নতের পাত্র না হয়, তাহলে সেই লানত লানতকারীর দিকেই ফিরে আসে। সুনানে তিরমিযি-১৯৭৮ নং হাদীস। সুনানে আবু দাউদ-২/২৭৬

এ সকল হাদীস থেকে বুঝা গেল যে মন থেকে লা’নত বা অভিশাপ দিবে সে যদি এই অভিশাপের উপযুক্ত না হয়, তাহলে এই অভিশাপ তার দিকে আসে না বরং অভিশাপকারীর দিকেই প্রত্যাবর্তিত হয় এ জন্য অভিশাপ দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া চাই। যেন অভিশাপ দেয়ার পর নিজেই পাত্র না হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল অনিষ্ট হতে হিফাযত করুন।আমীন!

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!

প্রশ্নেল্লিখিত সুরতে যদি আপনার মা প্রকৃতপক্ষেই কোন দোষ না করে থাকেন তাহলে আপনার মায়ের উপর উক্ত অভিশাপ আসবে না এবং আপনার মায়ের জন্য উচিৎ স্বীয় শশুরকে ক্ষমা করে দেওয়া ও আরো বেশী ধৈর্যধারণ করতঃ নিরব থাকা অথবা ঐ মহূর্তে আপনার দাদুর থেকে কিছু সময় দুরে থাকা যাতে তার কথার প্রতিউত্তর না করতে হয়।আপনার দাদুকেও অভিশাপ দেওয়ার ভয়াবহতা সম্পর্কে বুঝানোর চেষ্টা করা যাতে তিনি তওবা করেন ও এমন গর্হিত কাজ পরবর্তিতে না করেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...