আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
1,922 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (4 points)

আমাদের দেশে অনেক ইমামই নবীজি (ﷺ) - এর নামের ওসিলা দিয়ে দোয়া করেন। এটা কি জায়েজ?

এবং একইসাথে আরেকটা বিষয় যদি জানার ছিলো। মৃত ব্যক্তির ওসিলা দিয়ে দোয়া চাওয়া জায়েজ হবে কি না। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহিমাহুল্লাহ এর কুরআন - সুন্নাহর আলোকে ইসলামি আকিদা  বইতে দেখলাম শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী রহঃ, ইমাম আবু হানিফা রহঃ প্রমুখ মনীষীদের রেফারেন্স উল্লেখ করে বলেছেন যে এমন জায়েজ নেই (দুইটা ছবি দিচ্ছি ওনার বইয়ের)। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকিদা, পৃ. ৪৯৮

কুরআন-সুন্নাহর আলোকে ইসলামী আকিদা, পৃ. ৪৯৯

অথচ আকিদা বিষয়ক আরেকটি প্রসিদ্ধ কিতাব, ইসলামি আকিদা ও ভ্রান্ত মতবাদ, এ দেখলাম সেখানে এটাকে জায়েজ বলা হয়েছে।

এই দুইটা বিষয়ের মধ্যকার বিরোধ সম্পর্কে যদি একটু পরিষ্কার করতেন অনেক উপকৃত হতাম। এবং এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এর মূল আকিদা উল্লেখ করতে আপনার একান্ত মর্জি হয় মুহতারাম।

1 Answer

0 votes
by (59,730 points)
edited by



বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ 

আল্লাহ তায়ালা বলেন –

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجَاهِدُوا فِي سَبِيلِهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

 

হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর, তাঁর নিকট অসিলা অন্বেষন কর এবং তাঁর পথে জেহাদ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা মায়েদা, আয়াত ৩৫)

 

উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) অনাবৃষ্টির সময় আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) এর উসিলা দিয়ে বৃষ্টির জন্য দু’আ করতেন

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ ـ رضى الله عنه ـ كَانَ إِذَا قَحَطُوا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِينَا وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمِّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا. قَالَ فَيُسْقَوْنَ.

 

আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) অনাবৃষ্টির সময় আব্বাস ইবনু আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) এর উসিলা দিয়ে বৃষ্টির জন্য দু’আ করতেন এবং বলতেন, হে আল্লাহ! (প্রথমে) আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উসিলা দিয়ে দোয়া করতাম এবং আপনি বৃষ্টি দান করতেন। এখন আমরা আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাচার উসিলা দিয়ে দু’আ করছি, আপনি আমাদেরকে বৃষ্টি দান করুন। বর্ণনাকারী বলেন, দু’আর সাথে সাথেই বৃষ্টি বর্ষিত হতো। (সহীহ বুখারী ১০১০)  হাদীসের মান: সহিহ হাদীস

 

অন্য এক হাদীসে এসেছে-

عَنْ عُثْمَانَ بْنِ حُنَيْفٍ، أَنَّ رَجُلاً، ضَرِيرَ الْبَصَرِ أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ادْعُ اللَّهَ أَنْ يُعَافِيَنِي . قَالَ " إِنْ شِئْتَ دَعَوْتُ وَإِنْ شِئْتَ صَبَرْتَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكَ " . قَالَ فَادْعُهُ . قَالَ فَأَمَرَهُ أَنْ يَتَوَضَّأَ فَيُحْسِنَ وُضُوءَهُ وَيَدْعُوَ بِهَذَا الدُّعَاءِ " اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيِّ الرَّحْمَةِ إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى لِي اللَّهُمَّ فَشَفِّعْهُ فِيَّ " .

 

উসমান ইবনু হুনাইফ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ এক অন্ধ ব্যক্তি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর নাবী! আমার জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট দুআ করুন, যেন আমাকে তিনি আরোগ্য দান করেন। তিনি বললেনঃ তুমি কামনা করলে আমি দুআ করব, আর তুমি চাইলে ধৈর্য্য ধারণ করতে পার, সেটা হবে তোমার জন্য উত্তম। সে বলল, তাঁর নিকটে দুআ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি তাকে উত্তমভাবে উযূ করার হুকুম করলেন এবং এই দুআ করতে বললেন, “হে আল্লাহ! তোমার নিকট আমি প্রার্থনা করি এবং তোমার প্রতি মনোনিবেশ করি তোমার নাবী, দয়ার নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর (দু’আর) মাধ্যমে। আমি তোমার দিকে ঝুঁকে পড়লাম, আমার প্রয়োজনের জন্য আমার প্রভুর দিকে ধাবিত হলাম, যাতে আমার এ প্রয়োজন পূর্ণ করে দেয়া হয়। হে আল্লাহ! আমার প্রসঙ্গে তুমি তাঁর সুপারিশ ক্ববূল কর”। (সুনানে তিরমিযী ৩৫৭৮) হাদীসের মান: সহিহ হাদীস

 

তাফসীরে রুহুল মায়ানী কিতাবে রয়েছে-

و يحسن التوسل و الاستغاثة بالنبي صلي الله عليه و سلم إلي ربه ولم ينكره احد من السلف و الخلف حتي جاء  ابن تيمية فأنكر ذلك و عدل عن الصراط المستقيم و ابتدع ما لم يقله عالم  وصار بين الأنام مثلة

মর্থার্থ: নবীজীর অসিলা দিয়ে দোয়া করা উত্তম আর এই বিষয়টা পূর্ববর্তী পরবর্তী উলামাদের কেউ ইবনে তাইমিয়া রহ. ব্যতীত  অস্বীকার করেনি আর ইবনে তাইমিয়া রহ. এটা বলার কারণে সিরাতে মুস্তাকীম থেকে দূরে সরে গিয়েছেন এবং এমন বিচ্ছিন্ন মত প্রকাশ করেছেন যা কোনো আলেম এই মত প্রকাশ করেননি তাফসীরে রুহুল মায়ানী, 6/416

ফাতাওয়ায়ে শামীতে রয়েছে-

وقال السبكي يحسن التوسل بالنبي الي ربه ولم ينكره احد من السلف ولا الخلف الا ابن تيمية فابتدع ما لم يقله عالم قبله .

মর্থার্থ: ইমাম সুবুকী বলেন- নবীজীর অসিলা দিয়ে দোয়া করা উত্তম আর এই বিষয়টা পূর্ববর্তী পরবর্তী উলামাদের কেউ ইবনে তাইমিয়া রহ. ব্যতীত  অস্বীকার করেনি ফাতাওয়ায়ে শামী, 6/397

ফাতাওয়ায়ে উসমানীতে উল্লেখ রয়েছে-

بے شک اللہ تعالی سے بلا واسطہ دعا مانگنا بھی جائز ہے ـ لیکن اگر کوئی شخص اس طرح توسل کرے کہ یا اللہ! آپ کا فلاں بندہ آپ کا مقبول بندہ ہے ـ مجھے اس سے محبت ہے اور اس محبت کی بناء پر میں اس کا وسیلہ پیش کر کے آپ سے فلاں چیز مانگتا ہوں ـ تو اس میں بھی کوئی شرعی قباحت نہیں ہے ـ بلکہ اس کے جواز پر قرآن و سنت سے دلائل موجود ہیں ـ

মর্থার্থ: নি:সন্দেহে আল্লাহ তায়ালার কাছে কোনো মাধ্যম ছাড়া দোয়া করা জায়েজ কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি এভাবে দোয়া করে যে, ‘আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আপনার একজন প্রিয় বান্দা তার সাথে আমার মহাব্বত আছে মহাব্বতের উপর ভিত্তি করে আমি তাকে অসিলা বানিয়ে তোমার কাছে অমুক জিনিস চাচ্ছিতো এভাবে দোয়া করার মধ্যে কোনো শরয়ী নিষেধাজ্ঞা নেই বরং তা জায়েজের উপর কুরআনহাদীসের দলীলাদি বিদ্যমান রয়েছে  ফাতাওয়ায়ে উসমানী, 1/262-263


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

নবীজি () - এর নাম ও মৃত বুযুর্গ ব্যক্তির ওসিলা দিয়ে দোয়া করা জায়েজ। এটাই হলো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকীদা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (4 points)
অপেক্ষায় আছি  উত্তরের জন্য মুহতারাম। একটু যদি তাড়াতাড়ি বলতেন বিষয়টা সম্পর্কে অনেক উপকৃত হতাম।
by (59,730 points)
পরে আরো বিস্তারিতভাবে লিখার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...