জবাবঃ-
(১)
দুনিয়াতে হরেক রকম সন/বর্ষ/তারিখ গণনা প্রচলিত ছিলো।স্থানীয় পর্যায়ে এখনও বিভিন্ন এলাকায় তাদের নিজস্ব সন প্রচলিত রয়েছে।যেমন আমাদের বাংলাদেশে আছে বাংলা সন।আন্তর্জাতিক ভাবে ইংরেজী এবং হিজরী সন অতীত থেকে চলে আসছে।এবং বর্তমানেও প্রচলিত আছে।ইতিহাসে আরেকটা তারিখের প্রচলন পাওয়া যায়, যার নাম ছিলো, ইসকন্দরিয়্যাহ।যা বাদশা ইসকন্দর বা আলেকজান্ডারের সময়ে প্রচলিত ছিলো।এইভাবে অনেকগুলো হিসাব বর্ষ প্রচলিত ছিলো।বর্তমানে এর অনেকগুলিই প্রচলিত নয়।কালের আবর্তনে মিটে গেছে।
(৩)
এই হিসাব বর্ষের অধিকাংশই সূর্যকে কেন্দ্র করে ছিলো।যার কারণে ইংরেজী, বাংলা সহ অন্যান্য সনে সারা পৃথিবীর কোথাও কোনো মতপার্থক্য নেই।কেননা সূর্য চব্বিশ ঘন্টায় একবার সারা পৃথিবীকে পদক্ষিণ করে আসবেই।এবং ৩৬৫ দিন ঘুরে আবার সে তার পূর্বে কক্ষপথে চলে আসবেই। সুতরাং এই সন গুলোর সারা পৃথিবীতে এক তারিখই প্রচলিত রয়েছে।যদিও সময়ের কিছু ব্যবধান থাকে।
মতপার্থক্য হয় হিজরী তারিখ কে নিয়ে।কেননা হিজরী তারিখ চাঁদের সাথে সম্পর্কিত।হিজরী সনে মাসের সূচনা চাঁদ দেখে হয়।আর সূর্যর মত চাঁদ একই দিনে সারা পৃথিবীতে প্রদর্শিত হয় না।দুয়েক দিন কম বেশ থাকে।
(৩)
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন,তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখো,এবং চাঁদ দেখে ইফতার করো।অর্থাৎ মাসের সূচনা চাদ দেখার উপর নির্ভর করে দিয়েছেন।
যেহেতু পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে সারা পৃথিবীর জন্য কি যথেষ্ট? না স্থানীয় পর্যায়ে এলাকা ভিত্তিক চাঁদ দেখে মাসকে হিসাব করতে হবে?
এ নিয়ে মতপার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে।
(ক) হানাফি মাযহাব মতে মাসের সূচনা চাঁদ দেখার উপরই নির্ভর করে।তাই প্রত্যেক এলাকায় চাঁদ দেখার পরই সেখানে হিজরী মাস শুরু হবে।
(খ)বাকী তিন মাযহাব মতে কোথাও চাঁদ দেখা গেলে সবার জন্য হিজরী মাস শুরু হয়ে যাবে।বিস্তারিত জানুন-২২৪৭
হানাফি মাযহাবের উলামায়ের কেরামগনের বক্তব্য-
শরীয়তে কিছু ইবাদতের সম্পর্ক চাঁদের সাথে আর কিছুর সম্পর্ক সূর্যের সাথে।
পৃথিবীর সকল জায়গায় একসাথে সূর্যোদয় হয় না এবং সূর্যাস্তও হয় না।এবং তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত এক সাথে হয় না।হাদীসে এসেছে,শেষ রাত্রে আল্লাহ বান্দাকে ডেকে বলেন,আছো কি কেনো গোনাহগার?আমি ক্ষমা করে দেবো।অথচ পৃথিবীর সকল জায়গায় এক সাথে তাহাজ্জুদ হয় না।লাইলাতুল কদরের আলোচনা কুরআনে এসেছে,অথচ সারা পৃথিবীতে এক সাথে রাত্র হয় না।
উপরোক্ত বিষয়গুলোতে আমরা অবশ্যই একথা বলবো,যে এই ইবাদত গুলি,যেমন লাইলাতুল কদর ইত্যাদির সম্পর্ক স্থানের সাথে।জিলহজ্বের মাসের নয় তারিখের নাম হল,ইয়াউমুল আরাফাহ।হাদীসে আরাফাহর দিন রোযা রাখার কথা বলা হয়েছে।
সুতরাং আরাফাহ তথা ৯জিলহজ্বের সম্পর্ক স্থানের সাথে।যে যেখানে অবস্থান করবে,সেখানের হিসেবেই ৯জিলহজ্ব অনুযায়ী রোযা রাখবে।
অন্যদিকে যারা সারা পৃথিবীতে একই সাথে হিজরী বর্ষ গণনার পক্ষে মতামত দিয়ে থাকেন।তারা মূলত সৌদিকে মানদন্ড হিসেবে সাব্যস্ত করেন।সুতরাং যে দিন সৌদিতে মাসের সূচনা হবে।সেদিন সারা পৃথিবীতেও মাসের সূচনা হবে।এ হিসেবে আরাফাহ তথা ৯জিলহজ্ব সেদিনই হবে যেদিন সৌদিতে ৯জিলহজ্ব হবে।
অাল্লাহ-ই ভালো জানেন।
উত্তর লিখনে
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ, IOM.