আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
942 views
in ব্যবসা ও চাকুরী (Business & Job) by (49 points)
১.ওষুধ কোম্পানি ডাক্তারদের  যে গিফট দেয়,সেটা নেয়া কি জায়েজ(গিফট গুলা দেয় যাতে সেই ওষুধ কোম্পানির সাথে পরিচিত হতে)?

২.ওষুধ কোম্পানি থেকে তাদের ওষুধ লেখার জন্য ডাক্তারদের টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা নেওয়া কি জায়েজ হবে?

৩.যাদের ফার্মেসী আছে তাদেরকে ওষুধ কোম্পানি গিফট দেয়।সেই গিফট গুলো যদি তারা তাদের আত্মীয়দেরকে দেয়; কিংবা ছাত্র শিক্ষককে দেয়,তাহলে সেই গিফটগুলো আত্মীয়-শিক্ষকের নেয়া কি জায়েজ হবে?
সাধারণত কলম-লেখার প্যাড দেয়,সেগুলো কি ব্যবহার করা যাবে?

1 Answer

0 votes
by (696,640 points)
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
https://www.ifatwa.info/13447 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে, 
প্রথমেই দু-একটি আয়াত ও হাদীসের অর্থ জেনে নিলে মূল উত্তর বুঝতে সুবিধা হবে।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ- 
ﻭَﻳُﺤِﻞُّ ﻟَﻬُﻢُ ﺍﻟﻄَّﻴِّﺒَﺎﺕِ ﻭَﻳُﺤَﺮِّﻡُ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢُ ﺍﻟْﺨَﺒَﺂﺋِﺚ
আল্লাহ তা'আলা তাদের জন্য যাবতীয় পবিত্র বস্তু হালাল ঘোষনা করেন ও অপবিত্র বস্তুসমূহকে হারাম ঘোষনা করেন। 
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ- 
ﻭَﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ ﻭَﺗُﺪْﻟُﻮﺍْ ﺑِﻬَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟْﺤُﻜَّﺎﻡِ ﻟِﺘَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﻓَﺮِﻳﻘًﺎ ﻣِّﻦْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻝِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﺑِﺎﻹِﺛْﻢِ ﻭَﺃَﻧﺘُﻢْ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ
তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না। এবং জনগণের সম্পদের কিয়দংশ জেনে-শুনে পাপ পন্থায় আত্নসাৎ করার উদ্দেশে শাসন কতৃপক্ষের হাতেও তুলে দিও না।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ- 
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍْ ﻻَ ﺗَﺄْﻛُﻠُﻮﺍْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟَﻜُﻢْ ﺑَﻴْﻨَﻜُﻢْ ﺑِﺎﻟْﺒَﺎﻃِﻞِ
হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।
নবীজী সাঃ বলেনঃ- 
ﻣﻦ ﻏﺸﻨﺎ ﻓﻠﻴﺲ ﻣﻨﺎ 
"যে ব্যক্তি ধোকা দেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়"সহীহ মুসলিম-১০১।

কোন রোগী ডাক্তারের কাছে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ব্যবস্থা পত্র আনতে গেলে ইসলামি ফিকহের পরিভাষায় রোগিকে বলা হবে মুস্তাজির -নিয়োগকর্তা বা অর্থ দাতা)। আর ডাক্তারকে বলা হবে আজির বা কর্মের বিনিময়ে অর্থ গ্রহীতা।
এক্ষেত্রে ইসলাম বলবে রোগির দায়িত্ব হল ডাক্তারকে তার অবস্থা জানানো এবং নির্ধারিত ভিজিট প্রদান করা। পক্ষান্তরে ডাক্তারের দায়িত্ব হলো রোগীর জন্য প্রযোজ্য চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র প্রদান করা। 
মেডিকেল টেস্টগুলো ডাক্তাররা করিয়ে থাকেন তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব (অর্থাৎ, রোগ নির্ণয় করে প্রেসক্রিপশান দেয়া) যথাযথভাবে আদায়ের সুবিধার্থে, তদ্রুপ কোন ল্যাব বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করালে ভালো হবে, তা নির্ধারণ করে দেয়া ডাক্তারেরই পেশাগত দায়িত্ব। নির্ধারিত ভিজিটের বিনিময়ে তিনি এসব কাজগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে করে দিবেন।
উপরোক্ত বিশ্লেষণের নিরিখে একথাই প্রমাণিত হয় যে, মেডিকেল টেস্টে রোগী প্রেরণকারী ডাক্তারের জন্য কমিশন গ্রহণের কোন সুযোগ নেই। কারণ এক্ষেত্রে কমিশন গ্রহণের অর্থ হলো, নিজ দায়িত্ব সমাধানের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য অন্যের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন। অথচ এ দায়িত্ব পূর্ণ করার জন্য তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করছেন। তাই হাসপাতাল কর্তৃক ডাক্তারদের প্রদত্ত এই কমিশন শরিয়ত নিষিদ্ধ উৎকোচের অন্তর্ভুক্ত হবে। সূত্র : ইমদাদুল ফাতাওয়া ভলিয়ম ৩ পৃ:৪১০/ ফাতাওয়া রশিদিয়া পৃ:৫৫৮

অনুরূপ, ওষুধ কোম্পানি তাদের ওষুধের নাম লেখার জন্য ডাক্তারদের যে দামি-দামি জিনিস পত্র, নগদ অর্থ ইত্যাদি দেওয়া হয় তাও শরিয়ত সম্মত নয়। কারণ এটিও শরিয়তের দৃষ্টিতে বিনিময়হীন উৎকোচের শামিল। কেননা রোগির জন্য কোন গ্রুপের এবং কোন কোম্পানীর ওষুধ সর্বাধিক কার্যকরী তা লিখে দেয়া একজন চিকিৎসকের পেশাগত দায়িত্ব। অবশ্য বিভিন্ন ছোটখাট স্টেশনারি সামগ্রী নেয়া যেতে পারে।
যেমন : কলম, প্যাড ইত্যাদি। এগুলোতে ঔষধ কোম্পানির ট্রেডমার্ক এবং উৎপাদিত পণ্যের ট্রেড ন্যাম ছাপানো থাকে। মূলত এগুলো কোম্পানির বিজ্ঞাপনের কাজ দেয়। তাছাড়া পণ্যগুলো এজন্যে নয় যে, সেগুলো বিক্রি করে অনেক টাকা উপার্জন করা যাবে। তাই এসব বিবেচনায় স্টেশনারি সামগ্রী গ্রহণ করা বৈধ।
সূত্র : বাস্তব জীবনে হারামের অনুপ্রবেশ,আল্লামা তাকি উসমানি দাঃবাঃ লিখিত ।

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ
*দামি উপহারের ক্ষেত্রে-- যদি গ্রহিতা এ বলে বা এ নিয়তে নেয় যে, শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেই ঔষধ টা লিখবে।তাহলে তখন রুখসত থাকবে।
*প্রয়োজনে কোন এক কোম্পানির ঔষধ লিখতেই হবে। এক্ষেত্রে উপহার নেওয়া কোম্পানির ঔষধ লিখলে রোগীর প্রতি জুলুম হবে না বা ক্ষতি হবে না। যদি ঐ কম্পানির ঔষধ ভালো মানের হওয়ার কারণেই লিখা হয়ে থাকে,তাহলে উপহার গ্রহণ করা যাবে।কেননা এখানে রোগীর প্রতি কোনো জুলুম হচ্ছে না।তবে অন্যান্য ঔষধ কম্পানির সমান মানের ঔষধ বাজারে থাকাবস্থায় শুধুমাত্র কোনো এক কম্পানির ঔষধ লিখাকে কেউ কেউ অনুত্তম বলে থাকেন।
সর্বোপরি জায়েয হবে।
*কোম্পানি যা দেয় তাই নেয় এবং শুধুমাত্র প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রেই ঔষধ গুলো লিখবে, বাস্তবে এমনটা হলে তো কোনো অসুবিধে ছিল না।তবে হাদিয়া গ্রহণের পর হাদিয়া দাতার প্রতি অন্তর কিছুটা নরম হয়ে যায়,সে জন্য এমন হাদিয়া গ্রহণ অনুচিত।তবে জায়েয হবে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন- https://www.ifatwa.info/594 (শেষ)


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
১.ওষুধ কোম্পানি ডাক্তারদের যে গিফট দেয়,সেটা নেয়া শর্তের সাথে জায়েয।
২.ওষুধ কোম্পানি থেকে তাদের ওষুধ লেখার জন্য ডাক্তারদের টাকা দেওয়া হয়। এই টাকা নেওয়া জায়েয হবে না। 
৩.যাদের ফার্মেসী আছে তাদেরকে ওষুধ কোম্পানি গিফট দেয়। সেই গিফট গুলো যদি তারা তাদের আত্মীয়দেরকে দেয়; কিংবা ছাত্র শিক্ষককে দেয়, তাহলে সেই গিফটগুলো আত্মীয়-শিক্ষকের নেয়া জায়েজ হবে। সাধারণত কলম-লেখার প্যাড দেয়,সেগুলো ব্যবহার করা যাবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...