হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা. ) বলেন-
إن بين الرجل وبين الشرك والكفر ترك الصلاة
‘কোনো ব্যক্তির মাঝে এবং শিরক ও কুফরের মাঝে পার্থক্য হলো নামাজ ত্যাগ করা।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪]
এধরনের হাদীসের কারণে ইমাম আহমদ (রহ.) এর মত হলো অলসতা করে নামাজ ত্যাগকারী কাফের।
তবে হানাফি মাযহাবের স্কলার ও অনেক ইসলামী স্কলারদের মতে নামাজ ত্যাগকারী কাফের নয়। বরং ফাসেক এবং কবিরা গুনাহকারী।
নামায ছেড়ে দিলেই ব্যক্তি কাফের হবে না। বরং কাফেরদের মত কাজ হয়।
তবে হ্যাঁ, যদি কেউ নামায পড়া ফরজ নয় মনে করে নামায ছেড়ে দেয়, তাহলে উক্ত ব্যক্তি কাফের। এতে কোন সন্দেহ নেই। কিংবা নামাযকে তাচ্ছিল্য করে নামায পড়া ছেড়ে দেয় তাহলেও উক্ত ব্যক্তি কাফের।
বুখারী শরীফের এক টি হাদীসে এসেছে
وَعَنْ بُرَيْدَةَ رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم: «مَنْ تَرَكَ صَلاَةَ العَصْرِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ»
বুরাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আসরের নামায ত্যাগ করল, নিঃসন্দেহে তার আমল নষ্ট হয়ে গেল।”
(সহীহুল বুখারী ৫৫৩, ৫৯৪, নাসায়ী ৪৭৪, ইবনু মাজাহ ৬৯৪, আহমাদ ২২৪৪৮, ২২৫১৭, ২২৫৩৬)
,
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় অনেকেই অনেক রকম মত উল্লেখ করেছনঃ
কেহ কেহ ব্যাখ্যা করেছেন যে এ হাদীসে ‘আসরের সলাত পরিত্যাগের শাস্তি স্বরূপ ‘আমাল বরবাদ হয়ে যাওয়াকে বুঝানো হয়নি। এর দ্বারা যারা এরূপ করে তাদের শক্ত ধমক দেয়া হয়েছে।
ইবনুল কায়্যিম তার ‘আস-স্বালাত’ নামক গ্রন্থের ৬৫ পৃষ্ঠায় এ হাদিসের মর্মার্থ আলোচনা করতে গিয়ে বলেন – এ হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, নামাজ ত্যাগ করা দুই প্রকার:
১. পুরোপুরিভাবে ত্যাগ করা। কোন নামাজই না-পড়া। এ ব্যক্তির সমস্ত আমল বিফলে যাবে,
২. বিশেষ কোন দিন বিশেষ কোন নামাজ ত্যাগ করা। এক্ষেত্রে তার বিশেষ দিনের আমল বিফলে যাবে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে সালাত ত্যাগ করলে তার সার্বিক আমল বিফলে যাবে। আর বিশেষ নামাজ ত্যাগ করলে বিশেষ আমল বিফলে যাবে।
‘ফাতাওয়াস সিয়াম’ (পৃ-৮৭) গ্রন্থে এসেছে শাইখ ইবনে উছাইমীনকে বেনামাজীর রোজা রাখার হুকুম সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো তিনি উত্তরে বলেন: ‘বেনামাজীর রোজা শুদ্ধ নয় এবং তা কবুলযোগ্য নয়। কারণ নামাজ ত্যাগকারী কাফের, মুরতাদ।’
এর সপক্ষে দলিল হচ্ছে-আল্লাহ্ তাআলার বাণী: ‘আর যদি তারা তওবা করে, সালাত কায়েম করে ও যাকাত দেয় তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।’ [সূরা তওবা: ১১]
রাসুল (স:) এর বাণী: ‘কোন ব্যক্তির মাঝে এবং শির্ক ও কুফরের মাঝে সংযোগ হচ্ছে সালাত বর্জন।’ [সহিহ মুসলিম ৮২]এবং রাসূলুল্লাহ (স:) এর বাণী: ‘আমাদের ও তাদের মধ্যে চুক্তি হলো নামাজের। সুতরাং যে ব্যক্তি নামাজ ত্যাগ করল, সে কুফরি করল।’ [জামে তিরমিযী (২৬২১),
তবে বেশির ভাগ মুহাদ্দিসিনে কেরামগন বলেছেন যে এউ হাদীসের ব্যাখ্যা হলোঃ
এখানে ইচ্ছাকৃতভাবে অলসতা করে ‘আসরের সলাতকে পরিত্যাগ করা বুঝিয়েছে। মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘কেউ ঈমান প্রত্যাখ্যান করলে তার ‘আমাল নিষ্ফল হবে’’- (সূরাহ্ আল্ মায়িদাহ্ ৫ : ৫)।
এর দ্বারা বুঝা যায় যে অলসতা ও ইচ্ছাকৃত বিশ্বাস করা ঈমান প্রত্যাখ্যানের শামিল। এর ব্যাখ্যায় কেউ বলেছেন যে, হাদীসে যে ভয় দেখানো হয়েছে তা দ্বারা মূলত শক্ত ধমক দেয়া হয়েছে। কারো মতে, এটা সাদৃশ্যের রূপকতা। অর্থাৎ- যে ‘আসরের নামাজ ছেড়ে দিলো সে ঐ ব্যক্তির মতো যার ‘আমাল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নষ্ট হওয়া দ্বারা উদ্দেশ্য প্রয়োজনের সময় তার ‘আমাল উপকারে আসবে না।
,
★★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত বেনামাজির দান সদকাহ,যাকাত,রোযা কিছুই কবুল হবেনা,বিষয়টি এমন নহে।
,
বরং তার অন্যান্য নেক আমল আল্লাহ তায়ালা চাইলে কবুল হবে।
তবে নামাজ ছেড়ে দেওয়ার কারনে অবশ্যই সে গুনাহগার হবে।
আখেরাতে সে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে।