بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
উক্ত আমল যারা কুরবানী করবেন বা যাদের নামে কুরবানী করা হবে তাদের জন্য।তবে অন্যরাও উক্ত আমল করলে মুস্তাহাব আদায়ের সওয়াব পাবে বলে আশা করা যায় ইনশাআল্লাহ।
নিন্মে ঈদের দিনের কিছু সুন্নাত উল্লেখ করা হলো:
১.অন্যদিনের তুলনায় সকালে ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। [বায়হাকী, হাদীস নং-৬১২৬]
২.মিসওয়াক করা। [তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/৫৩৮]
৩.গোসল করা। [ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩১৫] ৪.শরীয়তসম্মত সাজসজ্জা করা। [বুখারী, হাদীস নং-৯৪৮]
৫.সামর্থ অনুপাতে উত্তম পোশাক পরিধান করা। [বুখারী, হাদীস নং-৯৪৮, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং -৭৫৬০]
৬.সুগন্ধি ব্যবহার করা। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-৭৫৬০]
৭.ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার আগে মিষ্টি জাতীয় যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া। তবে ঈদুল আযহাতে কিছু না খেয়ে ঈদের নামাযের পর নিজের কুরবানীর গোশত আহার করা উত্তম। [বুখারী, হাদীস নং-৯৫৩, তিরমিজী, হাদীস নং-৫৪২, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৬০৩]
৮.সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া। [আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৭]
৯.ঈদুল ফিতরে ঈদগাতে যাওয়ার পূর্বে সদকায়ে ফিতর আদায় করা। [দারাকুতনী, হাদীস নং-১৬৯৪]
১০.ঈদের নামায ঈদগাহে আদায় করা, বিনা অপরাগতায় মসজিদে আদায় না করা। [বুখারী, হাদীস নং-৯৫৬, আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৫৮]
১১.যে রাস্তায় ঈদগাতে যাবে, সম্ভব হলে ফিরার সময় অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরা। [বুখারী, হাদীস নং-৯৮৬]
১২.পায়ে হেটে যাওয়া। [আবু দাউদ, হাদীস নং-১১৪৩]
১৩.ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাবার সময় আস্তে আসত্ এই তাকবীর পড়তে থাকাঃ
اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
তবে ঈদুল আযহায় যাবার সময় পথে এ তাকবীর আওয়াজ করে পড়তে থাকবে। [মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস নং-১১০৫]
কোরবানির পশু জবেহ করার নিয়মাবলি : কোরবানিদাতা নিজের কোরবানির পশু নিজেই জবেহ করবেন, যদি তিনি ভালোভাবে জবেহ করতে পারেন। কেননা, রাসূলুল্লাহ [সা.] নিজে জবেহ করেছেন। আর জবেহ করা আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের একটি মাধ্যম । তাই প্রত্যেকের নিজের কোরবানি নিজে জবেহ করার চেষ্টা করা উচিত। ইমাম বুখারি (রাহ.) বলেছেন,সাহাবি আবু মুসা আশআরী [রা.] নিজের মেয়েদের নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন নিজ হাতে নিজেদের কোরবানির পশু জবেহ করেন। (ফাতহুল বারী, ১০/১৯) তার এ নির্দেশ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, মেয়েরা কোরবানির পশু জবেহ করতে পারেন। তবে কোরবানির পশু জবেহ করার দায়িত্ব অন্যকে অর্পণ করা জায়েয আছে। কেননা, সহিহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ [সা.] তেষট্টিটি কোরবানির পশু নিজ হাতে জবেহ করে বাকিগুলো জবেহ করা দায়িত্ব আলী [রা.] কে অর্পণ করেছেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ১২১৮)। হাদিসে এসেছে- জাবির [রা.] থেকে বর্ণিত,.. একটি দুম্বা আনা হলো। রাসূলুল্লাহ [সা.] নিজ হাতে জবেহ করলেন এবং বললেন, বিসমিল্লাহ ওয়া আল্লাহু আকবর, হে আল্লাহ! এটা আমার পক্ষ থেকে । এবং আমার উম্মতের মাঝে যারা কোরবানি করতে পারেনি তাদের পক্ষ থেকে। (আবু দাউদ) অন্য হাদিসে এসেছে- রাসূলুল্লাহ [সা.] দুটি শিংওয়ালা ভেড়া জবেহ করলেন, তখন বিসমিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার বললেন। (সুনানে দারামী, হাদিস নং ১৯৮৮; হাদিসটি সহিহ)। উল্লেখ্য, জবেহকৃত পশুর রক্ত হারাম। অতএব তা কোন ফল লাভের উদ্দেশ পায়ে মাখা, দেওয়ালে ছাপ দেওয়া বা তা নিয়ে ছুড়াছুড়ি করে খেলা করা বৈধ নয়।
কুরবানীর গোস্ত বন্টন পদ্ধতি:
ইবনু মাসঊদ (রাঃ) কুরবানীর গোশত তিনভাগ করে একভাগ নিজেরা খেতেন, একভাগ যাকে চাইতেন তাকে খাওয়াতেন এবং একভাগ ফকীর-মিসকীনকে দিতেন। আবদুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর কুরবানীর গোশত বন্টন সম্পর্কে বলেন যে, তিনি একভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, একভাগ গরীব প্রতিবেশীদের দিতেন এবং একভাগ সায়েল-ফকীরদের দিতেন। হাফেয আবু মূসা বলেন, হাদীছটি ‘হাসান’।(ইরওয়া হা/১১৬০; আলোচনা দ্রষ্টব্য: মির‘আত হা/১৪৯৩-এর ব্যাখ্যা, ৫/১২০ পৃঃ)।
এছাড়া ইমাম আহমাদ, শাফেঈ (রহঃ) সহ বহু বিদ্বান কুরবানীর গোশত তিনভাগ করাকে মুস্তাহাব বলেছেন (সুবুলুস সালাম শরহ বুলূগুল মারাম ৪/১৮৮ পৃঃ)।
অতএব কুরবানীর গোশত তিন ভাগ করা যায়। একভাগ নিজেদের ও একভাগ প্রতিবেশীদের যারা কুরবানী করেনি এবং এক ভাগ ফকীর-মিসকীনদের। প্রয়োজনে বণ্টনে কমবেশী করাতে কোন দোষ নেই (সুবুলুস সালাম শরহ বুলূগুল মারাম ৪/১৮৮; আল-মুগনী ১১/১০৮; মির‘আত ২/৩৬৯; ঐ, ৫/১২০ পৃঃ)।