জবাবঃ-
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর আবনুল আস রাযি থেকে বর্ণিত
عَنْ عبدِاللَّهِ بنِ عَمرو بنِ العاص، رضي اللَّه عنْهما، أنَّ رسُول اللَّه ﷺ قَالَ: يغْفِرُ اللَّه للشَّهيدِ كُلَّ ذنب إلاَّ الدَّيْنَ-وفي روايةٍ له: القَتْلُ في سَبِيلِ اللَّهِ يُكفِّرُ كُلَّ شَيءٍ إلاَّ الدَّيْن.
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,আল্লাহ তা'আলা শহীদের সকল প্রকার গোনাহ মাফ করে দেবেন, শুধুমাত্র ঋণ ব্যতীত। (সহীহ মুসলিম-১৮৮৬)
হযরত আবু কাতাদাহ রাযি থেকে বর্ণিত,
عَنْ أَبي قتَادَةَ، أنَّ رَسُول اللَّهِ ﷺ قَامَ فيهمْ فَذَكَرَ أنَّ الجِهادَ في سبِيلِ اللَّهِ، وَالإيمانَ بِاللَّهِ، أَفْضَلُ الأَعْمَال، فَقَامَ رجُلٌ، فَقَال: يَا رَسُول اللَّهِ أَرأَيْتَ إنْ قُتِلْتُ في سبيلِ اللَّهِ أتُكَفَّرُ عنِّي خَطاياي؟ فَقالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: نعمْ إنْ قُتِلت في سبيلِ اللَّهِ وَأَنْتَ صابِرٌ، مُحْتسِبٌ مُقبلٌ غيْرُ مُدْبِرٍ ثُمَّ قَال رسُولُ اللَّه ﷺ: كَيْفَ قُلْتَ؟ قَالَ: أَرأَيْتَ إنْ قُتِلْتُ في سَبيلِ اللَّهِ أَتُكَفَّرُ عنِّي خَطَايَايَ؟ فَقَالَ رسُولُ اللَّهِ ﷺ: نَعمْ وأَنْتَ صابِرٌ مُحْتَسِبٌ، مُقْبلٌ غَيْرُ مُدْبرٍ، إلاَّ الدَّيْنَ، فَإنَّ جِبْرِيلَ عليه السلامُ قَالَ لي ذلكَ.
রাসূলুল্লাহ সাঃ একবার বললেন,আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা,আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করা সর্বোত্তম ইবাদত।তখন একব্যক্তি দাড়িয়ে প্রশ্ন করল,ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি মনে করেন,যদি আমি আল্লাহর রাস্তায় মারা যাই,তাহলে কি আমার গোনাহ সমূহকে মাফ করে দেয়া হবে?রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন,হ্যা, যদি তুমি আল্লাহর রাস্তায় মারা যাও এমতাবস্থায় যে,তুমি ধর্য্যধারণকারী,আল্লাহর নৈকট্যকে তালাশকারী,জিহাদের ময়দানে সামনে অগ্রসরমান,(তাহলে এমতাবস্থায় তোমাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে) তবে ঋণকে ক্ষমা করা হবে না।জিবরাইল আঃ এমনটাই আমাকে বলেছেন।(সহীহ মুসলিম-১৮৮৭)
হযরত জাবের রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
وعَنْ جابرٍ ، قالَ: قالَ رَجُلٌ: أيْنَ أنَا يَا رسُولَ اللَّهِ إنْ قُتِلتُ؟ قَالَ: في الجَنَّةِ. فَألْقَى تَمَرَاتٍ كُنَّ في يَدِهِ، ثُمَّ قاتَلَ حتَّى قُتِلَ
এক ব্যক্তি এসে বলল,ইয়া রাসূলুল্লাহ!আমার কেমন অবস্থা হবে? যদি আমি আল্লাহর রাস্তায় মারা যাই।রাসূলুল্লাহ সাঃ বললেন,তুমি জান্নাতে যাবে।অতঃপর ঐ ব্যক্তি নিজ হাতে থাকা খেজুরকে নিক্ষেপ করে জিহাদে চলে গেল।অতঃপর জিহাদ করতে করতে সে মারা গেল।(সহীহ মুসলিম-১৮৮৮)
মিরকাতুল মাফাতিহ-২৯১২ নং হাদীসের ব্যখ্যায় মোল্লা আলী কারী রাহ লিখেন,
(إلاالدين) : أراد حقوق الآدميين من الأموال والدماء والأعراض فإنها لا تعفى بالشهادة، كذا ذكره بعض الشراح، وقال ابن الملك: قيل هذا في شهداء البر لما روى ابن ماجه عن أبي أمامة مرفوعا أن النبي - صلى الله عليه وسلم - قال: " «يغفر لشهيد البحر الذنوب كلها والدين» " (رواه مسلم) : وكذا أحمد
ঋণ দ্বারা উদ্দেশ্য হুকুকুল ইবাদ।যেমন মানুষের মাল,রক্ত,সম্মাণ ইত্যাদি।কেননা কারো এ জাতীয় কোনো নষ্ট করলে শাহাদতের মাধ্যমে মাফ হবে না।কিছু হাদীস বিশারদ এমনটাই বলেছেন।ইবনে মালাক হানাফি রাহ বলেন,এটা স্থলের শহীদের ব্যাপারে প্রযোজ্য। কেননা ইমাম ইবনে মা'জা রাহ আবু-উমামা রাযি এর সূত্রে বর্ণনা করেন যে,আল্লাহ সাগরের শহীদদের সব গোনাহ এমনকি তাদের ঋণ পর্যন্তও ক্ষমা করে দিবেন।মসনদে আহমদেও এভাবে বর্ণিত রয়েছে।
হাদীসের ভাষ্যমতে আল্লাহর রাহে জিহাদ করা সর্বোত্তম আ'মল।পুরুষের জন্য সর্বোত্তর আ'মল হল, জিহাদ করা।আর নারীদের জন্য সর্বোত্তম আ'মল হল,হজ্ব করা।
রাসূলুল্লাহ জিহাদের ফযিলত সম্পর্কে বলেন,ঋণ ব্যতীত শহীদের সকল প্রকার গোনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন।তথা আল্লাহ তা'আলা হুকুকুল্লাহ কে ক্ষমা করে দেবেন।আর হক্কুল ইবাদ(বান্দার হক)সম্পর্কে আল্লাহ ইচ্ছা করলে ক্ষমা করে দেবেন যদি ঐ ব্যক্তি ঋণ পরিশোধ বা অন্য ব্যাপারে মা'যুর থাকে এবং দেনাদার ঐ ব্যক্তিকে আল্লাহ নিজ পক্ষ থেকে সন্তুষ্ট করে দেবেন।
ঋণ পরিশোধে অক্ষম বা মা'যুর ব্যক্তির ব্যাপারে আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَإِن كَانَ ذُو عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَى مَيْسَرَةٍ وَأَن تَصَدَّقُواْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
যদি খাতক অভাবগ্রস্থ হয়, তবে তাকে সচ্ছলতা আসা পর্যন্ত সময় দেয়া উচিত। আর যদি ক্ষমা করে দাও, তবে তা খুবই উত্তম যদি তোমরা উপলব্ধি কর।(সূরা বাকারা-২৮০)
সুতরাং ঋণ পরিশোধে অক্ষম বা মা'যুর ব্যক্তির ঋণকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন নিজ পক্ষ থেকে পরিশোধ করে দেবেন।আর যদি কেউ সামর্থ থাকাসত্তেও ঋণ পরিশোধ না করে থাকে,তাহলে কিয়ামতের দিন সেই ঋণ তাকে শোধ করতে হবে।
আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَمَنْ يَظْلِمْ مِنْكُمْ نُذِقْهُ عَذَابًا كَبِيرًا
তোমাদের মধ্যে যে গোনাহগার আমি তাকে গুরুতর শাস্তি আস্বাদন করাব।(সূরা ফুরকান-১৯)
আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত।
عن أبي هريرة، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم، قال: «أتدرون ماالمفلس؟» قالوا: المفلس فينا من لا درهم لهولا متاع، فقال: «إن المفلس من أمتي يأتي يوم القيامة بصلاة، وصيام، وزكاة، ويأتي قد شتم هذا، وقذف هذا، وأكل مال هذا، وسفك دم هذا، وضرب هذا، فيعطى هذا منحسناته، وهذا من حسناته، فإن فنيت حسناته قبل أن يقضى ما عليه أخذ منخطاياهم فطرحت عليه، ثم طرح في النار»
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা কি বলতে পার, অভাবী লোক কে? তারা বললেন, আমাদের মাঝে যার দিরহাম (টাকা কড়ি) ও ধন-সম্পদ নেই সে তো অভাবী লোক। তখন তিনি বললেন, আমার উম্মাতের মধ্যে সে প্রকৃত অভাবী লোক, যে ব্যক্তি কিয়ামাতের দিন সলাত, সাওম ও যাকাত নিয়ে আসবে; অথচ সে এ অবস্থায় আসবে যে, সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, অমুকের সম্পদ ভোগ করেছে, অমুককে হত্যা করেছে ও আরেকজনকে প্রহার করেছে। এরপর সে ব্যক্তিকে তার নেক ‘আমাল থেকে দেয়া হবে, অমুককে নেক আমাল থেকে দেয়া হবে। এরপর যদি পাওনাদারের হাক তার নেক ‘আমাল থেকে পূরণ করা না যায় সে ঋণের পরিবর্তে তাদের পাপের একাংশ তার প্রতি নিক্ষেপ করা হবে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।(সহীহ মুসলিম-শামেলা-২৫৮১)
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
স্থল যুদ্ধে যদি কোনো মুজাহিদ শহীদ হন,তাহলে ঋণ ব্যতীত আল্লাহ উনার সকল প্রকার গোনাহকে মিটিয়ে দিবেন,ক্ষমা করে দিবেন।ঋণ পরিশোধের সুযোগ হয়নি বা অক্ষম এমন হলে অবশ্যই আল্লাহ ঐ ঋণকেও ক্ষমা করে দিবেন।আর কোনো কোনো বর্ণনানুযায়ী সাগরের শহীদের সকল প্রকার গোনাহকে ক্ষমা করে দেয়া হবে।
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।