আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
606 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (58 points)

সম্প্রতি এক ভাই এর একটি ফেসবুক পোস্ট নজরে এসেছে যা হুবহু তুলে ধরছিঃ

সুখবর সুখবর সুখবর!!.
মেসি কাকা শেষ বয়সে এসে একটা কাপ পাইছে। কাকা জানিয়েছেন , বাংলাদেশের কিছু আ*ল দের ছাড়া এই জয় কোন দিনও সম্ভব ছিল না। তাদের সাপোর্টে খুশি হয়ে, আনন্দে আত্মহারা হয়ে কাকা ঘোষণা দিছে, বিবিএ-এমবিএ করে বা অনার্স-মাস্টার্স করে সাথে সাথেই কাকাকে সিভি সেন্ড করতে। মেসি কাকা তাদের জন্য আর্জেন্টিনা শহরে চাকরির ব্যবস্থা করবেন। (বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া)।
সো গাইজ। দেরি না করে নিচের ইমেইল এ সিভি সেন্ড করে দাও। আর লোফে নাও লোভনীয় চাকরি।।
-*Emails are not allowed*

#just_for_fun

এই পোস্ট টি দেখে আমার খুব রাগ হয়। কারণ এখানে মজা করে অসত্য তুলে ধরা হয়েছে। আর যারা মানুষকে হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে, এক হাদিসে রাসুল (সা.) তিনবার অভিশাপ দিয়েছেন।

তাই আমি কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করি। আমাদের মাঝে কমেন্ট বক্সে যে আলোচনা হয় তা তুলে ধরছিঃ

আমিঃ حَدَّثَنَا مُسَدَّدُ بْنُ مُسَرْهَدٍ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ بَهْزِ بْنِ حَكِيمٍ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ "‏ وَيْلٌ لِلَّذِي يُحَدِّثُ فَيَكْذِبُ لِيُضْحِكَ بِهِ الْقَوْمَ وَيْلٌ لَهُ وَيْلٌ لَهُ ‏"‏ ‏.‏

বাহয ইবনু হাকীম (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমার পিতা তার পিতার সূত্রে আমাকে হাদীস বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছিঃ মানুষকে হাসানোর জন্য যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য ধ্বংস।
 

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯৯০
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
Source: আল হাদিস অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, ঈড়ড
(আমি হাদিসটির স্ক্রিনশট কমেন্ট করি)

ভাইঃ fun na bujhle dure thaka উছিত
আমিঃ তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন ফান করে যা খুশি বলা যায়? সব কিছুর ই একটা সীমা আছে। সীমার মধ্যে থাকা উচিত

ভাইঃ যা খুশি বলা হয় নাই কোন জাগায় ই। পোস্ট এর নিচে হ্যাশট্যাগ দেয়া হয়েছে। আর সব জাগাতেই পবিত্র কুরআন - হাদিসের রেফারেন্স দেয়া ঠিক না। আমি ব্যক্তিগত ভাবেও এটা পছন্দ করি না। ফেসবুক এ একটা ফানি পোস্ট এর মধ্যে অবশ্যই হাদিসের রেফারেন্স দেয়া ঠিক নয়।

আমিঃ আপনাকে জানানো উদ্দেশ্য ছিল। আর কুরান হাদিসের  রেফারেন্স কোথায় দেয়া যাবে আর কোথায় দেয়া যাবেনা সেইটা ঠিক করার আমরা কেউ না। আর মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে একটা হিউজ পপুলেশন কে হার্ট করে ফান করাও কোন দিক দিয়ে ঠিক না

ভাইঃ মিথ্যা আর মজা করার মাঝে বড় ব্যবধান আছে। সেটা আগে বুঝতে হবে। এইটা না বুঝলে সে হার্ট হবে।  জানানোর জন্য ধন্যবাদ।

উপরোক্ত পরিস্থিতির আলোকে আমার প্রশ্নঃ
১. আমার কি ভুল হয়েছে?

২. ফানি পোস্টের কমেন্ট বক্সে কি আসলেই কুরান হাদিসের রেফারেন্স দেয়া ঠিক নয়। উল্লেখ্য, ভাইটি মুসলিম বিধায় সরাসরি হাদিস কমেন্ট বক্সে দিয়েছি। যদিও এটি কতটুকু সঠিক তা আমি জানিনা। যেহেতু, পাবলিক পোস্ট, তাই হাদিস দিলে অনেক মুসলিম কমেন্ট থেকে হাদিস টি জানবে। কমেন্টবক্সে আরো অনেকেই উলটা পালটা কমেন্ট করছিল।

৩. ভাই এর কথায় কি হাদিস অমান্য করা হয়েছে বা কুফরি হয়েছে? কারণ, হাদিস জানার পরেও উনি নিজেকে ডিফেন্ড করছেন এবং নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন।

৪. ভাই এর কথায় আমার প্রচন্ড রাগ হয়েছে। তাই আমি আর কথা বাড়াইনি। তবে রাগ হয়েছে। এই রাগ হওয়া টা কি ভুল? উল্লেখ্য, উপরের কমেন্টের বাইরে আমি আর কিছুই বলিনি।

1 Answer

0 votes
by (597,330 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
উক্ত প্রশ্নের জবাব ইতির্পূর্বে আমরা দিয়েছি ।
https://www.ifatwa.info/1719 নং ফাতাওয়ায় আমরা বলেছি যে,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  বলেন:
«وَيْلٌ لِلَّذِي يُحَدِّثُ بِالحَدِيثِ لِيُضْحِكَ بِهِ القَوْمَ فَيَكْذِبُ، وَيْلٌ لَهُ وَيْلٌ لَهُ»
‘‘যে ব্যক্তি মানুষ হাসানোর জন্য মিথ্যা বলে তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস! তার জন্য ধ্বংস!’’(তিরমিযী-২৩১৫; আবূ দাউদ-৪৯৯০)

অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«أَنَا زَعِيمٌ بِبَيْتٍ فِي رَبَضِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْمِرَاءَ وَإِنْ كَانَ مُحِقًّا، وَبِبَيْتٍ فِي وَسَطِ الْجَنَّةِ لِمَنْ تَرَكَ الْكَذِبَ وَإِنْ كَانَ مَازِحًا وَبِبَيْتٍ فِي أَعْلَى الْجَنَّةِ لِمَنْ حَسَّنَ خُلُقَهُ»
‘‘যে ব্যক্তি সর্বদা মিথ্যা বর্জন করে, মস্কারা বা কৌতুক করতেও মিথ্যা বলে না, তার জন্য জান্নাতের মধ্যদেশে একটি বাড়ির জন্য আমি দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।’’ (আবূ দাউদ হাদীস নং ৪৮০০)


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
উক্ত ব্যক্তির জন্য এভাবে কটাক্ষ করা কখনো জায়েয হয়নি। আপনার দাওয়াত ও তাবলীগ তথা সৎ কাজের আদেশ প্রদান হেকমত শূণ্য হিসেবেই আপাতত দৃষ্টিগোছর হচ্ছে।
কেননা দাওয়াতের পূর্বে দাওয়াত গ্রহণের নিচ্ছয়তা এবং পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরী।

দাওয়াত দেওয়ার পূর্বে দাওয়াত গ্রহণের পরিস্থিতি ও মন মানষিকতা তৈরী করা অত্যন্ত জরুরী। হযরত ইউসুফ আঃ এর কাছে যখন দুইজন ব্যক্তি স্বপ্ন ব্যখ্যা জানতে এসেছিল, তখন তিনি দেখলেন যে, এদের তো দিল নরম হয়ে এসেছে, সুতরাং এখন তাদেরকে দাওয়াত দিলে কাজ হবে, তাই ইউসুফ আঃ তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দিলেন, অথচ এরা ইতিপূর্বেও ইউসুফ আঃ সাথে জেলে ছিল। কিন্তু তখন ইউসুফ আঃ তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দেননি।

وَدَخَلَ مَعَهُ السِّجْنَ فَتَيَانِ ۖ قَالَ أَحَدُهُمَا إِنِّي أَرَانِي أَعْصِرُ خَمْرًا ۖ وَقَالَ الْآخَرُ إِنِّي أَرَانِي أَحْمِلُ فَوْقَ رَأْسِي خُبْزًا تَأْكُلُ الطَّيْرُ مِنْهُ ۖ نَبِّئْنَا بِتَأْوِيلِهِ ۖ إِنَّا نَرَاكَ مِنَ الْمُحْسِنِينَ
তাঁর সাথে কারাগারে দুজন যুবক প্রবেশ করল। তাদের একজন বললঃ আমি স্বপ্নে দেখলাম যে, আমি মদ নিঙড়াচ্ছি। অপরজন বললঃ আমি দেখলাম যে, নিজ মাথায় রুটি বহন করছি। তা থেকে পাখী ঠুকরিয়ে খাচ্ছে। আমাদের কে এর ব্যাখ্যা বলুন। আমরা আপনাকে সৎকর্মশীল দেখতে পাচ্ছি।
قَالَ لَا يَأْتِيكُمَا طَعَامٌ تُرْزَقَانِهِ إِلَّا نَبَّأْتُكُمَا بِتَأْوِيلِهِ قَبْلَ أَن يَأْتِيَكُمَا ۚ ذَٰلِكُمَا مِمَّا عَلَّمَنِي رَبِّي ۚ إِنِّي تَرَكْتُ مِلَّةَ قَوْمٍ لَّا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ
তিনি বললেনঃ তোমাদেরকে প্রত্যহ যে খাদ্য দেয়া হয়, তা তোমাদের কাছে আসার আগেই আমি তার ব্যাখ্যা বলে দেব। এ জ্ঞান আমার পালনকর্তা আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন। আমি ঐসব লোকের ধর্ম পরিত্যাগ করেছি যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে না এবং পরকালে অবিশ্বাসী।
وَاتَّبَعْتُ مِلَّةَ آبَائِي إِبْرَاهِيمَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ ۚ مَا كَانَ لَنَا أَن نُّشْرِكَ بِاللَّهِ مِن شَيْءٍ ۚ ذَٰلِكَ مِن فَضْلِ اللَّهِ عَلَيْنَا وَعَلَى النَّاسِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ
আমি আপন পিতৃপুরুষ ইব্রাহীম, ইসহাক ও ইয়াকুবের ধর্ম অনুসরণ করছি। আমাদের জন্য শোভা পায় না যে, কোন বস্তুকে আল্লাহর অংশীদার করি। এটা আমাদের প্রতি এবং অন্য সব লোকের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্ত অধিকাংশ লোক অনুগ্রহ স্বীকার করে না। (সূরা ইউসুফ-৩৬-৩৮)

সুতরাং আপনি তার সাথে আগে বন্ধুত্ব তৈরী করবেন, তারপর তাকে দ্বীনের দাওয়াত দিবেন। এটাই হেকমত ও প্রজ্ঞার দাওয়াত। তবে এজন্য আপনার কোনো গোনাহ হবে না। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...