ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
"যাকাতের হিসাব থেকে নিজের ঋণ বাদ দেওয়া।"
যাকাতের হিসাব করার সময় এবিষয়টিও লক্ষ রাখতে হবে যে, যাকাতদাতা নিজে ঋণগ্রস্ত কি না?যদি নিজে ঋণগ্রস্ত হয় তাহলে সামগ্রিক হিসাব থেকে ঋণ পরিমাণ টাকা বাদ দিতে হবে। ঋণের টাকা হিসাব থেকে বাদ দেয়ার পর যে অর্থ অবশিষ্ট থাকবে, তা-ই যাকাতের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে। এরপর শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত আদায় করবে। উত্তম হল,সম্পদ হিসাবে যাকাতের যে পরিমাণ অর্থ দাঁড়ায়,তা পৃথক করে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করে রাখবে।অতঃপর সময় ও সুযোগ মতো যাকাতের নির্দিষ্ট খাতে তা ব্যয় করতে থাকবে। এটিই হলো যকাতের হিসাব সংরক্ষণ করার উত্তম পদ্ধতি।
"ঋণ দুই প্রকার"
ঋণের ক্ষেত্রে লক্ষনীয় আরো একটি দিক রয়েছে।আর তা হল যে, ঋ দুই প্রকার।
এক.সাধারণ ঋণ।যা মানুষ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিংবা অস্বাভাবিক অবস্তায় নিতে বাধ্য হয়।
দুই.বিশাল বিশাল শিল্পকারখানা গড়ে তোলার কিংবা যে কোনো বড় ধরনের ব্যবসায়িক প্রকল্প খোলার উদ্দেশ্যে যে ঋণ নেয়া হয়ে থাকে।দৃষ্টান্ত স্বরুপ -ফ্যাক্টরী স্থাপন,মেশিনারিজ আমদানি কিংবা
ব্যবসায়িক পণ্য ইমপোর্ট করার উদ্দেশ্যে যে ঋণ নেয়া হয়।
ধরা যাক একজন শিল্পপতির দু'টি ফ্যাক্টরী চালু রয়েছে। কিন্তু সে ব্যাংক ঋণ নিয়ে তৃতীয় আরো একটি ফ্যাক্টরী চালু করল। দ্বিতীয় প্রকারের এই ঋণকে যদি সামগ্রীক সম্পদের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হয়, তাহলে এ জাতীয় শিল্পপতিদের ওপর তো এক পয়সাও যাকাত ওয়াজিব হবে না; বরং উল্টো তারাই যাকাত প্রাপকের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।কেননা তাদের কাছে যাকাতযোগ্য যে পরিমাণ সম্পদ রয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশী ঋণ সে ব্যাংক থেকে নিয়ে রেখেছে। দৃশ্যতঃ এখন তাকে দরিদ্র এবং মিসকীন মনে হচ্ছে। সুতরাং এ জাতীয় ঋণ বাদ দেয়ার ক্ষেত্রে শরীয়ত পার্থক্য নির্ণয় করে দিয়েছে।
"ব্যবসায়িক ঋণ কখন বাদ দেয়া হবে
ঋণের প্রথমোক্ত প্রকারটি তো সামগ্রিক সম্পদের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হবে। বাদ দেয়ার পরই অবশিষ্ট সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে। ঋণের দ্বিতীয় প্রকারের ব্যাখ্যা হচ্ছে, যদি কোনো ব্যক্তি ব্যবসার উদ্দেশ্যে ঋণ গ্রহণ করে থাকে অতঃপর তা এমন সামগ্রী ক্রয়ে বিনিয়োগ করে,যার ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়। যেমন ঋণের টাকায় কাঁচামাল ক্রয় করল কিংবা ব্যবসায়িক পণ্য ক্রয় করল,তাহলে কেবলমাত্র ঋণের এই পরিমান অর্থকে সামগ্রিক সম্পদের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হবে। কিন্তু যদি ঋণের এই অর্থ যাকাত অযোগ্য সামগ্রী ক্রয়ে ব্যবহার করা হয়, তাহলে ঋণের এই অর্থকে সামগ্রীক সম্পদ থেকে বাদ দেয়া যাবে না।
""" ঋণের দৃষ্টান্ত """
ধরা যাক, একব্যক্তি ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ উত্তোলন করেছে। আন্তর্জাতিক বাজার (বর্হিঃবিশ্ব)থেকে এই টাকায় সে একটি প্লান্ট(মেশিনারি) ইম্পোর্ট (আমদানি) করল।যেহেতু ওই প্লান্টটি যাকাত যোগ্য সম্পদ নয়,সেহেতু এই অবস্থায় এই ঋণ সামগ্রিক সম্পদ থেকে বাদ দেয়া হবে না।কিন্তু যদি ঋণের এই অর্থে সে কাঁচামাল ক্রয় করে থাকে,তাহলে যেহেতু কাঁচামালের ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়,তাই এই ঋণ সামগ্রিক সম্পদ থেকে বাদ দেয়া হবে। কেননা ঋণের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে এটিকে সামগ্রিক সম্পদ থেকে বাদ দেয়া হলেও কাঁচামাল তো সামগ্রিক সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।
সারকথা হল,প্রয়োজনীয় ও অস্বাভাবিক ঋণের পুরোটাই সামগ্রিক সম্পদ থেকে বাদ যাবে।আর যে ঋণ কেবলমাত্র মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা হলো যে, যদি ঋণের অর্থে যাকাত অযোগ্য সামগ্রী ক্রয় করা হয়, তাহলে ওই ঋণের অর্থ হিসাব থেকে বাদ দেয়া যাবে না।আর যাকাতযোগ্য সামগ্রী ক্রয়ে অর্থলগ্নি করলে তা সামগ্রীক সম্পদের হিসাব থেকে বাদ দেয়া যাবে। এই ছিল যাকাত বের করার ক্ষেত্রে শরীয়তের আহকাম।বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-
https://muftiemdadhaque.blogspot.com/2021/04/blog-post.html
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
যাকাত ফরয হওয়ার জন্য মালে নামী হওয়া শর্ত আর সদকায়ে ফিতির বা কুরবানি ওয়াজিব হওয়ার জন্য মালে নামী হওয়া শর্ত নয়। বরং প্রয়োজন অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ মাল থাকলেই সদকায়ে ফিতির ও কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যাবে।
যেহেতু ঐ ব্যক্তির জমি-জমা রয়েছে, এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়িও রয়েছে, যদি এই স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করলে এই পরিমাণ টাকা পাওয়া যায় যে, যা দ্বারা অনায়াসে ঋণকে পরিশোধ করার পর নেসাব পরিমাণ টাকা হাতে অবশিষ্ট থাকে, তাহলে উক্ত ব্যক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব হয়ে যাবে। আর যদি নেসাব পরিমাণ টাকা হাতে না থাকে, তাহলে উক্ত ব্যক্তির উপর কুরবানি ওয়াজিব হবে না।
তবে জমি-জমা এবং প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ির কারণে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে না।