আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
2,604 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (-1 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, শাইখ

যে ব্যক্তির কুরবানী আছে, জিলহজ্জ মাসে তার জন্য চুল,নখ, গোপনাংগের চুল কাটা মাকরুহ এটা আপনাদের সাইটে পূর্বে করার একটা প্রশ্নের উত্তর থেকে জেনেছি।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে, কোন ব্যাক্তির ক্ষেত্রে যদি এমন হয় যে জিলহজ্জ মাসে এসে উপনীত হয়েছে কিন্তু ঈদ পর্যন্ত ওয়েট করলে তার গোপনাংগের চুল কাটার ৪০ দিন অতিক্রম হয়ে যাবে এবং তার কুরবানী দেওয়ার নিয়তও আছে। এমতাবস্থায় তার করনীয় কি? ঈদ পর্যন্ত ওয়েট করবে নাকি গোপনাংগের চুল কেটে ফেলবে?

1 Answer

0 votes
by (660 points)

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

জবাব-

জিলহজ মাসের প্রথম দশ দিন অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ। এই দিনগুলো আমলের মাধ্যমে কাটানো উচিত। যিনি কুরবানী দিবেন তার জন্য জিলহজ্জ মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে চুল নখ না কাটা মুস্তাহাব। কাটা মাকরূহ নয়। আপনি যে মাকরুহের কথা জেনেছেন তা অনুত্তম পর্যায়ের।

আর যিনি কুরবানী দিবেন না, তার জন্য তা মুস্তাহাব নয়। তবে আশা করা যায়, তিনি করলে সওয়াব পাবেন। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا رَأَيْتُمْ هِلَالَ ذِي الْحِجَّةِ، وَأَرَادَ أَحَدُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ، فَلْيُمْسِكْ عَنْ شَعْرِهِ وَأَظْفَارِهِ.

অর্থ : উম্মে সালামা রা. থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন যিলহজ্বের দশক শুরু হবে তখন তোমাদের মধ্যে যে কুরবানী করবে সে যেন তার চুল নখ না কাটে। (সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৯৭৭; জামে তিরমিযী, হাদীস ১৫২৩)

এই হাদীসের উপর ভিত্তি করে ফকীহগণ কুরবানীকারীর জন্য নখ-চুল না কাটাকে মুস্তাহাব বলেছেন।

উপরোক্ত হাদীস বর্ণনা করার পর 'ইলাউস সুনান' গ্রন্থ প্রণেতা বলেন-

أقول : نهى النبى صلى الله عليه وسلم من أراد التضحية عن قلم الأظفار وقص الشعر فى العشر الأول، والنهى محمول عندنا على خلاف الأولى

'আমার অভিমত হলো, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর ইচ্ছাকারী ব্যক্তির জন্য জিলহজের প্রথম দশকে নখ কাটতে এবং চুল কাটতে নিষেধ করেছেন। তারি নিষিদ্ধতা অনুত্তমের পর্যায়ভুক্ত। (ইলাউস সুনান : ১৭/২৬৪)

وقال الشامى: بعد نقل هذا الحديث: هذا محمول على الندب دون الوجوب بالإجماع (رد المحتار، باب العيدين، مطلب فى إزالة الشعر والظفر فى ذى الحجة-3/66)

'আল্লামা শামী এই হাদিস উল্লেখ করার পর বলেন, ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মতিক্রমে এর দ্বারা মুস্তাহাব উদ্দেশ্য, ওয়াজিব নয়। (রদ্দুল মুহতার : ৩/৬৬)

তবে এ হুকুম তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে যারা যিলকদের শেষে নখ-চুল কেটেছে। অন্যথায় নখ-চুল বেশি লম্বা হয়ে যাবে। যা সুন্নাতের খেলাফ। এ বিষয়ে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ أَنَسٌ وُقِّتَ لَنَا فِى قَصِّ الشَّارِبِ وَتَقْلِيمِ الأَظْفَارِ وَنَتْفِ الإِبْطِ وَحَلْقِ الْعَانَةِ أَنْ لاَ نَتْرُكَ أَكْثَرَ مِنْ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً

হযরত আনাস বিন মালিক রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদের জন্য মোচ, নখ কর্তন এবং বগলের চুল ও অবাঞ্ছিত লোম কাটার সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সেটি হল, যেন তা চল্লিশ দিনের উর্দ্ধে না যায়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৫৮, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-২৯৫)

আর যে ব্যক্তি কুরবানী করবে না তার জন্য এ হুকুম প্রযোজ্য কি না এ ব্যাপারে কেউ কেউ বলেছেন, এ হুকুম শুধুমাত্র কুরবানীকারীদের জন্য প্রযোজ্য। তাদের দলীল পূর্বোক্ত হাদীস। আর কেউ কেউ বলেন, কুরবানী যারা করবে না তাদের জন্যও। তাদের দলীল হল :

আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ (পালনের) আদেশ করা হয়েছে। যা আল্লাহ এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন। এক সাহাবী আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! যদি আমার কাছে শুধু একটি মানিহা থাকে (অর্থাৎ অন্যের থেকে নেওয়া দুগ্ধ দানকারী উটনী) আমি কি তা কুরবানী করতে পারি? নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না, তবে তুমি চুল, নখ ও মোঁচ কাটবে এবং নাভীর নিচের পশম পরিষ্কার করবে। এটাই আল্লাহর দরবারে তোমার পূর্ণ কুরবানী বলে গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ২৭৮৯; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৩৬৫)

এই হাদীসে যেহেতু কুরবানীর দিন চুল-নখ কাটার কথা আছে তাহলে এর আগে না কাটার দিকে ইঙ্গিত বুঝা যায়।

২. ওলীদ বিন মুসলিম বলেন, আমি মুহাম্মাদ বিন আজলানকে যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তখন তিনি বললেন, আমাকে নাফে রাহ বলেছেন যে,

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এক নারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। মহিলাটি যিলহজ্বের দশকের ভেতর তার সন্তানের চুল কেটে দিচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, যদি ঈদের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে তবে বড় ভাল হত। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস ৭৫৯৫)

৩. এ সম্পর্কে আরেকটি বর্ণনা হল,

মুতামির ইবনে সুলাইমান আততাইমী  বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি যে ইবনে সীরীন রাহ. যিলহজ্বের দশকে চুল কাটা অপছন্দ করতেন। এমনকি এই দশকে ছোট বাচ্চাদের মাথা মুন্ডণ করাকেও অপছন্দ করতেন। (আল মুহাল্লা, ইবনে হাযম ৬/২৮)

এসব দলীলের কারণে কারো কারো মতে সকলের জন্যই যিলহজ্বের প্রথম দশকে নখ, গোফ ও চুল না-কাটা উত্তম। তবে এতে কোনো সন্দেহ নেই, এ বিধানটি কুরবানিদাতার জন্য তাকিদপূর্ণ, তার জন্য তা সুন্নত।

والله اعلم بالصواب

উত্তর প্রদান

মুফতি মুহাম্মাদ মাহবুবুল হাসান

ফাতওয়া বিভাগ, IOM

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...